শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল

Table of Contents

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি
১৪.

পোয়ারো সকালবেলা মনে মনে বললেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল। তার বিফলে গেছে কালকের রাতটা। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মহিলা মিসেস আপওয়ার্ড আর যথেষ্ট সচেতন আত্মরক্ষা সম্বন্ধে। পোয়ারো তার ভাবভঙ্গি কিছুই বুঝতে পারেননি। ভদ্রমহিলা আসলে তাকে বুঝতে দেননি। তিনি চিনতে পেরেছেন গ্যাম্বা র ফটোটা এবং নিজেই সে সম্পর্কে ব্যবস্থা নেবেন। গতকালের ঘটনাটা বাগানে বেড়াতে বেড়াতে আগাগোড়া নিজের মনে পোয়ারো বিশ্লেষণ করছিলেন।

হঠাৎ একেবারে ঠিক পেছনে শোনা গেল কারও কণ্ঠস্বর।

-মিঃ পোয়ারো। লঘুপদে মিসেস রেগুল সামনে এসে দাঁড়ালেন।

মোটেও মিঃ পোয়ারো তাঁর পদশব্দ শুনতে পাননি। বড্ড নার্ভাসবোধ করছেন কাল থেকেই।

ক্ষমা করবেন। আপনি এসেছেন, টের পাইনি আমি একেবারে।

একটু হাসলেন শেলা। তিনি পোয়ারোর থেকে বেশি নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। কাঁপছে। চোখের পাতা। অস্থির ভাবে বারবার দুহাত মুঠো করছেন।

নিশ্চয়ই আপনাকে আমি খুব বিরক্ত করছি না? আপনি কি এখন ব্যস্ত?

-না, না, মোটেও ব্যস্ত নই। বসন্তের সৌন্দর্য একটু উপভোগ করছি বাইরে বেড়িয়ে। ভীষণ হওয়া এ বাড়িটায়।

–তা যা বলেছেন।-জানলা কোনো সময় বন্ধ করা যায় না। আর খুলে খুলে যায় দরজাটাও।

-বাজে বাড়িটা। ওঁরা যত্ন নেন না বাড়িটার। অবশ্য সামর্থ্যও নেই সত্যি। তাহলে রাখা কেন বাড়িটা, আমি হলে বিক্রি করে দিতাম এটা। এমন বাজে সেন্টিমেন্টের মানে হয় না কোনো।

–আমরা আজকাল কেউই সংবেদনশীল নই।

–হবে। আড়চোখে পোয়ারো ভদ্রমহিলার অস্থির হাত দুটোর দিকে তাকালেন। শেলাই প্রথম কথা শুরু করেন, মনে মনে তিনি তাই চাইছিলেন।

–আচ্ছা, যখন কোথাও তদন্ত করতে যান আপনি, কেন এসেছেন এখানে? একথার কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হয় সেখানে?

মহিলার দিকে চোখ না রেখেও পোয়ারো বুঝলেন যে তাকে তীক্ষ্ণভাবে শেলা নিরীক্ষণ করছেন।

পোয়ারো বললেন, হ্যাঁ, বলে নিলে সুবিধে হয় অনেক ক্ষেত্রে।

বড্ড বিরক্তিকর।

–কিন্তু আমার তা মনে হয় না। কাজ এতে বেশ তাড়াতাড়ি এগোয় বলে ধারণা আমার।

–তাহলে এখন বলুন, এখানে কেন মিঃ পোয়ারো আপনি এসেছেন। এই ব্রডহিনিতে?

–সে কারণটা তো আমি আপনাদের বলেছি। মিসেস ম্যাগিনটির খুনের কিনারা করতে এখানে এসেছি।

–আপনি তাই বলছেন বটে কিন্তু তা অবিশ্বাস্য।

–তাই নাকি?

–হ্যাঁ, কে এ কথা বিশ্বাস করে না।

–কিন্তু সত্যি এটাই। একটা কথা বলবেন?

–বলুন।

–আমি উড়োচিঠির সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই।

–বেশ তো।

–সব সময় এগুলো মিথ্যে হয়, তাই না?

–অনেক সময়।

–না সব সময়।

–আমি তা বলতে পারি না।

–এ ধরনের চিঠিগুলো ভীরুতা, বিশ্বাসঘাতকতা আর নিচু মনের লক্ষণ।

–আমি আপনার কথা সমর্থন করি।

নিশ্চয়ই আপনি এগুলোর বিষয়বস্তু বিশ্বাস করেন না?

–খুব কঠিন প্রশ্ন। না। আর আমি একবর্ণও বিশ্বাস করি না এইসব বিষয়ের।

শেলা প্রবলভাবে আপত্তি জানিয়ে হঠাৎ বিদায় নিলেন। ভুরু কুঁচকালেন পোয়ারো।

সব ব্যাপারটাই গোলমেলে। শেলা তার আগমনের কারণ বিশ্বাস করেন না। তার মানে একটা অজুহাত এটা। কিন্তু ভয় দেখানো উড়োচিঠির সম্পর্ক কি এর সঙ্গে? শেলাই কি লরা আপওয়ার্ডের সনাক্ত করা ছবির মানুষ? তাহলে কি শেলা লিলি গ্যাম্বল? লিলির সম্বন্ধে সর্বশেষ খবর সে আয়ার্ল্যাণ্ডে ছিল। তার পরিচয় ছিল একজন স্টেনোগ্রাফার। তবে কি সেই সূত্রেই সেখানে ডাক্তারের সাথে পরিচয় তার? ডাক্তার লিলির অতীত ইতিহাস না জেনে বিবাহ করেছেন তাকে? এ সবই সম্ভাবনার কথা। কিন্তু সত্যি হতেও পারে। হঠাৎ ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করায় পোয়ারো বাড়িতে ঢুকলেন। ইস, তিনি যদি খুনের হাতিয়ারটা খুঁজে বের করতে পারতেন। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত তার মনে হল, যেন অস্ত্রটা তিনি কোথাও দেখেছেন। কোথায়?

.

পোয়ারো ভেবে অবাক হচ্ছিলেন কি করে চোখের এত সামনে থেকেও অস্ত্রটা তার নজর এড়িয়ে গিয়েছিল এতদিন আশ্চর্য। বইয়ের আলমারির ওপরেই ওই তো ওটা রাখা আছে। ঠিক জানলার ধারে। লং মিডোস-এ আসার পরই তো ওখানে ওটা তার দেখার কথা। ওখানে আছে গোড়া থেকেই।

হাতে তুলে পোয়ারো পরীক্ষা করলেন। ধার আছে, বেশ ভারীও। বাড়িমারার ভঙ্গি করছেন হাতে তুলে এমন সময় কুকুর দুটোর পেছন পেছন মরিন ঘরে ঢুকলেন, পোয়ারোকে হালকা গলায় বললেন, আপনি কি খেলা করছেন মিঃ পোয়ারো চিনি গুড়োবার যন্ত্রটা নিয়ে?

–এটা বুঝি চিনি গুঁড়োবার যন্ত্র?

-হ্যাঁ, অথবা বলতে পারেন হাতুড়িও, ঠিক আমি জানি না। দেখতে কিন্তু মজার। হাতলে ঐ পাখিটা থাকার জন্য, তাই না?

পোয়ারো যন্ত্রটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলেন–পেতলের তৈরি ভারী বাটালির মত। যথেষ্ট ধার আগায়। হালকা নীল, লাল পাথর বসানো আছে জায়গায় জায়গায়। হাতলে ছোট্ট পাখিটার চোখ দুটো চকচক করছে।

যন্ত্রটা মরিন হাতে নিয়ে তুলে কাউকে মারার মত ভঙ্গি করলেন।

–কাউকে এটা দিয়ে মারা খুব সহজ, না?

পোয়ারো তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে মরিনের দিকে তাকালেন, শিশুর সরলতা আর কৌতুক মাখানো মরিনের চোখে।

মরিন আবারও বললেন, মস্তিষ্ক পর্যন্ত এটা দিয়ে বিধিয়ে ফেলা যায়, কি বলেন? জনিকে আজই বলছিলাম জীবনে যদি আমার ক্লান্তি আসে তবে এটাই আমার বন্ধুর কাজ করবে।

এবার মরিন হাসতে হাসতে ওটা রেখে দিলেন।

–আমি কেন যেন এঘরে এসেছিলাম? দূর ছাই, মনে পড়ছে না। যাক গে, দেখি হয়ত জল লাগবে আবার পুডিং-এ।

ঘর থেকে মরিন বেরিয়ে যাবার আগেই তাড়িতাড়ি পোয়ারো জিজ্ঞেস করলেন, ভারতবর্ষ থেকে ফেরার সময় বোধহয় এটা নিয়ে এসেছেন?

-না তো। ওটা বি অ্যাণ্ড বি থেকে বড়দিনের সময় কেনা।

–বি অ্যাণ্ড বি? সেটা আবার কি?

-মানে ব্রিং অ্যাণ্ড বাই। অর্থাৎ আপনার কোনো প্রয়োজনে লাগে না এমন জিনিস ওখানে নিয়ে গিয়ে তার বদলে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিলেন। অবশ্য ওখানে সেরকম দরকারী জিনিস অবশ্য কিছু থাকে না। আমি একটা কফি পটও এটার সঙ্গে এনেছিলাম। আসলে আমার পটের নল ও বাটালির হাতলের পাখিটা খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত কফি পটটা বাগদাদ থেকে কেনা, ওয়েদারবিরা সেরকমই বলেছিলেন। অথবা পারস্যের জিনিসও হতে পারে।

-তাহলে ওয়েদারবি পরিবারের সম্পত্তি ছিল এটা?

-হ্যাঁ। এরকম অনেক জিনিস আছে ওদের। যাকগে এবার যাই, দেখতে হবে পুডিংটা। বেশ ছোট কফি পটটা। তামার তৈরি। পটের আকারের তুলনায় বেশি রকম লম্বা নলটা যা পোয়ারোকে কোনো পুরনো কিছু বিষয় মনে করিয়ে দিল যেন।

 

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

মরিন বেরিয়ে গেলে বাটালিটা নিয়ে পোয়ারো গেলেন জানলার ধারে। আগার ধারালো মুখটা একটু যেন বিবর্ণ হয়ে গেছে বলে মনে হল তার। অস্ত্রটা নিয়ে একটু দ্বিধা করে সোজা চলে এলেন নিজের শোবার ঘরে। একটা বাক্সে ওটাকে পুরে সুন্দর করে কাগজ দিয়ে প্যাক করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। তিনি নিশ্চিত যে এ জিনিসটার কেউ খোঁজ করবে না কারণ এ বাড়ির জিনিস বড় আগোছালো। মিসেস আপওয়ার্ডের বাড়িতে মিসেস অলিভারের জোর আলোচনা চলছে রবিনের সঙ্গে।

-এরিয়েন, কিছুতেই আমি বুঝতে পারছি না, আপনার গোয়েন্দাকে হঠাৎ আপনি নিরামিষাশী করতে গেলেন কেন।

কি করে বলব? জানি না কেন এরকম অদ্ভুত একটা লোকের কথা আমি ভাবলাম। ফিনল্যাণ্ডের অধিবাসীদের সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না, অথচ ওদেরই একজনকে গোয়েন্দা বানালাম না। যদি একবার পাঠক লেখককে পছন্দ করে ফেলে তখন আর থামা যায় না। আমার তো মনে হয় আমার বইতে যেমন ধরনের খুন হয় আমি তার চেয়ে নিজেই ঢের ভালো খুন করতে পারি। আমার বই তবুও সবাই পছন্দ করে।

–এটা কিন্তু ভালো প্লট হবে। একজন খাঁটি গোয়েন্দা সভেন জারসন কে খুন করলেন আপনি আর আপনার মৃত্যুর পর সেই বই প্রকাশিত হল।

-কিন্তু কি হবে টাকাটার শুনি? খুনের ঘটনা ঘটে গেলেই যে আমার টাকাটা চাই?

–হ্যাঁ, সে ঠিক কথা। তবে এর থেকে বেশি আমি আর কি বলতে পারি? যাতে ভালোভাবে নাটক ওতরায় শুধু সেই চিন্তা রবিনের। অসন্তুষ্ট ভাবে সে মিসেস অলিভারের দিকে তাকাল।

মিসেস অলিভার সেদিন সকালবেলা খুব মনোযোগ দিয়ে চুলে কলপ লাগাচ্ছিলেন। উঁচু কপাল তাঁর, বিশাল চশমা এবং গম্ভীর ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল রবিনের স্কুলের দিদিমণির কথা।

রবিন বলে উঠল, আমার কাজে মন লাগছে না। বরং ঠিক করে ফেলা যাক কাকে কোন চরিত্রে অভিনয় করতে দেওয়া যায়। ডেনিস ক্যালরিকে যদি পাওয়া যায়, ও আবার ব্যস্ত সিনেমা নিয়ে, আর তার সাথে জীন বেলিউসকে তাহলে ভালো হয় সবচেয়ে। আমরা আজ রাত্রে একবার সিসিলের সঙ্গে দেখা করব। কেমন মানাবে ওকে, ভালো করে একবার খেয়াল করে দেখবেন কিন্তু।

সম্মতি নিয়ে মিসেস অলিভারের টেলিফোনে রবিন সব বন্দোবস্ত করে রাখল।

.

সকালটা দেখে যেমন মনে হয়েছিল সারাদিন আবহাওয়া ভালোই যাবে। তা কার্যক্ষেত্রে হল না। আকাশ খানিক বাদেই মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। বৃষ্টি নামবে মনে হল।

লতা পাতার একগাদা ঝাড় সরিয়ে হান্টাস ক্লোস এ ঢুকতে ঢুকতে মনে হল পোয়ারোর, তার এরকম জায়গায় থাকা পোষায় না। বাড়ি ঘিরে গাছপালা, দেওয়াল থেকে আইভিলতা।

বাপরে বাপ। একটা গাছ কাটার কুঠার সঙ্গে থাকলে ভালো হয়। (কুঠার? চিনি গুঁড়োবার যন্ত্র?) ঐ ধারালো বাটালিটার কথা হঠাৎ মনে পড়ল তার।

ওয়েদরবিদের দরজায় এসে দাঁড়ালেন পোয়ারো। ডীডার বেল শুনে খুলে দিল দরজা।

–আপনি?

–হ্যাঁ, কথা বলতে পারি আপনার সঙ্গে?

নিশ্চয়ই। আসুন।

পোয়ারো বসার ঘরে প্রবেশ করলেন।

মরিনের কেনা কফির পটের মত হুবহু এক রকম কফি পট তাকের ওপর দেখতে পেলেন। এটা অবশ্য একটু বড়। প্রাচ্যদেশীয় আবহাওয়া ঘরের সর্বত্রই।

-একটু ব্যস্ত ছিলাম আমরা। ফ্রিডা, এখানে যে কাজ করত, চলে যাচ্ছে আজ। এক মাস ছিল মোটে। আমার মনে হয় ও যে কাজটা ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছে তার একমাত্র কারণ ও যাকে বিয়ে করবে সে থাকে সেখানে। ঠিকঠাক সব হয়ে যাওয়াতে ও আজই চলে যাচ্ছে।

–এ খুব অন্যায়।

–ঠিক বলেছেন। আমার সৎপিতাও তাই বলছেন। কিন্তু আমার মনে হয় ওর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার এটা। আমাদের কিছু বলার নেই। ও জামাকাপড় গুছোবার সময় দেখে ফেলেছি আমি তাই। নইলে আমাদের না জানিয়েই ও চলে যেত। টেরও পেতাম না কেউ।

-ন্যায়সঙ্গত নয় কাজটা। তবে অত বিবেচনা থাকার কথা নয় এ বয়সে।

–হ্যাঁ। আমি আজ খুব ক্লান্ত।

–দেখে তাই মনে হচ্ছে বটে।

–কি জানতে চান আমার কাছে?

–চিনি গুঁড়ো করবার একটা হাতুড়ি সম্পর্কে।

–চিনি গুঁড়ো করার হাতুড়ি?

-পেতলের তৈরী। একটা পাখি বসানো হাতলে। গোটা জিনিসের গায়ে লাল নীল পাথর আছে।

–ও হা মনে পড়েছে। মিস হেণ্ডারসন নিরুৎসুক স্বরে বলল। বোধহয় ওটা এককালে এ বাড়িতেই ছিল?

–হ্যাঁ। ওটা বাগদাদ থেকে আমার মা কিনেছিলেন। ওটা পরে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়।

–ওই ব্রিং অ্যাণ্ড বাই সেলে না?

–হ্যাঁ, ওটা বেশ সুবিধাজনক।

বড়দিনের আগে পর্যন্ত জিনিসটা এখানেই ছিল তাহলে?

–না। ওটা বিক্রি করা হয় ফসল কাটা উৎসবের সময়।

কবে হয় ঐ উৎসব? অক্টোবর না সেপ্টেম্বরে?

সেপ্টেম্বরের শেষে। মিস হেণ্ডারসনের দিকে তাকালেন। ডীডারও তার দিকে তাকিয়ে ছিল। মুখ তার নির্বিকার, ভাবলেশহীন।

মিস হেণ্ডারসন, আপনি কি নিশ্চিত যে ওটা সেপ্টেম্বরেই বিক্রি করা হয়, বড়দিনে নয়?

নিশ্চিত আমি। ডীডার স্থির নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল।

পোয়ারো আরও কিছু শোনার আশায় ছিলেন। কিন্তু তার পূরণ হল না সে আশা।

–তাহলে এবার উঠি, মাদমোয়াজেল।

তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এল ডীডার। যেতে যেতে পোয়ারো ভাবছিলেন কার কথা ঠিক? মরিনের না ভীডারের? অস্ত্রটা ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ পর্যন্ত কার জিম্মায় ছিল? বাইশে নভেম্বর খুন হন মিসেস ম্যাগিনটি

পোস্ট অফিসে গেলেন পোয়ারো। মিসেস সুইটিম্যান ছোটখাটো দরকারে তাঁকে চমৎকার সাহায্য করেন। উনি কিন্তু বর্ণনা শুনে অস্ত্রটির কথা মনে করতে পারলেন না। উনিও নিয়মিত ব্রিং অ্যাণ্ড বাই সেলে যান। তবে কফি পটের সাথে একটা কিছু ছিল তা মনে পড়ছে। বোধহয় দাম আন্দাজ পঁচিশ শিলিং। শুধুই ঘর সাজানোর জন্য কফি পট কারণ ওর তলায় একটা ফুটো ছিল। উনি সময়টা সঠিক বলতে পারলেন না কিছুতেই, বড়দিনে না তার আগে।

উনি পোয়ারোর অস্ত্রের প্যাকেটটা রেজিস্ট্রি করার দায়িত্ব নিলেন।

ওঁর চোখে পোয়ারো কৌতূহলের ছোঁয়া লক্ষ্য করলেন।

পোয়ারো ওখান থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়ের গা বেয়ে ধীরে ধীরে উঠতে লাগলেন।

ডীডার আর মরিনের মধ্যে সরল মরিন। কিন্তু তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। তাই ভুল হবার সম্ভাবনা তার বেশি। আবার একটু অদ্ভুত প্রকৃতির বলে ডীডারের কথাও সম্পূর্ণ ঠিক তাও বলা চলে না। তবে একটা কথা এর মধ্যে থেকেই যাচ্ছে। ডাডারের প্রশ্ন করা উচিত ছিল পোয়ারোকে, কেন তিনি জিজ্ঞাসা করছেন অস্ত্রটার কথা। তার পক্ষে প্রশ্নটা করা খুবই স্বাভাবিক ছিল অথচ সে করেনি।

 

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

১৫.

মরিন বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই বলল, মিঃ পোয়ারো একটা ফোন এসেছিল আপনার।

-কার বলুন তো?

–তা জানি না তবে লিখে রেখেছি নম্বরটা।

–খুব ভালো। খাবার ঘরে রাখা টেলিফোনের কাছে গিয়ে পোয়ারো নম্বরটা দেখলেন কিলচেস্টার ৩৫০। তিনি টেলিফোনের রিসিভার তুলে ডায়াল করলেন নাম্বারটা। ওপাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এল নারীকণ্ঠ, ব্রিদার অ্যাণ্ড স্কাটল।

চট করে পোয়ারো বললেন, মিস মড উইলিয়ামসের সঙ্গে কি আমি কথা বলতে পারি?

–মিস উইলিয়ামস বলছি।

–আমি এরকুল পোয়ারো। আমায় আপনি ফোন করেছিলেন?

–হ্যাঁ, আমিই। আপনি যে সম্পত্তিটার কথা বলেছিলেন সে সম্বন্ধেই কিছু বলতে চাই।

অবাক হলেন পোয়ারো কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলেন অন্য লোক ঘরে আছে বলে মডের অসুবিধে আছে খোলাখুলি কথা বলতে।

–বুঝেছি। বেন্টলী ও মিসেস ম্যাগিনটির ব্যাপারে আপনি সাহায্য করতে চান।

–হ্যাঁ। কি করব আমি?

-বেন্টলীর জন্য আপনি আমাকে সাহায্য করতে চান এবং আপনি যেখানে আছেন, তা ওই কাজের পক্ষে নিরাপদ নয়, এই তো?

-হ্যাঁ।

–বুঝেছি। শুনুন সত্যিই আপনি সাহায্য করতে ইচ্ছুক?

–নিশ্চয়ই।

–এই চাকরিটা যদি ছাড়তে হয়?

–তা হলেও।

–গৃহস্থালীর কাজকর্ম কি করবেন আপনি?

–আপত্তি নেই।

–চাকরি এখনি ছেড়ে দিতে পারবেন? আগামী কালই?

–পারব।

–বুঝতে পারছেন কি যে, হয়ত রান্নাও করতে হবে আপনাকে? আপনি রান্না করতে জানেন?

-জানি খুব ভালোই।

–শুনুন তা হলে। আমি এখুনি কিচেষ্টার যাচ্ছি। আপনার সঙ্গে সেই রেস্তোরাঁতেই দেখা করব, অবশ্যই মধ্যাহ্নভোজনের সময়।

-আচ্ছা।

পোয়ারো ফোন নামিয়ে রেখে মনে মনে মড়কে সাধুবাদ দিলেন। তিনি তারপর মিসেস ওয়েদারবিকে ফোন করলেন।

–হ্যালো, মঁসিয়ে পোয়ারো কথা বলছি। চিনতে পারছেন?

–ঠিক বুঝতে পারছি না….

–আমি এরকুল পোয়ারো।

-হা হা, বুঝেছি। চিনতে পারিনি আগে তাই ক্ষমা করবেন। বাড়ির অবস্থা যে কি তা বলে বোঝাতে পারব না আপনাকে। ঝামেলা চলছে খুব।

–তা আমি জানি। ফোন করছি সেইজন্যই।

–এত অকৃতজ্ঞ হয় এইসব কাজের লোক। আমি অকৃতজ্ঞতা দু চক্ষে দেখতে পারি না।

–আপনাকে আমিও সমর্থন করি। আচ্ছা, আমার পরিচিত একটি মেয়ে এই ধরনের কাজ খুঁজছে। তবে হয়ত সে ট্রেনিং পায়নি। বলেন তো একবার দেখতে পারি।

–আজকাল ট্রেনিং-এ কিছু কাজ হয় না। যাকগে সে রাঁধতে জানে তো?

জানে। তাহলে কি ওকে আপনার কাছে পাঠাবো? মড উইলিয়ামস ওঁর নাম।

–পাঠিয়ে দিন দয়া করে। আপনি যে আমার কত উপকার করলেন। আমার স্বামী সব ব্যাপারে এত নিয়ম মেনে চলেন যে ডীডারকে তুচ্ছ কারণে বকুনি খেয়ে মরতে হচ্ছে।

হঠাৎ কথায় ছেদ পড়ল। বোধহয় ভদ্রমহিলার ঘরে কেউ ঢুকেছে। রিসিভারে হাত চাপা দিয়ে তার সঙ্গে উনি কথা বলতে লাগলেন। পোয়ারোর কানে অস্পষ্টভাবে কথাগুলো এল : ঐ মিঃ পোয়ারো ফোন করেছেন। উনি ফ্রিডার বদলী হিসেবে এখানে একজনকে কাজ দিতে পারেন। উনি কি সত্যি ভালো লোক। না না, আপত্তি কোরো না আর। আমার মনে হয় আমাদের কপাল ভালো, আর বিদেশী নয় মেয়েটি, ইংরেজ।

মিসেস ওয়েদারবি আবার অজস্র ধন্যবাদ জানালেন পোয়ারোকে।

পোয়ারো রান্নাঘরে ঢুকে মরিনকে বললেন, আমি দুপুরে খাওয়ার সময় থাকতে পারছি না, কিলচেষ্টার যেতে হচ্ছে আমায়।

-তাই বুঝি; যাক, ভালোই হয়েছে। সময়মত উনুন থেকে পুডিংটা নামাতে ভুলে গিয়েছিলাম। কি শক্ত হয়ে গেল। র‍্যাম্পাবেরীর বোতলটা ভেবেছিলাম খুলব। অবশ্য একটু ছাতা পড়ে গেছে তার ওপর, তবে খুব একটা খারাপ হবে না। বিশেষন পেনিসিলিন স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারী।

পোড়া পুডিং আর পেনিসিলিনের হাত থেকে দুপুরের খাওয়াটা বাঁচল দেখে পোয়ারো ধন্যবাদ দিলেন ভগবানকে। আজ রু ক্যাট এ ভালো জমবে খাওয়াটা, তিনি বাড়ি থেকে ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে এসে হাঁটতে লাগলেন।

 

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

ল্যাবারনাম এ রবিন আর মিসেস আপওয়ার্ডের মধ্যে কথা হচ্ছিল।

–রবিন, যখন নাটক নিয়ে তুমি মত্ত থাকো, তোমার অন্য কিছুই মনে থাকে না।

-মা, ভীষণ দুঃখিত আমি। ভুলেই গিয়েছিলাম আমি যে, আজ রাত্রে জ্যানেট বাড়ি থাকবে না।

-কিছু এসে যায় না তার থাকা না থাকাতে।

-হ্যাঁ, এসে যায়। বরং ফোন করে আমি জানিয়ে দিই আজ রাত্রে আমরা না গিয়ে আগামীকাল যাব।

-ও সব কিছু করতে যেও না। আজকে যাবার কথা, যাবে।

–কিন্তু।

–ব্যাস্ ঠিক আছে।

–জ্যানেটকে কি আমি বলব, আজকের বদলে কাল রাত্রে ছুটি নিতে?

–না, ও অপছন্দ করে ওর প্ল্যান ভেস্তে দেওয়াটা।

–মনে হয় আমি বললে ও কিছু মনে করবে না।

–কিছুই করতে হবে না তোমাকে। কিছু বোলো না জ্যানেটকে, আমি ভাবতে চাই না যে কাউকে অসুবিধেয় ফেলে আমার বার্ধক্য, …কিন্তু মা….

-ঠিক আছে। মিসেস অলিভারকে নিয়ে তুমি বেরিয়ে পড়। ঠিক করেছি পাড়ার কাউকে গল্প করতে ডেকে নেব আমার সঙ্গে।

কাকে?

–আমার নিজস্ব ব্যাপার সেটা। ব্যাস্ আর কিছু জানতে চেও না।

–শেলাকে আমি ফোন করি?

–ফোন করার কাউকে দরকার হলে আমিই করব। বরং তুমি কফি তৈরি করে রেখে যাও বেরোবার আগে। একটা বাড়তি কাপও রেখো সঙ্গে, যদি কাউকে ডাকি।

.

১৬.

পোয়ারো ব্লু-ক্যাট রেস্তোরাঁয় লাঞ্চে বসে মডকে তার পরবর্তী কাজ সম্বন্ধে বুঝিয়ে দিলেন বিস্তারিত।

-আপনি কি কি করতে হবে বুঝতে পারলেন তো?

–হা, মিঃ পোয়ারো।

–কোনো গোলমাল হবে না আপনার অফিসে?

–মামী খুব অসুস্থ আমার এই বলে অফিসে আমার নামে একটা টেলিগ্রাম নিজেই করে দিয়েছি আমি।

-খুব ভালো। একটা কথা মনে রাখবেন যে, একজন সুস্থ মস্তিষ্কের খুনী এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে নিরাপদে। কাজেই সাবধান।

–সতর্ক করে দিচ্ছেন আমাকে?

–ঠিক তাই।

–আত্মরক্ষায় আমি সমর্থ।

–তা ঐ টেলিগ্রাম পাঠানো দেখেই বোঝা যায়।

হেসে উঠল মড। প্রশংসার দৃষ্টিতে পোয়ারো এই মেয়েটিকে দেখতে লাগলেন। বিপজ্জনক কাজে ঝুঁকি নেবার মত মেয়েটির যথেষ্ট সাহস আছে।

-কাজটা আমাকে আপনি করতে দিয়েও কিন্তু ভয় দেখাচ্ছেন আবার।

–না, তবে চোখ কান খুলে সব বিষয়ে সতর্ক থাকাই ভালো।

–আমার তো মনে হয় না এটা খুব বিপজ্জনক কাজ।

–অবশ্য এখন পর্যন্ত আমারও মনে হয় না তা, ব্রডহিনিতে আপনি অপরিচিতা তো?

–তাই তো মনে করি আমি।

–আগে কখনো ওখানে গেছেন?

–দু-একবার অফিসের কাজে যেতে হয়েছিল। মাস পাঁচেক আগে।

–কাকে কাকে দেখেছেন? উঠেছিলেন কোথায়?

কারস্টেয়ার্স কিংবা কার্লাইল এ রকম নামের বৃদ্ধা মহিলা সম্পত্তি কেনার ব্যাপারে ডেকেছিলেন। গেস্ট হাউসে উনি উঠেছিলেন।

–লং মিডোস-এ?

-হা হা। বিশ্রী বাড়িটা একগাদা কুকুর। এখন যেখানে আছেন আপনি তার কাছাকাছিই হবে।

মাথা নাড়লেন পোয়ারো। আপনি কি মিসেস বা মেজর সামারহেসকে দেখেছিলেন?

–হ্যাঁ, মিসেস সামারহেসকে। আমাকে শোবার ঘরে উনিই নিয়ে যান। আবার বিছানায় একটা বেড়াল বসে ছিল।

-উনি কি আপনাকে দেখলে চিনতে পারবেন?

–মনে হয় না। আর পারলেই বা কি? লোকে তো চাকরি বদলায়। তবে আমার মনে হয় না আমাকে সেদিন উনি তেমন লক্ষ্য করেছেন। গলার স্বরে মডের তিক্ততা।

–ব্রডহিনিতে আর কারও সঙ্গে দেখা করেছিলেন?

–হ্যাঁ, মিঃ বেন্টলীর সঙ্গে। দেখা হয়ে যায় ঘটনাচক্রে।

না, ঠিক তা নয়, একটা চিঠিতে ওঁকে জানাই যে ওখানে আমি যাচ্ছি, উনি দেখা করতে পারবেন কি না। আমরা কোনো রেস্তোরাঁ বা সিনেমাতে যাইনি। শুধু ফেরার পথে যখন বাসস্টপে অপেক্ষা করছিলাম বাসের জন্য, দুজনের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছিল খানিকক্ষণ।

–সেটা কি মিসেস ম্যাগিনটির মৃত্যুর আগে?

–হ্যাঁ, তবে খুব বেশিদিন আগে নয়।

–বেন্টলী কি ভদ্রমহিলা সম্বন্ধে কিছু বলেছিলেন?

–না।

–আপনি সেদিন আর কারও সঙ্গে কথা বলেননি?

রেডিওতে রবিন আপওয়ার্ডের গলার স্বর শোনা যাচ্ছিল। সেখানে ওঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াতে ওঁর অটোগ্রাফ নিয়েছিলাম।

-উনি দিলেন?

-হ্যাঁ, তবে আমার কাছে কোনো নোটবই না থাকায় একটা যেমন তেমন কাগজে সই করে দেন।

–আর কারও মুখ চেনেন ওখানকার?

-হ্যাঁ, কার্পেন্টারদের। ওঁরা কিচেষ্টারে প্রায়ই আসেন। ওদের গাড়িটা খুব সুন্দর আর ভদ্রমহিলার পোশাকও। বোধহয় লোকসভার ভাবী সদস্য ভদ্রলোক।

 

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

–হ্যাঁ।

এবার পকেট থেকে পোয়ারো কতকগুলো ফটো বের করে টেবিলে রাখলেন।

–এদের মধ্যে চিনতে পারেন কাউকে? কি হল?

হঠাৎ যেন মডের মধ্যে একটু সচকিত ভাব দেখলেন তিনি।

-ভদ্রলোক, এইমাত্র যিনি বেরিয়ে গেলেন, ইনি মিঃ স্কাটল। দেখতে পাননি আমাকে। আমাকে এখানে আপনার সাথে দেখলে একটু অদ্ভুত হত ব্যাপারটা। জানেন তো, খুব আলোচনা হয় আপনাকে নিয়ে। আপনি নাকি ফরাসী?

-না, বেলজিয়ান। অবশ্য তাতে কিছু এসে যায় না। এখন বলুন আপনার কি মনে হয়। ফটোগুলো দেখে?

-খুব পুরনো ধাঁচের। সবচেয়ে পুরনোটা ত্রিশ বছর আগেকার।

ভীষণ বোকা বোকা, পুরনো আমলের পোশাক। এই পোশাকে ভদ্রমহিলাদের বিশ্রী দেখাচ্ছে।

–এদের কাউকে দেখেছেন আপনি?

সনাক্ত করতে বলছেন এদের, না এদের ছবি আর কোথাও দেখেছি কিনা জানতে চাইছেন?

–দুটোই।

–মনে হয় কোথাও দেখেছি এই ছবিটা (মডের হাতটা জেনিস কোর্টল্যাণ্ডের ছবির ওপর ন্যস্ত হল)। কোনো কাগজে বোধহয়। ঠিক মনে করতে পারছি না। একটু চেনা-চেনা লাগছে এই বাচ্চাটার ছবিও। কিন্তু কোথায় যে দেখেছি।

-এইসব ফটোগুলোই মিসেস ম্যাগিনটি মারা যাবার ঠিক আগের রবিবার সানডে কম্প্যানিয়ন এ ছাপা হয়েছিল।

তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে মতো পোয়ারোর দিকে তাকাল। এই ফটোগুলোর সংগে ঘটনাটার কোনো সম্পর্ক আছে ভাবছেন? আর সেজন্যই আপনি আমায়….

-হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, পোয়ারো এই বলে পকেট থেকে সানডে ক্যানিয়ন কাগজের কাটিংটা পড়তে দিলেন মডকে।

মড পড়া শেষ করে বলল, তাহলে এইসব মহিলাদের ছবি ওগুলো। আর আপনার ওরকম ধারণা তা দেখেই? কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। (সাগ্রহে পোয়ারো মডের দিকে তাকালেন) ….আপনি অনুমান করছেন যে, এদের মধ্যে এক বা একাধিকজন ব্রডহিনিতে আছে এখন?

হয়ত।

-হ্যাঁ। এদের যে কেউ যেখানে খুশি এখন থাকতে পারে। এই ইভা কেনের ছবিটা দেখে মনে হয় তার বয়স এখন মিসেস আপওয়ার্ডের বয়সের সাথে মিলতে পারে।

–প্রায়।

–কিন্তু এ রকম চেহারা বা বয়স তো অনেকেরই হতে পারে।

–তা পারে। আচ্ছা, ক্রেগ মামলার কথা আপনি মনে করতে পারেন?

–পারি। আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম। ওই মামলার সঙ্গে অন্যান্য মামলার তুলনা করা হত। আমার তো মনে হয় না এই মামলার কথা কখনো কেউ ভুলবে।

মাথা তুললেন পোয়ারো। তিনি বুঝতে পারলেন না মডের কণ্ঠস্বরে এত তিক্ততা হঠাৎ এল কেন?

.

১৭.

মিসেস অলিভার বুঝে উঠতে পারছিলেন না ঠিক কি করবেন। তরুণ অভিনেতারা ড্রেসিংরুমে মেকআপ তুলতে ব্যস্ত। তাকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছে আর খালি বীয়ারের গ্লাস খানিক পরই ভর্তি করে দিচ্ছে।

মিসেস আপওয়ার্ড বাড়ি থেকে বেরোবার সময় তাদের হাসিমুখে বিদায় জানিয়েছিলেন। রবিনও, মায়ের যাতে অসুবিধে না হয় কোনো রকম, সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল। গাড়ি থেকে দু-একবার নেমে দৌড়ে ভেতরে গিয়ে দেখে এসেছিল সব ঠিকঠাক আছে কিনা।

বাড়ি থেকে শেষের বার বেরিয়ে রবিন একগাল হসে বলেছিল, মামণিকে দেখলাম, ফোন করছেন যেন কাকে, কাকে কিছুতেই বললেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি কে সে ব্যক্তি।

মিসেস অলিভার বলেছিলেন; আন্দাজ করতে পারছি আমিও।

-বলুন তো কে?

–এরকুল পোয়ারো।

-ঠিক তাই। আমারও তাই মনে হয়। ওঁর পেট থেকে মা সব কথা ঠিক বের করবেন। মা কখনো নিজের ধ্যানধারণাগুলো আমার কাছে ভাঙতেই চান না, যাক, এরিয়েন, আসুন আমরা বরং একটু আলোচনা করি নাটকটা সম্বন্ধে। আমার মনে হয় সিসিল সম্বন্ধে আপনার মতামতটাই ঠিক। সত্যি, সিসিল লীচকে এরিকের ভূমিকায় একেবারেই মানায় না। মন্দ নয় নাটকটা ঠিকই, তবে এ নিয়ে এত দীর্ঘ আলোচনা ক্লান্তিকর।

নিজের মনে রবিন বকবক করে যাচ্ছিল। মিসেস অলিভারেরও ভালো লাগেনি সিসিলকে। তার চেয়ে মাইকেল, যে কিনা এই মুহূর্তে কথা বলছিল তার সঙ্গে, অনেক বেশি প্রাণবন্ত লেগেছে তাকে। একাই মাইকেল অনর্গল অনেক কথা বলে যাচ্ছিল। পিটার নামে একজন টিপ্পনি কাটছিল মাঝে মাঝে।

মাইকেল বলছিল, আমরা খুব খুশী যে, রবিন শেষ পর্যন্ত আসতে পেরেছে, ওর মায়ের যা প্রতিপত্তি, এখনো রবিন মায়ের অনুমতি ছাড়া এক পা বেরোতে পারে না। মায়ের সঙ্গে সঙ্গেই সব সময় থাকতে হবে। অথচ এত প্রতিভাবান রবিন। মায়ের কথা শুনে নিজের আখের নষ্ট করার মানে হয় কোনো? এ ধরনের মহিলারা ভীষণ একগুয়ে হন, জানেন, অ্যালেক্স রসকসের কি অবস্থা করেছিলেন উনি? এক বছর ধরে মাথায় তুলে ছিলেন ওকে রাশিয়ান মনে করে। অবশ্য এও ঠিক যে ওঁকে আগাগোড়া অ্যালেক্স গুল মেরেছিল। তাহলেই বা কি? যেই উনি জানতে পারলেন ও একজন দর্জির ছেলে, দূর দূর করে অমনি তাড়িয়ে দিলেন। এত নাক উঁচু ভদ্রমহিলা। অবশ্য অ্যালেক্স বেঁচে গেছে। ভদ্রমহিলা নাকি সাংঘাতিক রেগে যান মাঝে মাঝে।

 

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

-এই যে রবিন, আমরা তোমার মায়ের কথা বলছিলাম। উনি আসতে পারলেন না ভেবে এত খারাপ লাগছে। তবে আমরাও খুব খুশী মিসেস অলিভারকে পেয়ে। উনি কি চমৎকার খুনের গল্প লেখেন।

বৃদ্ধ ভদ্রলোক একজন মিসেস অলিভারের হাত ধরে বারবার তাকে ধন্যবাদ জানাতে লাগলেন।

এরপর বাইরে খোলা হাওয়ায় বসে আরও খানিকক্ষণ নাটকের আলোচনা চলল।

মিসেস অলিভার বাড়ি ফেরার পথে খুব ক্লান্তি বোধ করছিলেন। সীটে বসে পেছনে হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন। সামনে কথা বলেই যাচ্ছিল রবিন।

–এরিয়েন, আপনার কি মনে হয় না এভাবে করলে ভালোই হবে জিনিসটা।

–কি?

–চমকে চোখ খুললেন মিসেস অলিভার। এতক্ষণ তিনি কিছু শোনেননি। বাড়ির (নিজের) কথা ভাবছিলেন। বাড়ির ওয়াল পেপার, টাইপরাইটার, কফি, গাদাগাদা আপেল –ওঃ কি আরাম! শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারলে।

রবিন বলল, আপনাকে খুব পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছে।

-না, ঠিক তা না। আমি আসলে ঠিক মিশতে পারি না অচেনা মানুষদের সঙ্গে।

–আমি আবার লোকজন খুব পছন্দ করি, আপনি?

দৃঢ়স্বরে মিসেস অলিভার বললেন, না।

–কিন্তু অত সুন্দর করে বইতে লোকচরিত্র বিশ্লেষণ করেন।

–সেটা আলাদা। আমি গাছপালা বেশি ভালোবাসি মানুষের চেয়ে। তাতে অনেক কম চঞ্চলতা।

–লোকজন আমি ভালোবাসি। আমাকে ওরা উৎসাহ দেয়, গাড়ি এসে দাঁড়ালো ল্যাবারনাম এর গেটে।

–ভেতরে চলে যান আপনি, গাড়ি রেখে আসছি আমি।

গাড়ি থেকে নেমে মিসেস অলিভার এগিয়ে গেলেন। রবিন চেঁচিয়ে বলল, খোলাই আছে। দরজা।

খোলাই ছিল দরজা, ভেতরে ঢুকলেন মিসেস অলিভার। আলোগুলো সব নেভানো। মিসেস অলিভার তার গৃহকত্রীর ওপর অসন্তুষ্ট হলেন একটু। হয়ত এও এক ধরনের মিতব্যয়িতা। বড়লোক হলে মিতব্যয়ী হয় আবার।

হলে দামী সেন্টের একটা হালকা গন্ধ পাওয়া গেল। অবাক হলেন মিসেস অলিভার। ভাবলেন, ঠিক বাড়িতে এলাম তো।

তিনি সুইচ টিপে আলো জ্বাললেন, হলঘর আলোকিত হয়ে উঠল। বসবার ঘরের দরজাটা ফাঁক করা ছিল।

এক জোড়া পা দেখতে পেলেন মিসেস অলিভার।

ওঃ, তাহলে মিসেস আপওয়ার্ড এখনো শুতে যাননি, দেখো কাণ্ড, নাকি চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়লেন। আলো নেভানো বসার ঘরেও। কে জানে কতক্ষণ ধরে ঘুমোচ্ছেন?

মিসেস অলিভার এইসব ভাবতে ভাবতে ঘরের আলোটা জ্বালালেন।

ফিরে এসেছি আমরা, মাঝপথেই কথা থেমে গেল। গলা দিয়ে তার আর শব্দ বেরোল না। বন্ধ হয়ে আসছে গলা, চিৎকারও বের হচ্ছে না। ফিসফিসিয়ে ডাকলেন, রবিন রবিন।

রবিনের পায়ের শব্দ একটু পরেই পাওয়া গেল। শিস দিতে দিতে এগিয়ে আসছে। দৌড়ে গেলেন মিসেস অলিভার। হলেই তিনি মুখোমুখি হলেন রবিনের।

-যেও না ভেতরে। তোমার মা… মারা গেছেন….ওঁকে খুন করা হয়েছে মনে হচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ

Bangla Gurukul Logo শেষ পর্যন্ত বসন্ত এল -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় -মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস (১৯২৩) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ইংলন্ড থেকে ফিরে -মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস (১৯২৩) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

লন্ডন শহর -ব্ল্যাক কফি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ডঃ কারোলির সন্ধানী দৃষ্টি -ব্ল্যাক কফি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ক্যাপ্টেন হেস্টিংস জানতে চাইলেন -ব্ল্যাক কফি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

বনফুল (১৮৮০) | কাব্যগ্রন্থ | কবিতা সূচি | পর্যায় : সূচনা (১৮৭৮ – ১৮৮১) | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Leave a Comment