বাক্য বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা , ভাষা প্রথমত বাক্যের সমষ্টি। আমরা যা কিছু কথা বলি, অর্থাৎ ভাষা ব্যবহার করি, সেগুলো বাক্যের পর বাক্য সাজিয়ে। বাক্যই ভাষার, বৃহত্তম একক। যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়, তাকে বাক্য বলে।
বাক্য বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
১ ভাষাবিদ্গণ বাক্যকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নরূপ— ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘যে পদ বা শব্দ-সমষ্টির দ্বারা কোনও বিষয়ে বক্তার ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকটিত হয়, সই পদ বা শব্দ সমষ্টিকে বাক্য (sentence) বলে।
২ ভাষাবিদ্ জ্যোতিভূষণ চাকী বলেছেন, ‘যথাযথ বিন্যস্ত শব্দসমষ্টি যদি একটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে।
৩ ড. সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘পরস্পর অর্থসম্বন্ধ-বিশিষ্ট যে পদগুলোর দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায়, সেই পদগুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে। বিশ্বনাথ কবিরাজের ‘সাহিত্যদর্পণ’ এর মতে যোগ্যতা—আকাঙ্ক্ষা—আর আসত্তি-যুক্ত পদসমুচ্চয়কে বাক্য বলে।
ৰাক্য সম্পৰ্কে পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞার্থ দিতে গিয়ে ড. রামেশ্বর ‘শ লিখেছেন, বাক্য হচ্ছে এমন কতকগুলো নির্বাচিত উপাদানের পরম্পরাক্রমিক বিন্যাস যেগুলোকে ভাষাবিশেষের বিশেষ ছাঁদ, রূপপরিবর্তন ও সুরতরঙ্গের বিশেষ নিয়ম অনুসারে মিলিত করে একটি এককরূপে গড়ে তোলা হয়েছে। উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, কোনো ভাষায় যে উক্তির সার্থকতা আছে এবং গঠনের দিক থেকে যা স্বয়ংসম্পূর্ণ সে ধরনের একক উক্তিকে ব্যাকরণে বাক্য বলা হয়। কোনো উক্তি সার্থক না হলে তা বাক্য বলে বিবেচিত হয় না। সালমা বই পড়ছে— এই উক্তিটি বাংলা ভাষায় সার্থক এবং এর গঠনও স্বয়ংসম্পূর্ণ।
এর সম্পূর্ণতার জন্যে অতিরিক্ত কোনো পদের প্রয়োজন নেই, এর গঠনেও কোনো ত্রুটি নেই। তাই এটি একটি বাক্য। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য, আর বাক্যের মূল উপাদান পদ (শব্দ)। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে এক একটি শব্দ পদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। কতকগুলো পদের সমষ্টিতে বাক্য গঠিত হলেও যে কোনো পদসমষ্টিই বাক্য নয়। বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মন্ধ বা অন্বয় থাকতে হবে। তাছাড়া বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদ দিয়ে একটি অখণ্ড ভাব পূর্ণরূপে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন অর্থাৎ বাক্যে গঠনের দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং বক্তব্যের অর্থবহতা থাকতে হবে।
আরও দেখুন: