দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিক্রিয়া প্রতিবেদন রচনা | Causes and remedies for rising commodity prices

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিক্রিয়া [ Causes and remedies for rising commodity prices ] অথবা, সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জনজীবন অথবা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও প্রতিকার- নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি [ Rising commodity prices ]
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি [ Rising commodity prices ]

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি  রচনার ভূমিকা :

আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি আজ আর কোন বিশেষ সংবাদ নয়। প্রতি বছর বা প্রতিমাসে তো বটেই প্রতি ঘণ্টায়, এমনকি প্রতি মুহূর্তে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এ যেন প্রাণীর বয়সের মত শুধু বাড়ে একবার বাড়লে । আর কমে না। চাল, ডাল, জামাকাপড় ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস বহু মানুষের কাছেই আজ বিলাসদ্ৰব্য হিসেবে গণ্য। গাঁয়ে এমন মানুষ অনেক আছেন যারা দু’বেলা দুমুঠো খেতে পায় না, যারা উপযুক্ত আচ্ছাদনের অভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘকাল স্বেচ্ছায় নির্বাসিত।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

বিপর্যয়ের শিকার জনসাধারণ :

পৃথিবীর বহু দেশও তো এই মূল্যবৃদ্ধির প্রকোপ থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে জিনিসপত্রের দাম যেমন বাড়ছে জনসাধারণের আয়ও তেমন বাড়ছে। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আনুপাতিক হিসেবটা ঠিক মিলছে না। আয় যদি বাড়ে এক পয়সা তো দাম বাড়ে তিনগুণ। ফলে, বহু লোক অতি প্রয়োজনীয় বহু জিনিস কিনতেই পারে না। ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাধাধরা আয়ের লোকেরা অনেক সময় আবার প্রয়োজনের তুলনায় অল্প জিনিস কেনে। তাহলে মূল ব্যাপারটা দাঁড়াল এইরকম মূল্যবৃদ্ধি হেতু কেউ কেউ পণ্যদ্রবা আদৌ কিনতে পারল না, আবার কেউ কেউ ছিটেফোঁটা নিয়ে কাজ চালাল। অর্থাৎ বিপর্যয়ের শিকার হল কেউ পুরোপুরি, কেউবা আংশিক।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি [ Rising commodity prices ]
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি [ Rising commodity prices ]

জনজীবনে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া :

ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে অসন্তোষ, ক্রোধ ও বিদ্বেষ পুঞ্জীভূত করে। প্রতিনিয়ত বিধ্বংসী অভাব ও শোচনীয় দারিদ্র্যের কষাঘাতে মানুষ হয়ে ওঠে মরীয়া। সমাজ-জীবনে বিক্ষোভ ও উচ্ছৃ ছড়িয়ে পড়ে। নিরূপায় মানুষ ধর্মঘট করে কখনো আবার কখনও বা বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন নামে। কল কারখানা, যানবাহন, অফিস-আদালতে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বেতনও বাড়ে। কিন্তু আসল সমস্যার কিছুই হয় না। কারণ বাড়তি বেতনের যৎসামান্য রসদ দিয়ে মূল্যবৃদ্ধির দুর্বার ও আগ্রাসী শক্তির সঙ্গে মোকাবিলা অসম্ভব। বেতন বাড়তে না বাড়তেই মুলামনে এত বেশি উঁচুতে পৌছায় যে, সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসটি আর নাগাল পায় না।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি [ Rising commodity prices ]
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি [ Rising commodity prices ]

মান ও মূল্যবৃদ্ধির স্বরূপ :

প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পনের বছর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। প্রথম পরিকল্পনায় আমলে দয় বাড়ে শতকরা ৩০% হারে, দ্বিতীয় পরিকল্পনার আমলে শতকরা ৩৫% হারে আর তৃতীয় বারে প্রথম তিন বছরের শতকরা ৪.৯% হারে। তৃতীয় পরিকল্পনার অবশিষ্ট দু’বছরে এবং পরবর্তীকালে দর আরও দ্রুত বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে চাল, গম ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের কথাই ধরা যাক। ১৯৭১-এর তুলনায় ৭৫-এই তর বাড়ে শতকরা ৫৫% হারে। অর্থাৎ ৭১-এর যে খাদ্যদ্রব্যের দর ছিল ২০৬.৪০ টাকা ৭৫-এ তার দাঁড়ায় ৩২০.৩০ টাকা। এখানেই শেষ নয়, ১৯৮৩-এর জানুয়ারিতে দেখা যায় সূচক উঠেছে ২৫৩-তে এবং ১৯৮৫ এর মার্চ নাগাদ ৩৪০-এ।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি [ Rising commodity prices ]
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি [ Rising commodity prices ]

উপসংহার :

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দরবৃদ্ধি আজও অব্যাহত। আপাতত এটুকু শুধু বলা যায়, উৎপাদন বাড়িয়ে মজুমতদারী ও ফটকাবাজী বন্ধ করে আমরা যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত করার ও কালো টাকা উদ্ধার করার চেষ্টা করি এবং সুষ্ঠু বদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি বিধান করি তো সমস্যার মোকাবিলা এখনও সম্ভব।

আরও দেখুন:

Leave a Comment