Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন। ভাব সম্প্রসারণ শব্দের অর্থ ভাবের সম্প্রসারণ অর্থাৎ বিস্তারিতভাবে প্রয়োজনীয় উপমা দৃষ্টান্তমূলক যুক্তিসহকারে সহজ উপায় এবং সরল ভাষায় উপস্থাপন করতে হয় সম্প্রসারিত ভাব এর বিষয়বস্তু কি ছোট ছোট অনুচ্ছেদ আকারের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে

অন্যায়কারী এবং অন্যায়কে যে প্রশ্রয় দেয় তথা অন্যায় সহ্য করে, উভয়েই সমান অপরাধী। নিজে অন্যায় না করলেই যে তার কর্তব্য ফুরিয়ে যায় এমনটি নয়। বরং অন্যায়কে প্রতিহত করাই সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।সমাজকে যারা উৎপীড়ন করে, ব্যক্তির অধিকারকে যারা হরণ করে, মানুষের বহু অভিজ্ঞতা এবং প্রযত্নে রচিত আইন ও শৃঙ্খলাকে যারা বিঘ্নিত করে তারা নিঃসন্দেহে অন্যায়কারী। অন্যায়ের যেমন বহুক্ষেত্র আছে, অপরাধেরও তেমনি মাত্রার তারতম্য আছে।

 

 

এই মাত্রা অনুসারেই অন্যায়কারীর অপরাধের পরিমাপ করা হয়। আইনের দৃষ্টিতে অন্যায়কারী বা অপরাধী দণ্ডযোগ্য বলে বিবেচিত। কিন্তু অন্যায়কে যারা নিঃশব্দে সহ্য করে, তারাও কি পরোক্ষভাবে পাপের প্রশ্রয় দিয়ে সমান অপরাধী নয়? — অবশ্যই তারাও সমান অপরাধী। উদার মনোভাব প্রদর্শন করার জন্য অন্যায়কে ক্ষমা করা বা দয়া দেখিয়ে অন্যায়কারীকে আশ্রয় দেওয়ার মধ্যে কোনো মহত্ত্ব তো নেই-ই, বরং তাও অন্যায়কারীর মতো সমান অপরাধের কাজ। সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যে যেমন রয়েছে অপরাধের প্রবণতা, তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রয়েছে অন্যায়কে মানিয়ে চলার মানসিকতা। এই মানসিকতায় কতখানি ক্ষমাশীলতা, কতখানি ঔদার্য, কতখানি সহনশক্তি তার পরিমাণ করা দুঃসাধ্য।

 

 

অন্যায়কে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা না করে ক্ষমা করে দেওয়ার মধ্যে মানবচরিত্রের দুর্বলতম দিকেরই প্রকাশ ঘটে। অন্যায়কে প্রশ্রয় দান করলে পৃথিবী মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বস্তুত মানুষ শুধু তিতিক্ষা ও করুণাবশতই অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে না; তার এই মনস্তত্ত্বের নেপথ্যে রয়েছে এক আত্ম-পলায়নী মনোভাব। নিজেকে অপরাধীর সংস্রব থেকে দূরে সরিয়ে রাখাকেই সে নিরাপদ বলে মনে করে। অধিকাংশ মানুষেরই এই নির্লিপ্ত নিস্পৃহতা অন্যায়কারীকে পরোক্ষভাবে সাহস জুগিয়েছে। স্বার্থভীরু আত্মমগ্ন মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠতে ভয় পায়।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এভাবেই সমাজে অপরাধপ্রবণতা কালক্রমে প্রবল হয়ে ওঠে; অত্যাচারীরা নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে চলে। মানব সংসারে অন্যায়কারীরা ঘৃণিত হলেও অন্যায় সহ্যকারী কিংবা ক্ষমাকারীরা অনেকসময় ঘৃণিত বলে বিবেচিত হয় না। মানুষের ন্যায়-অন্যায়ের এই চেতনা ও ভ্রান্ত। অন্যায়কারীর মত সহ্যকারীও সম-অপরাধে অপরাধী। মনুষ্যত্বের বিচারে মানুষের এই বিকৃতিও ক্ষমার অযোগ্য। বিশ্ববিধাতার ঘৃণার রুদ্র রোষানলে অন্যায়কারীর মতো অন্যায় সহ্যকারীও বিশুষ্ক তৃণের মতো ভস্মীভূত হবে। আসলে বস্তুজগতের স্থূল বিচারে সে নিরপরাধের ছাড়পত্র পেলেও নিখিল বিশ্বমানবতার দরবারে তার অপরাধের রেহাই নেই ।

কারও অপরাধ ক্ষমা করার মধ্যে যে উদারতা আছে তা মনুষ্যত্বেরই পরিচয়। কিন্তু ক্ষমার মাত্রা থাকা চাই। অন্যায়কারী যদি ক্ষমা পেয়ে বার বার অন্যায় করতে থাকে তবে সে ক্ষমার যোগ্য নয়। এতে তার অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। এই ধরনের অন্যায়কারীর অন্যায় ক্ষমা করা কোনো মহৎ ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। বরং সেও অন্যায়কারীর মতো সমান অপরাধী হবে। তাই অন্যায় যে করে সে যেমন সমাজে নিন্দনীয় ও ঘৃণার পাত্র, তেমনি অন্যায়কে যিনি বিনা বাধায়, মৌন অবলম্বন করে প্রশ্রয় দেন তাঁকেও ঘৃণার পাত্র ও নিন্দনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা উচিত।

আরও দেখুন:

Exit mobile version