মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা

মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা ,বিজ্ঞান তার বিস্ময়কর আবিষ্কারের দ্বারা মানুষের জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছলে ভরে দিয়েছে। মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দের একটি নতুন ও বিস্ময়কর সংযোজন হল মোবাইল ফোন। দিন দিন অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে এর প্রয়োগের ক্ষেত্র ও প্রয়োজনীয়তা। যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের প্রভাব এতটাই বেশি যে, একে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবন যেন অচল, নিঃস্তব্ধ।

মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদন

মুষ্টিবদ্ধ মোবাইলটির কাছে কান পাতলে মুহুর্তেই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন ভাবের আদান-প্রদান ঘটে। সমগ্র বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ক্ষুদ্র একটি সেটের মধ্যে বন্দি করে ফেলেছে। এর চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আর কী হতে পারে? বিপদে-আপদে, আনন্দ-বেদনায়, হর্ষ-বিষাদে, জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল এখন প্রতিটি মানুষের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে মোবাইলের অপব্যবহার নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদন 

বিভিন্ন শ্রেণির মোবাইল ব্যবহারকারি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার সম্পর্কে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা নিম্নরূপ

০১. মোবাইল ফোনের অপব্যবহার সম্পর্কে মতামত

১.১ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাস প্রভৃতি অসামাজিক কার্যকলাপে মোবাইল ফোন সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১.২ মোবাইলের মাধ্যমে সহজেই সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারি চক্রের দ্বারা নাশকতামূলক কার্যক্রম সংঘটিত করতে পারে। মোবাইলের নেটওয়ার্কের কারণে অগ্রিম সংবাদ পেয়ে দুষ্কৃতিকারিরা আইন-শৃঙ্খলা ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। বাহিনীর সদস্যদের চোখে ১.৩ মোবাইলের মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারিরা হুমকি প্রদান করে কারো কারো মনে ভীতি সঞ্চারও করে থাকে।

১.৪ মোবাইলে মিথ্যা বলার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। কে কোথায় কখন কীভাবে অবস্থান করছে এ সম্পর্কে প্রায়ই বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া যায়। এতে করে নৈতিক মূল্যবোধের অবনতি ঘটে।

১.৫ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায় অর্থের যেমন অপচয় ঘটে তেমনি মূল্যবান সময়ও নষ্ট হয়।

১.৬ কেউ কেউ সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপব্যবহারকে দায়ী করেছেন। মোবাইল ফোনে কথা বলতেবলতে গাড়ি চালানো কিংবা ড্রাইভিং অবস্থায় ফোন কল রিসিভ করতে গিয়ে অনেকসময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে।

 

মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদন 

 

১.৭ ধর্মীয় উপাসনালয়, সভা, সেমিনারে, শ্রেণিকক্ষে কিংবা সময়ে অসময়ে মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠা খুবই বিরক্তিকর; এর ফলে ধ্যান-সাধনা ও স্বাভাবিক কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটে। ১.৮ মোবাইল ফোনের কারণে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অনেক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে

১.৯ মোবাইল ফোনে মাত্রাতিরিক্ত আলাপ স্থির বুদ্ধিসম্পন্ন সৃজনশীল মনমাসকিতা তৈরির ক্ষেত্রে অন্তরায়।

১.১০ মোবাইল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করে অশালীন ছবি তোলা, কুরুচিপূর্ণ অসামাজিক কার্যকলাপের ভিডিওচিত্র ধারণ করাসহ নানারকম অনৈতিক কার্যকলাপ করা হয়।

১.১১ মোবাইল ফোনে মেয়েদেরকে বিরক্ত করা কিংবা ইভটিজিংয় করা হয়।

১.১২ মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে থাকে। এর রেডিয়েশন মানুষের দেহে উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ব্রেন টিউমারের মতো কঠিন রোগের সম্ভবনা বৃদ্ধি করে। এছাড়া নার্ভ ক্ষতিগ্রস্থ করে, চোখের ক্যাটরেখ, রক্তের উপাদানগত পরিবর্তনেও রেডিয়েশন প্রভাব ফেলতে পারে। মোবাইলের রিংটোন হার্টের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকর।

 

মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদন 

 

আজকাল যন্ত্রের ওপর নির্ভর করেই যেন আমাদের নিত্য পথ চলা। যন্ত্রের সঙ্গে আমরাও হয়ে পড়েছি যান্ত্রিক। যান্ত্রিকতা মানুষকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আরাম দিয়েছে বটে, কিন্তু জীবনকে করেছে আবেগশূন্য। জীবনের এই আবেগ-শূন্যতা মনুষ্যত্বকেও অনেকখানি নিঃস্ব করে দিয়েছে। তদুপরি একথা বলতেই হয় যে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল যেন যাদুর কাঠি। তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে মোবাইলের বিকল্প এখনও আবিষ্কৃত হয় নি। প্রত্যেকটি জিনিসেরই নেতিবাচক এবং ইতিবাচক দুটি দিকই থাকে, মোবাইল ব্যবহারকারিরা মোবাইল ব্যবহারের নেতিবাচক দিকগুলো পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলোকে কাজে লাগাতে পারে। মোবাইলের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে সুখে-স্বাচ্ছন্দে ভরে তুলতে পারি, এ কথা নিঃসেন্দহে বলা যায়।

আরও দেখুন:

Leave a Comment