Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

ভাষণের শ্রেণিবিভাগ | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা

ভাষণের শ্রেণিবিভাগ | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা , ভাষণকে নির্দিষ্টভাবে শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব নয়, কেননা বিষয়বস্তুর দিক থেকে ভাষণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। আবার বক্তার অবস্থানও হতে পারে বিভিন্ন স্থানে। যেমন : মাঠে-ময়দানে, হাট-বাজারে, স্কুল- মাদ্রাসায়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, বেতার-টেলিভিশনে, এমনকি পত্র-পত্রিকায় মুদ্রিতরূপেও ভাষণ হতে পারে। তবে ভাষণকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

ভাষণের শ্রেণিবিভাগ | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা

যেমন :

১, লিখিত ভাষণ বা প্রস্তুত ভাষণ বা মুখস্থ ভাষণ এবং

২. অলিখিত ভাষণ বা তাৎক্ষণিক ভাষণ লিখিত ভাষণের ক্ষেত্রে বক্তা পূর্ব থেকেই প্রস্তুতকৃত বক্তব্য জনসমক্ষে পাঠ করেন। অন্যদিকে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই বক্তা যখন কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শ্রোতাদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন তখন তাকে বলা হয় তাৎক্ষণিক ভাষণ।লিখিত ভাষণের সুবিধা এই যে, তার বক্তব্য একটি সুনির্দিষ্ট আয়তনের মধ্যে আগে থেকে ধরে রাখা যায়। তাৎক্ষণিক ভাষণ অনেকক্ষেত্রেই দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ে। আজকালকার কর্মব্যস্ত দিনে দীর্ঘভাষণ পরিহার করে চলাই বাঞ্ছনীয়।

 

ভাষণের ক্ষেত্রে বক্তা ও বক্তব্যের বিষয়-বৈশিষ্ট্য বা উৎকৃষ্ট ভাষণের গুণগত বৈশিষ্ট্য

ব্যক্তির বক্তব্যকে সমষ্টির কাছে পৌঁছে দেওয়াই ভাষণের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভাষণ মানুষের চিন্তাশীলতার প্রকাশ। নিজের চিন্তাকে অন্যের মনে প্রতিষ্ঠাদানের জন্য বাক্প্রণালিকে যেমন বিষয়ানুগ হতে হয়— তেমনি শিল্পসম্মত করে তুলতে হয়। সার্থক ও সুন্দর ভাষণের জন্যে বক্তাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে-

১. ভাষণের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সঠিক ও সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এ-কারণেই কোনো বিশেষ বিষয়ে আলোচনার জন্যে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনার জন্যে যে আলোচনা সভা বা সেমিনারের আয়োজন করা হয় তাতে বিষয় বিশেষজ্ঞগণ আমন্ত্রিত হন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

২. ভাষণের বক্তব্য বিষয় হবে যুক্তিগ্রাহ্য ও বস্তুনিষ্ঠ। ভাষণের বিষয়বস্তুকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশের সামঞ্জস্য রেখে ভাষণ প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি ভাষণের বিষয়বস্তুকে যেন শ্রোতা-দর্শক সহজেই বুঝতে পারে সেভাবে উপস্থাপন করতে হবে। বক্তাকে জোরালোভাবে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে উপযুক্ত ধারণা অর্জন করতে হবে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৩.ভাষণের শ্রোতা-দর্শক যেহেতু সর্বসাধারণ এবং শিক্ষিত-অশিক্ষিত উভয়েই হতে পারে, তাই ভাষণের ভাষা হবে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল। কোনো কঠিন বা অপরিচিত বা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। ভাষণে বক্তার বক্তব্য যত আন্তরিক ও সহজ হবে শ্রোতার কাছে তা তত গ্রহণীয় হবে।

8. ভাষণের মধ্যে বক্তব্যের বিষয়ের পুনরুক্তি থাকবে না, অর্থাৎ একই কথা বারবার বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে মুদ্রাদোষ থাকলে তা পরিহার করতে হবে। কেননা তা শ্রোতার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৫. ভাষণের বিষয় যুক্তিনির্ভর করে উপস্থাপন করতে হবে। তার জন্যে ক্ষেত্র বিশেষে উপমা, উদ্ধৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বক্তব্য শ্রোতার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্যে বক্তা অনেকসময় হাস্যরস ও কৌতুকের আশ্রয়ও গ্রহণ করেন। তবে এমন ক্ষেত্রে পরিমিতিজ্ঞান থাকতে হবে। তা না হলে বক্তাই শ্রোতাদের কাছে হাস্যের পাত্র হয়ে যেতে পারে।

৬. ভাষণের বক্তব্যে বক্তার মনোভাব ও বক্তব্যের বিষয় আন্তরিকতার সঙ্গে উপস্থাপন করতে হবে। যা বলা হবে তার মধ্যে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না রেখে স্পষ্ট করে বলতে হবে।

৭. ভাষণে প্রতিষ্ঠিত সত্যের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

 

৮. ভাষণের জন্যে সময় নির্দিষ্ট থাকলে তা যথাসময়ে শেষ করতে হবে।

৯. ভাষণে বক্তার নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

১০. ভাষণের শুরু এবং শেষ হবে আকর্ষণীয় ও নাটকীয়।

১১. ভাষণের সুষ্ঠু উপস্থাপনার জন্যে আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গির প্রয়োজন। মধুর গাম্ভীর্যপূর্ণ ও উদার কণ্ঠস্বর শ্রোতার মনে প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হয়।

১২. মঞ্চ ও টেলিভিশনের ক্ষেত্রে দর্শকগণ বক্তাকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন বিধায় মার্জিত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ভাষণ দিতে হবে।

১৩. বেতার ভাষণের ক্ষেত্রে শুদ্ধ উচ্চারণ, আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি এবং বক্তব্য বিষয় সুস্পষ্ট হতে হবে।

১৪. ভাষণে বক্তার মনের প্রতিক্রিয়া ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে হবে। এ-ক্ষেত্রে পরিবেশ অনুযায়ী পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করতে হবে।

আরও দেখুন :

Exit mobile version