নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ প্রসঙ্গে প্রবাসী বন্ধুর কাছে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা

নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ প্রসঙ্গে প্রবাসী বন্ধুর কাছে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , ঐতিহাসিকভাবে, চিঠির প্রচলন ছিল প্রাচীন ভারত, প্রাচীন মিশর, সুমের, প্রাচীন রোম, মিশর এবং চীনে, এবং এই ইন্টারনেটের যুগেও এর চল বর্তমান। সতের ও আঠারো শতকে চিঠি লেখা হতো স্ব-শিক্ষার জন্য।

নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ প্রসঙ্গে প্রবাসী বন্ধুর কাছে পত্র

পাহাড়তলি, চট্টগ্রাম

২৫ ডিসেম্বর, ২০০০

প্রিয় ‘ক’,

আমার অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। আশা করি ভালো আছ। তুমি তো জান, ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক, যেটি ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচির মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র নারীদের অভাবমুক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করছে। বাঙালি হিসেবে তৃতীয় এবং বাংলাদেশি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তাঁর এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেছে বাংলাদেশে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তি আরেকটি বড় ঘটনা। ২০০৬ সালেই। প্রথম একজন অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার প্রদান করা হল।

 

নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ প্রসঙ্গে প্রবাসী বন্ধুর কাছে পত্র

 

বন্ধু, তুমি নিশ্চয়ই জান যে, ছটি বিষয়ে নোবেল পুরস্কারের মধ্যে শান্তি পুরস্কার ছাড়া সব ক’টি স্টকহোমে রয়্যাল সুইডিশ সায়েন্স একাডেমি থেকে দেয়া হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয় নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে। অসলো সিটি হলে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত ১৩ অক্টোবর, ২০০৬ শুক্রবার নোবেল কমিটির ঘোষণাপত্রে বলা হয়, তৃণমূল পর্যায় থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ড. মুহাম্মদ ইউনূসও গ্রামীণ ব্যাংককে সমান দুইভাগে ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নোবেল কমিটি। ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, বিশাল জনগোষ্ঠী যদি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার পথ না পায় তাহলে টেকসই শান্তি অর্জন সম্ভব নয়। ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য বিরাট মডেল ও আদর্শের উৎস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

 

নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ প্রসঙ্গে প্রবাসী বন্ধুর কাছে পত্র

 

ড. মুহাম্মদ’ ইউনূসের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর টিভি সেটের সামনে থেকে আর উঠতে ইচ্ছে করছিল না। কারণ কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন চ্যানেলে ড. ইউনূস এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন খবর দেখাচ্ছিল। একটা ব্যাপার অদ্ভূত লেগেছে, সাধারণত মানুষ হঠাৎ কোনো কিছু পেয়ে গেলে কিংবা বড় হয়ে গেলে সে মানুষটিকে আমার নিজের কাছে খুব দূরের মানুষ মনে হয়। কিন্তু ড. মুহাম্মদ’ ইউনূসকে আমার একটুও দূরের মানুষ মনে হচ্ছিল না। সাংবাদিকদের সঙ্গে এবং অন্যদের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে আন্তরিক আলাপ করতে দেখে তাঁকে আমার আরও অনেক বেশি আপন মনে হচ্ছিল।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অভিনন্দন জানাচ্ছি ড. মুহাম্মদ’ ইউনূসকে এবং সেই সঙ্গে অবশ্যই সেই সব সৎ নারীদের যাদের সততা আমাদের এই জন্মভূমিকে আরও একবার আলোকিত করেছে। ড. মুহাম্মদ’ইউনূসের এ বিশাল প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের ১৫ কোটি জনতা আনন্দিত ও গর্বিত। অভিনন্দন আবারো ড. ইউনূসকে এবং এদেশের লক্ষ কোটি সৎ এবং পরিশ্রমী নারীদের। তাঁর এ প্রাপ্তি পুরো বাংলাদেশের প্রাপ্তি। এ বিজয় পুরো বাংলাদেশের বিজয়। চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করা ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। সমাদৃত পুরো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পরিচয় হচ্ছে— বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসি বাংলা রূপের যে তার নেইকো শেষ। এখন থেকে এ পরিচয়ের সঙ্গে আরও যুক্ত হবে ইউনূসের বাংলাদেশ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের সততার বাংলাদেশ।

আজ আর নয়, ভালো থেকো। বাসার সবার প্রতি শ্রেণিভেদে সালাম ও স্নেহ রইল।

ইতি গুণমুগ্ধ

আরও দেখুন:

Leave a Comment