পাছে লোকে কিছু বলে কবিতা বিশ্লেষন – কামিনী রায়

পাছে লোকে কিছু বলে কবিতা – কামিনী রায় (জন্ম: ১২ই অক্টোবর ১৮৬৪ – মৃত্যু: ২৭শে সেপ্টেম্বর ১৯৩৩) একজন প্রথিতযশা বাঙালি মহিলা কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ডিগ্রিধারী ব্যক্তিত্ব। তিনি একসময় “জনৈক বঙ্গমহিলা” ছদ্মনামে লিখতেন।

 

পাছে লোকে কিছু বলে কবিতা

 

পাছে লোকে কিছু বলে কবিতা

করিতে পারি না কাজ
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে –
পাছে লোকে কিছু বলে।
আড়ালে আড়ালে থাকি
নীরবে আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ নাহি চলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
হৃদয়ে বুদবুদ মত
উঠে চিন্তা শুভ্র কত,
মিশে যায় হৃদয়ের তলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ যবে আঁখি
সযতনে শুকায়ে রাখি;-
নিরমল নয়নের জলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা –
চলে যাই উপেক্ষার ছলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্য যবে,
এক সাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
বিধাতা দেছেন প্রাণ
থাকি সদা ম্রিয়মাণ;
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পাছে লোকে কিছু বলে । কামিনী রায়

 

পাছে লোকে কিছু বলে কবিতা বিশ্লেষণ ঃ

 

 

শব্দার্থ ও টীকা

সদা – সবসময়।

সংশয় – সন্দেহ,  দ্বিধা

সংকল্প – মনের দৃঢ় ইচ্ছা।

সংশয়ে সংকল্প সদা টলে – মনের দৃঢ় ইচ্ছা পূরণ করায় বাধা তৈরি হয় ।

শুভ্র – সাদা, এখানে পরিষ্কার বা অমলিন অর্থে ব্যবহৃত।

যবে – যখন।

প্রশমিতে – উপশম ঘটাতে, নিবারণ করতে।

প্রশমিতে পারে ব্যথা – যন্ত্রণার উপশম ঘটাতে পারে।

উপেক্ষা – ‘গ্রাহ্য না করা, অবহেলা করা, গুরুত্ব না দেয়া ।

ছল – ছুতা, ওজর।

ম্রিয়মাণ – কাতর, বিষাদগ্রস্ত।

 

কবি কামিনী রায় এর কবিতা

 

পাঠের উদ্দেশ্য

এ কবিতা পাঠ করে শিক্ষার্থীরা নিঃসংকোচ চিত্তে জীবনপথে পরিচালিত হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করবে। কে কী বলল তা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা থেকে তারা মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে।

পাঠ-পরিচিতি

কবিতাটি ‘আলো ও ছায়া’ কাব্যগ্রন্থ নেওয়া হয়েছে। কোনো কাজ করতে গেলে কেউ কেউ অনেক সময় দ্বিধাগ্রস্ত হয়। কে কী মনে করবে, কে কী সমালোচনা করবে এই ভেবে তারা বসে থাকে। এর ফলে কাজ এগোয় না। যাঁরা সমাজে অবদান রাখতে চান তাঁদের দ্বিধা করলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে হবে। মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে হলে ভয়-ভীতি সংকোচ উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে।

 

কামিনী রায়

 

কবি-পরিচিতি

কামিনী রায় বরিশালের বাসন্ডা গ্রামে ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন । ১৮৮৬ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বি.এ. পাস করে তিনি ওই কলেজেই অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। আনন্দ ও বেদনার সহজ-সরল প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায় । মানবতাবোধ ও নৈতিকতাকেও তিনি তাঁর কবিতার বিষয় করেছেন। তাঁর লেখা ছোটদের কবিতা সংগ্রহের নাম ‘গুঞ্জন’ ।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ – ‘আলো ও ছায়া’, ‘মাল্য ও নির্মাল্য’, ‘দীপ ও ধূপ । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। ১৯৩৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।

কর্ম-অনুশীলন

ক. ‘পাছে লোকে কিছুবলে’ শীর্ষক কবিতার বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে তোমার কিংবা তোমার পরিচিত লোকজনের সমস্যা নিয়ে গল্প, নাটিকা বা প্রবন্ধ রচনা কর (একক কাজ)।

খ. তোমার ভিতরকার তিনটি সমস্যা খুঁজে বের করো এবং এই সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসার উপায় লেখ (একক কাজ)।

 

পাছে লোকে কিছু বলে । কামিনী রায়

 

নমুনা প্রশ্ন

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. মহৎ কাজ সম্পাদনে কোনটিকে উপেক্ষা করা অনুচিত ?

ক. সংকোচ

খ. সংশয়

গ. সংকল্প

ঘ. বাধা

২. আর্তের পাশে দাঁড়াতে গিয়েও কেউ কেউ কেন উপেক্ষা করে চলে যান ?

ক. রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়ে

খ. সমালোচনার ভয়ে

গ. সহযোগিতার ভয়ে

ঘ. ছোট হওয়ার ভয়ে

৩. ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতাটি পাঠকের মধ্যে কোন ধরনের অনুপ্রেরণা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ?

ক. ভয়হীনতা

খ. পরোপকারিতা

গ. সাহসিকতা

ঘ. সংকোচহীনতা

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মাসুদ গ্রামের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে। সে ভাবে এক সময় প্রচুর আয় হবে, বেকাররা স্বনির্ভর হবে। কিন্তু যদি সে এ কাজে সফল হতে না পারে, তাহলে তার সমালোচনা করবে। তাই সে তার পরিকল্পনা বাদ দেয়।

8. উদ্দীপকের মাসুদের মাঝে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ কবিতার কোন বিশেষ দিকটি প্রকাশিত হয়েছে ?

ক. ভীরুতা

খ. সংশয়

গ. হতাশা

ঘ. দুর্বলতা

৫. কামিনী রায়ের দৃষ্টিতেই মাসুদের এ উদ্যোগ সফল করা যেতে পারে—

i. দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলে

ii. সকল সংশয় দূর করলে

iii. সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i ও ii

খ. i ও iii

গ. ii ও iii

ঘ. i, ii ও iii

 

পাছে লোকে কিছু বলে । কামিনী রায়

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে

আসে নাই কেহ অবনি পরে,

সকলের তরে সকলে আমরা

প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’

২. “নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো

যুগ-জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলো ।

সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে

নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে

নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে,

আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে ।

ক. ‘প্রশমিতে’- শব্দটির অর্থ কী ?

খ. ‘সংশয়ে সংকল্প সদা টলে’- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর ।

গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশের বক্তব্য ‘পাছে লোকে কিছুবলে’ কবিতার কোন স্তবকের বিপরীত ভাব ধারণ করেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশের নিন্দুক ও ‘পাছে লোকে কিছুবলে’ কবিতার নিন্দুকের তুলনামূলক
আলোচনা কর।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment