দুরন্ত ছেলেগুলো রচনা -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

দুরন্ত ছেলেগুলো রচনা

Table of Contents

দুরন্ত ছেলেগুলো রচনা -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

দুরন্ত ছেলেগুলো -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি
১১.

হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঐ দুরন্ত ছেলেগুলোকে সামলাতে গিয়ে ভদ্রমহিলা ক্লান্ত। কলিন মনে করেন তিনি তার স্বামী সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কলিন বললেন যে, ভদ্রমহিলা মিসেস র‍্যামসে হতে রাজী হয়েছেন। আসলে এটাও হতে পারে, র‍্যামসে আমাদের উপর নজর রাখার জন্যই এটা করেছেন। এব্যাপারটা একধরনের দেশপ্রেম হতে পারে।

কলিন বললেন যে, তিনি ঠিক বের করে আনতে পারবেন। তারা তেষট্টি নম্বর বাড়ির সামনে এসে থামলো। এর বাগানটার কিছুটা ১৯ নম্বরকে ছুঁয়েছে।

ম্যাকনটন কয়েক বছর আগে এখানে আসেন। দুজনেই বয়স্ক! একজন যুবতী দরজা খুললো। সে পুলিশ দেখে ভয় পেলো। বললো যে ম্যাকনটন ভেতরে আছে। কথাটা বলে ও ওদের পথ দেখিয়ে ঘরে বসালেন এবং তাকে জানালেন যে, পুলিশ ইনসপেক্টর এসেছেন।

মিসেস ম্যাকনটন বললেন, তিনি খুনের ব্যাপারে কিছু জানেন না। তিনি বললেন, ঘটনাটা এমন সময় ঘটলো যে, অনেকেই যখন বাড়িতে থাকে। তাদের জনাচারেক বন্ধু লাঞ্চের জন্য বেরিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত একটা ফার্নিচার ভ্যান এসে দাঁড়ালো। জিনিসপত্র ঐ লোকেরাই বয়ে ভেতরে নিয়ে এলো। অবশ্য তখন আমরা কেউ ভাবিনি এর মধ্যে কোনো গল্প আছে।

তিনি বললেন, তিনি চিৎকার শুনেছেন, তিনি বললেন, ছবি এঁকে তিনি দেখেন। এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চত। ভদ্রলোক সম্ভবত তাকে একটা এনসাইক্লোপেডিয়া বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। তবে তার কিছু দরকার না থাকায় ভদ্রলোককে তিনি আমল না দেওয়াতে তিনি বাগানে তার স্বামীর কাছে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তার স্বামী গাছ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কারো পাত্তা না পেয়ে চলে গেছিলেন।

তিনি কোনো ইনসিওর-এর কেউ বলে মনে করছেন না। ভদ্রলোক একটা ভ্যান চালাচ্ছিলেন বলেই এর ধারণা। তিনি তাকে গতকাল দেখনেনি। তার স্বামী এখন বাগানে আছেন।

তারা দুজন মিসেস ম্যাকনটনের কাছে চললেন। শেষপর্যন্ত বাগানে এসে হাজির হলো সবাই মিলে।

মিঃ ম্যাকনটন ছবিটা নিয়ে ভালো করে দেখলেন। তারপর হার্ড ক্যাসেলকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন, এখানে একে কখনো দেখেনি। গতকাল যখন ঘটনাটা ঘটে তখন তিনি বাগানেই ছিলেন। মিসেস ম্যাকটনের পেছনে চললো ওরা। হার্ড ক্যাসেল বললেন, চিৎকারটা নিশ্চয়ই একটা দিক থেকে আসেনি। তিনি কখন চিৎকারটা হয় সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। তিনি সবসময়েই বাগানে এলে ঘড়ি খুলে রাখেন। মিসেস ম্যাকনটন বললেন যে, সম্ভবত আড়াইটে নাগাদ। তারা লাঞ্চের পর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

ওদের বাড়ি আর ১৯ নম্বর বাড়ির বিভাজন রেখা। মিঃ ম্যাকনটন ওকে একটা শেডের তলায় নিয়ে এলেন। এখানে নানান যন্ত্রপাতি সুন্দর করে সাজানো। হার্ড ক্যাসেল তখন ১৯ নম্বর বাড়িটার দিকে তাকিয়েছিলেন। বেড়ার অন্যদিকে গোলাপের ঝাড় একেবারে বাড়ির ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে। তিনি যখন সার তৈরি করছিলেন তখন উনিশ নম্বর বাড়িটিকে দেখলেন।

তার স্ত্রী বললেন তার বিশ্বাস উনিশ নম্বর বাড়ির বাগানে একটা মূর্তিতে তিনি লুকিয়ে থাকতে দেখেছিলেন। তার স্বামী এরকম কিছু দেখেননি।

হার্ড ক্যাসেল ওদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। তাদের বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত বোধ করলেন।

হার্ড ক্যাসেল গাড়িতে উঠে বললেন, ব্যাপারটায় তার সন্দেহ আছে যে, ছবি দেখে তিনি চিনতে পেরেছেন। কাউকে দেখেছে এটা তার অনুমান। ওরকম ধরনের অনেক সাক্ষীকেই তিনি জানেন, চেপে ধরলে সঠিক কিছু বলতে পারে না। মিসেস হেমিং খুনের ব্যাপার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, কলিনের এখনকার মতো মুক্তি। হার্ড ক্যাসেল বললেন, এখন আর একটা জায়গায় যাবে তবে একাই যাবে সে। কলিন বললো যে, পরশু এগারোটায় ইনকোয়েস্ট যাবে।

কাল হার্ড ক্যাসেল লন্ডন যাবেন, রিপোর্ট জমা দিতে। কলিন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রাইভেট ডিটেকটিভ এরকুল পোয়ারার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, যিনি তার বাবা বন্ধু। হার্ড ক্যাসেল বললেন, তার বন্ধু অদ্ভুত। কলিন বললেন যে, তার মধ্যে তিনি একজন।

.

১২.

কলিনকে বিদায় জানিয়ে হার্ড ক্যাসেল তার নোটবুক বার করলেন। তারপর তার কাগজপত্র রেখে দিলেন। তার মধ্যে কিছু ফাইলপত্র জমে আছে।

তিনি সার্জেন্ট-এর কাছ থেকে রিপোর্টগুলো নিয়ে নিলেন। এগুলোতে চোখ বুলিয়ে তার মনে হলো এতে এমন কোনো সূত্র নেই যাতে সমাধানের কোনো সুরাহা হতে পারে।

বেলশিয়াম বা বাসের কেউ মিস্টার কারীর ফটো চিনতে পারেনি।

ল্যাবরেটরিতে লোকটার পোশাক থেকে কিছু পাওয়া যায় না। হার্ড ক্যাসেল ভাবলেন এটা মিঃ কারী নিজেই তুলেছেন, নাকি ওর খুনীই ওদের পরিকল্পনামাফিক অজ্ঞাতনামা করে রেখেছে। দাঁতের ব্যাপারে চিকিৎসকদের সঙ্গে হার্ড ক্যাসেল ভাবলেন হঠাৎ, ভদ্রলোক ফরাসিও তো হতে পারে। অবশ্য ওর পোশাক-আশাক ঠিক তার বিপরীত। তার মনে হলো কাজটা বেশ মন্থর গতিতে এগোচ্ছে। আজ বা কাল মিঃ কারীকে শেষপর্যন্ত শনাক্ত করা যাবেই।

তিনি সাড়ে পাঁচটা অবধি কাজ করলেন। সার্জেন্ট ক্রেশ রিপোর্ট করেছিলেন শীলা ওয়েব ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে আবার কাজ করতে শুরু করেছে। এরপর ঠিক পাঁচটা নাগাদ ও কারফিউ হোটেলে প্রফেসার পার্ডির সঙ্গে কাজ করে ওখান থেকে সাড়ে ছটার আগে ওর পক্ষে কোনোমতেই ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।

তিনি মাসির নামটা মনে করার চেষ্টা করলেন। চোদ্দো নম্বর পামার টোন রোড, হার্ড ক্যাসেল পুলিশের গাড়ি নিলেন না। হেঁটে যাওয়াই মনস্থ করলেন। হার্ড ক্যাসেল ঠিক বুঝতে পারলেন না হঠাৎ এই মুহূর্তে ওর জুতোর কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটার মুখটা অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে গেল ওর।

এই মেয়েটিকে দেখে তার অন্য কারোর মুখ মনে পড়ে গেলো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে তিনি একসময় হাল ছেড়ে দিলেন।

তিনি ১৪ নম্বরে পৌঁছে বেল বাজালেন। বেলের নিচেই নাম লেখা। মিসেস নাটন নিজেই দরজা খুললেন। তার চেহারা অনেকটা জাপানি আকৃতির।

মিসেস নাটন সাংবাদিকদের ভয় পান, তিনি যে পুলিশের লোক এটা জেনে তিনি খুব ভয় পেলেন। এরপর তিনি বসার ঘরে বসলেন, মিসেস নাটনের টেবিলে রাখা চিঠিতে একটাতে লেখা মিসেস নাটন আর অন্য দুটো আর. এস. ওরের লেখা। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, তার বোনঝি একটা ঘটনায় জড়িয়ে গেছে বলে তিনি জানতে এসেছেন।

তিনি বললেন, শীলার মনের অবস্থা শোচনীয়। তবে আজ সকালে সব ঠিক হয়ে গেছে। ও আবার কাজে বেরিয়েছে।

মিসেস নাটন বললেন, সম্ভবত আজ ওর ফিরতে একটু দেরি হবে। প্রফেসার পার্ডির কাছে কাজ করতে গেছে। আর শীলা বলছিলো ভদ্রলোকের সময়জ্ঞান বিন্দুমাত্র নেই। সবসময় বলেন যে, কাজ শেষ করতে মিনিট দশেকও সময় লাগবে না। আসলে লেগে যায় অনেক বেশি। তবে প্রফেসার পার্ডি খুব চমৎকার মানুষ ওর প্রতি নজর নেন।

শীলার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ভদ্রলোক বললেন, শীলার আসল নাম রোজমেরী। সে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে দশ মাস ধরে কাজ করেছে। নভেম্বর থেকে সে এখানে কাজ করছে। এর আগে সে লন্ডনে থাকতো। তার কাছে লন্ডনের ঠিকানা থাকলেও এখন তিনি কোথায় রেখেছেন তা মনে নেই। তার মতে অ্যাসিংস্টন গ্রীড না ঐরকম কিছু। ফুলহামের দিকে যেতে পড়ে। একটা ফ্ল্যাটে দুটো মেয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতো, লন্ডনের ঐ ঘরগুলো বেশ খরচ সাপেক্ষ।

মিসেস নাটন বললেন যে, ফার্মটার নাম ছিলো হপডড এ্যান্ড ট্রেন্ট। ওর মা-বাবা নেই। তিনি হলেন তার বোনের মেয়ে। তার পিতার পেশা সম্পর্কে তিনি ঠিক জানেন না।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, মিঃ নাটন, এই ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই ওয়েবের। কিন্তু সমগ্র পরিস্থিতিটা কেমন অস্বাভাবিক। উনি মানতে চাইছেন না মিস নাটনের কোনো শত্রু কেউ থাকতে পারে। তিনি অত্যন্ত বন্ধুবৎসল।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন যে, তার বোনঝি অনিবার্যভাবে কারো শিকার হয়েছে। ঘটনা হলো কি যে, ঐ জায়গাতেই ঘটনাক্রমে উপস্থিত ছিলো। নিশ্চয়ই কেউ একজন ওর জন্য ব্যবস্থা করেছিলো যাতে ও ঐ বাড়িতে যায়। বিশেষতঃ যখন সেখানে এমন একটা মৃতদেহ পড়ে আছে, যে কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে।

মিস নাটন বললেন, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন শীলা যে খুন করেছে এটা কেউ সাজাতে চেষ্টা করছে? না না, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঠিক তাই। বিশ্বাস করাটা শক্ত বলে।

কিন্তু আমাদের তো এই ব্যাপারটা পুরোপুরি নিশ্চিত এবং পরিষ্কার হয়ে নিতে হবে। উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক, কেউ তার বোনঝিকে প্রেম নিবেদন করে অসফল হয়ে তাকে খুনের মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে।

মিঃ নাটন বললেন, দু-একজনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে বটে, তবে তারা কেউ ওরকম নয়। এমন হতে পারে ও লন্ডনে যখন ছিলো তখন ব্যাপারটা ঘটেছিলো। মিসেস নাটন তার কোনো বন্ধুকেও যে খুনের ব্যপারে জড়িত বলে মেনে নিতে চান না।

মিসেস নাটন মনে করেন এটা কোনো উন্মাদের কাজ। হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঐ পাগলামির মধ্যে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। সেজন্য এই প্রসঙ্গ উঠেছে। ওর মা-বাবার কথা এজন্য জিজ্ঞেস করছি, আপনি জানলে অবাক হবেন। কত না খুনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে যার মূল গোথিত থাকে একেবারে অতীতে। মিস ওয়েবের বাবা-মা যখন মারা যান তখন ও নিতান্তই শিশু। তাই ওর পক্ষে তাদের সম্পর্কে কিছু বলাটা সম্ভব নয়। সেজন্যই আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম। মিসেস নাটন বললেন, ওর বাবা-মা স্বাভাবিক ভাবেই মারা যান। তিনি আরও বলেন, ওদের জিজ্ঞেস করিনি। মিসেস নাটন বললেন, শীলা সম্ভবত অবৈধ সন্তান।

 

দুরন্ত ছেলেগুলো -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

শীলা তার বোনের সন্তান। সে একথা নিজে জানতো না। শুধু তাকে বলেছিলো, অল্প বয়সে ওর বাবা-মা মারা গেছে। সুতরাং সেই কারণেই আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

হার্ড ক্যাসেল বললেন তিনি এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবেন না। তবে তিনি নাটনের কাছ থেকে তার পরিবারের কথা জানতে চান।

তিনি বললেন, তার বোন চালাক ছিল। স্কুল শিক্ষিকা ছিলো। একজন সম্মানিত মহিলা ছিল। তিনি তার নাম জানতেন না। তিনি কখনও দেখেননি। শীলার মা একদিন তার কাছে এসে অঘটনের কথা জানালেন। ও ছিল উচ্চাকাঙ্খী স্বভাবের। সে তার বোনকে ভালো করে চিনতে, বিয়ে করা দুরের ব্যাপার। তাই সে অবস্থায় তিনি তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার বোন এখন কোথায় আছে সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তার বোন এরকম একটা ব্যাপার চেয়েছিল। ও ভেবেছিল এটা তার সম্মানের পক্ষে ভালো। নিজের পক্ষেও ভালো। ওর আর ওর সন্তানের মধ্যে এটা বিচ্ছেদের দেওয়াল থাকা উচিত।

মায়ের রেখে যাওয়া অর্থ থেকে তার শিশুটির জন্য অর্থ ব্যয় হত, অ্যান তার ভাগটা রেখে দিয়েছিলেন বাচ্চাটাকে মানুষ করার জন্য। তবে স্কুলটা শেষ পর্যন্ত বদলাতে হয়েছিলো। আলনিয়া বা অন্য কোনো দেশ হবে।

নাটন কিছু গোপন করছেন কিনা বা কিছু জানেন না এটা বুঝতে পারছিলেন না হার্ড ক্যাসেল।

তার বাচ্চা সম্পর্কে তিনি কোনো খোঁজ নেননি এ বিষয়ে নাটন জানালেন যে, তিনি সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া। তার সঙ্গে কোন দেখাসাক্ষাৎ ঘটেনি। মিসেস নাটন বললেন, তার স্বামী যুদ্ধে মারা যান। ক্রাউডিয়ানে একটা মিষ্টির দোকান ছিলো তার। ল্যাঙ্কাশায়ার থেকে তার সবকিছু বিক্রি করে চলে এলেন। রসকো এ্যান্ড ওয়েস্ট বলে একটা ফার্মে চাকরি পান।

হার্ড ক্যাসেল তাকে ধন্যবাদ দিলো এবং বললো এ বিষয়ে শীলাকে এসব কথা একেবারেই জিজ্ঞাসা করবেন না। মিসেস নাটন লোকটার ছবি দেখে বললেন যে, এই লোকটিকে তিনি কোনোদিন দেখেননি। এখানে থাকে বলেও তার মনে হয় না। কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে বললেন, লোকটা খুব চমৎকার, সম্ভবত ভদ্রলোক।

মিসেস নাটন বললেন, একটু আগে তার এক বান্ধবী তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হয়নি। ইনসপেক্টর এবার বুঝতে পারলো। সে যখন ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে গেছিল তখন ফিরে আসার সময় দেখেছিলো, মেয়েটি একটা জুতো হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে। হার্ড ক্যাসেল জিজ্ঞাসা করলেন, মেয়েটি কি প্রিয় বান্ধবী। মিসেস নাটন বললেন, ওরা একই সঙ্গে চাকরি করে। শীলার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আছ। মেয়েটি বেশ সহজ সরল।

মিসেস নাটন শীলা ফিরছেন না বলে চিন্তিত। তবে মাঝে মাঝে প্রফেসারের কথায় থেকে যায়। মাঝে মাঝে বাসের লাইন পড়ে যায়। তিনি বললেন তার নাম শীলা, মিসেস নাটনের মা দিয়েছিলেন। রোজমেরী নামটা বোনই দিয়েছিলেন।

.

১৩.

 কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

লন্ডনে এসে কর্নেল বেকের সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি তাকে দেখে জামা খুললেন। আমি বললাম, স্বীকার করছি একটা গিট ছিলো মাত্র। তিনি বললেন যে, আমার কাজ কত এগিয়েছে। কর্নেল বেক বললেন, আমি ক্রিসেন্টে কাজ শুরু করেছিলাম। কাজ একটু বাকি আছে।

কাকতালীয় একটা ঘটনা ক্রিসেন্টে ঘটে গেছে। আমি তাকে বললাম যে, একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি সেখানে খুন হয়েছে, পকেটে নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে কিন্তু তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

উনি বললেন, তুমি এখানে কিসের জন্য এসেছে, ঐ উইলিব্রাহম ক্রিসেন্টের জন্য অনুমতি নিতে।

আমি বললাম, জায়গাটার নাম ক্রাউডিয়াম। পোর্ট লিবিউরি থেকে অন্তত দশ মাইলের মতো।

কর্নেল বেক আমার কথায় মাথা নাড়িয়ে বললেন, বেশ ভালোই জনবসতি আছে। আমি কতগুলি ব্যক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে চাই। তার কথায় কর্নেল বেক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রিডিং ডেস্কটা ঠিকমতো নিজের কাছে টেনে নিয়ে পকেট থেকে একটা বলপেন নিয়ে তাকালেন আমার দিকে, বললেন, বলো।

আমি তাদের জানালাম মিসেস হেমিং কুড়ি নম্বর উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে থাকেন। বাষট্টি নম্বরে র‍্যামসে নামে একজন ভদ্রলোক আছেন। তার স্ত্রী থাকেন। তেষট্টি নম্বর বাড়িতে এক দম্পতি আছেন, ভদ্রলোকের নাম ম্যাকনটন। যেখানে ঐ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিটি খুন হয়েছেন সেই বাড়ির বাগানের সঙ্গে অল্পবিস্তর আর সব পাশের বাড়িগুলোর বাগান ছুঁয়ে আছে।

কর্নেল বেক জিজ্ঞাসা করলেন, মৃতদেহটা কোথায়? উনিশ নম্বরে।

হ্যাঁ, ওখানে একজন অন্ধ মহিলা থাকেন। আগে স্কুলে পড়াতেন। এখন একটা ব্লাইণ্ড স্কুলে চাকরি করেন। স্থানীয় পুলিশ পুখানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে ব্যাপারটা জেনেছে।

আমি বললাম, যাদের নাম বললাম তাদের মধ্যে যে কোনো একজনের বাড়িতে যাওয়া খুব সহজ। তবে দিনের কোনো সময় মৃতদেহকে অন্য বাড়িতে ঢোকাতে গেলে তা অত্যন্ত ঝুঁকির ব্যাপার হবে।

কর্নেল বেক বললেন, কারণটা দেখে, বললেন তিনি, তাহলে তুমি ক্রিসেন্ট আর রাইজিং মুনের ব্যাপারে দৃঢ় মন নিয়ে একটা কিছু করতে চাইছে। ওটার পরে যে রাস্তাটা সেখানে রাইজিং মুন নামে পার্কটা আছে।

আমি এখন ক্রাউডিয়ানে ফিরে যাবো তা চললাম।

আমি বললাম, যে মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছে সে একটি মেয়ে। কর্নেল বেক মাথা নাড়লেন। মেয়েটি মৃতদেহ দেখে চিৎকার করে তাকে জড়িয়ে ধরে। পুলিশের হাত থেকে আনা ফটোটা দেওয়া হলো কর্নেল-এর হাতে। তাকে বলা হলো ইনি সেই ব্যক্তি খুন হয়েছে।

কর্নেল বেকসিগারেট টানতে টানতে বললো, ঠিক আছে তুমি ইনকোয়েস্টে যাও। মেয়েটিকে দেখো। ওর নাম কি ডায়না, নাকি আর্টেমিস অথবা ক্রিসেন্ট বা মুনরাইজ ধরনের।

.

১৪.

 কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

হোয়াইট হেভেন ম্যানসনে আসার পর থেকে অনেকদিন কেটে গেছে। বছর কয়েক আগে এটা আধুনিক ফ্ল্যাটে অতিরিক্ত বাড়ি ছিলো। তিনি লিফটে উঠলেন, কিছুক্ষণ পর দরজাটা খুলে গেল। সামনেই পুরুষ চাকর জর্জ দাঁড়িয়ে আছে। বললেন, ও মিঃ কলিন ল্যাম্ব, অনেকদিন পরে আপনাকে এখানে দেখলাম।

এরপর সে আমাকে এরকুল পোয়ারোর ঘরে নিয়ে এলো। তিনি নিজের ঘরে একটি চৌকো আর্মচেয়ারে বসে ছিলেন। এখন সেপ্টেম্বর মাস। আবহাওয়ায় গরম ভাব, পোয়ারার শীতের আমেজকে অনুভব করতে পেরেছেন। ওর দুপাশে স্তূপীকৃত বইয়ের সারি। ডান হাতে একটা ধূমায়িত কাপ।

পোয়ারো আমাকে বললেন, তুমি তো বিয়ে করতে চলেছে। আমি এবার কিছুটা বিব্রত বোধ করলাম। উনি আমার বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলেন।

আমি বললাম, সত্যি কথা বলতে কি মিঃ পোয়ারো, আমি একটা খুনের কেলে জড়িয়ে পড়েছি। সেই জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার কাছে এসেছি আমি।

আমি সামান্য ইতস্তত করে বললাম, আপনি ব্যাপারটা উপভোগ করলেন সেজন্য। পোয়ারো বললেন, একজন মালিক তার কুকুরের প্রতি সবসময় সহৃদয়। সে তাকে বাইরে নিয়ে যায়। কুকুরটাও সেই প্রভুর প্রতি সহৃদয়। সে যখন বেড়াল কিংবা ইঁদুর মারে তখন সেটা নিয়ে তার প্রভুর পায়ের কাছে রাখে। তারপর লেজ নাড়তে থাকে।

আমি বললাম, তাহলে কি আমি ল্যাজ নাড়ছি বলে আপনার মনে হয়। আমার ধারণা তুমি স্পর্শ করেছে কলিন।

অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে বলতে গেলে এটা একটা অপরাধ। ব্যাপারটাতে আমি যে খুনী হবো না তা তুমি জানো নিশ্চয়ই।

পোয়ারোকে বললাম, আপনি চেষ্টা করে পুরো ব্যাপারটা বোধগম্য করে তুলুন। পোয়ারো সমস্ত ব্যাপারটা শুনতে চাইলো না। যাইহোক, এরপর আমি আরম্ভ করলাম। উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বললাম ওকে। এরকুল পোয়ারো চেয়ারে হেলান দিয়ে সমস্ত ঘটনা শুনে গেলেন। আমি চাই তিনি এ ব্যাপারটার একটা সমাধান করে দিন।

তিনি বললেন, এটা একটা সাধারণ অপরাধ। ঘটনাটা আপাতদৃষ্টিতে জটিল বলে মনে হয়। ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। পোয়ারো বললেন, তার আগের কোনো ব্যাপারের সঙ্গে সাদৃশ্য আছে। তিনি এক ভদ্রলোককে চিনতেন যিনি এক সুন্দরী স্বর্ণকেশীকে বিয়ে করার জন্য নিজের বউকে বিষ খাইয়ে মেরে দেন। সেক্ষেত্রে একটা কুকুর অপহরণ করার ঘটনায় জড়িয়ে ছিলাম। আমি ঐ স্বর্ণকেশী আর ওর প্রেমিককে খুঁজতে আরম্ভ করলাম। বলাবাহুল্য পেলামও। তোমার এই ঘটনাটা আমার কাছে কোনো একটা ঘটনার সাদৃশ্য আছে বলে মনে হচ্ছে।

পোয়ারো বিখ্যাত হাসি হাসলেন। ইতিমধ্যে ভদ্রলোককে হয়তো শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

পোয়রো এবারে আমার দিকে তর্জনী তুলে ধরলেন। বললেন, এখন তোমার উচিত প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলা।

আমি জবাবে বললাম, সেসব আমি বলেছি। ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল আর আমি দুজনে মিলে যা জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিলো করেছি। ওরা এমন কিছু বলেনি যা আমাদের উৎসাহ জোগাতে পারে।

পোয়ারো বললেন, আমি তোমাকে আশ্বস্ত করতে পারি। এরকম হতে পারে না। তুমি রহস্যজনক কিছু দেখেছো? এরকম কোনো কথা হয়তো তুমি ওদেরকে জিজ্ঞেস করেছে। উত্তরে তারা হয়তো না বলেছে, আর তুমি সেটা সত্যি বলে মেনে নিয়েছে।

পোয়ারো বললেন, আমি যখন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলতে বলি তার অর্থ কিন্তু তা নয়। তার বক্তব্য তুমি কথাবার্তার মধ্যে থেকেই একটা সূত্র খুঁজে পাবে। নানা বিষয় নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যেমন বাগান কিংবা পোশাক কিংবা চুলের স্টাইল এরকম সবকিছুই আমাদের বিষয় হতে পারে। কিংবা ধরো ওদের খাদ্যাভ্যাস। এসবের মধ্যেই এমন কিছু কথা পেয়ে যেতে পারো যা সূত্র হিসাবে কাজে লেগে যেতে পারে। তুমি বলেছো, ওদের কথাবার্তায় তেমন কিছু পাওনি, আমার মতে তা হতে পারে না।

আমি বললাম, ওদের যেসব কথাবার্তা হয়েছে একজন সহকারী পুলিশ অফিসার হিসেবে আমি সে সবের শর্টহ্যান্ড নোট নিয়েছিলাম, এনেছি সেগুলো।

আমি তার হাতে কাগজপত্র দিলে পোয়ারো বললেন, অধিকভাবে তুমি এগোচ্ছো।

ওর প্রশংসায় তিনি বিব্রত বোধ করতে লাগলেন। সামান্য চুপ থাকার পর তিনি বললেন যে তিনি সবসময় তাকে পরামর্শ দিতে রাজী। তিনি বললেন, তুমি মনে মনে হয়তো ভাবছ মেয়েটা এই ঘটনার সঙ্গে সম্ভবত জড়িত আছে।

না না, ওর সেরকম সুযোগ ছিলো না। এটা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। পোয়ারো বললেন এবারে না, আমি তা বলতে পারছি না। তুমিও আমাকে বলেছে ওকে কোনো বিশেষ কারণে ডেকে আনা হয়েছিল।

পোয়ারো আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এবার ওর সঙ্গে কথা বলবে। ঐ কেনর উত্তরটা সম্ভবত পেয়ে যাবে। এমনকি ও যদি নিজে থেকেও না সত্যিটা না উপলব্ধি করতে পারে।

এরকুল পোয়ারো বললেন, তুমি ওর সঙ্গে কথা বলো। কেন না তুমি ওর বন্ধু। আর ঐ অন্ধ মহিলাটির সঙ্গে যেভাবেই হোক দেখা করো। ওর সঙ্গে একইভাবে কথা বলো। এরপর টাইপরাটিং ব্যুরোতে যাবে। কিছু পাণ্ডুলিপি টাইপ করাবে এই অজুহাতেই সেখানে যাবে তুমি। ওখানে যে-সমস্ত মেয়েরা কাজ করে তাদের একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে। তার সঙ্গেও ওদের ব্যাপারে আলোচনা করবে। তারপর চলে আসবে আমার কাছে।

পোয়রোকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আর একটা কথা জিজ্ঞেস করছি আপনাকে। ঐ ঘড়িগুলোর ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন, পোয়ারো চেয়ারে হেলান দিয়ে আবার চোখ বুজলেন। তিনি কাব্য করে বললেন।

সময় এসে গেছে..সবে…তিনি বললেন কি বুঝতে পেরেছে। দি ওয়ান বাস হ্যান্ড দি কার্পেন্টার থেকে উদ্ধৃতি, এলিস থুলি লুকিং গ্লাস। তাই তো?

এই মুহূর্তে তোমার জন্য যা করতে পারি তা এই। এবার এগোও।

 

দুরন্ত ছেলেগুলো -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

১৫.

ইনকোয়েস্ট-এর সময় সাধারণ লোকজনদের ভিড় ভালোই ছিল। শীলা ওয়েবের ভাগ্য পরীক্ষার, ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ ছিল না। কয়েক মিনিটের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে গেল।

উনিশ নম্বর বাড়ি থেকে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে একটা ফোন যায়। সেই ফোনে নির্দেশের : মতো পেবমার্সের বাড়িতে গিয়ে তিনি মৃতদেহ দেখতে পান।

মিস মার্টিনডেলের কাছ থেকে জানা গেল যে, তিনি ফোন পেয়ে তার কথামতো শীলা ওয়েব তার কাছে যান। এর সঙ্গে কিছু নির্দেশ তিনি প্যাডে লিখে রেখেছিলেন।

মিস পেবমার্স বলেন, ক্যাভেনডিস ব্যুরো মিস শীলাকে ফোন করার ঘটনা তিনি অস্বীকার করেন।

ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর জানালেন, তিনি উনিশ নম্বর বাড়িতে গিয়ে একটা মৃতদেহ দেখতে পান। তিনি মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। সেজন্য তিনি ইনকোয়েস্টের মুলতুবি চান।

পোস্টমর্টেম করেছেন যে ডাক্তার রিগ তিনি বললেন যে, সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি মৃতদেহ পরীক্ষা করেন। তার অনুমান ভদ্রলোক ১.৩০-২.৩০ মধ্যে মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তিনি বলেন ভদ্রলোককে পাতলা ধারালো একটা ছোরা দিয়ে খুন করা হয়েছে। এটাকে সম্ভবত বাঁকানো এগুলোকে ফ্রেঞ্চ কুকিং নাইফ বলা হয়। ছোরাটা ডগায় ঢুকে গেছিল। ছোরাবিদ্ধ হবার কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা গেছেন। ভদ্রলোকের দেহ পরীক্ষা করে জানতে পেরেছেন খুন হবার আগে ভদ্রলোক বিশেষ কোনো ড্রাগের প্রভাবে কোমায় ছিলেন। এটি অ্যালকোহল জাতীয় সম্ভবত ক্লোরাল হাইড্রেট, খাবার পরে ভদ্রলোক মাটিতে পড়ে অচেতন হয়ে যান।

তারপর সম্ভবত অচেতন অবস্থাতেই তিনি ছুরিবিদ্ধ হন। ডাঃ রিগ, অজ্ঞান হবার কত পরে তিনি খুন হন এটা সম্পর্কে সঠিক বলতে পারেননি। ওটা নির্ভর করছে ভদ্রলোকের মানসিক চেতনার উপর। আধঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিত ওর চেতনা ফেরেনি। লাঞ্চের কথা বললে উনি তা খাননি। কমপক্ষে অন্তত ঘণ্টাচারেক ভদ্রলোক কিছু খাননি।

এরপর আদালত মুলতুবি হয়ে গেলো।

ক্যাভেনডিস ব্যুরোর এডনা বেন্টও যথারীতি ওখানে উপস্থিত ছিল। সকালের দিকে ক্যাভেনডিস ব্যুরো বন্ধ হয়ে গেছিল। এডনাকে দেখামাত্রই মাউরিন বলে উঠলো, কি ব্যাপার এডনা, লাঞ্চের সময় আমরা কি ব্লু বার্ড-এ যাবো?

এডনা, শীলা খুঁজছিলো, মাউরিন বললো যে ওকে আগেই একটা যুবকের সঙ্গে দেখেছি। এডনা তাকে এগোতে বললো। সে এখন কানিং-এ যাবে।

এডনা ভিতরে ইনসপেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে চাইলো। সে দেখলো ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল গভীরভাবে করোনার আর এলাকার চিফ কনস্টেবলের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। পুলিশটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে খুবই কি প্রয়োজন। এডনা বললেন যে আড়ালে আমি শুধু বুঝতে পারছি না মহিলাটি যা বলেছে তা কিভাবে সত্যি হতে পারে। কেননা আমি বলছি…।

এডনা প্রথমে গেল ফল মার্কেটে তারপর হাই স্ট্রিট ধরে ও এগোতে লাগলো। সে যতই ব্যাপারটা ভাবছিলো ততই যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো। নিজের মনে সে বললো ওরকম হতে পারে না। মেয়েটা যা বললো সেরকম মোটেই হতে পারে না।

হাই স্ট্রিট থেকে এবারে ফিরতে আরম্ভ করে আলবানি রোডে এসে উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টের দিকে এগোতে থাকলো এডনা। খবরের কাগজে পড়ে উত্তেজনা সারা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে। সবসময়ই ঐ জায়গাটায় কেমন যেন একটা চাপা উত্তেজনা, এডনা বাড়িটার দিকে এগোলো।

বাড়িটার মধ্যে একজন ছুরিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। এটা ভাবতেই কেমন লাগছিল। সবজি কাটার ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিজন্য এখানে এসেছে সে ব্যাপারে আর কোনো খেয়ালই নেই। হঠাৎ কানের কাছে একটা কণ্ঠস্বর শোনামাত্র চমকে উঠলো ও। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে ও রীতিমতো অবাক হয়ে গেল।

.

১৬.

কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

শীলা ওয়েব যখন আদালত থেকে বেরিয়ে এলো তখন ও সাক্ষী ভালোই দিয়েছে। আমি ওর পেছন পেছন বেরিয়ে এলাম। করোনার ভদ্রলোক ভালো।

ও জিজ্ঞেস করলো, এরপর কি হবে। আবার সাক্ষ্যের জন্য ইনকোয়েস্ট মুলতুবি হবে। সম্ভবত, এক পক্ষকাল কিংবা যতদিন না ভদ্রলোককে শনাক্ত করা যায়। আপনি কি মনে করেন লোকটাকে শেষ পর্যন্ত চিনতে পারা যাবে। আমার মনে হয় নিশ্চয়ই। আমি তার টাইপরাইটিং কনসার্ন বন্ধু শুনে তাকে নিয়ে রেস্তরাঁয় যেতে চাইলাম। শীলা তার কেনাকাটা আছে বলে চলে যেতে চাইলে তাকে আমি সমুদ্রের ধারে সেই জায়গায় বসতে যেতে বললাম। আমি সেখানে একা বসে বুঝতে পারলাম আমি মেয়েটাকে মন দিয়েছি।

আমি তার অন্য আকর্ষণের জন্য তাকে ভালোবেসেছি।

দুটোর পর আমি স্টেশনে এসে হাজির হলাম। ডিকের খোঁজ নিলাম। ও কাজ করছিলো। ইনকোয়েস্ট কেমন লাগলো জিজ্ঞাসা করতে আমি বললাম ভালো।

আচ্ছা, আমি কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ করেছিলাম। হা করেছিলাম। আমাকে ওর অস্পষ্টভাবে মনে আছে। তুমি ওর সঙ্গে দেখা করতে গেছিলে কেন। তুমি পুলিশের মতোই আশাবাতিক। কৌতূহল জিনিসটাকে আমার ভালোই লাগে তবে আমি প্রধানত খুনের ব্যাপারটাই বলেছি।

হার্ড ক্যাসেল এটি সাধারণ খুন শুনে অবাক হয়ে উঠলো। বললেন তার তা মনে হয় না। এখন আরো গুরুত্বপূর্ণ আমার অনুমান ওকে প্রথমে অন্য কোথাও নেশা করানো হয়। তারপর উনিশ নম্বর বাড়িতে এনে খুন করানো হয়।

ডিক বললো, আমরা অস্ত্রটা খুঁজে পেয়েছি। সে জানালো ওটা বাগান থেকে পাওয়া গেছে। খুন করার পর খুনী ওখানেই ফেলে দিয়েছিলো অস্ত্রটাকে। ওটাতে কোন আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। ওটাকে খুব সতর্কভাবে মুছে ফেলা হয়েছে। আর ছোরাটা যে কোনো লোকের হতে পারে। এর আগে ব্যবহৃত হয়েছে, নতুন করে ধার দেওয়া হয়েছে।

তাহলে ব্যাপারটা ঐ ভাবেই ঘটেছে। প্রথমে ভদ্রলোককে নেশা করানো হয়েছে। তারপর ওকে নিয়ে আসা হয় উনিশ নম্বরে। যদি তা না হয় তাহলে কিভাবে আনা হয়েছিলো।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, এটা করতে গেলে খুনীর প্রতিবেশীদের অভ্যাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা দরকার। এতে লোকের নজরে পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, মিস পেবমার্স একজন সক্ষম পুরুষকে ছোরা মেরে খুন করতে পারেন না। তবে যদি ওনাকে নেশা করানো যায় কিংবা ভদ্রলোক ঘুমোবার জন্য এখানে এসেছিলেন, তাকে মেরে ছোরাটা প্রতিবেশীর বাগানে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ক্যাভেনডিস ব্যুরো থেকে ফোন করে শীলাকে ডেকে পাঠান।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, কাজে নামার আগে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে সত্য উদঘাটিত হবে তাতে সন্দেহ নেই।

এবার আমি পকেট থেকে একটা পোস্টকার্ড বের করে টেবিলে রাখলাম। এটাতে লন্ডনের পোস্টঅফিসের ছাপ ছিল। বাঁ-পাশে মনে রেখো লেখা, ডান পাশে নাম-ঠিকানা। নিচে ৪.৩০ সময়ের উল্লেখ আছে।

হার্ড ক্যাসেল বললো, এটাতে কোনো কিছুর যোগসূত্র আছে।

শীলা এটার মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছে না। হার্ড ক্যাসেল পোস্টকার্ডটা নিজের কাছে রাখলো সূত্র পাবার আশায়।

পুলিশ স্টেশনে কয়েকটা চিঠি এসেছিলো। একে একে হার্ড ক্যাসেল সেগুলো পড়তে লাগলেন। প্রত্যেকটায় চোখ বোলাতে লাগলেন। হার্ড ক্যাসেল রিসিভারটা তুলে নিলেন। তার দিকে তাকিয়ে বললেন, উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে টেলিফোন বুথে ওরা একটা মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পেয়েছে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তারপর, ওরই মাফলার দিয়ে ওকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে।

হার্ড ক্যাসেল আমাকে বললেন যে মৃতদেহটা তোমার বান্ধবীর নয়। আরেকটু চুপ করে ও বলে উঠলো, অবশ্য তোমার যদি কোনো আশঙ্কা থেকে থাকে। শীলার সঙ্গে কাজ করে এডনা ব্রেন্টের। মিস ওয়াটারহাউস প্রথমে মৃতদেহটা দেখতে পান। আঠারো নম্বরে থাকেন উনি।

একজন পুলিশ কনস্টেবল ঘরে ঢুকে বললো, ডঃ রিগ এই মাত্র ফোন করেছিলেন। তিনি ওখানে শিগগিরই চলে যাচ্ছেন। উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনি আপনার সঙ্গে দেখা করবেন বলেছেন।

.

১৭.

এরপর ঘণ্টাখানেক কেটে গেছে। হার্ড ক্যাসেলের সঙ্গে কনস্টেবল পিয়ার্স দেখা করতে চাইলেন। তিনি তাকে অফিসে আসতে বললেন। প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার পর পিয়ার্স হার্ড ক্যাসেলকে ইনকোয়েস্টের দিন কোর্টের সামনে এডনা ব্রেন্টের সঙ্গে যা যা কথা হয়েছে সব জানালো। শুনে হার্ড ক্যাসেল বলে উঠলেন, আমার আলোচনা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি ওকে অপেক্ষা করতে বলতে পারলে না।

পিয়ার্স যখন এডনা ব্রেন্টের সঙ্গে ছিল তখন আশেপাশে কি কেউ ছিল। অনেক লোকই ছিল স্যার। কারণ অনেকেই তো ইনকোয়েস্টে যোগ দিয়েছিল। পিয়ার্স সেরকম বিশেষ কাউকে দেখছে বলে মনে করতে পারছে না। পিয়ার্সকে তিনি বলে যেতে বললেন।

হার্ড ক্যাসেল খুব অবাক হচ্ছিলেন এডনা ব্রেন্টের মৃত্যু নিয়ে। তিনি ইনসপেক্টর সার্জেন্ট ক্লে-কে কয়েকটা নির্দেশ দিলেন। এবার সার্জেন্ট ওকে জিজ্ঞেস করলেন, স্যার, মেয়েটা উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে গেল কেন সে ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন?

হার্ড ক্যাসেল বললো, এটা হতে পারে এডনা নিছক কৌতূহলের বসেই ওখানে গেছিল। আসলে জায়গাটা কেমন সেটাই হয়তো দেখতে গেছিল। সার্জেন্ট এরপর চলে গেল।

সার্জেন্ট যাবার পর হার্ড ক্যাসেল তিনটে সংখ্যা লিখলেন। প্রথম সংখ্যাটি কুড়ি, তারপর উনিশ, তৃতীয় সংখ্যাটি আঠারো। তারপর হেমিং পেবমার্স, ওয়াটারহাউস। তিনটে বাড়ির ব্রাহাম ক্রিসেন্টে। প্রথমে কুড়ি নম্বর যে ছুরিটা দিয়ে খুন করা হয়েছিলো সেটা ওই বাড়ির বাগান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। সম্ভবতঃ উনিশ নম্বর বাড়ির বাগান থেকে ছুরিটা ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। কিংবা এও হতে পারে কুড়ি নম্বর বাড়ির মালিকই ছুরিটা ওখানে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো। প্রথমে ওর হেমিংকে সন্দেহ হয়। তারপর তিনি সিদ্ধান্ত করলেন, না উনি এটা করেননি। এডনা কি মিস পেবমার্স সম্পর্কে কিছু জানতো। যেমন শীলা ওয়েবের সঙ্গে ওর কোনোরকম যোগসূত্র কিংবা ঐরকম কিছু পিয়ার্সকে বলে ছিলো একবার। ও যা বলেছে তা সত্যি হতে পারে না।

তিনি ভাবলেন শেষ পর্যন্ত সবটাই তো অনুমান। এবার আঠারো নম্বর ওয়াটারহাউসই প্রথমে মৃতদেহটা দেখতে পান। যারা মৃতদেহ আবিষ্কার করেন তাদের বিরুদ্ধে হার্ড ক্যাসেলের পেশাগত এক ধরনের সংস্কার আছে। খুনী যদি নিজেই মৃতদেহ আবিষ্কার করে তাহলে কিছু সূত্র বের করা সম্ভব হয়। যেমন অন্যমনস্কতার ফলে রেখে যাওয়া আঙুলের ছাপ।ওয়াটারহাউস ইনকোয়েস্টে কোনো সাক্ষী দেয়নি। উনি কি পেবমার্স সেজে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে ফোন করেছিলেন। এছাড়া তাই শীলা ওয়েবকে তার সন্দেহ আছে।

হোটেলে কলিন ফোন করলেন।কলিন বললেন, একটার সময় মার্কেট স্ট্রিটে তিনি লাঞ্চ করেছেন।

হার্ড ক্যাসেল তাকে সন্ধেবেলা আসতে বললেন। ওপ্রান্ত থেকে কলিন বললো, তিনি চলে যাচ্ছেন। তিনি সপ্তাহখানেকের আগে ফিরবেন না।

 

দুরন্ত ছেলেগুলো -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

১৮.

শেষ পর্যন্ত হার্ডক্যাসেল উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বর বাড়িতে এসে পৌঁছলেন। তখন মিস পেবমার্স বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন। পেরমার্স বললেন কোনো ভূমিকা না করে হার্ড ক্যাসেল প্রথমেই এলেন খুনের প্রসঙ্গে। তাকে এড়না ব্রেন্টের মৃত্যুর খবর জানানো হলো। তিনি সামান্য থেমে বলে উঠলেন, আচ্ছা মেয়েটি আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি? তিনি না বললেন। মিস পেবমার্স বললেন তার সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়িতে থাকার কথা। হার্ড ক্যাসেল মনে করেন ইনকোয়েস্টের সময় ও নিজেও ছিল। সম্ভবত সেখানে তাকে দেখে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইতে পারতো। এই রাস্তার অন্য কোনো বাসিন্দার সঙ্গে ওর কোনো পরিচয় নেই। হয়তো কোনো কারণে মিস পেবমার্সের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। মেয়েটির বয়স উনিশের মতো। মেয়েটার কোনো আকর্ষণ ছিল না। পেরমার্স বললেন যে তিনি কোনো সাহায্য করতে পারছেন না।

মিস ওয়াটারহাউসকে বললেন হার্ড ক্যাসেলকে যেন তিনি সঠিক উত্তর দেন। যে মেয়েটি খুন হয়েছে তাকে হয়তো অনেকবার তিনি দেখেছেন কিন্তু মনে করতে পারছেন না। কোনো মেয়েকে তার দরকার লাগেনি। খুন হবার আগে তার সঙ্গে তার কোনো দরকার হয়নি। তার গেটের কাছে কেউ আসেনি। তিনি বললেন তার পোস্টবক্সে যদি কেউ কোনো কাগজ ফেলে যান তার জন্য তিনি দায়ী নন।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, টেলিফোনের ব্যাপারটা আগে বলা যায়। তিনি বলেছিলেন তার টেলিফোনটা খারাপ হয়ে গেছে। তার এক্সচেঞ্জ অনুযায়ী তা ঠিক নয়।

হার্ড ক্যাসেল মনে করেন মেয়েটি এখানে এসেছিলো এবং ক্রিসেন্টে কারো সঙ্গে দেখা করতে গেছিল।

পেবমার্স একটা টাইপিস্ট মেয়েকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তবে ওয়াটারহাউস এটা মনে করেন না মিস পেবমার্স খুনটা করেছেন। অনেকেই ফোন করে অর্ডার করে এবং পরে তার অস্বীকার করে। নিছক মজা করার উদ্দেশ্যে হবে এটা।

এরপর ডিটেকটিভ হার্ড ক্যাসেল ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে এসে পৌঁছলেন। মার্টিনডেলকে জিজ্ঞাসা করে কিছুই পাওয়া গেল না। ওর অনুমতি নিয়ে মাউরিন নামে মেয়েটিকে জেরা করার সময় জানা গেল যে ও কাজকর্মের মধ্যে কিছু গুলিয়ে ফেলতো। এছাড়া খুব মন্থর স্বভাবের ছিলো। মেয়েটি বাইরে আসে কেনার জন্য। বাইরে গিয়ে জানতে পারে মেয়েটি খুন হয়েছে। জ্যানেট নামের মেয়েটি বুঝতে পারছে না তার খুন হওয়ার ব্যাপারটা। মেয়েটির সঙ্গে তার কোনো বিশেষ বন্ধু ছিল না। মিস ওয়েব যে কারফিউ হোটেলে মিঃ পার্ডির কাছে কাজ করছে, তারা বললো। হার্ড ক্যাসেল বিদায় নিলেন।

তিনি কারফিউ হোটেলে প্রফেসার পার্ডির কাছে এসে পৌঁছলেন। শীলা ওয়েব খুনের ব্যাপারটা শোনেননি। শুনে সে আতঙ্কিত বোধ করলো। সে এমন কিছু বলতে পারলো না যে খুনের ব্যাপারে সাহায্য হতে পারে।

.

১৯.

 কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

আমি লন্ডনে গিয়ে প্রথমেই দেখা করলাম কর্নেল বেকের সঙ্গে। সবকিছু রিপোর্ট করলাম ওকে। তাকে বললো যে কাগজপত্র উদ্ধার করতে পারলে যোগাযোগ করবেন। আর মিঃ র‍্যামসে সম্পর্কে যতটা পারেন খোঁজ নিন।

কর্নেল বললেন, ডায়না লজকে আমার ঘাঁটি বলে মনে হয়। ম্যাকনটনের ব্যাপারে তেমন উৎসাহ পাচ্ছি না। উনি একজন রিটায়ার্ড প্রফেসর। বেশ ব্রিলিয়ান্ট বলা যায়। তিনি তার পুরানো বন্ধুদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। আমার কাছে সব ব্যাপারটা সন্দেহজনক। তার দিকে তাকিয়ে কর্নেল বললেন, এরপর আপনাকেও সন্দেহ করতে পারি। আমি ওর কথা শুনলাম। তারপর ওর কাছ থেকে চলে এলাম।

আমি প্রথমে এরকুল পোয়ারো সঙ্গে দেখা করেছিলাম। কলিন তোমাকে যেন হতাশ মনে হচ্ছে। আমি ক্লান্ত ছিলাম। আমি বললাম, ক্রাউডিয়ানের খুনের খবর কি আপনি চোখ বুজে প্রশ্নের জবাব দেবেন। পোয়ারো সব কিছু উৎসাহের সঙ্গে পড়েছেন। এরকুল পোয়ারো বললেন, তোমার একমাত্র কাজ হলো প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরো বেশি কথা বলা। কেউ কেউ সবসময়েই কিছু না কিছু দেখতে পায়। এটা স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার।

আরো একটা খুন হয়েছে তাকে বলা হলে তিনি বললেন যে এত তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা ঘটলো। এছাড়া তিনি নানাভাবে প্রশ্ন করে খুঁটিনাটি জেনে নিলেন। উনি বললেন, মনে রাখবে চার তিন শূন্য বা চারশো তিরিশ। এটা একটা প্যাটার্ন।

পোয়ারো বললেন যে, ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই আরো পরিষ্কার করে যাচ্ছে যে খুনী একথা বলতে পারে না।

পোয়ারো বললেন যে, তুমি যখন এখান থেকে চলে যাবে তখন আমি কয়েকটা জিনিস চেষ্টা করতে চাই। তুমি কি অনুমতি দেবে।

আগামীকাল আমি মিস লেমনকে নির্দেশ দেবো পুরানো আইনজীবী বন্ধুকে চিঠি লিখতে। নাম মিঃ এনডার বাই। এছাড়া ওকে আমি সামারসেট হাউজের ম্যারেজ রেকর্ডটা দেখতে বলবো। নিশ্চয়ই ও আমাকে একটা বিশেষ ওভারসীজ কেবল পাঠাবে।

আমি আপত্তি জানালে ব্যাপারটা ভালো হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আপনি নিশ্চয়ই শুধু বসে বসে ভাববেন না। পোয়ারো হেসে বললেন, তোমাকে যেটা করতে হবে তা হলো আমার জবাবটা ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা দেখা। আমাকে থামিয়ে দিয়ে পোয়ারো বললেন, আমি জানি।

পোয়ারো বললেন যে লোকটি প্রাইভেট ডিটেকটিভ। পোয়ারো ভাবগম্ভীর গলায় বলে উঠলেন আবৃত্তির ঢঙে

এসো, এসো এসে
খুন হও, শেষে।

বলে পোয়ারো আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন একবার।

.

২০.

ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল ডেস্কের ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালেন। ঠিক তিনটে দিন অতিক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বরের কুড়ি তারিখ। যতটা ভাবা গেছিল ততটা এগোয়নি। লোকটার পোশাক-আশাক থেকেও কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।

খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেবার পরে চিঠি এসেছিলো অনেক, অবশ্য কোনোটাই কাজের চিঠি নয়। তারই মধ্যে একটা হার্ড ক্যাসেলের কৌতূহল জাগিয়েছে। ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তার আজ আসার কথা।

অবশেষে তিনি এসে পৌঁছলেন, মিসেস রাইভ্যাল। তিনি বললেন, বিব্রত হওয়ার কিছু নেই মিসেস রাইভ্যাল। এই দিক থেকে আমরা আপনার সাহায্য চাই।

ভদ্রমহিলাকে বললেন তিনি, আপনি তাহলে বলছেন বছর পনেরো হলো ওর সঙ্গে আর দেখা হয়নি।

মিসেস রাইভ্যালের সঙ্গে তার তিন বছর আগে বিয়ে হয়। তিনি সাদেকের বলে একটা এলাকায় থাকতেন। তিনি বলেছিলেন তিনি ইনসিওরেন্স এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু এটা মিথ্যা কথা ছিল।

ডেডবডি দেখে তিনি বললেন, এটি হলো হ্যারি। অনেক বুড়িয়ে গেছে, সে ভুল করেনি। তিনি নিশ্চিত এটি তার স্বামী। তাকে তার বরাবর ভালোমানুষ বলে মনে হত। এখনও সেরকম আছে। এই ভদ্রলোকটির মধ্যে একটা খানদানি অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে সবসময় ফিটফাট পোশাকে থাকতো। সব কিছুর মধ্যে একটা বিশেষত্ব ছিল। মেয়েদের পেছনে সে বেশ সময় দিত। তাকে তার স্ত্রী এইজন্য সন্দেহ করতেন। তার স্ত্রীর মনে হয় মেয়ে নিয়ে তার কোনো ব্যাবসা ছিল।

মিসেস রাইভ্যাল বললো, একবার একটা দরকারে ও বাইরে গেছিল, তারপর কাজ শেষ করে ফিলে এলো। এসে আমাকে বললো খুব তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে যেতে হবে। কোনো মেয়ের ব্যাপারে নাকি বিপত্তিতে পড়েছে। মেয়েটি নাকি একজন স্কুল শিক্ষিকা। ব্যাপারটার মধ্যে কোনো অশালীনতা থাকতে পারে

রাইভ্যাল পত্নী বললেন, মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি ওর প্রেমে পড়ে যেত। তারপর এনগেজমেন্ট। তারপর হ্যারি সবার কাছে অর্থ চাইতো। পেয়েও যেত খুব সহজে। তিনি এবার যে মেয়েটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন সে সন্তানের মা হতে চলেছিলো। তাই তাকে প্রতারণা করা সহজ হয়নি। তার স্ত্রী তার প্রতি দুর্বল হয়ে তাকে বিয়ে করেন।

তিনি যখন তাকে বিয়ে করেন তখন তার নাম ছিলো হ্যারি ক্যাসলটন। ওর আসল নাম কিনা তা জানা যায় না। তারপরে এখনই চলে যেতে হবে বলতে তিনি বললেন যে তিনি যেতে চান না। তার হাতে বিন্দুমাত্র অর্থ ছিল না। শেষপর্যন্ত তার সঙ্গে দেখা হয়নি। তার আসল নাম ক্লোসিয়্যাপ ফ্লোরেন্স। তবে লোক তাকে ক্লোসি বা ফ্লো বলে ডাকে। তিনি এখন মাঝে মাঝে অভিনয় করেন। এছাড়া টুকিটাকি কাজকর্ম এদিক ওদিক করে বেড়ান। মিঃ ক্যাসলটন ক্রিসেন্টে কেন এসেছিলেন এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। সে এতবছর কি করেছে ফ্লো কিছু জানে না।

তার মতে হ্যারি খুব বুদ্ধিমান। সে এমন কিছু করতে চায় না যাতে ওর বিপদ ঘটে। তার ধারণা। সে মেয়েদের নিয়ে কোনো জালজোচ্চুরি করত। মিসেস রাইভ্যালকে পেরমার্সের বাড়ির ঘড়িটা দেখানো হলে তিনি দেখলেন এবং না বললেন। তার স্বামীর সঙ্গে রোজমেরীর সম্পর্ক সম্বন্ধে জানানো হলে তিনি বললেন ওর নাম রোজমেরী। তবে উনি কারো কথা ভাবতে পারছেন না। হার্ড ক্যাসেল তাকে বিদায় নিতে বললেন। এবং বলতে বললেন যে ইনকোয়েস্টে শনাক্তকারিণী হিসেবে সাক্ষী দিতে। এবং কয়েকটা মামুলি কথা আর হার্ড ক্যাসেল বিদায় নিলেন।

 

দুরন্ত ছেলেগুলো -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

২১.

কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

এরকুল পোয়ারো বললেন, তাহলে তুমি সাফ হতে পারলে। পোয়ারো গম্ভীরভাবে বললেন যে, একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দ্বারা কৌশলে খুন।

হ্যারি ক্যাসলটনকে তার স্ত্রী শনাক্ত করেছেন। ভদ্রমহিলার কথা বলে পোয়ারোর কিছু মনে পড়ে যাচ্ছিলো। আমি বললাম যে, লন্ডন থেকে ফিরে মেরলিনা সম্পর্কে জানাব। তিনি বললেন তার প্রয়োজন নেই। পোয়ারো তার ব্যাপারে উৎসাহী নয়।

এডনা সম্পর্কে পোয়ারো বললেন তার জুতোর হিল কোথায় কিভাবে ছিঁড়েছিল এ সম্পর্কে তাকে জানানো হোক। সেটা যত অকিঞ্চিৎকর হোক। অফিসের সামনে ঘটেছে। পোয়ারো এবারে জিজ্ঞাসা করলেন ও কিভাবে বাড়ি গেছিল। আমি তাকে ক্রাউডিয়ান যেতে বললাম। আসলে তার তখন মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছিলো বলে তিনি ঐ দিকে মন দিতে পারছিলেন না। হার্ড ক্যাসেলের বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলাম।

হার্ড ক্যাসেল বললো যে, লোকটিকে প্রত্যেক নারী বিশ্বাস করতো তারপর অর্থলগ্নীর ব্যাপারে নানা পরামর্শ দিতো। ধনী মহিলাদের সঙ্গে বিয়ে করে সে এই টাকার খেলা খেলতো। তারপর একদিন হাওয়ায় মিলিয়ে যেত। নিজের নাম পাল্টাতে ও ওস্তাদ ছিলো। যে সব মেয়েরা ওর কাছে আটকে যেত তারাও বলতো না। লোকটা কোনোদিন কামরার সামনে দাঁড়াতাম। পনেরো বছর আগে একবার অদৃশ্য হয়ে গেছিল তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলো ও মারা গেছে। অবশ্য গুজব ছিল ও জেলে।

একজন মহিলা তাকে ভুলতে পারেনি। মহিলার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো। আর এরকমই কোনো মহিলা তাকে এখনও ভুলতে পারেনি এরকম কোনো মহিলা যদি অন্ধ হয়ে যায়।

মৃতের স্ত্রী দেহপসারিণী। তবে সে কোনো অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েনি। ঘড়ির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করলেও হার্ড ক্যাসেল ওর ইঙ্গিতটা বুঝতে পারলেন।

.

২২.

স্টেশনের কাছেই একটা হোটেলে ছিলাম। ঠিক দশটা নাগাদ অন্য একটা নামে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে ফোন করে শীলাকে ডাকা হল। আমাকে দেখামাত্রই চমকে উঠলো, আপনার এটা করা উচিত হয়নি।

শীলা ওয়েব সোজা হোটেল এসে উপস্থিত হলো। তাকে নিয়ে বাটার ক্যাফে এসে উপস্থিত হলাম।

শীলার দুচোখে কালো ছাপ। তাকে আমি বললাম, আমি বাইরে আবার ফিরে যাচ্ছি। হার্ড ক্যাসেল সম্পর্কে আমি জানালাম যে, ওটা সন্দেহের চোখে দেখা ডিটেকটিভের অভ্যাস। কেউ হয়তো ঘটনাক্রমে শীলাকে খুনে জড়িয়ে দিয়েছিলো। শীলার কণ্ঠস্বর ফোনে ছিলো না কেননা সে ফোন করেনি।

শীলাকে যখন আমি সত্যি কথা বললাম সে বললো যে, হয়তো কোনো সাধারণ কারণে তুমি সেদিন ফোন করতে পারো। যখন সে দৌড়ে আমার কাছে এসেছিল সে কি মৃতদেহ ছাড়া আর কিছু দেখেছিল তা আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

শীলা বললো, আর কিছু সে দেখেনি। সে রোজমেরী লেখা ঘড়িটা স্পর্শ করেনি। আসলে শীলা গ্লাভস আনার ভঙ্গি করে ভেতরে গিয়ে রোজমেরী ঘড়িটা তুলে আনে। সেদিন গ্লাভস পরার কোনো কথা ছিল না। শীলা এই কথার সম্মতি নিয়ে বলল, রোজমেরী নামটা তার।

শীলা আমাকে যে মিথ্যা কথা বলছে তা আমি জানতাম। তাই তার দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মোহমুক্ত হয়ে সোজাসুজি আক্রমণ করলাম।

সে ঘড়ি সম্পর্কে বলল যে, ঘড়িটা দীর্ঘদিন ধরে ওর কাছে ছিল। ছ-বছর পর্যন্ত তার নাম রোজমেরী ছিল। কিন্তু ও শীলা ডাকটা পছন্দ করত। সম্প্রতি ঘড়িটা খারাপ হয়ে যায়। ওটাকে সে ঘড়ির দোকানে সারাতে নিয়ে যায়। দোকানটা ব্যুরোর কাছাকাছি। তাই অসতর্কবশতঃ সে ওটা হারিয়ে ফেলে। সপ্তাহখানেক আগে এটা হয়। এই নিয়ে তার কোনো দুঃখ ছিল না কারণ ওটা ভুল সময় দিত।

তারপর যখন সে ঘরে গিয়ে মৃতদেহ দেখল তখড় মৃতদেহটা পরীক্ষা করল। এবং ঘড়িটা টেবিলে নজরে পড়লো। মহিলাটি যখন এসে পড়ল তাকে সব বললো। সে শুনে অবাক হলো যে মহিলা তাকে আসতে বলেনি। সে বুঝতে পারছিল না ওখানে ঘড়িটা কে রেখেছে।

তিনি বললেন যে তার বাবা-মা ছোটোবেলায় দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তার মাসি যা বলত সবসময় মিলত না। তার মনে হত তার বাবা-মা কোনো অপরাধমূলক কাজ করেছিল। সে তার বাবা-মার অবৈধ সন্তান হতে পারে। তার মতে, ছেলে-মেয়েদের কাছে সবকিছু খুলে বলা উচিত। এড়না কেন যে তার বাড়িতে গেছিল তা সে বুঝতে পারছিল না। তার কোনো শত্রু নেই। প্রেম প্রত্যাঘাত যুবক বা কোনো মেয়ে তার প্রতি হিংসা করে। এরপর অন্য কথা বলা হলো।

.

২৩.

 কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করে ফিরছিলাম। সামনে পুলিশ স্টেশনের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, আমি লন্ডন চলে যাচ্ছি।

ডিক বললো, এই নাও চিঠিটা পড়। চিঠিতে লেখা আছে,

প্রিয় মহাশয়,
আমার এই মুহূর্তে একটা ব্যাপার মনে পড়ে গেল। আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আমার স্বামীর শনাক্তকরণ কোনো চিহ্ন আছে কি না। আমি না বলে ছিলাম তখন। কিন্তু আমার ভুল হয়েছিলো। ওর বাঁ দিকে কানের পেছনে একটা দাগ আছে। ব্লেড দিয়ে কেটে গেছিল। এখানে সেলাই হয়। দাগটা এই ছোটো যে আমার তখন মনে পড়েনি। পরে মনে পড়েছে।
ইতি
মেরেলিনা রাইভ্যাল

তাহলে মৃতদেহটার শরীরে একটা চিহ্ন আছে মহিলার কথামতো। যখন ওকে লাশ দেখানো হয়েছিল তখন উনি দেখতে পাননি। দেখতে হবে, কানটা টেনে দেখতে হবে।

আচ্ছা লন্ডনে তোমার সঙ্গে ঐ বেলজিয়াম বন্ধুটির দেখা হবে।

ডিক বললো, সম্ভবত আসতে পারবে না। কারণ ওর পা খোঁড়া।

আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

পৌনে বারোটার সময় উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে বাষট্টি নম্বর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বেল টিপলেন। র‍্যামসের সামনে এসে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। তিনি বললেন, পুলিশকে বলার ক্ষমতা তার নেই। তার স্বামী এখনও বিদেশে। তার কথায় তিনি চুপ করে রইলেন। তিনি বললেন যে তিনি জানতেন উনি চলে যাচ্ছেন। তার স্বামীর কাজে তার বিন্দুমাত্র সহানুমুতি ছিল না। তাকে স্পষ্ট করে উনি কিছুই বলেননি। তিনি জানতে চাননি। ওর পুরানো পার্টি মেম্বারশিপ এসব কিছু জানাননি। তিনি খুবই সাধারণ। স্বামীকে তিনি ভালোবাসতেন। চেষ্টা করলে মস্কো যেতে পারতেন। এতে যে তার রাজনীতির সঙ্গে একমত হতে হত, তা নয়। কিন্তু ওর কথা তিনি শোনেননি। চেয়েছিলো তিনি যেন ছেলেদুটোকে নিয়ে আসেন।

র‍্যামসে বললেন, মিচেলের সঙ্গে দেখা হবে কিনা জানেন না। তার মতে তার ছেলেরা নিজেদের দেশে বেড়ে উঠুক। তিনি আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ফেরার সময় ম্যাকনটনের বাড়িতে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ক্রিসেন্টে গেলাম। মিঃ ব্ল্যাণ্ডের সঙ্গে দেখা হতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথা থেকে এসেছেন?

মিঃ ব্ল্যাণ্ড হাসলেন। বাইরে প্রকাশ করা নিষেধ।

তিনি বিদায় নিয়ে ৬১ নং বাড়ির দিকে এলেন। মিঃ পোয়ারো বললেন তাকে, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আরো বেশি বের করতে হবে। কেউ কিছু দেখেনি এটা একেবারে অস্বাভাবিক। হয়তো হার্ড কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একটা প্রশ্নের সিট তৈরি করলাম। মিঃ কেরীকে নেশা করানো হয়েছিলো। তারপর ওকে খুন করা হয়েছিল কোথায়? মিঃ কারী (ক্যাসলটন)কে উনিশ নম্বর বাড়িতে আনা হয়েছিল। কেমন ভাবে?

প্রশ্নগুলো এইভাবে ভাবতে ভাবতে আমি রাস্তার বাঁ দিকে ঘুরলাম। এইভাবে ব্যাপারটা ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছি হঠাৎ তীব্র আলোর ঝলক আমার চোখে এসে লাগলো। মুখ তুলে সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম, রাস্তার ধারে কাছাকাছি একটা বাড়ির জানলা দিয়ে কেউ আমাকে দেখছে।

আমি দূরবীন দিয়ে চোখ লাগালাম। হঠাৎ একটা রোলস রয়েস গাড়ি খুব শান্তভাবে অতিক্রম করে গেল। আপোস করলে ভাগ্য সহায় হয়।

ব্লকটার কাছাকাছি এসে তিনতলার বোতামটা টিপলাম। লিফট চলতে শুরু করল।

 

দুরন্ত ছেলেগুলো -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

২৪.

দরজার সামনে আমাকে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। ক্ষমা করবেন, এ ঘরে সম্ভবত কোনো মেয়ে আছে, আপনাকে জানলা দিয়ে দেখছিল। ও একটা জিনিস নিচে ফেলে দিয়েছে।

মহিলাটি ঘরে নিয়ে এলো। মেয়েটিকে ফলকাটা ছুরিটা দেখানো হলে সে বললো, ওটা আমার নয়।

তাকে প্রশ্ন করা হলো, সে বললো, খুনের দিন ধুয়ে মুছে তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারে, সকাল দশটা হবে। সে সময় অবশ্য আমি একটা ক্রসওয়ার্ড পাজল নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কারীকে সে বাড়িতে আসতে দেখেনি। ভদ্রলোক সামনের দরজা দিয়ে কলিং বেল টিপে ঢোকেননি। তাহলে তিনি দেখতে পেতেন। পাশের বাগান দিয়ে কেউ ঢোকেননি। মিস পেবমার্স ঐ দিন দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তার কাজের লোক যায় ২টা নাগাদ। তবে মিসেস কারীকে আসতে দেখেননি। ঐ বাড়িতে পেবমার্স নিজে একাই বাজার করতেন। একজন স্ত্রীর লোক একটা বড়ো বাক্স ডেলিভারি দিত। ১.৪৫ মিনিটে তা ঘটেছিল, ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে বাক্সটা বের করল। লোকটা সাধারণ দেখতে, তার থেকে বয়স বেশি। সে বাক্স নিয়ে টলতে টলতে বাড়ির পাশ দিয়ে ঘুরে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ছিল। তবে সম্ভবত ঢুকতে পারেনি। কারণ মিস পেবমার্স দরজায় তালা দিয়ে গিয়েছিল। বাক্সটা ওখানেই রেখে দিয়ে ফিরে গিয়েছিল ও। লোকটাকে আমি ঠিকমতো দেখতে পাইনি। রাস্তার ভুল দিকে দাঁড় করিয়েছিল গাড়িটাকে। আমি শুধু ওর মাথার পেছনের দিকটা দেখতে পেয়েছিলাম। তারপর লোকটি গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। মনে মনে ভাবলাম লোকটা হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেখেও থাকতে পারে। মেয়েটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি তখনকার মতো বিদায় নিলাম ওর কাছ থেকে। যে মেয়েটাকে প্রশ্ন করেছিলাম এতক্ষণ, ওর নাম জেরালাউনে।

.

২৫.

মিসেস রাইভ্যাল দরজার হাতলটা ঘুরিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। পা দুটো সামান্য টলছিল। তিনি নিজের মনে বিড়বিড় করছিলেন।

ব্যাপার মোটেই ভালো নয়। মিস রাইভ্যাল বললেন, আমি ব্যাপারটা সহ্য করতে পারছি না। সে কাউকে প্রবঞ্চনা করতে পারে না।

রাইভ্যাল নিজের মনে বলছিলেন, আমি সহ্য করতে পারছি না। লোকে আমার সঙ্গে কি করে ঐরকম আচরণ করার কথা ভাবতে পারে। ব্যাপারটা আদৌ ঠিক নয়। তুমি যদি নিজে কারো পেছনে না লাগো তাহলে তোমার পেছনেই বা লোকে কেন লাগতে যাবে?

এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জোর গলায় আবার বললো, আবার একটা দাও। ফেজকে তিনি বললেন, যখন তোমাকে কেউ কিছু করতে বলবে তখন তার উচিত ব্যাপারটা খুলে বলা। তার জানানো উচিত যে তুমি কি করেছে এবং তার অর্থ বা কি। সব মিথ্যেবাদী। আমি এসব সহ্য করতে পারি না। মিসেস রাইভ্যাল বললেন, এখন আমার তাহলে কি করা উচিত?

রাইভ্যাল বললেন, তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ফেজ। মিসেস রাইভ্যাল বেশ হাসিখুশী কিন্তু আজ ওর মেজাজ ঠিক নেই।

মিসেস রাইভ্যাল বললেন যে, দরজা খুলে দেখলেন ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল। তিনি বললেন যে তার খুনের সম্পর্কে কিছু জানতে চান। মিসেস রাইভ্যাল বললেন, একসময় রাইভ্যাল তার জীবনে ছিল। কিন্তু এখন আমি ওকে ভাবি না। খবরের কাগজে ছবি দেখেই তো আমি এগিয়ে এসেছিলাম। নিজে থেকে আমি আপনাদের কাছে ওর সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছি।

মিসেস র‍্যাইভ্যাল তার স্বামীর একটা আইডেন্টিফিকেশন মার্ক দেখিয়েছেন। এটা একটা মূল্যবান পয়েন্ট। কারণ আই ভেরিফাই অবশ্যই ভালো হওয়া উচিত।

মিসেস রাইভ্যাল, আচ্ছা সময়টা মনে আছে ঠিক কবে নাগাদ ঐ দাড়ি কামাতে গিয়ে কাটার ব্যাপারটা ঘটেছিলো। অক্টোবরে কি নভেম্বরে ঘটেছিল। তার স্বামী তাকে একান্নতে ছেড়ে যান। তারপর তার খুনের ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেন।

মিসেস রাইভ্যাল যে মৃতদেহ দেখার আগে তাকে দেখেননি এটা মনে হলো না হার্ডের। তাই তিনি বললেন ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ঐ দাগটা বছর পাঁচেকের আগে কিছু না।

রাইভ্যাল বললেন, তা তিনি বিশ্বাস করেন না। যদি তাই হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্বামী যখন আপনাকে ছেড়ে যান তখন ঐ দাগ ছিল না। মৃত লোকটি যে হ্যারি এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

আর আপনার সঙ্গে যদি দীর্ঘদিন দেখাসাক্ষাত না হয়ে থাকে তাহলে কি করে জানলেন আপনি, যে আপনার স্বামীর ঐ বিশেষ জায়গায় একটা ক্ষতচিহ্ন আছে?

মিসেস রাইভ্যাল, মিথ্যে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বিপদে পড়ে যেতে পারেন। আইনে এটাও একটা অপরাধ। এটা হার্ড ক্যাসেল বললেন।

সামান্য থেমে আবার বললেন ইনসপেক্টর, এটাও তো হতে পারে, কেউ হয়তো আপনাকে চাপ দিয়ে আমাদের কাছে দাগের কথা বলতে বলেছে।

রাইভ্যাল বললেন, তিনি মিথ্যে বলেন না। যদি তার বলার মধ্যে কোনো ভুল হয় তার জন্য তিনি দোষী নন। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন হার্ড ক্যাসেল। ওর চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মিসেস রাইভ্যালের ভাবভঙ্গী একেবারে বদলে গেল। অস্থিরভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পায়চারী করলেন তিনি। রিসিভার নিয়ে ডায়াল ঘোরাতে লাগলেন।

আমি ফ্লোর কথা বলছি। তুমি কখনোই আমার সঙ্গে সোজাসুজি ব্যবহার করোনি। শুধু বলেছিলে লোকটার পরিচয় শনাক্ত হলে তুমি বিপদে পড়তে পারো। কিন্তু কখনও ভাবতে পারিনি যে আমি একটা খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়তে চলেছি। আমি আর এসবের মধ্যে থাকতে চাই না।

অপরাধের সহযোগী, মিথ্যে সাক্ষীর জন্য জেল হতে পারে। রিসিভার নামিয়ে রেখে বুথ থেকে বেরিয়ে এলেন মিসেস র‍্যাইভ্যাল। তারপর হাঁটতে লাগলেন ফুটপাত ধরে। তিনি পরিবর্তনশীল চরিত্রের মহিলা।

.

২৬.

 কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ঐ র‍্যামসে মহিলাটির কাছ থেকে বেশিকিছু বের করতে পারোনি। অভিযোগ করলেন কর্নেল বেক।

মহিলা তাহলে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী নন। আমার দিকে তাকালো কর্নেল। আমি জবাব দিলাম না।

তুমি কি আরো বেশি কিছু আশা কর? জিজ্ঞেস করলো কর্নেল।বললাম জবাবে, তা দিয়েও কিছু হবে না।

ভালো কথা। আমাদের অন্য কারো কোথাও আরো কোথাও দেখতে হবে। ক্রিসেন্টটাকে ছেড়ে দাও।

কলিন তোমার ব্যাপারটার শেষ খবর কি, কর্নেল জিজ্ঞেস করল।

আমি মাথা নেড়ে বললাম, নিশ্চয়ই কোনো এক সময় শেষ হবে। ব্যাপারটা আমি অবশ্য করেছি। এখানকার সময় পৃথিবীটা বড়ো গোলমেলে। যেমন যেভাবে সবকিছু ঘটা উচিত সেভাবে ঘটে না। তোমার কাজটা নিঃসন্দেহে প্রথমশ্রেণীর।

কর্নেল বললেন, তার ধারণা মেয়েটি খুশী। আপনি ভুল করছেন কর্নেল। কর্নেল বেক আঙুল তুলে খানিকটা সতর্ক করার ভঙ্গীতে বলে উঠলো, আমি বলছি তুমি প্রস্তুত থেকো। ভেবেচিন্তেই বললাম কথাটা।

আমি ওর কাছে বিদায় নিয়ে চ্যাজিক্রশ ধরে গভীরভাবে চিন্তা করতে করতে হাঁটছিলাম। আমি একটা কাগজ কিনলাম। তাতে দেখলাম একজন মহিলা ভিক্টোরিয়া স্টেশনের ভিড়ে অজ্ঞান হয়ে মারা যান। ভদ্রমহিলার নাম মেরিলিনা রাইভ্যাল।

হার্ডক্যাসেল ফোন করে জানাল ভদ্রমহিলাকে বোধহয় কেউ টাকার লোভ দেখিয়ে লোকটিকে শনাক্ত করেছে। ওর সময়ের সঙ্গে দাগটির মিল ছিল না।

মাঝখান থেকে ঐ অদৃশ্য ব্যক্তিটি বেশি চালাক সাজার চেষ্টা করছে।

ধরা যাক কোনো পরিচিত ওর কাছে এসে বললো, আমি একটু অসুবিধার মধ্যে পড়ে গেছি। আমি যার সঙ্গে কাজ-কারবার করতাম সেই হঠাৎ খুন হয়ে গেছে। ওরা যদি মৃতদেহ শনাক্ত করে দেখে আর আমাদের কাজ-কারবারের ব্যাপারটা প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে সমস্ত ব্যাপারটা চুরমার হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি যদি এখানে এসে বলল ঐ মৃত লোকটি তোমার স্বামী তাহলে খুব ভালো হয়। বলবে অনেক বছর আগে ও চলে গেছিল। আবার সম্ভবত ফিরে এসেছিল। তোমার স্বামীর নাম হ্যারি ক্যাসলটন, তাহলেই ব্যাপারটা অন্যদিকে ঘুরে যাবে।

ব্যাপারটা খুব ঝুঁকির। বড়োজোর একটা ভুল হতে পারে। বছর পনেরো পরে যে কোনো মহিলাই এরকম ভুল করতে পারে ভাবাটাই খুব স্বাভাবিক। আর এর সঙ্গে হয়তো সামান্য কিছু অর্থের ব্যবস্থা আছে। সুতরাং সেইভাবে এগিয়েছে ও।

মহিলা সন্দেহজনক নয়। মৃতের যারা পরিচিত তাদের সকলকে খুনী ভাবতে পারি না। ঐ মহিলা ঐরকম কোনো কাজ করতে পারে বলে তো আমার মনে হয় না।

ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখা হলে তিনি যা মনে ভেবেছিলেন ও সেটাই করলো। সম্ভবত যে ওকে কাজে লাগিয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো, একটা পোস্টঅফিসে গেল প্রথমে। আমি ওকে অনুসরণ করেছি।

পোস্টঅফিসে গিয়ে ও প্রথমেই একটা ফোন করলো। আমি ভেবেছিলাম বাড়ির সামনে থেকে ফোনটা করবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু ঘটেনি। এরপর ও গেল ভিক্টোরিয়া স্টেশনে, সেখানে ক্রাউডিয়ানের একটা টিকিট কাটলেন। সময় ঠিক সাড়ে ছটা। এই সময়টা রাস্তাঘাটে বেশ ভীড় হয়। খুনী ভীড়ের মধ্যে পেছনে এসে দাঁড়ায় এবং ছোরাটা ঢুকিয়ে দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পেবমার্স কলেজে ছিলেন। ইনস্টিটিউশনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। তারপর ৭.৪০ ট্রেনে ক্রাউডিয়ানে ফিরে আসেন।

হার্ড ক্যাসেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগলেন, আর শীলা ওয়েবও কাল লন্ডনে ছিল। সে সময় এক লেখকও নিউইয়র্ক যাবার পথে লন্ডনে ছিলেন। সম্ভবত পাঁচটা কুড়িতে ও হোটেল ত্যাগ করে। এখানে ফিরে আসার আগে একাই একটা সিনেমা দেখতে গেছিল।

আমি বললাম, শোনো ডিক তোমাকে বলার মতো কিছু জানতে পেরেছি আমি। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ। নয়ই সেপ্টেম্বর উনিশ নম্বর বাড়িতে ১.৪৫ নাগাদ একটা গাড়ি ভ্যান এসেছিলো। যে লোকটা চালিয়ে নিয়ে এসেছিলো সেই একটা বড়ো আকারের বাক্স এই বাড়িতে ডেলিভারি দেয় পেছনের দরজা দিয়ে। বাক্সটা সাধারণ ধরনের বাক্স ছিলো না। নতুন লন্ড্রী সব গজিয়ে উঠেছিল। দ্য স্নো ফকস্ এমন একটি লী। ঠিক আছে ব্যাপারটা তুমি চেক করো। একটা লোক চালিয়ে নিয়ে এসেছিলো, আবার একজন সম্ভবত ভেতরে নিয়ে গেছিল বাক্সটাকে।

ও কিছু বলার আগে আমি ছেড়ে দিলাম। বেরিয়ে এলাম। তাকালাম রিস্ট ওয়াচটার দিকে। আমাকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। হার্ড ক্যাসেল আমার কাছে পৌঁছবার আগেই এটা আমাকে করে ফেলতে হবে। আমার ভবিষ্যৎ জীবনের ব্যবস্থা।

 

দুরন্ত ছেলেগুলো -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

২৭.

কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

ঠিক পাঁচদিন পরে। রাত আটটা নাগাদ আমি পৌঁছলাম ক্রাউডিয়ান। হোটেলে গিয়ে হাজির হলাম। ওখানে রুম ভাড়া করলাম একটা। ঘুমিয়ে পড়ার পর পৌনে দশটা নাগাদ। চিরকুটের খামটা বেশ মোটা আর সীমিত বটে। খামটা পরিষ্কার ভাবে ছাপা। কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে খামটাকে খুললাম।

ভেতরে একটা কাগজ। বড়ো বড়ো করে ছাপার অক্ষরে লেখা আছে কারফিউ হোটেল : ২১ : ৩০ রুম নাম্বার ৪৩০ (তিনবার দরজায় টোকা মারবে)।

আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। উল্টেপাল্টে দেখলাম বার কয়েক। কারফিউ হোটেলে ফোন করার কথাটা মাথায় এলো। পরক্ষণেই ডিককে ফোন করার কথা ভাবলাম। এরপর আমি কারফিউ হোটেলে গেলাম। প্রায় ঠিক সময়েই ওখানে পৌঁছে গেলাম। হোটেলের ভেতরে তেমন একটা বেশি লোকজন ছিল না।

ডেস্কে আমি কোনো কিছু জানতে চাইলাম না। সরাসরি উঠে গেলাম। লিফটে এসে পৌঁছলাম চারতলায়। বারান্দা ধরে এগোতে লাগলাম চারশো তিরিশ নম্বর ঘরের দিকে।

দরজায় তিনবার টোকা দিলাম। ঠিক আমার দিকেই মুখ করেই বসে আছেন এরকুল পোয়ারো। পোয়ারো বললেন যে তাকে চিকিৎসক সমুদ্রের হাওয়া খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। পোয়ারো বললেন যে রোজমেরীর একটা ছবি দিতে পারতাম। এছাড়াও আমি নিজের আঙুল কেটে দরজার ওপরে রক্ত লাগা আঙুলের ছাপ লাগিয়ে রাখার কথা ভেবেছিলাম।

শোন কলিন এবারে কিছুটা সিরিয়াস হওয়া যাক। আমি তোমার কিছুটা সহযোগিতা আশা করি। চীকনস্টেবলকে ডেকে পাঠিয়েছিআমি। আর এই মুহূর্তে তোমার ঐ বন্ধুটির জন্য অপেক্ষা করছি। ঐ ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল। তারা তিনজন কথাবার্তা চালাতে লাগলো।

শেষ পর্যন্ত হার্ড ক্যাসেল এলেন। হার্ড ক্যাসেল বললেন, কিছুটা সতর্কভাবে বলতে আরম্ভ করলেন মনে হচ্ছে ব্যবস্থাটা আপনার নিজেরই।

পোয়ারো বললেন যে তার বক্তব্য কক্স হাইড বা ব্লান্ড হাউণ্ডের মতো। গন্ধের পেছনে ছুটোছুটি করার কোনো প্রয়োজন নেই।

পোয়ারো বললেন, তার বন্ধু কলিন ল্যাম্ব এখানে এসেছে। ও আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। কোনো সমাধানের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে নয়। তার অনুমান ইতিমধ্যেই এগিয়েছে ও। কলিন এখনও তাকে চেনে না।

পোয়ারো উইলিব্রিহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বর বাড়িতে যে ভদ্রলোক খুন হয়েছেন তার পরিচয় জানেন। তিনি কে, কিভাবে খুন হয়েছেন তাও জানেন। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, এই লোক একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোত কিন্তু এইরকম লোকের সংখ্যা কম।

পোয়ারো বললেন যে, সমস্ত ব্যাপারটা ধাপে ধাপে বসালে দেখা যাবে ব্যাপারটা এভাবে ছাড়া অন্যভাবে ঘটতে পারত না।তিনি বললেন, কোনো সমস্যার সমাধান করতে গেলে অবশ্যই একটা ঘটনাবলীর প্রয়োজন। কলিন এই ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবে। কারণ যেমন একটা ঘটনা হয়তো চারটের সময় ঘটলো, কাগজে বেরোলো সাড়ে চারটে। কলিন তা করবে না।

পোয়ারো দেখলেন একবার, বললেন যেমন চারটে ঘড়ি। প্রতিটি ঘড়ির সময় সঠিক সময় থেকে এক কাটা এগিয়ে রয়েছে। মালিকের অমতেই সেগুলোকে আবার ঘরের মধ্যে এনে রাখা হয়েছে। অন্তত ঘরের মালিক মিস পেবমার্সের বক্তব্য সেটাই। তবে আমরা পরীক্ষা করে দেখার আগে পর্যন্ত কোনো কিছু বিশ্বাস করতে পারি না। মোটামুটি দশটা বাজতে মিনিট কয়েক আগে সেক্রেটারিয়াল এজেন্সির একটি ফোন বেজে ওঠে। শীলা যখন গেল মৃতদেহ দেখতে পেল। এরপর তার যুবকের সঙ্গে দেখা হলো।

পোয়ারো বলে উঠলেন, কলিন যখন ঘটনাটা বলে তখন আমি থ্রিলারের গন্ধ পেয়েছিলাম। একজন মহিলা তার সৌন্দর্যের লুকানো একমাত্র মেকআপ দিয়ে। সে জানে লোকে তার পোশাক দেখবে। সুতরাং কলিনকে আমি বলতে পারি একজনের থেকে দৃষ্টিটা সরালে এতদূর ঘটনার সমাধান ঘটবে। যে লোকটা খুন হয়েছে একজন ব্ল্যাকমেলার হতে পারে। তবে শোনা কথার পরেই বলা যেতে পারে ভদ্রলোক খুবই সাধারণ ব্যক্তি।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঠিক তাই। এর মৃত্যু আরো কারো সুবিধা করে দিতে পারে।কলিনকে বলেছিলাম যে প্রতিবেশীদের কাছে যাও যাতে পেবমার্সের সম্পর্কে জানা যায়। অতীত ব্যাপারগুলো জানতে পারলে সুবিধা হয়। সাধারণভাবে কথাবার্তা বললে সে সবরকম সতর্ক থাকে না। তিনি বললেন ঐ বাড়ির পাশাপাশি হেমিং, ব্ল্যাণ্ড দম্পতি, ম্যাকনটন বা মিস ওয়াটারহাউস এদের মধ্যে যে কেউ খুনী হতে পারে। তবে আরো গুরুত্বপূর্ণ যারা ঐ সময় ওখানে হাজির হন। যেমন শীলা ওয়েব। সে আগে থেকেই ভদ্রলোকের সঙ্গে কৌশলে দেখা করার পর ও সেইসময় লোকটাকে খুন করে। পোয়ারো কলিনকে খুনী সন্দেহ করেন না। ঐ ব্যক্তিকে নিশ্চয়ই কেউ খুন করতে চেয়েছিল। উনি যদি ব্ল্যাকমেলার হতেন তাহলে দেখতে হত কে তার শিকার ছিল। যদি ধনী ব্যক্তি হত তাহলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে খুঁজে দেখতে হত। যদি লোকটার পরিচয় জানতে না পারি তাহলে আশেপাশে এমন একজনকে খুঁজতে হবে যার ওকে খুন করার পেছনে একটা উদ্দেশ্য আছে। কাজটা বেশ কঠিন।

পোয়ারো বললেন, মিঃ কারী কোথা থেকে এসেছেন সেটা প্রথমেই জানা দরকার। এরপর জানতে হবে তিনি কিজন্য সেখানে এসেছিলেন। মিসেস হেমিং অন্যদের ব্যাপার বোঝার একটা ক্ষমতা আছে।

মিঃ কারীর থেকে একটা কার্ড ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। ওর আসল পরিচয় জানা যায়নি। লোকটার কেউ পরিচিত পাওয়া যায়নি। তার মতে লোকটি ইংরেজ নন আর আগন্তুক। এই অপরাধ বেশ পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।

অনেক ব্যক্তিই মিঃ কারীকে খুন করতে পারে। এডনা মেয়েটির কথাই ধরা যাক। ক্যাভেনডিসে আটজন মেয়ে কাজ করে। চারজন সেদিন দূরে চলে যায়। ওদের লাঞ্চের সময় ১২.৩০-১.৩০ পর্যন্ত এটা প্রথম সময়। দ্বিতীয় সময় বাকি চারজন মেয়ে গেছিল। এডনা, শীলা, জ্যানেট, মাউরিন। গর্তে পড়ে এডনার হিল খুলে যায়। ও অফিসে এরপর ফিরে আসে। এডনা পরে শীলার সঙ্গে দেখা করতে চায়। কিন্তু এতে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই।

মিস মার্টিনডেল ব্যুরোতে ফোন করে ব্যাপারটা উল্লেখ করেছিল। মিস পেবমার্স নামে কেউ ফোন করেনি। এটা মার্টিনডেলের অনুমান। মিস মার্টিনডেল জানতেন না এডনা ফিরে এসেছে। যতটুকু তার প্রয়োজন তাছাড়া ঠিক ১.৫৯ মিনিটে একটা ফোন এসেছে। এরপর শীলা ওয়েবকে বলা হয়। সে অ্যাপার্টমেন্ট কথা শুনে চলে গেল। মিস পেবমার্স ফোনের ব্যাপারে অস্বীকার করেন। মিস মার্টিনডেল, এডনা জানত ফোনটা ১.৫০ মিনিটে এসেছিল। তাই ঘটনাটা নিয়ে এডনা ভাবছিল এবং এ বিষয়ে সে শীলার সঙ্গে কথা বলবে।

ইনকোয়েস্টের দিন মিস পেবমার্সের কথা শুনে এডনা ইনসপেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে চায়। সে যাইহোক ব্যাপারটা মিস মার্টিনডেলের কানে পৌঁছায়। তিনি তখন এডনাকে উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট পর্যন্ত অনুসরণ করেন। এডনা মার্টিনডেল অভিনয়ের আশ্রয় নেন। মিস মার্টিনডেল এডনাকে ফোন করার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। সেই সময় ওড়নার ফাস দিয়ে তাকে তিনি খুন করেন। এটা একটায় ঘটে। হার্ড ক্যাসেল বুঝতে পারছেন না এটা কেন তিনি করবেন।

পোয়ারো মনে করেন তিনি অত্যন্ত জ্বর ও বাস্তববাদী।

পোয়ারো বললেন, মিঃ ব্লাণ্ড বলেছেন যে তার বোন এখানে থাকে বলে তিনি ক্রাউডিয়ানে থাকতে ভালোবাসেন। আসলে তার কোনো বোন ছিল না। কাকার সম্পত্তি তিনি পেয়েছেন। আসলে ধরা যাক একদিন অসহায় উকিলের চিঠিতে মিঃ ব্ল্যাণ্ড অনেক সম্পত্তির অধিকারী হলেন। আসল চিঠি আসল লোক না পেয়ে নকল তোক পেলো। কে জানে উনি কি জন্য আপোস করেছিলেন। পোয়ারো তার রহস্য বই থেকে যা পেয়েছেন এই কাহিনী থেকে মার্টিনডেল আইডিয়া নিয়েছিল। তার কাছ থেকে নোটটা নিল হার্ড ক্যাসেল। পোয়ারো বললেন, তিনি যদি কোনো কাজে আসতে পারেন খুশী হবেন।

পোয়ারো বললেন, খুনের কেসটি সহজ ও ব্যাখ্যা সহজ।

.

২৮.

আরো একবারের জন্য আমি ক্রিসেন্টে এলাম। পশ্চিম দিক বরাবর এগোতে লাগলাম। পেবমার্সের বাড়িতে ঢুকলাম। সম্ভবত খুনের ঘটনায় আমার দৃষ্টি অন্য জায়গায় পরে।

আমি বললাম, আমি হেড-কোয়ার্টারের আশ্বাস পেয়ে গেছি। সেখানে সমস্ত পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আপনি ব্রেল পদ্ধতিতে সমস্ত রেকর্ড রাখেন।

লজ থেকে লারকিন সমস্ত খবরাখবর দিতো। আর এখান থেকে র‍্যামসের মাধ্যমে চলে যেত নির্দিষ্ট ঠিকানাতে। প্রয়োজনে র‍্যামসে রাতে বাগানের রাস্তা দিয়ে এসে যোগাযোগ করতেন। একদিন একটা কয়েন তার হাত থেকে পড়ে গেছিল। তার ছদ্মবেশ ছিল চমৎকার। একটু পরেই স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোকেরা চলে আসবে। আপনার দায়িত্ব বুঝে নেবে। আপনি চলে যেতে মিসেস ব্ল্যাণ্ড। ক্রাউডিয়ানে কেউ জানে না মিঃ ব্ল্যাণ্ড আগে বিয়ে করেছিলেন। আসলে তিনি মিঃ ব্ল্যাণ্ডের দ্বিতীয় পত্নী। তিনি আইনসংক্রান্ত ব্যাপারের অন্য বিভিন্ন কাগজপত্র, কাকার ছবি জোগাড় করে বহুসম্পত্তি অধিকারী হয়।

তার অনুমান বছরখানেক পর কেউ বিদেশে আসে। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর এই চাল ধরে ফেলেন। ভদ্রলোক মিসেস ব্ল্যাণ্ডকে দেখতে চেয়েছিলেন সেজন্য তিনি এখানে এসেছিলেন এরপর তিনি খুন হন। হার্ড ক্যাসেল বললেন, তাহলে মিসেস ব্ল্যাণ্ড আর মিস মার্টিনডেল দুই বোন। ব্ল্যাণ্ড নিছক সময় কাটানোর জন্য বিদেশ ভ্রমণ করতো। আর সেই সময়ে হ্যারি ক্যাসলটন নামে শনাক্ত করে কবর দেওয়া হত তাহলে কেই বা জানতো ভদ্রলোক কানাডা থেকে এখোনে এসেছেন।

আমি বললাম ব্ল্যাণ্ড বলেছিলেন না, যে তিনি বোন না। পোয়ারো দশ নম্বর এলিসমোর গার্ডেন মিঃ এনডার ভাইকে লিখলে তারা কানাডায় অনুসন্ধান চালাতে পারে।

মার্টিনডেল শীলার ঘড়িটা পেয়ে তাকে মৃতদেহ আবিষ্কারের জন্য রাখে। আসলে সে পরিকল্পনা করে। প্রথম থেকেই সে একটা প্যাটার্নে চাইলে যেতে পারেন। কেননা আপনি আমার শাশুড়ী হতে চলেছেন।

উনি একজন অন্ধ মহিলা। কিন্তু সামান্য অন্যমনস্কতার সুযোগে বিপদ ঘটিয়ে দিতে পারেন। তাই আমি সরে গেলে আপনি কি বলতে পারেন কোন মহিলা। তিনি ডেস্কের কাছে ছবি দেখাতে গিয়ে একটা ছুরি বার করলেন, আমি ছুরিটা হাত থেকে কেড়ে নিলাম। ভদ্রমহিলা আমাকে বললেন যে আমি কিছুটা রোজমেরীর বাবার মতো।

.

এরকুল পোয়ারোকে লেখা ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেলের চিঠি

প্রিয় মিঃ পোয়ারো,
ঘটনার একটা নির্দিষ্ট ছবি এখন আমাদের হাতে এসেছে। সবকিছু আপনার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে। আপনি যদি সাহায্য না করতেন তাহলে প্রকৃত সত্য আবিষ্কার করতে পারতাম না।

ফোয়রোর মিঃ ভুগেসাউন সপ্তাহখানেক আগে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কানাডা থেকে ইউরোপ যাবার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন তিনি। ফিরে আসার ব্যাপারটা ছিল অনিশ্চিত।

ফোয়রোর মন্টসর পরিবারের সঙ্গে মিঃ ভুগেসাউনের দারুণ বন্ধুত্ব। তাই প্রচুর সম্পত্তি রেখে যান উত্তরাধিকারীর জন্য। কিছুদিন পরে পেটলবারিতে যোগোভ ব্ল্যাণ্ড বলে এক ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়। দেখা যায় স্ত্রী ভ্যালেরী ব্ল্যাণ্ডই ঐ অগাধ সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারিণী। ভ্যালেরী ঐ ভদ্রলোকের ভাইয়ের যে মন্টেসর পরিবারের মেয়ে যোগোফ ব্ল্যাণ্ডের প্রেমে পড়ে। বাড়িতে না মেনে নেওয়ায় তারা বিয়ে করে। এতে পরিবারের কর্তা মিঃ হেনরি খুব রেগে গেছিলেন। মেয়েদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করেন। মিঃ জুগেলিন ইংল্যান্ড গেলে ব্ল্যাণ্ডের ওখানে যেতে সে বরাবরই ভ্যালেরী অনুগামী।

এই মৃতদেহ কোয়েনটির ভূগেস। বাড়ির রং করার সময় স্নো ফকস্ লী বাজ পাওয়া যায়। মিসেস মাটিনডেল ও ব্ল্যাণ্ড দুই বোন। মিসেস মাটিনডেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অপরাপর ব্যাপারে তার ভূমিকা আছে। মিসেস ব্ল্যাণ্ডের ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। অদূর ভবিষ্যতে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়। মিঃ ব্ল্যাণ্ডের স্ত্রী শত্রুদের হাতে মারা যান। তখন ব্ল্যাণ্ড হিলাজাকে বিয়ে করেন। এসব তথ্য প্রতীতি।

আপনার বিশ্বস্ত
হার্ড ক্যাসেল

সুসংবাদ মিসেস ব্ল্যাণ্ড গ্রেফতার হয়েছেন। অপরাধের দায়িত্ব তিনি তার স্বামী ও বোনের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। উনি ভেবেছিলেন যে, ওরা ভদ্রলোককে শুধু নেশা করাতে যাবে, তিনি ঐ অবস্থায় হিলস মার্টিনডেলকে চিনতে নাও পারেন। এটাই সম্ভাব্য কাহিনী।

কোর্ট বেলা মেয়েটি এক মহিলা মার্টিনডেলকে শনাক্ত করেছে। উনি দুটি ঘড়ি পান। ম্যাকলটন ব্ল্যাণ্ডের বক্তব্য ভ্যানে মিঃ ডুগেস ক্লিকে দেখেছিলেন। ভ্যানটা শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাণ্ডের গ্যারেজে ঢুকেছিল।

কলিন ল্যাম্ব শীলাকে বিয়ে করেছে। কলিন আবেগপ্রবণ।
শুভেচ্ছাসহ
রিচার্ড হার্ড ক্যাসেল

আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ

Bangla Gurukul Logo দুরন্ত ছেলেগুলো রচনা -দি ক্লকস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় -মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস (১৯২৩) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ইংলন্ড থেকে ফিরে -মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস (১৯২৩) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

লন্ডন শহর -ব্ল্যাক কফি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ডঃ কারোলির সন্ধানী দৃষ্টি -ব্ল্যাক কফি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ক্যাপ্টেন হেস্টিংস জানতে চাইলেন -ব্ল্যাক কফি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

বনফুল (১৮৮০) | কাব্যগ্রন্থ | কবিতা সূচি | পর্যায় : সূচনা (১৮৭৮ – ১৮৮১) | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Leave a Comment