প্রকৃত বীর একবারই মরে – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব ভাষণ তৈরি করবেন। কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় অনেক সময় ভাব-সংহত বাক্য বা চরণ থাকে, যার মিত-অবয়বে লুক্কায়িত থাকে জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত গূঢ় কথা, নিহিত থাকে ভূয়োদর্শনের শক্তি। ইতিময়, রূপকাশ্রয়ী স্বল্প-বাক উক্তিগুলো বিশ্লেষণে বের হয়ে আসে গত জীবন সম্পর্কে বৃহৎ ভাব, জীবনের অদ্ভুদর্শন। এই ধরনের ভাবগূঢ় বাক্যগুলোর ব্যাখ্যা-বিশেষণই হলো ভাবসম্প্রসারণ।
প্রকৃত বীর একবারই মরে
প্রকৃত বীর কর্তব্যের খাতিরে মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। কিন্তুকাপুরুষেরা সর্বদাই মৃত্যুভয়ে ভীত থাকে বলে কর্তব্য থেকে পিছিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের বারবার মৃত্যু ঘটে। কর্মই জীবন, কর্মের মধ্যেই মানুষ বেঁচে থাকে। পৃথিবী এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। এখানে কর্তব্যের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মানুষকে নানাবিধ বাধা-বিপত্তি ও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি এতে তাদের মৃত্যু ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যে প্রকৃত বীর সে মৃত্যুভয়ে আদৌ ভীত নয়। কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রয়োজনে তারা সে মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়।
কেননা কর্তব্য থেকে পিছপা হওয়া বা পরাজয় মেনে নেয়া প্রকৃত বীরের ধর্ম নয়। তারাই এই পৃথিবীকে, সমাজকে এমনকি মানবজাতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাঁরা জীবনকে উৎসর্গ করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্য। এসব বীর ও মহৎ ব্যক্তিরা একবারই মারা যান। অবশ্য তাদের সে মৃত্যু, মৃত্যু নয়। বরং তারা পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করেন।
কিন্তু কাপুরুষেরা সর্বদা মৃত্যুভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। মৃত্যুর ঝুঁকি তো দূরের কথা, সাধারণ বাধা-বিপত্তি এলেই তারা কর্তব্য থেকে পিছিয়ে যায়। আর এই পিছিয়ে যাওয়া বা ব্যর্থতার গ্লানি বহন করাই একপ্রকার মৃত্যু। জীবনের কোনো কাজেই তারা সফলতা অর্জন করতে পারে না, সামান্য দুঃখকষ্টে তারা ভেঙে পড়ে। তাদের মুখে প্রায়শই শোনা যায় ব্যর্থতার বাণী, ‘আর পারলাম না, মরে গেছি! ধুঁকে ধুকে জীবনটাই গেল’, ‘হে স্রষ্টা তুমি আমাকে মৃত্যু দাও! বাঁচতে চাই না’- এ ধরনের মৃত্যু তাদের জীবনে বহুবার ঘটে। তাই এদের জীবনটাই ব্যর্থ— দেশ ও দশের উপকার তো দূরের কথা, তাদের তো মরার-ই শেষ নেই। সুতরাং তাদের একেবারে মরে যাওয়াই উত্তম।
যারা কাপুরুষ তারা মৃত্যু আসার অনেক আগেই যে কোনো কারণে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে। সামান্য বিপদেই তারা দিশেহারা ও বিহ্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে প্রতিনিয়ত তারা মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে। বস্তুত মৃত্যুভয়ে ভীত না হয়ে কর্তব্য পালন করে যাওয়াই প্রতিটি মানুষের সাধনা হওয়া উচিত।
আরও দেখুন: