পলিথিনমুক্ত পরিবেশ রচনা

পলিথিনমুক্ত পরিবেশ রচনা নিয়ে রচনার একটা নমুনা তৈরি করবো আজ। এই রচনাটি আমাদের “প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ দূষণ” সিরিজের একটি রচনা। আমাদের সকল রচনা শিক্ষার্থীদের ধারণা দেবার জন্য। মুখস্থ করার জন্য নয়। এই রচনা থেকে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ধারণা নেবেন। তারপর নিজের মতো করে নিজের নিজের ভাষায় লিখবেন।

পলিথিনমুক্ত পরিবেশ রচনা

পলিথিনমুক্ত পরিবেশ | প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ দূষণ | বাংলা রচনা সম্ভার

 

ভূমিকা :

পলিথিন উৎপাদন এবং ব্যবহারে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কিন্তু কালের ব্যবধানে এটি সাময়িক সুবিধার চেয়ে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পলিথিন জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং দেশের সচেতন নাগরিকরা এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সম্মেলনে এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হয় এবং তা পত্রিকার পাতায় নিয়মিত আসতে থাকে।

ঢাকাসহ সমগ্র দেশের মানুষ এ ইতিবাচক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন, চিকিৎসকদের প্রতিবেদন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থনৈতিক বিবেচনা সবকিছুই পলিথিনের বিপক্ষে মতামত প্রদান করে।

পলিথিনমুক্ত পরিবেশ | প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ দূষণ | বাংলা রচনা সম্ভার

 

পলিথিনের ইতিকথা :

পলিথিন বা প্লাস্টিক আর এখন অপরিচিত কোনো বস্তু নয়। শপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে ব্রাস, বালতি, মগ, বাসনপত্র, আসবাবপত্র, যানবাহনের অংশ, ওষুধ শিল্পসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন। পৃথিবীতে পলিথিনের উদ্ভব অনেকটা আকস্মিকভাবেই হয়েছিল । আজ থেকে ১৬২ বছর আগে ফরাসি রসায়নবিদ সাইমন তেলের মতো জৈব তরল স্টাইরিন গরম করার জন্য চুলায় রেখে এক জরুরি কাজে বাইরে চলে যান। ফিরে এসে দেখতে পান তেলের মতো জিনিসটা/পদার্থটা থকথকে প্রায় কঠিন এক পদার্থে পরিণত হয়েছে। এভাবেই সে রসায়নবিদের গবেষণাগারে তৈরি হয়ে গেল Polymer Polystyrene. গ্রিক ভাষায় পেলাস কথাটির অর্থ বহু বা অনেক এবং মেরস মানে হলো অংশ বা অনুরূপ । আর এ দুটি যুক্ত হয়েই পলিমার শব্দটির উদ্ভব।

পলিথিনের পরিচিতি :

পলিথিন প্রকৃতি থেকে সৃষ্ট কোনো পদার্থ নয় । এটি একটি রাসায়নিক পদার্থ । পলিথিন বিষাক্ত প্রোপাইলিনের সাথে পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বনের ৩/৪টি মলিকূলের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এর নাম ‘পলিথাইলিন’। অন্যান্য পদার্থের মতো পলিথিন ভেঙে অন্য কোনো পদার্থে রূপান্তরিত হয় না। পলিথিনকে কোনো অণুজীব মাইক্রোন অর্গানিজম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে না। যদি পলিথিন ভেঙে গিয়ে মিথেন কিংবা কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিণত হতো, তাহলে কোনো সমস্যা হতো না। পলিথিন রূপান্তরিত হয় না বলে এটা পচেও না।

পলিথিনের ব্যবহার :

পলিথিন এমন একটি সস্তা ও সহজলভ্য পণ্য যা প্রতিদিনের জীবনের ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শক্ত, মজবুত, হালকা ও টেকসই এই পণ্যটির সহজে ব্যবহারের উপযোগিতা থাকায় নানাভাবে মোড়ক ও ব্যাগ হিসেবে কাজে লাগছে। বিশেষত পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের সুবিধা থাকায় তা এত বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যে, বাজার থেকে যে কোনো জিনিস ক্রয় করা হলে পলিথিন ব্যাগ ক্রেতার হাতে বিনামূল্যে তুলে দেয়া হয়।

ব্যবহারের এই উপযোগিতার জন্য আজকাল পলিথিন ব্যাপকভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে এবং জীবনের চারদিকে তার অজস্র ছড়াছড়ি লক্ষ   করা যাচ্ছে। আগেকার আমলের পাটের ব্যাগের স্থান এখন পলিথিন ব্যাগ অধিকার করেছে এবং আবশ্যক অনাবশ্যক সব ধরনের পণ্যের সঙ্গে পলিথিন শপিং ব্যাগ সংযুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যবহারের সুবিধা বিবেচনা করে মানুষ তার পরিণতির কথা ভাবছে না ।

পলিথিনের আগমন ও বিস্তার:

এশিয়াতে প্রথম পলিথিনের আগম ঘটে ১৯৬২ সালে। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে জাপান সর্বপ্রথম ১৯৬৩ সালে পলিথিন বাজারজাত করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে প্রথম পলিথিনের আগমন ঘটে। ঢাকার বাজারে ইসলাম প্লাস্টিক নামের একটি কারখানা থেকে পলি ব্যাগের উৎপাদন শুরু হয়। শুরুতে এর উৎপাদন ছিল মাত্র ০.২৫ টন। ১৯৮৩ সালে প্লাস্টিক ও পলিথিন দ্রব্য উৎপাদনকারী কারখানার সংখ্যা দাঁড়ায় দুটিতে।

এক বছরের মধ্যে ১৯৮৪ সালে ১৬টি কারখানা গড়ে ওঠে। এ সময় রাজধানী ঢাকার মানুষ সভ্যতা ও আধুনিক বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হিসেবে পলিথিনকে গ্রহণ করে। বিভিন্ন খাবার প্যাকিংসহ পলিথিনের শপিং ব্যাগে মাছ মাংস তরিতরকারি বহন এবং আবর্জনা ফেলার কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে পলিথিন বাণিজ্যের প্রসার ঘটে দ্রুত। ঢাকার বেগমবাজার ইসলাম প্লাস্টিক থেকে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা এখন তেজগাঁও শিল্প এলাকার বৃহৎ আধুনিক কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় শিল্প আকারে ৮০০ কারখানা গড়ে ওঠে। 

পরিবেশের ওপর পলিথিনের প্রভাব :

পরিবেশের ওপর পলিথিনের মারাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যেমন-

ক. মাটির উর্বরতা হ্রাস :

পলিথিন পচে না, তাই মাটির সাথে মিশে না। এতে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায় এবং ফসল ফলন ব্যাহত হয়, যার প্রভাব পড়ে জাতীয় জীবনে ।

খ. দুর্বল বৃক্ষের জন্ম :

আমরা জানি, বৃক্ষ মাটি থেকে রস গ্রহণ করে বেড়ে ওঠে ও বেঁচে থাকে। কিন্তু পলিথিনের ওপর গাছের চারা রোপণ করলে শিকড় স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে না, তাই মাটি থেকে রস আহরণ করতে পারে না। ফলে গাছ দিন দিন পুষ্টিহীনতার শিকার হয় এবং দুর্বলভাবে বাড়তে থাকে ।

গ. বিপর্যন্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা :

পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহারে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। ড্রেনে পলিথিন পড়ে পানি নিষ্কাশনে সমস্যার সৃষ্টি করে। এতে শহরের অলিগলিতে স্যুয়ারেজ লাইন বন্ধ হয়ে প্রায়ই দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি রাস্তায় জমে মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়। পলিথিনের ব্যাপক অপব্যবহারের শিকার ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী। যে বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা মহানগর অবস্থিত । এর তলদেশে প্রায় ১ ফুট পর্যন্ত পলিথিন বর্জ্য জমা হয়ে এর নাব্যতা হ্রাস করেছে ।

ঘ. পানিদূষণ :

পলি ব্যাগ পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। ব্যাগের সাথে বা মধ্যে ধারণকৃত অন্যান্য ময়লা, আবর্জনা ও রোগ জীবাণুসমূহ পানিতে মিশে পানির ব্যাপক দূষণ ঘটায় । পলিব্যাগ জলাশয়ে আটকে গিয়ে পানি ও মাছের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। মাছ অনেক সময় পলিথিনে জড়িয়ে যায়। ফলে মাছের স্বাভাবিক চলাফেরা এতে বাধাগ্রস্ত হয়। পুকুরের তলদেশে জমে মাছের খাদ্য গ্রহণের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ড. বায়ুদূষণ :

আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক পলিব্যাগ পুনর্ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু পুনর্ব্যবহারে বিদ্যমান পদ্ধতিটি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। প্রথমে পলিখিন আগুনে পুড়িয়ে মণ্ডে পরিণত করা হয়। এটা দহনের সময় কার্বন মনোঅক্সাইড ও হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস উৎপন্ন হয় যার ফলে ব্যাপক বায়ুদূষণ হয়। বিশেষত কার্বন মনোঅক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ডায়েক্সিন ও হাইড্রোজেন সায়ানাইড মানুষের শ্বাসতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাছাড় এগুলো মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা নষ্ট করে দেয়।

চ. জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি :

পলিথিন তৈরির কারখানায় যারা কাজ করেন তাদের ক্যান্সার ও চর্মরোগসহ অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মাছ, মাংস ও তরিতরকারি পলিথিন ব্যাগের মধ্যে বেঁধে রাখলে এক ধরনের তাপ উৎপাদিত হয়। এই তাপমাত্রা থেকে রেডিয়েশন ছড়ায় ফলে খাদ্যদ্রব্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। পলিব্যাগে মাছ ও মাংস প্যাকেট করে রাখলে এনারোবিক নামক ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় যা মাছ ও মাংস দ্রুত পচনে সহায়তা করে।

আর এনারোবিক ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলে চর্মরোগ এমনকি ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া পলিথিনের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কোলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. শাশ্বতী রায় তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, প্লাস্টিক বা পলি কাপে লেবু চা খেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। কারণ গরম চা ও লেবুর সাইট্রিক এসিড প্লাস্টিক বা পলিকাপের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় যা পাকস্থলীর স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

এ থেকে আলসার ও ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পলিথিন ব্যাগ এবং অন্যান্য প্লাস্টিক জাতীয় আর্বজনা ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে পোড়ালে ডাইক্সিন জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা মানুষের জন্মগত সমস্যা, চর্মরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি মারাত্মক রোগের জন্য এই ডাইঞ্জিনকে দায়ী করেন। তাছাড়া স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পলিথিন পোড়ালে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস নির্গত হয় যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ছ. পলিথিন মানে নোংরা বস্তু :

Environment And Social Development Organization ESDO পরিচালিত জরিপ থেকে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা নগরীর ১৭ লাখ পরিবার প্রতিদিন ৫টি করে পলিব্যাগ ফেলে দেয়। তাছাড়া নগরীতে ৫ লাখ মানুষ দৈনিক ২টি করে ব্যাগ ঢাকার রাস্তাঘাটে ফেলে। শুধু ঢাকাতেই মাসে ২৮ কোটি ৫০ লাখ এবং বছরে ৩৪২ কোটি পলিথিন ঢাকার রাস্তাঘাট, ম্যানহোল ও বক্স কালভার্টে জমা হয়। পলিথিনের কারণে বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা ড্রেনে রোগ জীবাণুর বিস্তার ঘটায়। দূষিত পানি থেকে ডায়রিয়া, আমাশয় ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটায়। জলাবদ্ধ স্থানে মশা মাছির বংশবৃদ্ধি ঘটে। ফলে ম্যালেরিয়া, ফাইলোরিয়া, ডেঙ্গু, এনকেফালাইটিজ প্রভৃতি রোগ ছড়ায়।

পলিথিন নিষিদ্ধকরণে সরকারের উদ্যোগ :

পলিথিন নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রথমত বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর সেই দায়িত্ব অর্পিত হয় । পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে সারাদেশে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকা শহরে ১ জানুয়ারি, ২০০২ থেকে পলিখিন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ।

পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ অথবা চটের ব্যাগ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয় । এসব ব্যাগের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে ২ টাকা এবং ৪ টাকা করে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে সারাদেশে পলিথিনের নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরে ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারাদেশে সরকার পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ ও জনপ্রতিক্রিয়া :

বাংলাদেশ সরকারের পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে সর্বস্তরের মানুষ স্বাগত জানায়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের যৌথ প্রচেষ্টার কারণে ঢাকায় আর পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার দেখা যায় না। মানুষ পলিথিনের বিকল্প ব্যাগই ব্যবহার করছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। পলিথিন ব্যবহার জাতীয় জীবনে সত্যিই যে অকল্যাণকর, তা সরকারের গৃহীত

পদক্ষেপে জনসাধারণ কর্তৃক দ্রুত সাড়া প্রদানের মাধ্যমেই বোঝা যায়। যারা পলিথিন জীবনধারণ করতো তারাও পলিথিন বন্ধের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধকরণের সরকারি সিদ্ধান্তকে জনসাধারণ দ্বিধাহীন চিত্তে সমর্থন জানিয়েছে।

সরকারের করণীয় :

পলিথিনের দূষিত প্রভাব থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করার জন্য পলিথিনের রিসাইক্লিং বা পুনরুৎপাদন সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক করতে হবে। সম্প্রতি জাপানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ব্যাগ, বোতল, গ্লাস ইত্যাদি পুনরুৎপাদনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতি অবলম্বনের ফলে ইতোমধ্যে নানারকম প্লাস্টিক সামগ্রী বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে রিসাইক্লিং কারখানা রয়েছে। সরকার এগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।

জনগণের কর্তব্য :

ব্যাপক ও দ্রুত পরিবেশ দূষণের উৎস পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রয়োজন। অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের লাভের স্বার্থে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারকে উদার মন নিয়ে বিদায় দিতে পারেনি। নানা ফাঁক-ফোকর বের করে তারা পলিথিনকে এখনো ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আর পণ্য ক্রেতারা অবৈধ ব্যাগ ব্যবহারে আপত্তি করছে না। বরং স্বস্তি পাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতার এই মনোভাব পরিবর্তন করে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে পলিথিনকে চিরবিদায় দিতে হবে।

পাট ও কাগজের বাজার সৃষ্টি :

পলিথিন নিষিদ্ধ করার ফলে পাট ও কাগজের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বে কাগজ এবং পাটের ব্যাগই বহুল প্রচলিত ছিল। কিন্তু আশির দশক থেকে এর ব্যবহার কমতে থাকে এবং ২০০১ সালে এসে একেবারে কমে যায়। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে পাট বা কাগজের ব্যাগের চাহিদা অধিক হারে বেড়ে গেছে। কৃষকদেরও পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে করে পাট চাষী, পাটজাত পণ্য উৎপাদক, পাটশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই, সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারও লাভবান হবে।

উপসংহার :

মানুষের জীবন সুন্দর ও সুখী করার জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই । পলিথিন পরিবেশ দূষণের সহায়ক বলে এর হাত থেকে পরিত্রাণ খুজে বের করতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আর জাতীয় পর্যায়ের যে কোনো কাজে সাফল্য অর্জন করতে হলে নাগরিক সচেতনতা অপরিহার্য।

পলিথিনমুক্ত পরিবেশ | প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ দূষণ | বাংলা রচনা সম্ভার

 

পলিথিন ব্যাগ প্রতিরোধকল্পে দেশবাসী যে অভাবনীয় সাড়া দিয়েছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব। ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় স্বার্থ ভুলে জাতীয় স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে আমাদের সোচ্চার হওয়া জরুরি। বর্তমান সরকার পলিথিন বন্ধের যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে, কোনোভাবেই যেন আর আমাদের মাঝে পলিথিন ব্যাগের পুনরাবির্ভাব না ঘটে। জাতির স্বার্থে পলিথিন দূষণ রোধ করতে হবে— এ কথা মনে রেখে সরকারের সঙ্গে জনগণের আন্তরিক সহযোগিতা করা দরকার।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment