আজ আলাপ হবে ক্রিয়ার কাল নিয়ে | এটি ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণির একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। ক্রিয়ার কাল বোঝাতে সংস্কৃতে ‘ল’ পরিভাষাটি চলত। বাংলায় স্বতন্ত্র কোনো পরিভাষা নেই। ইংরেজি Tense শব্দটি ‘কাল’-বাচক (লাতিন Temps > tense = time) কোনো কাজ সম্পাদনের জন্যে যে সময়ের প্রয়োজন তাকে অতীত বা বর্তমান বা ভবিষ্যৎ এই তিন দিক থেকে বিবেচনা করা চলে। কাজ সম্পন্ন হওয়ার সময় এখন হচ্ছে’, ‘আগে হয়েছে’, অথবা ‘পরে হবে’ —এসব দিক বিবেচনায় ‘ক্রিয়ার কাল’ প্রসঙ্গ আসে।
Table of Contents
ক্রিয়ার কাল | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা
“ক্রিয়া’ সম্পাদনের সময়কে ‘কাল’ বলে। যেমন আমি যাই। তুমি গিয়েছিলে। সে আসবে, ইত্যাদি।
প্রত্যয় বা বিভক্তিযোগে ক্রিয়ার কালের রূপান্তর ঘটলে, কিয়া ব্যাপারটি সাধারণত ঘটে ঘটে থাকে” বা “এখনও ঘটছে’, কিংবা ‘অতীতে’ সম্পন্ন হয়ে গেছে অথবা ভবিষ্যতে ঘটবে — এ ধরনের কালের ধারণা জন্মায়, যা “ক্রিয়ার কাল’ বলে পরিচিত।
ক্রিয়ার কাল সংজ্ঞার্থ :
ক্রিয়া বর্তমানে, অতীতে বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হওয়ার সময় নির্দেশই ক্রিয়ার কাল।
যে সময়ে বা কালে কোনও ক্রিয়া ব্যাপার ঘটে, তাকে বলে ‘ক্রিয়ার কাল’ (Time of action)। সমাপিকা ক্রিয়াপদের রূপের দ্বারা ক্রিয়ার কাল ও পুরুষ বুঝতে পারা যায়, সমাপিকা ক্রিয়াপদের এই কাল-বাচক রূপকে বলে ক্রিয়ার কাল-রূপ (Tense)।
ক্রিয়ামূল অর্থাৎ ধাতুর সঙ্গে কাল (সময়) ও পুরুষ জ্ঞাপক (ক্রিয়া) বিভক্তিযোগে নিরাপদ গঠিত হয়। সমাপিকা ক্রিয়ারই কালরূপ হয়, অসমাপিকা ক্রিয়ার কানরূপ হয় না। কারণ, অসমাপিকা ক্রিয়া সব সময় অপরিবর্তিত রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কালের প্রকারভেদ:
ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকার। যেমন-
১. বর্তমান কাল ২. অতীত কাল ৩. ভবিষ্যৎ কাল।
প্রত্যেক কাল আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। নিচে একটি রেখাচিত্রের মাধ্যমে ক্রিয়ার কালের বিভিন্ন রূপ বা ক্রিয়ার কালের শ্রেণিবিভাগ দেখান হল—
নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ:
১। চিরন্তন সত্য প্রকাশে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল হয়। যেমন— দুইয়ে দুইয়ে চার হয়।
২। কাব্যের ভণিতায় নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বোঝায়। যেমন— ‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
৩। অনিশ্চয়তা প্রকাশে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের ব্যবহার হয়। যেমন- কে জানে, সে আর আসবে কিনা।
৪। ‘যদি’, ‘যেন’, ‘যখন’ প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগো অতীত ও ভবিষ্যৎ কাল অাপনের জন্য সাধারণ বর্তমান কালের ব্যবহার হয়। যেমন— যদি পরীক্ষায় পাস কর, আমি আনন্দিত হব। বিপদ যখন আসে, একা আসে না।
সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের প্রয়োগ:
১। আক্ষেপ প্রকাশে অতীতের সালে ভবিষ্যৎ কাল ব্যবহার হয়। যেমন- কে জানত, আমার ভাগ্য এমন হবে?
২। অতীত কালের ঘটনা সম্পর্কিত যে ক্রিয়াপদে সন্দেহের ভাব বর্তমান থাকে, তার বর্ণনায় সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের ব্যবহার হয়। যেমন- ভাবলাম, তিনি এখন কলেজে গিয়ে থাকবেন। তোমরা হয়ত ইতিহাস পড়ে থাকবে।
ঘটমান ভবিষ্যৎ ক্রিয়ার রূপ:
নাম পুরুষ (সাধারণ) -ইতে থাকিবে/ তে থাকবে। (করিতে থাকিবে/ করতে থাকবে)। নাম পুরুষ ও মধ্যম পুরুষ (সম্ভ্রমাত্মক) : ইতে থাকিবেন / তে থাকবেন। কেরিতে থাকিবেন । করতে থাকবেন। ।। মধ্যম পুরুষ (সাধারণ) : -ইতে থাকিবে -তে থাকবে। করিতে থাকিবে/ করতে থাকবে)। মধ্যম পুরুষ (তুচ্ছার্থক) -ইতে থাকিবি তে থাকবি। কেরিতে থাকিবি / করতে থাকবি।। উত্তম পুরুষ -ইতে থাকিব । তে থাকল। করিতে থাকিব । করতে থাকব।
লক্ষণীয় :
এখানে মূল ক্রিয়ার সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়ার ই তে বিভক্তি যুক্ত হয় এবং সেই সঙ্গে থাক্ ধাতুর সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়।

আরও দেখুন: