পড়ার সব জিনিষ
পড়ার সব জিনিষ -দি হলো | আগাথা ক্রিস্টির অন্যান্য উপন্যাস | অনুবাদ সাহিত্য
স্যার হেনরির পড়ার সব জিনিষগুলিকে লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছিল হেনরি চেয়ারে বসেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, লুসি পিস্তলটা কেন নিয়েছিলে?
লুসি–আমার ঠিক মনে নেই, তবে আমি দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করছিলাম।
হেনরি–দুর্ঘটনা? কে দুর্ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছে?
লুসি–জন ক্রিস্টো বোধহয়। আমি আইন্সউইকের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন ছিলাম।
হেনরি–ওঃ! আইন্সউইক! এটা কি এমন কিছু বড় চিন্তার বিষয়?
লুসি–নিশ্চয়ই। আমি এডওয়ার্ডের জন্যই ভাবছি। এডওয়ার্ড হেনরিয়েটাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না। আমি ভেবেছিলাম জন যদি সরে যায় তবে হেনরিয়েটা এডওয়ার্ডকে বিয়ে করতে পারে। হেনরিয়েটা স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার মেয়ে নয়। কাজেই শেষপর্যন্ত জনকে সরিয়ে দেবার পরিকল্পনাই হয়েছিল। তুমি ভেবো না যে, আমি জন ক্রিস্টোকে গুলি করেছি, তবে আমার মনে দুর্ঘটনার ভাবটা এসেছিল। জন আমাদের অতিথি কাজেই ইচ্ছে থাকলেও তাকে মারতে পারি না।
হেনরি–আমি সর্বদা উদ্বিগ্ন।
লুসি–উদ্বেগের কারণ নেই। আমাদের কিছু করার আগেই জন রাস্তা থেকে সরে গেছে।
রান্নাঘরে ডোরিস ইমট কাঁদছিল কারণ গাজন তাকে খুব তিরস্কার করেছে ঘরের কথা পুলিসের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার জন্য।
.
২২.
দরজায় শব্দ হওয়াতে পৈরট জানালা দিয়ে দেখে বিস্মিত হল যে, ভেরোনিকা ক্রে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। সে হেনরিয়েটার মতো টুইডের পোশাক পরে এসেছিল।
ভেরোনিকা বলল–আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে আমি পরিচিত হতে খুবই উদগ্রীব। আমি আপনার সঙ্গে একটা বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি। জনের মৃত্যু সম্পর্কে আগামীকাল বিচারের মাধ্যমে অনুসন্ধান, আপনি তা জানেন?
পৈরট–আমি জানি।
ভেরোনিকা-ইনসপেক্টর গ্র্যাঞ্জের মাথায় কে ঢুকিয়েছে যে আমি জনের সঙ্গে ঝগড়া করেছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম আমি জনকে পনেরো বছর দেখিনি। তিনি বিশ্বাসই করলেন না। কিন্তু ওটা সত্য।
পৈরট-সত্য হলে প্রমাণিত হবে। আপনার উদ্বেগের কারণ নেই।
ভেরোনিকা–কিন্তু আসল কথা আমি ইনসপেক্টরকে বলতে সাহস পাইনি। আপনাকে বলতে চাই। পনেরো বছর আগে জনের সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সে আমাকে অভিনয় ছাড়তে বলে, কিন্তু আমি ছাড়িনি। তাতে সে রেগে গিয়ে সব ভেঙে দিয়ে চলে গেল। তারপরে তার সঙ্গে আমার দেখা হয় সেই শনিবার রাত্রে। সে তার স্ত্রীকে এবং সন্তানদের পরিত্যাগ করে আমাকে বিয়ে করতে চাইল এবং আমার স্বামীকে পরিত্যাগ করতে বলল। কিন্তু আমি তাকে প্রতিবাদ করলাম। সেইজন্য তাকে পরের দিন চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্য।.সে এক গোঁ ধরে বসল। সে আমার কোনো কথাই শুনল না। আমি বললাম আমি তাকে অত্যন্ত ঘৃণা করি। তখন সে রেগে চলে গেল। এখন সে মৃত।
ভেরোনিক কাহিনীর একবর্ণও পৈরটের বিশ্বাসযোগ্য মনে হল না। তবু তার মধ্যে একটা সরলতা ছিল। ঘটনা একটা ঘটেছিল ঠিকই কিন্তু যেভাবে, ঠিক সেভাবে নয়, ভেরোনিকাই জনকে ভুলতে পারেনি। সে-ই ব্যর্থ প্রেমিকা, সে-ই জনের কাছে অন্যায় প্রস্তাব করেছিল এবং জন তাতে রাজী হয়নি। এটাই বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা।
পৈরট-যদি জনের মৃত্যুর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক থাকে তবে প্রকাশ করতে পারেন, আর তা না হলে নিজের মনেই রেখে দেওয়া ভালো।
ভেরোনিকা তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল এব পৈরটের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
.
আরও পড়ুন:
- বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট ও তার প্রতিকার রচনা | Power crisis in Bangladesh and its remedy | প্রতিবেদন রচনা
- বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই | Fakir Lalon Shai
- গীতিকবি জসীম উদ্দীন | Poet Jasimuddin
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ যারা পাচ্ছেন
২৩.
বিচারের মাধ্যমে অনুসন্ধান অল্পক্ষণের মধ্যেই শেষ হল। পুলিসের অনুরোধে একপক্ষকালের জন্য মুলতুবি হয়ে গেল। জার্দা ভাড়ার গাড়িতে চড়ে শোকের কালো পোশাক এবং একটা অদ্ভুত কালো টুপি পরে এসেছিল।
অসহিষ্ণুভাবে এডওয়ার্ড বলল, ক্রিস্টোর মধ্যে সকলে কি দেখে? সেই ভাগ্যহীনা স্ত্রীলোকটা একদম ভেঙে পড়েছে। সে অত্যন্ত স্বার্থপর ছিল কী, তুমি তার সম্বন্ধে কি ভাব?
মিডগে–আমি? আমি তাকে সম্মান করতাম।
এডওয়ার্ড–তাকে সম্মান করতে? কেন?
মিডগে–সে নিজের কাজ জানত।
এডওয়ার্ড–তুমি ডাক্তার হিসাবে তাকে ভালো ভাবতে?
আর বেশি সময় ছিল না। হেনরিয়েটা গাড়ি করে মিডগেকে লন্ডনে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এডওয়ার্ড হলোতে চলে গেল। পরে সে হেনরিয়েটার দিকে এগিয়ে গেল, আমি তোমাকে ফোন করব, হেনরিয়েটা।
হেনরিয়েটা–তা কোরো, কিন্তু আমি অনেকদিন বাইরে থাকতে পারি।
এডওয়ার্ড-বাইরে?
হেনরিয়েটা–হ্যাঁ, আমার দুঃখ ভোলার জন্য। তুমি এটা আশা কোরো না যে, আমি ঘরে বসে বসে কাদব, করো কি?
এডওয়ার্ড-আমি আজকাল তোমাকে বুঝতে পারছি না। তুমি অন্য প্রকার হয়ে গিয়েছ।
সে একটু নরম হয়ে এডওয়ার্ডের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমি ইচ্ছা করলে ফিরে আসতে পারি, পারি না লুসি। যেখানে হেনরিয়েটা গাড়ি রেখেছে সেই মার্কেট স্কোয়ারে সে চলে গেল, তার এবং মিডগের স্যুটকেস আগেই গাড়িতে তোলা হয়েছিল। তারা গাড়িতে উঠে চলে গেল।
হেনরিয়েটা–মিডগে, তোমার কাঁধের উপর দিয়ে তাকাও। দেখো গাড়ি পেছনে যাচ্ছে।
মিডগে–হ্যাঁ?
হেনরিয়েটা–ইহা একটি ভেন্টর ১০।
মিডগে–তাই কি, তারা কি এখনও আমাদের দিকে নজর রাখছে?
হেনরিয়েটা–তাই তো মনে হয়। এই দ্বিতীয় বন্দুকের ব্যাপার বোঝ কি?
মিডগে-না। এটাও কি হেরির বন্দুক?
হেনরিয়েটা–জানি না, এখনও তো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মিডগে–না, তা সত্যি। হয়তো কোনো বাইরের লোকও হতে পারে হেনরিয়েটা, আমি কাকে জনের হত্যাকারী বলে সন্দেহ করছি জান? সেই স্ত্রীলোকটি।
হেনরিয়েটা-ভেরোনিকা কে?
মিডগে–হ্যাঁ। এটা সম্ভব নয় হেনরিয়েটা, তুমি ভাব না?
হেনরিয়েটা–ভেবে লাভ কি? আমাদের সকলের কথাই ভাবতে পারি।
মিডগে–আমাদের সকলের কথা?
হেনরিয়েটা–আমরা সকলেই এর মধ্যে আছি। তবে জনকে গুলি করার পেছনে একটা মতলব আবিষ্কার করতে হবে। আমার কিন্তু লুসির মতোই ভেরোনিকার অভিনয় দেখতে ভালো লাগবে।
মিডগে বলল–তুমি এত প্রতিহিংসাপরায়ণ কেন, হেনরিয়েটা?
হেনরিয়েটা যেহেতু আমি জনকে ভালোবাসতাম।
তারা তখন অ্যালবার্ট ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। লন্ডনে শেষ বিকেলের আলো মিলিয়ে যাচ্ছে। তারা দুজনে স্টুডিওর দরজায় এসে দাঁড়াল। মিডগেএকা একা স্টুডিওর মধ্যে ঘুরে ঘুরে হেনরিয়েটার কাজ দেখছিল। নির্জন স্টুডিওতে কাঠ ও ব্রোঞ্জের মূর্তিগুলির মধ্যে তার কেমন যেন ভয় ভয় করছিল।
এসো এখন চা খাওয়া যাক–হেনরিয়েটার মুখে সেই সহৃদয় অভিব্যক্তি কিন্তু মিডগে দেশলাই দেখে সব ভুলে গেলে। সে বলল, এই দেশলাই ভেরোনিকা কে নিয়েছিল এবং লুসি তাকে ছটা নিতে জেদ করল। কেউ কি দেখেছে, তার ঘরে দেশলাই ছিল কিনা?
হেনরিয়েটা–আমার মনে হয় পুলিস খোঁজ নিয়েছে। এডওয়ার্ডকে প্রত্যাখ্যান করা হেনরিয়েটার পক্ষে নির্দয়তা। মিডগে চায় এডওয়ার্ড সুখী হোক। এডওয়ার্ডের কাছে মিডগে চিরদিনই ‘ছোট মিডগে’-এর বেশি কিছু নয়। ভালোবাসতে পারা যায় এমন স্ত্রীলোক সে কোনোদিনই এডওয়ার্ডের কাছে হতে পারল না। শরতের হিমেল সন্ধ্যায় তারা বেরিয়ে পড়ল। মিউস পেরিয়ে যেতেই, একটা গাড়ি পাশাপাশি যেতে লাগল।
হেনরিয়েটা বলল–একটা ভেন্টর ১০, আমাদের ছায়া। দেখো, সে আমাদের অনুসরণ করবে। কী পাশবিক সব ব্যাপার।
-তোমার কি তাই মনে হচ্ছে, আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না–মিডগে বলল।
হেনরিয়েটা মিডগেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে মিউস-এ ফিরে এসে গ্যারেজে গাড়ি রেখে দিল। আর একবার সে স্টুডিওতে ঘুরে বেড়াল, তারপর সে মনে মনে বলল–কাজ করাই ভালো। সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
হেনরিয়েটা ওভারঅল পরে নিল, প্রায় দেড়ঘণ্টা কাজ করার পর সে লক্ষ্য করল, যে-মডেলটা সে তৈরি করেছিল তা তার পছন্দমতো হয়েছে। এটা একটা ঘোড়ার আকৃতির মতো। এলোমেলো কাদা লাগানো হয়েছে। অশ্বারোহী বাহিনীর ঘোড়ার মতো রক্তমাংসের ঘোড়া নয় যেন।
![পড়ার সব জিনিষ -দি হলো | আগাথা ক্রিস্টির অন্যান্য উপন্যাস | অনুবাদ সাহিত্য 2 পড়ার সব জিনিষ -দি হলো ( আগাথা ক্রিস্টির অন্যান্য উপন্যাস ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/odnb-9780198614128-e-1012602-graphic-1-full-237x300.jpeg)
২৪.
শ্যাফটেসব্যারি এভিনিউর ঘোরানো ফুটপাথের উপর দাঁড়িয়ে এডওয়ার্ড এ্যাঙ্গক্যাটেল ইতস্তত করছিল। বাইরে সোনালি অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘ম্যাডাম অ্যালফ্রেজ।
এডওয়ার্ড অতীত যুগে বাস করতে চায় এবং বর্তমানকে সে অনাস্বাদিত রূপে গ্রহণ করে। মিডগে তার কাছে খেটে খাওয়া সাবালিকা। তার কাছে সব যেন ওলোটপালট হয়ে গেল–তার মনে হল আইন্সউইকের বহুমূল্য অংশটিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে যেন হঠাৎ মোহাচ্ছন্নের মতো বলে ফেলেছিল, তোমাকে আরও বেশি দেখতে ইচ্ছে হয়, ছোট মিডগে…
সেই থেকে সে এই ভেবে কষ্ট পাচ্ছে যে, সে কোনোদিন মিডগের সুখদুঃখের কথা ভাবেননি। ম্যাডাম আলফ্রেজের দোকানে অত্যন্ত কষ্টের চাকরির কথা শোনা থেকে সে আকাশ পাতাল ভেবে ভেবে অবশেষে ঠিক করেছে নিজে গিয়ে একবার দেখে আসবে।
কোনোরূপে এডওয়ার্ড একটু নিচু হয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে গেল এবং দেখতে পেল দুটি কর্কশ স্বরের স্ত্রীলোক শো-রুমে তাদের পোষাক পরীক্ষা করছিল এবং একটি কালো মেয়ে তাদের পোষাক দেখছিল। দোকানের পেছনে মোটা নাকের একটা বেঁটে স্ত্রীলোক তার খদ্দেরের সঙ্গে তর্ক করছিল। ক্রেতা অত্যন্ত মোটা ছিল; একটা ইভনিং গাউন ছিল তাদের তর্কের বিষয়।
পাশ থেকে একটা ভীতিপ্রদ স্ত্রীলোকের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। আপনি ভালো কিছু একটা দেখাতে পারেন না, যা পছন্দ হওয়ার মতো? উত্তরে সে মিডগের শান্ত স্বরের অনুনয় বিনয় ও পোষাক পছন্দ করানোর জন্য দু-একটা আবেদনের কথা শুনতে পেল।
ইতিমধ্যে ম্যাডাম আলফ্রেজ মোটা ক্রেতার কাছ থেকে চলে এসে এডওয়ার্ডের দিকে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকাল। এডওয়ার্ড জিজ্ঞাসা করল, আমি মিস হার্ডক্যাসলের সঙ্গে কথা বলতে পারি কি?
একটা বদমেজাজের স্ত্রীলোক কতগুলি পার্শেল নিয়ে বেরিয়ে গেল, মিডগে তার জন্য দরজা খুলে দিল। ইতিমধ্যে মিডগে কোট পরে প্রস্তুত হয়ে এসে হাজির হল, এডওয়ার্ড তার সঙ্গে বেরিয়ে গেল। যেতে যেতে এডওয়ার্ড বলল, এইসব জিনিষের সঙ্গে তুমি মানিয়ে চল? সহ্য কর কি করে, ফ্রকগুলি ক্রেতার মুখের উপর ছুঁড়ে মারতে পার না? কিন্তু তোমার এখানে থাকা উচিত নয়। আমি নিজে সব দেখতে পেয়েছি, অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই সব ছাড়িয়ে ট্যাক্সি করে তোমাকে আইন্সউইকে নিয়ে যাই।
মিডগে–তুমি জান দুটো পনেরোর ট্রেনে আইন্সউইকে যাওয়ার অর্থ কী? বলতে হয় তাই বলে যাচ্ছো; কিন্তু চিন্তা করে কিছু বলছ না।
ঠিক এই সময় একটা ট্যাক্সি ডেকে দুজন তাতে উঠে পড়ল। ট্যাক্সিতে চুপচাপ বসেছিল। তারা বার্কলি হোটেলে ঢুকল।কফি পান করতে করতে এডওয়ার্ড জিজ্ঞেস করল, তুমি আইন্সউইক ভালোবাসো না? আমি বলছি তুমি চিরকালের জন্য আইন্সউইকে এসো, আজকেই যেতে হবে তা বলছি না। আমি বলছি তুমি আমায় বিয়ে করো মিডগে। আমরা পরস্পরকে অনেকদিন ধরে জানি। তুমি আসবে কি?
মিডগে–আমার তো ম্যাডাম আলফ্রেজের কাছে যেতে হবে, তার ভরসা তো আমি।
এডওয়ার্ড–কিন্তু তার আগে আমাদের বন্ড স্ট্রিটে যেতে হবে।
মিডগে–আংটি?
এডওয়ার্ড–এটাই তো সচারাচর ব্যবহৃত হয়।
অনেকক্ষণ বাছাবাছির পরে এডওয়ার্ড নিজের আংটি পছন্দ করল। পরে মিডগের অনুরোধে তার আংটিটাও পছন্দ করে দিল।
.
২৫.
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল সব শুনে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বললেন–এখন থেকে সেন্ট জর্জের গির্জায় তোমাদের বিবাহ হবে।
মিডগে বলল–আমি শান্তিপূর্ণ বিবাহের পক্ষপাতী। একখানা কোট এবং স্কার্ট হলেই আমার বিয়ে হয়ে যাবে।
লুসি বলে-না, মিডগে, সাদা বাদে সার্টিনের পোশাক চাই। ম্যাডাম আলফ্রেজের দোকানের নয়, ভালো দোকানের। মিরিলীতে চলো মিডগে। হেনরি তোমাকে দেবে। তোমার বা এডওয়ার্ডের কিছু খরচ করতে হবে না।
মিডগে–হত্যাকাণ্ডের ব্যাপার তো মিটে গেছে।
লুসি-না, এখানে মূলতুবী আছে। ইনসপেক্টর গ্রাঞ্জের লোক সর্বত্র ছড়ানো রয়েছে। যে রিভলবার দিয়ে ক্রিস্টোকে গুলি করা হয়েছে সেটাই তারা খুঁজছে।
হারকিউল পৈরট সুইমিং পুলের উপরে বসেছিল। হেনরিয়েটা সেইদিকে আসতে গিয়ে পৈরটকে দেখে থেমে গেল। সুপ্রভাত পৈরট। আমি আপনার কাছে যাচ্ছিলাম। ইনসপেক্টর কী খুঁজছেন? রিভলবার? আপনার কি মনে হয় ওঁরা খুঁজে পাবে?
পৈরট–মনে হয় পাবে।
হেনরিয়েটা–আপনার কি ধারণা যে, এটা এখানেই কোথাও আছে?
পৈরটের ধারণা যে শীঘ্রই এটা পাওয়ার সময় হয়ে গেছে এবং হেনরিয়েটাই জনের হত্যাকারী। পৈরটের অনুমান হত্যাকারীর সৃজনীশক্তি আছে।
হেনরিয়েটা চুপ করে রইল, সে একটা পেন্সিল দিয়ে বেঞ্চিতে একটা গাছের ছবি আঁকতে লাগল। গাছটার নাম ইয়াগড্রাসিল। হেনরিয়েটা পৈরটকে ইয়াগড্রাসিলের আসল ইতিহাসটা বলল। এ ছবি সে আগেও তাঁবুতে গোল লোহার টেবিলে এঁকেছিল এবং পৈরটের ধারণা সময়টা ছিল রবিবার বেলা বারোটা।
পৈরট বলল–এ্যাঞ্জের লোকেরা রবিবারের বিকেলে মৃতদেহের ছবি তুলতে তুলতে তাবুতে কারা আসে লক্ষ্য করছিল।
হেনরিয়েটা বলে-সন্ধ্যার অনেক পরে ডিনারের শেষে গিয়েছিলাম।
পৈরট–আপনি কি বলতে চান রাত্রির অন্ধকারে আপনি তাঁবুতে গিয়ে গাছটা এঁকে এসেছেন?
হেনরিয়েটা–আপনার ধারণাটা কি?
পৈরট-রবিবার সকালে হয়তো আপনার জ্ঞাতসারে পেন্সিল দিয়ে ইয়াগড্রাসিলের ছবি এঁকেছিলেন।
হেনরিয়েটা–রবিবার সকালে তাঁবুতে আসিনি। জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে আমি একটার আগে পুলের ধারে যাইনি।
পৈরট–আপনি তাবুতে ছিলেন এবং ডাঃ ক্রিস্টোকে গুলি করেছেন অথবা আপনি দেখেছেন কে ডাঃ ক্রিস্টোকে গুলি করেছে। অথবা এমন কেউ ওখানে ছিল যে, ইয়াগড্রাসিল সম্বন্ধে জানে এবং জেনে শুনে টেবিলের উপর এঁকেছে আপনার উপর সন্দেহটা জাগানোর জন্য।
হেনরিয়েটা–আপনারা কোনোদিন প্রমাণ করতে পারবেন না।
.
২৬.
গ্র্যাঞ্জ পৈরটের সঙ্গে এক কাপ চা খাওয়ার জন্য রেস্টহ্যাভেন-এ এল। সে বলল, আগামীকালের পরের দিন বিচারের মাধ্যমে অনুসন্ধানের তারিখ। কিন্তু কী হবে? বন্দুকটা তো পাওয়া গেল না। ভালো করে খুঁজলেও বন্দুকটা পাওয়া যাবে না বলে মনে হচ্ছে।
পৈরট–আপনি বন্দুকটা পাবেন।
গ্র্যাঞ্জ–জন ক্রিস্টো গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রায় দুমিনিট পরে আপনি গিয়ে পৌঁছেছিলেন। তখন লেডি ক্যাটেল এককুড়ি ডিম, মিস স্যাভারনে একটা ফুলের বাস্কেট নিয়ে এসেছিলেন এবং এডওয়ার্ড এ্যাঙ্গক্যাটেল একটা শিকারের ঢিলে কোট পরেছিলেন। তাদের যে-কেউ বন্দুকটা নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক ব্যক্তি ভেরোনিকা ক্রে। সে ক্রিস্টোর সঙ্গে ঝগড়া করেছে। সে তাকে ঘৃণা করে।
পৈরট–আর হেনরিয়েটা স্যাভারনেক?
গ্র্যাঞ্জ–কিন্তু সেখানেও কিছু পাওয়া যায়নি। তার উপর সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে। খানা তল্লাসীতে সে কৌতুক বোধ করল। তার স্টুডিওর সুন্দর জিনিসগুলি আমাদের লোকেদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। কাদামাটির মূর্তি, হ্রাসের এ্যালুমিনিয়ামের সুন্দর মূর্তি-ঘোড়ার পুতুল দেখেও মনে হবে না ঘোড়া বলে। এখানকার আবহাওয়ায় এমন কিছু আছে, যা সবাইকে জড়িয়ে ফেলেছে। লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেলকে দেখে মনে হয় তিনি উন্মত্তা। লেডি এ্যাঙ্গ্যাটেল বলেছিলেন যে এডওয়ার্ড মিস স্যাভারনেকের প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু শুনছি তিনি মিস হার্ডক্যাসেলের সাথে চুক্তিবদ্ধ।
তারা দুজনে বাগানের পথ চলতে চলতে একটা রিভলবার আবিষ্কার করল।
পৈরট–আমি বলিনি যে, আমাদের ভাগা ফিরে গেছে, আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করিয়ে আমাকে জানাবেন।
গ্র্যাঞ্জ টেলিফোন করে জানাবেন বলে চলে গেল।
পৈরট দুটি টেলিফোন পেল। প্রথমটি সেদিন সন্ধ্যায়ই, এটাই সেই হেনরির স্টক থেকে হারিয়ে যাওয়া বন্দুক এবং এটা দিয়েই ডাঃ ক্রিস্টোকে হত্যা করা হয়েছে।
পৈরট দ্বিতীয় ফোন পেল পরের দিন। বন্দুকের উপরের ছাপ হলোর কারুর হাতের ছাপের সঙ্গে মেলেনি, এডওয়ার্ড হেনরি, ডেভিড, লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল, হেনরিয়েটা, মিডগে কারুর নয়। এটা বাইরের কোনো লোকের হাতের ছাপ, যাকে আমরা কেউ চিনি না। আমরা জার্দা ক্রিস্টোকে হত্যাকারিণী বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু তার হাতের ছাপের সঙ্গেও মিল হয়নি।
![পড়ার সব জিনিষ -দি হলো | আগাথা ক্রিস্টির অন্যান্য উপন্যাস | অনুবাদ সাহিত্য 3 পড়ার সব জিনিষ -দি হলো ( আগাথা ক্রিস্টির অন্যান্য উপন্যাস ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/agatha-christie.jpeg)
২৭.
জুরির ফোরম্যান সযত্নে পড়ে গেলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মৃত ব্যক্তি কোনো অজানা হত্যাকারী বা হত্যাকারীগণ দ্বারা নিহত হয়েছেন।
পৈরট দেয়ালের ধার থেকে মাথা নাড়লেন। আর কোনো সম্ভাব্য রায় হতে পারে না উপস্থিত সকলেই একবাক্যে স্বীকার করলেন।
জাদা সেই কালো পোষাক পরেই এসেছিল। তার মুখে সেই উদাসী অসুখী অভিব্যক্তি।
লুসি বলল–আমি ভেবেছি যে, আমরা একটা উৎসব করব, সব যখন ভালোভাবেই কেটে গেল। বিচারের মাধ্যমে অনুসন্ধান শেষ হওয়ায় হোর আবহাওয়া যেন পাল্টে গেছে। একটা ভার যেন মাথা থেকে নেমে গেছে। কাজেই হাসিখুশীর জোয়ার এসেছে।
মিডগে বলল–কেন জন ক্রিস্টোকে মেরেছে এডওয়ার্ড? আমরা ভেবেছিলাম, জাদা মেরেছে। কিন্তু জার্দা তাকে মারেনি। তোমার কি মনে হয় আমাকে বলল।
এডওয়ার্ড–এখন এসবের চিন্তাভাবনা করা লাভজনক নয়। পুলিস যখন কিছু খুঁজে বার করতে পারল না, তখন ব্যাপারটা ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
মিডগে–কিন্তু জানা তো হলো না।
এডওয়ার্ড-জেনে লাভ কি? জন ক্রিস্টো আমাদের কী ছিল?
মিডগে–কিছু না থাকলেও তার জন্য সকলেই শোক করেছে, তাকে সমাধিস্থ করেছে। জন ক্রিস্টো মরে গিয়েই শেষ হয়ে যায়নি। জন ক্রিস্টো এখনও এই হলোতে রয়েছে। মিডগে ভাবল এডওয়ার্ড বোধহয় হেনরিয়েটা এবং জন ক্রিস্টোর কথা ভাবছে। হেনরিয়েটা না জানতে পারে সে কী চায়, কিন্তু এডওয়ার্ড চিরদিনই হেনরিয়েটার থাকবে…
মিডগের মনে হলো সে হয়তো এডওয়ার্ডকে নিয়ে সুখী হবে না। কারণ, সর্বদাই হেনরিয়েটার কথা ভাববে, এটা তার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। আমি অত্যন্ত দুঃখিত এডওয়ার্ড। কিন্তু তবু আমাকে বলতে হচ্ছে, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি না।
এডওয়ার্ড–কিন্তু আইন্সউইককে তুমি ভালোবাসো।
মিডগে–কিন্তু শুধু আইন্সউইকের জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি না। সেটা তোমার জানা উচিত।
এডওয়ার্ড-অবশ্য তুমি যা বলতে চাইছ তা আংশিক সত্য।
মিডগের ক্ষীণ আশা ছিল যে, এডওয়ার্ড তার সঙ্গে তর্ক করবে এবং তাকে বোঝাবার চেষ্টা করবে, কিন্তু তা সে কিছুই করল না।
মিডগে হাতের আংটিটা খুলে এডওয়ার্ডকে ফেরত দিল।
এডওয়ার্ড–মিডগে, আমার ইচ্ছে যে ওটা তুমি রেখে দাও।
মিডগে–আমি তা পারি না।
এটা সম্পূর্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবেই হয়েছিল, সে জানত না এবং কোনোদিনই জানবে না মিডগে কী অনুভব করছে। প্লেটের উপর স্বর্গ নেমে এসেছিল। প্লেটটা ভেঙে গিয়েছে এবং স্বর্গ তার আঙুলের ফাঁক দিয়ে চলে গেছে।
.
২৮.
বালিশের উপর এপাশ-ওপাশ করেও মিডগের ঘুম আসছে না। সে দরজার খিল খোলার শব্দ পেল। তার দরজার পরে বারান্দায় কার পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এডওয়ার্ড এত রাত্রে তার দরজার পাশ দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। সে কোথায় যাচ্ছে? সে কি বাইরে চলে যাচ্ছে? সে উঠে ড্রেসিং গাউনটা পরে হাতে একটা টর্চ নিয়ে দরজা খুলে পথে নেমে এল। সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে আলোটা জ্বেলে দিল। সামনের ও পাশের দরজা তালাবন্ধ। রান্নাঘরের দরজা ভেজানো। একটা ক্ষীণ আলো এসে পড়ছিল। এডওয়ার্ড মেঝেতে শুয়ে আছে, তার মাথা গ্যাসচুল্লীর মধ্যে।
মিডগে সার্সি খুলতে না পারায় কাঁচ ভেঙে দিল, এডওয়ার্ডকে গ্যাসচুল্লী থেকে বার করে গ্যাস বন্ধ করে দিল। এডওয়ার্ড অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল এবং অদ্ভুতভাবে শ্বাস নিচ্ছিল। মিডগে এডওয়ার্ডকে জানালার কাছে টেনে নিল। কিন্তু এডওয়ার্ড কেন, কেন? মিডগে শুনতে পেল অনেক দূর থেকে এডওয়ার্ড যেন বলছে, কী ঠান্ডা! মিডগে বাহুবন্ধনে এডওয়ার্ডকে আবদ্ধ করল।
–তোমার স্পর্শ এত গরম মিডগে।
হঠাৎ আনন্দ এবং আত্মবিশ্বাসের গর্ব যেন তাকে পূর্ণ করল। সে নুয়ে পড়ে তার ঠোঁটের উষ্ণতা অনুভব করছিল। এডওয়ার্ডের মনে হল মিডগের ভালোবাসা যেন তাকে ঘিরে ধরেছে, তাকে সবকিছু থেকে আড়াল করে এবং সেই ঠান্ডা মরুভূমিতে সুখের জোয়ার বইতে লাগল, যেখানে এতদিন সে একলা ছিল।
এদিকে হঠাৎ লুসির মাথায় মতলব এল। তিনি হেনরিয়েটার ঘরে গেলেন, এটা সেই হোলস্টার, তুমি কি এটা সম্বন্ধে কিছু ভেবেছ?
–হোলস্টার? হোলস্টার সম্বন্ধে কি ভাববো?
–হেনরির সেই রিভলবারটা হোলস্টারের মধ্যে ছিল তুমি জান, সেই হোলস্টারটা পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ সেটার কথা ভাবছেও না।
.
২৯.
জাদার মাথা ব্যথা করার জন্য চায়ের জল ফুটতে দিল। এমন সময় সদর দরজায় ঘন্টা, জার্দাই দরজা খুলে দিল। সে হেনরিয়েটার গাড়ি দেখে বিস্মিত হল।
হেনরিয়েটা বলল, শোনো জার্দা, হোলস্টার ছাড়া সবই ঠিক আছে। তোমাকে আর কিছুতেই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়াতে পারবে না, তুমি পুলের ধারে ঝোঁপের মধ্যে যে রিভলবারটা ফেলেছিলে, সেটা আমি এমন জায়গায় লুকিয়েছি যা তুমি কিছুতেই পারতে না এবং তার উপরে যে আঙুলের ছাপ আছে তা পুলিস কোনোদিন সনাক্ত করতে পারবে না। এখন শুধু জানতে চাই হোলস্টারের কী করছ? হোলস্টারটা দিয়ে দিতে অনুরোধ করে হেনরিয়েটা।
জার্দা-পুলিস যখন হার্লি স্ট্রিটে এসেছিল, আমি তখন এটাকে টুকরো করে কেটে ব্যাগে করে আমার চামড়ার কাজের সঙ্গে রেখে দিয়েছি।
জাদা জনকে মহৎ ভাবত। তার বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়াতেই সে জনকে হত্যা করতে বাধ্য হয়। সে গোয়েন্দা কাহিনীতে পড়েছিল যে, কোন বন্দুকের গুলিতে কে নিহত হয়েছে পুলিস তা বলতে পারে। তাই দুটো রিভলবার নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, একটাতে গুলি ছুঁড়ে ঝোপে ফেলে দিয়ে অন্যটা ধরে দাঁড়িয়েছিল। সেজন্যে প্রথমে তাকে খুনী সন্দেহ হলেও পরে তা প্রমাণিত হয়নি। জার্দা উঠে চা তৈরি করতে গেল। এমন সময় পৈরট এসে হাজির। হেনরিয়েটা গাড়ি নিয়ে হলো ছেড়ে বেরিয়েছে বলে পৈরট তার পিছু নিয়েছে। ছেলেমেয়েরা জার্দাকে প্রশ্ন করে বাবাকে কেন হত্যা করা হয়েছে? এই কথা বলতে বলতে জার্দার ঠোঁট নীল হয়ে এল এবং ঝুঁকে পড়ল। পৈরট ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল, এবং বলল, সহজ এবং অপেক্ষাকৃত বেদনাহীন মৃত্যু।
হেনরিয়েটা বলল-হার্টফেল করল, না চায়ের মধ্যে কিছু ছিল? সে নিজেই কিছু মিশিয়েছিল। সে চলে যাওয়ার এই রাস্তাই পছন্দ করল।
পৈরট বললেন-না না, এটা আপনার চায়ের কাপ। সে দেখেছিল যে আপনি তার গোপন কথা জানেন, কাজেই আপনারও মরা উচিত। আপনি খুব ক্লান্ত হেনরিয়েটা।
হেনরিয়েটা–আপনি কখন অনুমান করলেন?
পৈরট–আমি শীঘ্রই বুঝেছিলাম যে, আপনারা যা করেছেন তার পেছনে আত্মীয়দের সমর্থন ছিল। কিন্তু কেন আপনি এটা করতে চেয়েছিলেন।
![পড়ার সব জিনিষ -দি হলো | আগাথা ক্রিস্টির অন্যান্য উপন্যাস | অনুবাদ সাহিত্য 4 পড়ার সব জিনিষ -দি হলো ( আগাথা ক্রিস্টির অন্যান্য উপন্যাস ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/images-1.jpeg)
হেনরিয়েটা–কারণ, জন আমাকে করতে বলেছিল। সে জানত জাদা যা করেছে তার পরিণাম থেকে কেউ যদি রক্ষা করতে পারে সে আমি এবং সে জানত আমি সবকিছুই করব, কেননা জনকে ভালোবাসি। কাজেই প্রথমেই আমি রিভলবারটা পুলের জলে ফেলে দিলাম, তাতে আঙুলের ছাপ নষ্ট হয়ে যাবে। পরে যখন জানলাম যে, অন্য বন্দুক দিয়ে জনকে গুলি করা হয়েছে তখন আমি সেই বন্দুকটা খুঁজতে লাগলাম এবং খুঁজে পেলামও এবং আমার স্টুডিওতে লুকিয়ে রেখেছিলাম, পরে এনে যেখানে রাখলাম পুলিস সেখান থেকে উদ্ধার করেছে?
পৈরট–কাদামাটির মধ্যে?
হেনরিয়েটা কি করে জানলেন জিনিসটা কোথায় ছিল?
পৈরট–আপনার ঘোড়ার মডেল দেখেই বুঝেছিলাম আপনার মনে ছিল, ট্রয়-এর কাঠের ঘোড়া, কিন্তু আঙুলের ছাপ কি করে ম্যানেজ করলেন?
হেনরিয়েটা–একজন বুড়ো অন্ধ দেশলাই বিক্রি করে, সে জানত না ওটা কি? আমি তাকে ওটা ধরে থাকতে বললাম, আমি টাকা বার করছি বলে।
পৈরট–আমি জানি, বুঝতে পেরেছিলাম, জার্দা ক্রিস্টো ছাড়া সকলকেই জড়ানো হচ্ছে।
হেনরিয়েটা–জাদার কী করা হবে?
পৈরট-জার্দার ব্যাগ উল্টে দিল, তা থেকে সোয়েড এবং অনেক রঙিন চামড়ার টুকরো পাওয়া গেল। পৈরট চামড়াগুলো সাজিয়ে হোলস্টার তৈরি করল। আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি।
হেনরিয়েটা–কেউ কোনোদিন জানবে না, প্রকৃত কি ঘটেছিল। তবে আমার মনে হয় একজন ঠিকই জানবে, সে ডাক্তার ক্রিস্টোর ছেলে। একদিন সে অবশ্যই আমার কাছে এসে সত্য ঘটনা জানতে চাইবে। কিন্তু আপনি তাকে বলবেন না।
পৈরট-হ্যাঁ, আমি তাকে বলব, টেরি কেবল জানতে চায়। বিজ্ঞানীর কাছে সত্যটাই বড় কথা। তা সে গ্রহণ করবে এবং বেঁচে থাকবার মতো নির্ভরশীল অবলম্বন করে তুলবে। আর আপনি চলে যান, আপনার স্থান জীবিতদের মধ্যে।
.
৩০.
লন্ডনের পথে গাড়ি চালাতে চালাতে দুটো চিন্তা হেনরিয়েটার মনে জেগে উঠল–আমি কী করব, আমি কোথায় যাব? এখন সে প্রতি নিশ্বাসে বলছে, জন…জন। সে ভাবল, আমি যদি সেই চা পান করতাম!
হঠাৎ তার মনের উপরের কালো পর্দা সরিয়ে সে ভাবল, হ্যাঁ আমি অবশ্যই সেখানে যাব–আমি সেন্ট ক্রিস্টোফার হাসপাতালে যাব। হাসপাতালে মিসেস ক্যাবট্রি ডাক্তার ক্রিস্টোর জন্য দুঃখ করছিল।
বৃদ্ধা বলল-দুঃখে ভেঙে পড়ো না, যা যাবার তো চলে গেছে, তা তো ফিরে আসবে না। একাকী খালি করছিল।
জন তুমি বলেছিলে, আমি যদি মরে যাই, প্রথম যে কাজ তুমি করবে, তা হচ্ছে তোমার চোখ দিয়ে অশ্রু গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে–আর তুমি একটি শোকাকুল রানীর মূর্তি বা অন্য কোনো শোকের মূর্তি গড়তে শুরু করবে।
সে ভাবল, আমি যা, উহা তাহাই। মিডগে এবং এডওয়ার্ড আইন্সউইক চলে গিয়েছে। তার মধ্যে সত্যতা ছিল–শক্তি ছিল। উষ্ণতা ছিল। কিন্তু আমি একটা পূর্ণব্যক্তি নই–আমি আমার নিজের নই, কিন্তু আমার বাইরের কোনো এক সত্ত্বার। আমি আমার মৃতের জন্য শোক করতে পারি না। তার পরিবর্তে আমি আমার দুঃখ দিয়ে একটি স্ফটিকের মূর্তি তৈরি করব।
এগজিবিট নং ৫৮ ‘শোক’ স্ফটিক– মিস হেনরিয়েটা স্যাভারনেক…।
এক নিশ্বাসে সে বলল, জন আমি যা-না করে পারলাম না, তার জন্য আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে ক্ষমা করো।
আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ
- মিসেস আরিয়াদে অলিভার -হ্যালুইন পার্টি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- কোয়ারী হাউসের দিকে -হ্যালুইন পার্টি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- পাহাড়ের মাথায় উঠে -হ্যালুইন পার্টি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- ভ্রুকুটি করলো পোয়ারো -হিকরি ডিকরি ডক (১৯৫৫) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- মিস লেমনকে নোট দিতে -হিকরি ডিকরি ডক (১৯৫৫) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]