ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব, বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেটের অবদান [ The Internet and today’s world ] ইন্টাররেটের গুরুত্ব অথবা, ইন্টারনেট ও আধুনিক সভ্যতা – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।
Table of Contents
ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব রচনার ভূমিকা :
ইন্টারনেট হল বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বশেষ সংস্করণ। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সাথে কম্পিউপারকে কাজে লাগিয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে যে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তাকে বলা হয় ইন্টারনেট। আর এর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে এক গ্রন্থিতে গাঁথা সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইন্টানেট প্রযুক্তির কারণে মানুষের জীবন যাপনে যে পরিবর্তন এসেছে তা রীতিমত ঈর্ষণীয়।
ইন্টাররেটের স্বরূপ :
প্রযুক্তিবিদ্যার ক্রমন্নতি ও উৎকর্ষের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হল ইন্টারনেট। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের একটি কম্পিউটারের থেকে অপর প্রান্তের একটি কম্পিউটারের সাহায্যে ছবিসহ যাবতীয় তথ্য দ্রুত সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। একটি মূল কম্পিউপারের সাথে অনেকগুলো টার্মিনাল যোগ করে একই সাথে একাধিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারা যায়। আর এর জন্য ছড়িয়ে আছে কিছু সার্ভার।
এই সার্ভারকে সক্রিয় রাখার জন্য সংযোগে রাখা হয়েছে অসংখ্য টেলিফোন। আর কম্পিউটারের সিগন্যালকে টেলিফোনের লাইনের উপযোগী সিগন্যালে রূপান্তরের জন্য কম্পিউপটার ও টেলিফোন সংযগের মাঝখানে একটি মডেম সংযুক্ত থাকে। মূলত পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে অবস্থানকারী কোন ব্যক্তি একটি মডেম ও টেলিফোন সংযোগের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হয়ে সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিচরণ করতে পারে।
ইন্টারনেট উদ্ভাবনের ইতিবৃত্ত:
সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ARPA বর্তমানের ডিফেন্স এ্যাডভাপড় রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (DARPA) তাদের গবেষণার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তারা তাদের নিজস্ব কম্পিউটারগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয় এনএসএফ (NSF) প্রথম দিকে ৪টি কম্পিউটারের মধ্যেই এ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। মাত্র তিন বছরের মধ্যে এর সংখ্যা ৩৩-এ এসে দাঁড়ায়।
১৯৬৯ সালে কম্পিটার নেটওয়ার্ক ARPANET-এর জন্ম হয়। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফাইভেশন সকলের জন্য এই রকম একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। এর নামকরণ করা হয় ‘নেস্কোনেট। মাত্র তিন বছরের মধ্যে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। কিন্তু এর ব্যাপকতার কারণে প্রয়োজন হয় নিয়ন্ত্রণের। ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। ফলে বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয় ইন্টারনেট নামে প্রযুক্তির একটি নতুন ধারার সাথে।
ইন্টারনেট অনলাইন অফলাইন:
যদি কোন দেশে ইন্টারনেটের সাভার থাকে, তবে এই সার্ভারের সাহায্যে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে রাখা অপর সার্ভারের সাহায্যে যোগাযোগ করা যায়। এক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সাথে অন্য ইন্টারেট ব্যবহারকারীর এই সংযোগকে বলা হয় অন লাইন। যে সব দেশে সার্ভার নেই সেখানে প্রথম টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। একে বলা হয় অফ লাইন।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট :
১৯৯৩ সালের ১৩ বংলাদেশে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হয়। সে সময়ে অফ লাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা ছাড়াও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মেইল সার্ভিস দিয়ে আসছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ অনলাইনে প্রবেশ করায় প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নবতর সাফল্য লাভ করেছে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ৪ জুন VSTA চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ইন্টারনেট নতুন মাত্রা যোগ করে।
সাইবার ক্যাফে ঃ সারাদেশে বিশেষ করে বিভাগীয় শহরগুলোতে যত্রতত্র সাইবার ক্যাফে গড়ে উঠেছে। এসব স্থানে ছাত্র-ছাত্রীরাই বিশেষভাবে ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার বাজারে এসব ক্লাবগুলোতে অতি অল্প খরচে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট:
ইন্টারনেট চালুর মাধ্যমে ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এক নবমাত্রা যুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই সমগ্র বিশ্বের খবরাখবর জানা যাচ্ছে। তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ থেকে শুরু করে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষের সাথে আড্ডা, লেন, শিক্ষা, বিপণন, অফিস ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য, শেয়ার বাজারের খবরাখবর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা ব্যবস্থার সর্বশেষ খবর আমরা খুব দ্রুত ঘরে বসেই পেয়ে যাই।
উপসংহার:
আধুনিক প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর দান মানুষকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। সমগ্র বিশ্ব এখন একটি কমন ভিলেজ, সবকিছু মানুষের হাতের মুঠোয়। তবে সাধারণের জন্য এটি আরো সহজলভ্য করে তুলতে হবে। ইন্টারনেটের ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহার ও অনুশীলনের দ্বারা দেশের উন্নয়নে একে কাজে লাগাতে হবে। আর এজন্য দেশব্যাপী একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন :