বন্যা দুর্গত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা , গোমতি নদীকে বলা হয় কুমিল্লার দুঃখ। অতীতের মতো এবারও কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত ‘দেবিদ্বার’ থানা সর্বনাশা বন্যার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পায় নি। এবারের বন্যা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে এবং অনবরত বৃষ্টির ফলে সম্পূর্ণ থানা আজ বন্যাকবলিত। বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১০ এবং প্রায় ১ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া, আমাশয় ও জণ্ডিস দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৪ শতাধিক লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র থেকে জানা গেছে। নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে বন্যাকবলিত এলাকায় সঙ্কটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
Table of Contents
বন্যা দুর্গত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
০১. বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগের চিত্র
বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িঘর পানিতে ডুবে গিয়ে প্রায় ৫ হাজার পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। কমবেশি ১৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২ লক্ষ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ভেসে গেছে অসহায় কৃষকদের গরু-বাছুর এবং তাদের সদ্যতোলা ফসল। জমির ফসলও সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কয়েক শ মাটির ঘর নিশ্চিহ্ন হয়েছে, গাছপালা ও ইলেকট্রিকের থাম পড়ে পথ-ঘাট বিপর্যস্ত।
নদীর ক্রমাগত ভাঙনে তিনটি শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ ৩০০টি পরিবারের ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ এবং ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ-পর্যন্ত দশ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, গবাদি পশু মরেছে সহস্রাধিক। জনপ্রতিনিধিদের দাখিল করা পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে এতে প্রায় চল্লিশ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
০২. পুনর্বাসন বঞ্চিত অসহায় মানুষের হাহাকার
হাজার হাজার লোক এখনও পানিবন্দি। অনিবার্য কারণে খাদ্য-সংকট দেখা দিয়েছে অঞ্চলটিতে, পথ ও পরিবহন বিপর্যস্ত হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর অভাব চরমে উঠেছে; ত্রাণ ব্যবস্থার অভাবে এই বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি। বর্তমানে যে সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা হল পানীয় জলের অভাব। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে দেখা দিয়েছে কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি রোগ। ডায়রিয়া এবং চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২ হাজার মানুষ। কোথাও কোনো আশ্রয়স্থল না থাকায় বন্যাকবলিত সব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে নদীর বাঁধের ওপর।
চলছে অবিরাম বৃষ্টি, খোলা আকাশের নিচে কখনও বৃষ্টিতে ভিজে কখনও রোদে পুড়ে কোনোভাবে জীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছে অসহায় মানুষেরা। এ যেন শুধুই জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। অর্ধাহার-অনাহারে মানুষে মানুষে চলছে মারামারি, হানাহানি— সর্বত্রই শিশুদের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। রোগে-শোকে তাদের জীবন আজ দুর্বিষহ। এখনও কোনরূপ ত্রাণ-সামগ্রী এসে পৌঁছায় নি। থানা প্রশাসন ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো খাদ্য- বস্ত্রের যতটুকু জোগান দিতে পারছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। অবিলম্বে খাদ্য, পানীয় জল এবং চিকিৎসার সুব্যবস্থা না করলে দুর্গতদের বাঁচানো সম্ভব হবে না।
০৩. বন্যাকবলিত এলাকাবাসীর কার্যক্রম
বিরাজমান পরিস্থিতিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে এলাকাবাসী যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং বিভিন্ন সাহায্যদাতা সংস্থা ও সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছে।
০৪. লক্ষ্য অর্জন ও সুপারিশ
বন্যা মোকাবেলার দায়-দায়িত্ব প্রধানত সরকারের, সেই সঙ্গে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জনগণের। সে সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সেচ্ছাসেবক হিসেবে রিলিফ কাজে সম্পৃক্ত হতে পারে। তবে জনগণকে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুদ্ধ করবেন সরকার। সরকারের রয়েছে ক্ষমতা, অর্থ, প্রশাসক, পরিকল্পনা, ত্রাণ-সামগ্রী, সরকারি যানবাহন ও সরঞ্জাম। সরকারের হাতেই থাকে দেশ-বিদেশের ত্রাণ-সামগ্রী। এই ত্রাণ-সামগ্রী যাতে টাউট-বাটপারের হাতে না পড়ে, জনগণ যাতে পায় তা দেখার দায়িত্বও সরকারের।
ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে সরকারের উচিত অত্র এলাকার ছাত্র-শিক্ষক-স্বেচ্ছাসেবকদের দলমত নির্বিশেষে সম্পৃক্ত করতে পারে। যেসব এলাকায় পেটের পীড়া, ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে তা মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, স্যালাইন মজুদ রাখা উচিত। মেডিক্যাল টিম চিকিৎসক ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকেও প্রস্তুত রাখতে হবে। সরকারকে সচেষ্ট থাকতে হবে যাতে অন্তত তিন মাসের খাদ্যদ্রব্য, ত্রাণ সামগ্রী বন্যা কবলিত জনগণ পায়। আর বন্যা পরবর্তী সময়ে যেন জনগণ চাষাবাদের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি শস্য, বীজ, সার, ধান পায় তার সহজ ব্যবস্থা করা।
সর্বোপরি স্থায়িভাবে বন্যা দূরীকরণের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচেষ্টা সরকারকে অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিবেদনটি তৈরি করার সময় সংশ্লিষ্ট সকলের সাহায্য সহযোগিতা লাভ করেছি। বন্যা কবলিত এলাকার সমস্যার সমাধানে উল্লিখিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিলে বন্যাকবলিত মানুষগুলোর বিরাজমান সংকট নিরসন হবে এবং গোটা দেশ উপকৃত হবে।
আরও দেখুন:
- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রের জন্যে প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- তৎসম ও বাংলা উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য | উপসর্গ যোগে গঠিত পরিভাষা | উপসর্গযুক্ত শব্দের বাক্যে প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা
- স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- সমস্যায় জর্জরিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- কলেজের শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা