Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব ভাষণ তৈরি করবেন। ভাবসম্প্রসারণ কথাটির অর্থ কবিতা বা গদ্যের অন্তর্নিহিত তৎপর্যকে ব্যাখ্যা করা, বিস্তারিত করে লেখা, বিশ্লেষণ করা। ঐশ্বর্যমণ্ডিত কোনাে কবিতার চরণে কিংবা গদ্যাংশের সীমিত পরিসরে বীজধর্মী কোনাে বক্তব্য ব্যাপক ভাবব্যঞ্জনা লাভ করে। সেই ভাববীজটিকে উনােচিত করার কাজটিকে বলা হয় ভাবসম্প্রসারণ। ভাববীজটি সাধারণত রূপকধর্মী, সংকেতময় বা তৎপর্যপূর্ণ শব্দগুচ্ছের আবরণে প্রচ্ছন্ন থাকে। নানা দিক থেকে সেই ভাবটির ওপর আলােকসম্পাত করে তার স্বরূপ তুলে ধরা হয় ভাবসম্প্রসারণে।

মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

সময় অনন্ত, জীবন সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত এ জীবনে মানুষ তার মহৎকর্মের মধ্য দিয়ে এ পৃথিবীতে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকে। আবার নিন্দনীয় কর্মের ফলে এই জগতে সে বেঁচেও মরে থাকে। কেননা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তাকে ভালােবাসে না। সমাজ, দেশ ও জাতি তাকে শ্রদ্ধা করে না, স্মরণ করে না। তার মৃত্যুতে কারও কিছু যায় আসে না।

 

 

মানুষ মাত্রই জন্ম-মৃত্যুর অধীন। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলে একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এটা চিরন্তন সত্য। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়, কিন্তু পেছনে পড়ে থাকে তার মহকর্মের ফসল। যে-কর্মের জন্যে সে মরে যাওয়ার পরও পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকে। কৃতকর্মের জন্যেই কারাে কারাে নাম পায় মহিমা, উত্তর-পুরুষের কাছে হয় স্মরণীয়। মহকর্মের জন্যেই তারা এই পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন। এমন ব্যক্তিই মানবসমাজে ধন্য বলে বিবেচিত। মানুষের জীবনকে দীর্ঘ বয়সের সীমারেখা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। জীবনে কেউ যদি কোনাে।

ভালােকাজ না করে থাকে তবে সে জীবন অর্থহীন, নিষ্ফল। সেই নিষ্ফল জীবনের অধিকারী মানুষটিকে কেউ মনে রাখে না। নীরব জীবন নীরবেই ঝরে যায়। পক্ষান্তরে, যে-মানুষ জীবনকে কর্মমুখর করে রাখে এবং যার কাজের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের উপকার সাধিত হয় তাকে বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। সেই সার্থক মানুষের কাজের অবদান বিশ্বের বুকে কীর্তিত হয়ে কৃতী লােকের গৌরব প্রচারিত হতে থাকে। কীর্তিমান ব্যক্তির যেমন মৃত্যু নেই, তেমনি শেষও নেই, কারণ এ পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব। কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তার দেহের ধ্বংসসাধন হয় বটে, কিন্তু তার সৎকাজ এবং অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তাঁর মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাঁকে স্মরণ করে। তাই সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা কৰ্ম-সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল।

 

 

আবার জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কর্মের মাধ্যমে চির জাগরূক হয়ে আছেন আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়। সম্রাট নাসিরুদ্দিন প্রথম জীবনে একজন ক্রীতদাস ছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটন একজন সামান্য কৃষকের ঘরে জন্মগ্রহণ করে স্বীয় কর্মবলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। নেপােলিয়ান বােনাপার্ট, শেরশাহ নিতান্তই সাধারণ ঘরের সন্তান ছিলেন। তথাপি নিজ ক্ষমতাবলে নেপােলিয়ান ফ্রান্সের অধিকর্তা হয়েছিলেন। আর শেরশাহের কথা বলাই বাহুল্য। ইতিহাসের পাতায় এরূপ শতসহস্ৰ মহাপুরুষের উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। যারা তাদের নিজ কর্মগুণে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছেন।  মানুষের দেহ নশ্বর কিন্তু কীর্তি অবিনশ্বর। কেউ যদি মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে, তবে মৃত্যুর পরেও তার এ কীর্তির মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকাল বেঁচে থাকে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে মানুষ পৃথিবীতে আসে এবং সে সময়সীমা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। এ নির্দিষ্ট সময়সীমায় সে যদি গৌরবজনক কীর্তির স্বাক্ষরে জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে সক্ষম হয়, মানবকল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে, তবে তার নশ্বর দেহের মৃত্যু হলেও তার স্বকীয় সত্তা থাকে মৃত্যুহীন। গৌরবােজ্জ্বল কৃতকর্মই তাকে বাঁচিয়ে রাখে যুগ থেকে যুগান্তরে। পৃথিবীর জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিগণ তাদের গৌরবজনক কীর্তির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ‘ঠাকুর’ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ঐ পরিবারের সকলকে ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠেছে তার নাম। তার আসনে অন্য কেউ বসতে পারে নি। তার কৃতকর্মই তাকে মানুষের হৃদয়-কোঠায় স্থান করে দিয়েছে।

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version