Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

বিজয়ের দিনলিপি ১৯৭১ | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা

“বিজয়ের দিনলিপি ১৯৭১” একটি ভাষা-সচেতন ও অনুভবনির্ভর দিনলিপি, যেখানে বিজয়ের মহান বছর ১৯৭১-এর প্রতিটি মুহূর্ত এক ব্যক্তির অন্তরদৃষ্টি ও দেশপ্রেমের আলোকে নির্মিত হয়েছে। এটি কেবল একটি ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট নয়—বরং একটি আত্মস্মৃতির ভাষ্যে গাঁথা সময়ের দলিল, যেখানে ভাষা, শিক্ষা, জাতিসত্তা ও সংগ্রামের চেতনা একসঙ্গে মিশে গেছে। বাংলা গুরুকুলের “নির্মিতি” বিভাগে অন্তর্ভুক্ত এই রচনাটি আমাদের ভাষাভিত্তিক আত্মপরিচয় গঠনের ধারায় একটি গভীর সংযোজন, যা পাঠককে নিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর হৃদয়স্পর্শী যাত্রায়।

বিজয়ের দিনলিপি ১৯৭১

১৭.১২. ১৯৭১। চট্টগ্রাম।

এর মধ্যে খবর সর্বত্র রাষ্ট্র হয়ে গেছে। দেশ এখন স্বাধীন। সারাদেশ উল্লসিত। ছেলে-বুড়ো, মেয়ে-পুরুষ সবাই ফেটে পড়েছে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে। বন্ধুরা ছুটে এসেছেন দেখা করতে। বাঁশবাড়িয়ার এক কালের জমিদার-নন্দন বিনোদ চৌধুরী দুই বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। সে কান্নায় মিশে আছে বেদনা আর আনন্দ। তাঁর নিকট আত্মীয়দের কাকে কাকেও মেরে ফেলা হয়েছে, তাঁর ঘর-বাড়ি এখনো অন্যের দখলে। তরুণ বুদ্ধিজীবীরা ছুটে এসে বললে মিছিল করতে হবে, বিজয় মিছিল। দেরি করা যাবে না। আজ বিকেলেই। তথাস্তু। ওরাই ঠিক করলো। আমার এখানে এসেই জমায়েত হবে সবাই। সাহিত্য নিকেতন থেকেই শুরু হবে মিছিল। মুখে মুখে ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ল সেভাবে।

 

বিকেল হতে হতে বিপুল ছাত্র-জনতা এসে জড়ো হলো সাহিত্য নিকতনের সামনে। কোথা থেকে শতাধিক মেয়ে এসেও জুটল। হঠাৎ স্নেহভাজন বখতেয়ার নূর সিদ্দিকী এসে বলল, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এসে পড়েছে, ওরাও মিছিলে শরিক হতে চায় সশস্ত্র অবস্থায়। আপনার অনুমতির অপেক্ষায়। নয় মার্স পরে ওর সঙ্গে দেখা। জড়িয়ে ধরে বললাম। নিশ্চয়ই, আমার সানন্দ সম্মতি রয়েছে। কয়েক শ তরুণ মুক্তিযোদ্ধা মিশে গেল আমাদের মিছিলে। ওদের কাঁধে রাইফেল, পরনে ইউনিফর্ম। এ র মধ্যে মিছিল এত দীর্ঘ হয়ে গেছে যে, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখা যায় না। সাহিত্য নিকেতন থেকে শুরু হলো মিছিলের পদযাত্রা।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এনায়েত বাজার হয়ে স্টেশন ঘুরে নিউ মার্কেটের সামনে যখন পৌঁছেছি তখন দাবি উঠল বক্তৃতা দেওয়ার। মাইকে দু-চার কথা বললাম। অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আর তরুণ কর্মী মাহবুবুল হক এবং আরও কেউ কেউ জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে মাইক প্রায় ফাটিয়ে ফেলল। এরপর জেনারেল পোস্ট অফিস আর স্টেট ব্যাংকের সামনে দিয়ে লালদিঘির ময়দানে এসে যখন পৌঁছেছি তখন বিরাট এক গণজমায়েতের মাঝখানে আমরা। ময়দান ভর্তি জনতা। রাস্তা আর পাহাড়ের ঢালুতেও তিল ধারণের জায়গা নেই। তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা খুশির চোটে বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করে প্রকাশ করতে লাগল ওদের অদম্য উল্লাস। এর মধ্যে কে বা কারা মাইক এনে আমার সামনে এনে দিয়েছে খাড়া করে। বেশি করে বলতে হলো শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা। সেই সঙ্গে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুজিব নগরে গৃহীত রাষ্ট্রীয় চার নীতির কথাও।

Exit mobile version