ইভটিজিং প্রতিরোধে যুবসমাজের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে ভাষণ রচনা | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

ইভটিজিং প্রতিরোধে যুবসমাজের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে ভাষণ রচনা – এর একটি নমুনা ভাষণ তৈরি করে দেয়া হলো। এই রচনাটি আমাদের ভাষা ও শিক্ষা বিভাগের অংশ।

ইভটিজিং প্রতিরোধে যুবসমাজের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে ভাষণ রচনা

‘ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি’ । ‘ইভটিজিং প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের / যুবসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার সম্মানিত সভাপতি, আমন্ত্রিত আলোচকবৃন্দ ও সুধীবৃন্দ— সকলের প্রতি আমার আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা। আজকের এই আলোচনা আমাদের নাগরিক সচেতনতারই নিদর্শন। আজ সময়োপযোগী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতাদানের সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এজন্য সভার আয়োজকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষভাবে ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়টি বৃহত্তর ছাত্রসমাজ যে গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করতে পেরেছে তার জন্য তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই সুধীবৃন্দ, বর্তমান সমাজে ইভটিজিং একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। ইভটিজিং-এর বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত আমাদের সমাজ।

প্রতিদিনের খবরের কাগজ খুললেই ইভটিজিং-এর কারণে বর্বরতা, নির্মম প্রাণহানি ও আত্মহননের খবর দেখা যায়। ইভটিজিং-এর ফলে প্রতিদিনই কোন-না-কোন নারী হচ্ছে নিহত অথবা বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। সভ্য সমাজে এটা কারো কাম্য হতে পারে না। নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং নিষ্ক্রিয় আচরণ বদলাতে হবে সবাইকে। যেহেতু ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি এবং এই ব্যাধি দূর করার জন্য যে সর্বাত্মক সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন এটা নিয়ে এখন আর তেমন বিতর্ক নেই। সে জন্যই একদিকে কঠোর আইন প্রণয়ন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়টি সামনে এসেছে।

এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে আমাদের বৃহত্তর ছাত্রসমাজ। সুধী, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা তথা ইভটিজিং আমাদের সমাজে নতুন কোনো ঘটনা নয়। বলা যায় এটা একটা বহু পুরাতন সামাজিক ব্যাধি। ‘এটা তেমন দোষের কিছু নয়, উঠতি বয়সের চপলতা’- এমন হালকাভাবে দেখার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই আছে। ইভটিজিং প্রতিরোধে সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। এটিকে মানবাধিকার লংঘন হিসেবে বিবেচনা করে সমাজের সকল শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষেরই উচিত এর প্রতিবাদে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ইভটিজিং নামের যৌন হয়রানি মেয়েদের সুস্থ স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত করে।

তারা হীনমন্যতায় ভোগে, আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারে না। রাস্তাঘাটে বখাটে সন্ত্রাসীদের উত্ত্যক্ত ও হয়রানির শিকার হয়ে অনেক মেয়ের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লজ্জায় অথবা লোকনিন্দার ভয়ে মেয়েরা নীরবে যুগ যুগ ধরে এটা সহ্য করে এসেছে, উত্ত্যক্ত হয়েও প্রতিবাদ করতে না পারায় মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। পরিবার থেকেও কোনো সমর্থন- সহযোগিতা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে কখনো কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এর প্রতিবাদে যেসব শিক্ষক-অভিভাবক এগিয়ে আসছেন ইভটিজাররা (যৌন-সন্ত্রাসীরা) তাদেরও টার্গেট করেছে, হত্যা করেছে।

নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান এবং মধুখালীর চাঁপা রানির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় দেশবাসী ভীষণভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে মাত্র দশ মাসে তিনশ তরুণীর আত্মহত্যার কারণ এই ইভটিজিং (সূত্র : প্রথম আলো, ২ ডিসেম্বর, ২০০৭)। এই ছোট্ট পরিসংখ্যান থেকে এটি পরিষ্কার যে, ইভটিজিং আসলে কতটা ভয়াবহ। এই একটি পরিসংখ্যানই কী সভ্য জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়ের ওপর একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকার জন্য যথেষ্ট নয়? সম্মানিত সুধীবৃন্দ, আপনারা অবগত যে, সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশঙ্কাজনকভাবে ইভটিজিং নামে যৌন হয়রানির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে ২০০৯ সালের ১৪ মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধের লক্ষ্যে হাইকোর্ট কতকগুলো সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়ার ফলে ইভটিজিংয়ের নামে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি আইনি ভিত্তি তৈরি হয়েছে।

এ রায়ে যে সমস্ত ব্যবহার যৌন হয়রানি বলে গণ্য হবে তা হল- শারীরিক ও মানসিক যেকোনো ধরনের নির্যাতন যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। যে কোনো অবাঞ্ছিত- যে কোন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য বা রসিকতা; © গায়ে হাত দেওয়া বা দেওয়ার চেষ্টা করা; © ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোন বিড়ম্বনা; © পর্ণোগ্রাফি বা যেকোনো ধরনের চিত্র, অশ্লীল ছবি, দেয়াল লিখন; © অশালীন উক্তিসহ আপত্তিকর কোনো ধরনের কিছু করা, কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলা; © কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, যে কোনো চাপ প্রয়োগ করা; © মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করা, যৌনসম্পর্ক স্থাপনের দাবি বা অনুরোধ; © অন্য যেকোনো . শারীরিক বা ভাষাগত আচরণ, যার মধ্যে যৌনইঙ্গিত প্রচ্ছন্ন।

হাইকোর্টের এই নির্দেশাবলি যেকোনো কর্মপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরির দায়ভার বহুদূর পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রের ওপর ন্যস্ত থাকায়, সেখানে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা ও জেন্ডার বৈষম্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন বিশেষভাবে প্রয়োজিনীয়। সুধী, এমন এক পবিত্রতার আবরণে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখি যেখানে যৌন হয়রানি আদৌ ঘটতে পারে বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। বাস্তবতা যদিও একেবারেই ভিন্ন। নানাভাবে ইভটিজিংয়ের মাত্রা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইভটিজিং একটি মানসিক ও সামাজিক সমস্যা। এর নানা কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল ও বখাটে ছেলেদের/যুবকদের বিকৃত মানসিকতা এবং নৈতিক চরিত্রের অবনতি, মূল্যবোধের অভাব, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইভটিজিংয়ের কারণ।

তবে ইভটিজিং এর মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হল যুব সমাজের একটা বড় অংশের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণ বহুবিধ। কেননা তা একদিনে যেমন সৃষ্টি হয় নি, তেমনি এর পেছনে রয়েছে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। তাই আজই, এখনই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

সুধীমণ্ডলী, ইভটিজিং আসলে কোনো হালকা রসিকতা নয়, এটা এক ধরনের নারী নির্যাতন। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেজন্যই ইভটিজারদের শাস্তি বিধানের জন্য কঠোর আইনের প্রয়োজন। তবে কেবল আইন দিয়েই এই মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি দূর করা সম্ভব হবে না। এজন্য প্রয়োজন সামাজিক জাগরণ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার। কঠোর আইন প্রণয়ন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং প্রতিটি সচেতন নাগরিকের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের সমন্বয়েই সব ধরনের নারী নির্যাতনের অবসান ঘটানো সম্ভব।

সমাজের অগ্রসর, বিবেকবান, সুস্থ চিন্তার মানুষদের উচিত বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা জাল তৈরি করা। আমরা বিশ্বাস করি সরকার ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত উদ্যোগ এ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। ইভটিজিংরোধে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-যুব সংঘটনের নেতাকর্মীদেরও শক্তিশালী ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সমাজকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। ইভটিজিং ও নারী নির্যাতনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে যেমন সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন তেমনি তাদের মাধ্যমে দেশের কিশোর-যুবকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচার-আচারণ পরিবর্তনের লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ করে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

নারীরা যখন রাস্তাঘাটে, শিক্ষাঙ্গনে, পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে ইভটিজিংয়ের শিকার হয় তখন দেশের প্রগতির চাকা বন্ধ হয়ে যায় ও জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিটি সচেতন মানুষকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, রাস্তাঘাট যেখানেই ইভটিজিং, হয়রানি, নারী নির্যাতন সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সচেতন সুধীসমাজ, পথেঘাটে যারা ইভটিজিং (যৌন-সন্ত্রাস) করছে তাদের দাগী অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

অপরাধ করলে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে, কোনোভাবেই রেহাই পাওয়া যাবে না- এই বার্তা ইভটিজার-সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার নমনীয়তা দেখানো চলবে না। পারিবারিক ও রাজনৈতিক চাপ দিয়ে সন্ত্রাসী-দুর্বত্তদের বাঁচনো যাবে না- এই বিশ্বাস সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি করতে হবে। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। ইভটিজারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিলে সে মামলা যাতে কোনো ধরনের টালবাহানা না করে গ্রহণ করা হয় সে জন্য পুলিশ প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ও সক্রিয় হতে হবে। পারিবারিকভাবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দান করতে হবে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে ‘Charity begins at home’ অর্থাৎ যেকোনো ভালো কাজ আগে ঘর থেকেই শুরু করা উচিত।

যে কারণে ইভটিজিং প্রতিরোধে প্রথম পদক্ষেপগুলো নিতে হবে ঘরে। যেমন আপনি যদি মা হয়ে থাকেন তাহলে আপনার প্রথম দায়িত্ব হবে আপনার শিশুপুত্রটির মনমানসিকতা এমনভাবে তৈরি করা যাতে করে সে বড় হয়েও এরকম ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়। মায়েদের আরেকটি বড় দায়িত্ব হল নিজেদের কন্যাসন্তানদের ওপর সর্বদা দৃষ্টি রাখা, তাদের চলাফেরায় শালীনতা বজায় রাখা। পাশাপাশি সমাজে মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার প্রতিও নজর দিতে হবে। আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক অনুশাসনগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের প্রতি, মেয়েদের প্রতি, মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে।

খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটিয়ে, পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার আন্দোলন গড়ে তুলে তথা সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে কিশোর-তরুণদের অপরাধমূলক ও ক্ষতিকর অপতৎপরতা থেকে দূরে রাখতে হবে । ইভটিজিং প্রতিরোধকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

যারা ইভটিজার উত্ত্যক্তকারি এলাকাভিত্তিক তাদের তালিকা তৈরি করে প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে তাদের এবং তাদের অভিভাবক ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। পাশাপাশি সামাজিকভাবে তাদের লজ্জাও দিতে হবে। সর্বোপরি সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যদি ইভটিজিং প্রতিরোধে এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো গুটিকয়েক বিকৃত মানসিকতার পুরুষ তাদের হীন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার সাহসই পাবে না। সম্মিলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করা সম্ভবপর হবে বলে আমার বিশ্বাস।

সুধী, আবারও বলছি- ইভটিজিং একটি মারাত্মক সামাজিক সমস্যা। তাই ইভটিজিং প্রতিরোধে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ। ইভটিজিং প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ, বিশেষ করে যুব সমাজকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ‘৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ১১ দফা হয়ে ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান-সকল পর্যায়েই বঞ্চিত, নিপীড়িত জাতিকে মুক্তির আলো দেখিয়েছে এ দেশের যুব সমাজ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই দেশ বিশ্বের ইতিহাসে সৃষ্টি করেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

এ দেশের যুব সমাজ বারবার প্রমাণ করেছে আমরা হারি নি, আমরা পেরেছি, আমরা পারব।’ যুগে যুগে যৌবন-দূত তরুণের দলই জরাগ্রস্ত পৃথিবীর বুকে এনেছে নবজীবনের ঢল। তিমির রাত্রির অবসানে রক্ত-রাঙা প্রভাতের বন্দনা করেছে। তরুণদের কণ্ঠেই গীত হয় নতুন দিনের গান। তাদের চোখেই থাকে নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত।

পথভ্রষ্ট যুবকরা আলোর পথে ফিরে আসুক, সমাজ থেকে দূর হোক ইভটিজিং-এর কালো ছায়া, মুছে যাক ইভটিজিংয়ের নির্মম চিত্র, ইভটিজিংহীন সমাজে সকল নারী নিরাপদে থাকুক, তারুণ্য শক্তির জয় হোক এটিই আমাদের প্রত্যাশা। পরিশেষে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজকের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমাকে কিছু বলার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং এতক্ষণ যারা অসীম ধৈর্য নিয়ে আমার বক্তব্য শুনেছেন- আপনাদের সবাইকে আবারও ধন্যবাদ ।

Leave a Comment