বৃক্ষরোপণ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা ,মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পরিবেশ। এই বিশাল জগৎ সংসারে মানুষই একমাত্র জীব যারা প্রকৃতির নিয়ম-নীতি ভেঙে নিজের আরাম-আয়েশের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টির উপায় উপকরণের যথেচ্ছ ব্যবহার করে। আর এই যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে পৃথিবী আজ চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
বৃক্ষরোপণ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
ফলে দিন দিনই সৌরজগতের মানুষ বসবাস করার একমাত্র গ্রহ পৃথিবী তার স্বকীয়তা হারিয়ে মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। অথচ মানুষের বসবাসের জন্য প্রয়োজন পৃথিবীর আদিম পরিবেশ বা প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা উচিত। কিন্তু নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তনের ফলে আমাদের দেশে রয়েছে মোট আয়তনের শতকরা ১৬ ভাগ মাত্র। নির্বিচারে বন উজাড় করার ফলে বিলুপ্তি ঘটছে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের। বিপন্ন আজ জীববৈচিত্র্য। তাই কেবল পরিবেশ সংরক্ষণেই নয়, পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য, জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বৃক্ষরোপণের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
বৃক্ষ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। বৃক্ষ না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ত। বৃক্ষ আমাদেরকে অক্সিজেন দিয়ে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। বৃক্ষ আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের যেমন উপকার করে তেমনি তার সৌন্দর্যে হৃদয়মন হয়ে ওঠে আপ্লুত। গাছপালা দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে বলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। গাছপালা বাতাসে জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে আবহাওয়াকে শীতল করে ও প্রচুর বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে।
উদ্ভিদাদি জমির উর্বরতা-শক্তি বৃদ্ধি করে অধিক উৎপাদনে যেমন সাহায্য করে তেমনি ভূমিক্ষয়ের হাত থেকেও রক্ষা করে। অঞ্চলবিশেষের পানি সংরক্ষণ, বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও বিতরণ সেখানকার গাছপালা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া বৃক্ষাদি ঝড়-ঝঞ্ঝা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাসগৃহকে রক্ষা করে। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় যে, বৃক্ষের এতসব উপকারী দিক থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞতার কারণে এবং সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের মানুষ নির্দ্বিধায় গাছপালা কেটে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করছে, কখনো চাষাবাদের জন্যে গাছপালা কেটে সম্পূর্ণ বনকেই নিঃশেষ করে ফেলছে। এভাবে নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের ফলে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বপরিবেশে দেখা দিয়েছে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া। বিশ্বপরিবেশ আজ বিপর্যস্ত ও হুমকির সম্মুখীন।
তাই আমাদের পরিবেশ তথা আবহাওয়া, জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখা এবং খরার কারণে খাদ্যঘাটতির হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য বনাঞ্চল সৃষ্টি ও বনসম্প্রসারণের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। পরিবেশগত ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক কারণে বনের প্রয়োজন ও গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশে বন সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এখন প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ অভিযান চলছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশের সকল অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বনায়নও শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উপকূলীয় বনায়ন (সমুদ্রতীরের বনায়ন) এবং উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ১৯৯৬ সালে উপকূল ও উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চলে ম্যানগ্রোভ গাছপালা লাগানো শুরু হওয়ার পর ইতোমধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এই বনায়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা এবং নতুন কর্মসংস্থান ও অর্থকরী পণ্য হিসেবে কাঠের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ইতোমধ্যেই এর শুভ ফল মানুষ পেতে শুরু করেছে।
উপকূল বরাবর বৃক্ষরোপণ এবং বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে উপকূলীয় ভাঙন প্রতিরোধ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাসের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে উপকূলীয় সবুজবেষ্টনী। ইতোমধ্যেই এই সবুজ বেষ্টনী প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একইসঙ্গে এ-সব কার্যক্রমকে আরো জোরদার করার লক্ষ্যে গণসচতেনতা, পোস্টার, ব্যানার, স্লোগান দিয়ে জনগণকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করার জন্য সরকার ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত তিনমাস ব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান ও শেরে বাংলা নগরের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৫ দিন ব্যাপী বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় লোকজনের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। প্রায় ১২০টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মেলাটি পরিণত হয়েছির বৃক্ষারণ্যে। মেলার সবচেয়ে বড় স্টলটি বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলধা গার্ডেনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। সৌন্দর্যবর্ধক, ওষধি এবং ফল-ফুলের গাছসহ এ স্টলে প্রদর্শিত হয় প্রায় ৪০০০ গাছগাছালি। ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম প্রদর্শন করেছে ভেষজ ওষুধ বিষয়ে নানা তথ্য ও শুষ্ক পদ্ধতিতে বৃক্ষ সংরক্ষণের নানা নমুনা। কয়েকটি স্টলের অংশগ্রহণকারী জানিয়েছে যে, ‘আমাদের এই মেলার মূল লক্ষ্য হল : পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য বৃক্ষনিধন নয় বরং বৃক্ষ রোপণ করে এ পৃথিবীকে সবুজের সমারোহে ভরে দিতে হবে’। তারা আরও জানায় যে, বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনার জন্য বৃক্ষমেলা সবকটি জেলা এবং উপজেলায় সম্প্রসারণ করতে পারলে বৃক্ষরোপণ আন্দোলন আরো জোরদার হবে।
আরও দেখুন:
- ক্যাবল টিভির সুফল ও কুফল সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- বন্যা দুর্গত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রের জন্যে প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- তৎসম ও বাংলা উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য | উপসর্গ যোগে গঠিত পরিভাষা | উপসর্গযুক্ত শব্দের বাক্যে প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা
- হাদিস । হাদিস সূচী