বাংলা অনুজ্ঞা | রূপতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা , বাংলা অনুজ্ঞা : আদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, প্রার্থনা, অনুনয় প্রভৃতি অর্থে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কালে মধ্যমপুরুষের ক্রিয়াপদের যে রূপ হয় তাকে অনুজ্ঞা পদ বলে। অথবা, “যে-ভাব আবেদন, অনুমতি, অনুরোধ, আদেশ, আমন্ত্রণ, আশীর্বাদ, প্রার্থনা ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে ‘অনুজ্ঞা’ ভাব বলে (Imperative mood)।
[Imperative শব্দটির মূলে আছে লাতিন Imperare = to command]
আবেদন : দয়া করে একবার দেখবেন ব্যাপারটা। অনুমতি : হ্যাঁ, ওখানেই যাও। অনুরোধ : অনুগ্রহ করে এই অনুচ্ছেদটার অর্থ বুঝিয়ে দিন। আদেশ : এক্ষুনি বেরিয়ে যাও। আমন্ত্রণ : সপরিবার আসুন। আশীর্বাদ : বেঁচে থাকো, বাবা। প্রার্থনা : ক্ষমা করো মোর অপরাধ।
বাংলা অনুজ্ঞা | রূপতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
অনুজ্ঞার প্রকারভেদ
অনুজ্ঞাকে বিভক্তিযোজনার প্রকারভেদে দু-ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১। ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞা (বর্তমানকালের বিভক্তিযোগ),
২। ঘটমান ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা (ভবিষ্যৎকালের বিভক্তিযোগ)।
১। ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞা : মূল ক্রিয়াপদের সঙ্গে ইতে\ -তে বিভক্তি যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ গঠন করা যায়। এই অসমাপিকা ক্রিয়াপদ এবং থাক ধাতুর সঙ্গে (সাধারণ) বর্তমান অনুজ্ঞার বিভক্তি যুক্ত করে যে ক্রিয়াপদ হয়, তারা উভয়ে মিলে যৌগিক ক্রিয়া উৎপন্ন করে। এই যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে। যেমন—
(সে) -ইতে \ -তে + উক (করিতে\ করতে থাকুক)
(তিনি / আপনি) –ইতে\ তে + উন (করিতে\ করতে থাকুন)।
(তুমি) –ইতে/ -তে -ও (করিতে/ করতে থাক / থাকো)।
(তুই)- ইতে \ – তে + ০ (করিতে/ করতে থাক)
মূল ধাতুর সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়া বিভক্তি -ইতে । -তে যুক্ত হয়। এরূপ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া সর্বদা অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে। এই অসমাপিকা ক্রিয়া এবং সাধারণ বর্তমানের অনুজ্ঞার ক্রিয়াবিভক্তিযুক্ত থাক্ ধাতু (ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার) মিলে যৌগিক ক্রিয়া উৎপন্ন করে। এই যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে।
থাক ধাতুর সঙ্গে যুক্ত ক্লিয়াবিভক্তিগুলোই অনুক্লা অর্থ প্রকাশ করে। মূল ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন অসমাপিকা ক্রিয়াটি ঘটমানতা প্রকাশে সাহায্য করে।
২। ঘটমান ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা : উল্লিখিত কারণেই ঘটমান ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞার জন্য পৃথক ক্লিয়াবিভক্তিসমূহের অস্তিত্ব স্বীকার করা অপ্রয়োজনীয়। যেমন- –
-ইতে / -তে + ইবেন / বেন (করিতে থাকিবেন/ করতে থাকবেন)।
-ইতে / -তে + ইও-এ-ও (করিতে থাকিও / করতে দেকো)।
-ইতে / -তে + ইস (করিতে থাকিস করতে থাকিস)। -ইতে / -তে + ইবে / -বে (করিতে থাকিবে/ করতে থাকবে) ।
অনুজ্ঞা পদের গঠন
১। মধ্যম পুরুষের তৃষ্ণার্থক বা ঘনিষ্ঠার্থক সর্বনামের অনুজ্ঞায় ক্রিয়াপদে কোনো বিভক্তি যোগ হয় না। মূল ধাতুটিই ক্রিয়াপদরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন— মধ্যম পুরুষ তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠার্থক— তুই (বই) পড়। তোরা (বই) পড়। কিন্তু অনুরোধ, আদেশ বা অনুরূপ অর্থে সম্প্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের সর্বনাম ‘আপনি’ বা ‘আপনারা এবং সাধারণ মধ্যম পুরুষের সর্বনাম ‘তুমি’ বা ‘তোমরা’ পদের সঙ্গে যে অনুজ্ঞা পদের ব্যবহার হয়, তাতে বিভক্তি যুক্ত। থাকে। যেমন— সমুদ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষ— আপনি (আপনারা) আসুন (< আস্ + উন)।
সাধারণ মধ্যম পুরুষ— তুমি (তোমরা) আস (আস্ + অ)।
২। প্রাচীন বাংলা রীতিতে মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞায় কিয়ার থকে। ‘হ’ যোগ করার নিয়ম ছিল। এই “হ” বর্তমানে অ এবং ও-তে রূপান্তরিত হয়েছে। যেমন—— ক. করহ (কর) আপন কাজ, তাতে কিবা ভয় লাজ। খ. অধম সন্তানে মাগো দেহ ( দাও) পদচ্ছায়া।।।
৩। ক. উত্তম পুরুষের অনুজ্ঞা পদ হতে পারে না, কারণ কেউ নিজেকে আদেশ করতে পারে না।
খ. অপ্রত্যক্ষ বলে নামপুরুষের অনুজ্ঞা হয় না। তবে এই মত সকলে সমর্থন করেন না।
৪। ক. মধ্যম ও নাম পুরুষের বর্তমান অনুজ্ঞার রূপ
গ। মধ্যম ও নাম পুরুষের ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞার রূপ
আরও দেখুন:
- সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা
- বিশেষ্য ও বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা
- অব্দ বা বর্ষ গণনা | সংখ্যাবাচক শব্দ | ভাষা ও শিক্ষা
- বাংলা ভাষার শব্দশ্রেণি | পদনির্মাণ ও শব্দনির্মাণ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা
- বিনা সাজে সাজি , প্রেম ৩২০ | Bina shaje shaji