প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]

প্রফেসর হ্যারি সেলডন

প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]

প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]
প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]

পঞ্চম পর্ব : উপসংহার

আমি প্রফেসর হ্যারি সেলডন। সম্রাট প্রথম ক্লীয়নের প্রাক্তন ফার্স্ট মিনিস্টার। প্রফেসর অ্যামিরিটাস অব সাইকোহিস্টোরি, স্ট্রিলিং বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রানটর, পরিচালক, সাইকোহিস্টোরি রিসার্চ প্রজেক্ট। নির্বাহী সম্পাদক, এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা। ফাউণ্ডেশনের স্রষ্টা।

গালভরা সব পদবী। আমি জানি। আশি বছরের জীবনে অনেক কাজ করেছি। এখন আমি ক্লান্ত। পিছনের জীবনের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয় কিছু দায়িত্ব–যদি ভিন্নভাবে পালন করতে পারতাম–পারা উচিত ছিল। যেমন : আমি কি সাইকোহিস্টোরির বিশাল স্রোতে এমনভাবে মগ্ন ছিলাম যার কারণে যে মানুষ এবং ঘটনাগুলো আমার জীবনকে ছেদ করেছে তারা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে?

হয়তো এদিক সেদিক ছোট দুই একটা সমঝোতা করতে আমি ব্যর্থ হয়েছি যা করলে মানবজাতির ভবিষ্যতের উপর কোনো প্রভাব পড়ত না কিন্তু আমার অতি প্রিয় কয়েকজন মানুষের জীবন আরো সুন্দর হয়ে উঠত।–ইউগো, রাইখ… জানি না, শুধু ভাবি… প্রিয়তমা ডর্সকে রক্ষা করার জন্য আমার কি কিছু করার ছিল?

গতমাসে আমি ক্রাইসিস হলোগ্রামের রেকর্ড শেষ করেছি। আমার সহকারী গাল ডরনিক ওগুলো টার্মিনাসে নিয়ে গেছে। সেলডন ভল্টে ওগুলোর সংস্থাপনের কাজ গাল নিজে তদারক করবে। শুধুমাত্র পর্যায়ক্রমিক ক্রাইসিসের সময়ই যেন ভল্টের দরজা খোলে তার ব্যবস্থা করবে।

ততদিনে আমি মারা যাব।

কি ভাববে ওরা, ভবিষ্যতের ফাউণ্ডেশনাররা যখন আমাকে দেখবে (অথবা নিখুঁত ভাবে বলতে গেলে, আমার হলোগ্রাম দেখবে) প্রথম ক্রাইসিসের সময়, এখন থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে? ওরা কি এই নিয়ে মন্তব্য করবে যে আমি কত বৃদ্ধ, কি দুর্বল। আমার কণ্ঠস্বর, কত ক্ষুদ্র আমি, হুইল চেয়ারে জড় পদার্থের মতো বসে আছি? ওরা কি বুঝবে–মূল্যায়ন করবে–যে বার্তা ওদের জন্য রেখে যাচ্ছি আমি। আহ্, এগুলো ভেবে কোনো লাভ নেই। প্রাচীন যুগের মানুষেরা বলত : মৃত্যুতেই মুক্তি।

গতকাল গাল-এর কাছ থেকে সংবাদ এসেছে। টার্মিনাসে সব ঠিক ঠাক মতোই চলছে। বোর এ্যালুরিন এবং প্রজেক্টের সদস্যরা নির্বাসনে চলে গেছে। বড়াই করা উচিত নয়, কিন্তু দুবছর আগে অহংকারী বোকা লী শ্যেন প্রজেক্টটাকে টার্মিনাসে নির্বাসন দেয়ার পর তার চেহারায় যে আত্মতুষ্টি ফুটে উঠেছিল সেটা মনে হলে মুচকি হাসি ঠেকাতে পারি না। যদিও নির্বাসনের নাটকটা এখনো ইম্পেরিয়াল চুক্তির অধীন (“রাষ্ট্র সমর্থিত বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং হিজ অগাস্ট ম্যাজেস্টির ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে পরিচালিত”–চীফ কমিশনার আমাদের তাড়াতে চেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে চান নি), এখনো গোপনে আমি আনন্দ পাই এই ভেবে যে ল্যাস জিনো এবং আমি টার্মিনাস গ্রহকে ফাউণ্ডেশনের বাসস্থান হিসেবে বেছে নেই।

লী শ্যেন এর উপর আমার একটাই ক্ষোভ। এজিসকে আমরা বাঁচাতে পারি নি। সম্রাট ভালো মানুষ ছিলেন এবং যোগ্য নেতা যদিও নামে মাত্র ইম্পেরিয়াল ছিলেন। তার দোষ একটাই। নিজের উপাধি তিনি বিশ্বাস করতেন এবং কমিশন অব পাবলিক সেফটি তা মেনে নিতে মোটেই প্রস্তুত ছিল না।

প্রায়ই ভাবি এজিসকে নিয়ে ওরা কি করেছে প্রত্যন্ত কোনো আউটার ওয়ার্ল্ডে নির্বাসন দিয়েছে নাকি ক্লীয়নের মতো হত্যা করেছে।

 

প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]
প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]

যে বালক পুত্র এখন সিংহাসনে বসেছে সে নিখুঁত পুতুল। লী শ্যেন তার কানে ফিসফিস করে যা বলে অন্ধের মতো তাই সে পালন করে এবং নিজেকে রাষ্ট্রনায়ক কল্পনা করে উচ্ছ্বসিত হয়। প্রাসাদ এবং ইম্পেরিয়াল জীবনের প্রতিটি বিষয় আর বস্তু তার কাছে বিশাল এক কল্পনার রাজ্য।

এখন আমি কি করব? গাল চূড়ান্তভাবে টার্মিনাস গ্রুপের সাথে যোগ দিতে চলে গেছে, আমি পুরোপুরি একা। মাঝে মাঝে ওয়ানডার কাছ থেকে খবর পাই। স্টারস অ্যাত্রে কাজও সঠিক পথেই চলছে; গত দশ বছরে সে আর স্ট্যাটিন কমপক্ষে এক ডজন মেন্টালিক্সকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে। দিনে দিনে তাদের শক্তি বাড়ছে। আসলে এই স্টারস এ্যাণ্ড কন্টিনজেন্ট আমার গোপন ফাউণ্ডেশনই এনসাইক্লোপেডিস্টদের টার্মিনাসে পাঠানোর জন্য বাধ্য করেছে লী শ্যেনকে।

ওয়ানডার অভাব আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। শেষবার তাকে দেখার পর, হাতে হাত রেখে কিছু সময় কাটানোর পর অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। ওয়ানডা যেদিন চলে যায়, যদিও আমিই যেতে বলেছিলাম, মনে হয়েছিল আমি বাঁচব না। সম্ভবত এটা ছিল আমার জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্ত। ওয়ানডাকে কখনো বলি নি, আবার সিদ্ধান্তটা মানতেও পারি নি। কিন্তু ফাউণ্ডেশনের সফলতার জন্য ওয়ানডা এবং পালভারের স্টারস অ্যাণ্ডে চলে যাওয়াটা ছিল অত্যন্ত জরুরী। সাইকোহিস্টোরিই এটা নির্ধারণ করে দিয়েছে, কাজেই সিদ্ধান্তটা আসলে আমার ছিল না।

এখনো আমি প্রতিদিন এখানে আসি, সাইকোহিস্টোরি বিল্ডিং-এ আমার অফিসে। মনে পড়ে ভবনটা একসময় দিন রাত মানুষের কোলাহলে মুখরিত ছিল। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যেন বহুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া আমার পরিবার, শিক্ষার্থী, আর সহকর্মীদের কোলাহল শুনছি–কিন্তু অফিস কক্ষগুলো ফাঁকা, নীরব। হলওয়েতে আমার হুইল চেয়ারের মোটরের গুঞ্জন প্রতিধ্বনি তুলে।

বোধহয় ভবনটা বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দেয়া উচিত, তারা অন্য কোনো বিভাগের জন্য বরাদ্দ দিতে পারে। কিন্তু পারছি না। হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানে…

এখন আমার সঙ্গী শুধু প্রাইম রেডিয়্যান্ট। এটার সাহায্যেই সাইকোহিস্টোরি হিসাব করা যাবে, আমার পরিকল্পনার প্রতিটি সমীকরণ বিশ্লেষণ করা যাবে। সবই ডোকানো আছে এই বিস্ময়কর, ছোট কাল কিউবের ভেতর। যদি এটা আর, ডানীল

অলিভোকে দেখাতে পারতাম…

কিন্তু আমি একা, অফিসের আলো কমিয়ে দিলাম। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসার পর প্রাইম রেডিয়্যান্ট চালু হলো। আমার চারপাশে ত্রিমাত্রিক আকৃতিতে সমীকরণগুলো ছড়িয়ে পড়ল বন্যার তোড়ের মতো। অপ্রশিক্ষিত চোখে এই বহুবর্ণিল স্রোত শুধুই সংখ্যা আর চিহ্ন, কিন্তু আমার কাছে–ইউগো, ওয়ানডা, গাল এর কাছে এটাই সাইকোহিস্টোরি, জীবন্ত।

আমার সামনে, পিছনে, চারপাশে যা ছড়িয়ে আছে তাই মানবজাতির ভবিষ্যত। ত্রিশ হাজার বছরের সম্ভাব্য অরাজকতা সংকুচিত করে নামিয়ে আনা হয়েছে মাত্র। একহাজার বছরে…।

এই দাগটা, দিনে দিনে আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে, এটা হলো টার্মিনাস সমীকরণ। আর ওই যে–মেরামতের অযোগ্য–ট্র্যানটর সমীকরণ। কিন্তু আমি দেখতে পারছি… হ্যাঁ, আশার আলো, মোলায়েমভাবে প্রজ্বলিত হয়ে আছে, ক্রমশই দৃঢ় হচ্ছে… স্টারস এ্যাণ্ড!

এটা–এটা আমার আজীবনের সাধনা। আমার অতীত–মানবজাতির ভবিষ্যৎ। ফাউণ্ডেশন। কি সুন্দর, প্রাণবন্ত। এবং কোনোকিছুই…

ডর্স!

———

***

 

প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]
প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]

সেলডন, হ্যারি–… ১২,০৬৯ (১ এফ. ই.) তে স্ট্রিলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ অফিসে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিঃসন্দেহে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাইকোহিস্টোরিক্যাল সমীকরণ নিয়ে কাজ করছিলেন। তার প্রাইম রেডিয়্যান্ট চালু অবস্থায় তার হাতের মুঠোতে ধরা ছিল…

সেলডনের নির্দেশ অনুযায়ী যন্ত্রটা টার্মিনাসে তার সহকারী গাল ডরনিকের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়…।

সেলডনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মৃতদেহ মহাশূন্যে ভাসিয়ে দেয়া হয়। ট্র্যানটরে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ছিল খুবই সাধারণ কিন্তু বহু মানুষ তাতে অংশ নেয়। বলা বাহুল্য যে সেলডনের পুরনো বন্ধু প্রাক্তন ফাস্ট মিনিস্টার ইটো ডেমারজেল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেয়। সম্রাট প্রথম ক্লীয়নের যুগে জোরামাইট ষড়যন্ত্রের সময় রহস্যজনক অন্তর্ধানের পর এই প্রথম ডেমারজেলকে জনসমক্ষে দেখা গেল। সেলডনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরের কয়েকদিনে তাকে বন্দি করার জন্য কমিশন অব পাবলিক সেফটির সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়…

ওয়ানডা সেলডন, হ্যারি সেলডনের নাতনী, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেয় নি। শোনা যায় যে প্রচণ্ড শোকের কারণে সে মানুষের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। সে কোথায় ছিল আজ পর্যন্ত তা জানা যায় নি…

বলা হয়ে থাকে হ্যারি সেলডন যেভাবে জীবন কাটিয়েছেন মৃত্যুবরণ করেছেন সেইভাবে, কারণ মৃত্যুকালে নিজের তৈরি করা ভবিষ্যৎ তাকে ঘিরে রেখেছিল চারপাশে…

–এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা।

——-

***

আইজাক আসিমভ

আইজাক আসিমভ, গ্র্যান্ড মাস্টার অব সাইন্স ফিকশন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক হিসেবে স্বীকৃত। জন্ম ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি (তার আসল জন্ম তারিখ অজানা) রাশিয়ার স্মলেনস্কে। আট বছর বয়সে পিতা-মাতার সাথে আমেরিকায় চলে আসেন। জাতিতে তিনি ছিলেন ইহুদি। ১৯৩৯ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ১৯৪৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পি. এইচ. ডি করার জন্য অন্তর্ভুক্ত হন। মাঝখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিন বছর মার্কিন নেভীতে কাজ করেন।

ডক্টরেট সম্পন্ন করে তিনি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি পুরোদস্তুর লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। তার লেখনির প্রতি সম্মান স্বরূপ ১৯৭৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অধ্যাপক হিসেবে পদন্নোতি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে ৭১ মিটার লম্বা শেলফে ৪৬৪ টি বাক্সে তার রচনাসমূহ সংগৃহীত আছে।

আসিমভের বাবার ছোট একটা দোকান ছিল যেখানে পরিবারের সবাইকে কাজ করতে হতো। ওই দোকানে আসিমভ কিছু সাইন্স ফিকশন ম্যাগাজিন খুঁজে পান এবং পড়তে শুরু করেন। এগার বছর বয়সে তিনি গল্প লিখতে শুরু করেন। কয়েক বছর পরে ওই গল্পগুলো একটি সস্তাদরের পত্রিকায় বেচতে থাকেন।

১৯৩৯ সাল থেকে তিনি সাইন্স ফিকশন পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। তার প্রথম প্রকাশিত গল্প “ম্যারুনড অব ভিস্তা।” ওই সময় তার বয়স ছিল আঠার। ১৯৪১ সালে প্রকাশিত হয় তার বত্রিশতম ছোট গল্প “নাইটফল।” প্রকাশের সাথে সাথেই গল্পটি ক্লাসিকের মর্যাদা অর্জন করে এবং লেখক পরিণত হন কিংবদন্তীতে। আজ পর্যন্ত নাইটফল গল্পটি বিবেচিত হয়ে আসছে সাইন্স ফিকশন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ছোট গল্প হিসেবে।

১৯৪২ সাল থেকে তিনি ফাউণ্ডেশন সিরিজ লেখা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে প্রকাশিত হয় সিরিজের প্রথম গ্রন্থ “ফাউণ্ডেশন,” ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় গ্রন্থ “ফাউণ্ডেশন এ্যান্ড এম্পায়ার,” ১৯৫৩ সালে তৃতীয় গ্রন্থ “সেকেন্ড ফাউণ্ডেশন।” পরবর্তীতে এই তিনটি গ্রন্থ একত্রিত করে প্রকাশিত হয় “ফাউণ্ডেশন ট্রলজি।”

পাঠক, সমালোচকদের মতে ফাউণ্ডেশন সিরিজ অসামান্য এই লেখকের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। ফাউন্ডেশন ট্রলজি স্বীকৃত হয়ে আসছে “বেস্ট অল টাইম সিরিজ,” হিসেবে। প্রথম তিনটি গ্রন্থ লেখার পরে তিনি ফাউণ্ডেশন লেখা বন্ধ করে দেন। কিন্তু পাঠক এবং প্রকাশকের অনুরোধে দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর পরে আবার এই সিরিজ লিখতে শুরু করেন।

১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয় সিরিজের চতুর্থ গ্রন্থ “ফাউণ্ডেশন্স এজ।” এই বইটি দীর্ঘ পঁচিশ সপ্তাহ নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে এবং হুগো এ্যাওয়ার্ড লাভ করে। পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় “ফাউণ্ডেশন অ্যান্ড আর্থ (১৯৮৬),” “প্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন (১৯৮৮),” “ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন (১৯৯৩)।”

সিরিজের সর্বশেষ গ্রন্থ ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন। তার মৃত্যুর পরের বছর প্রকাশিত হয়। বইটি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি ফাউণ্ডেশন সিরিজের আরো অনেকগুলো বই লিখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বেচে থাকলে হয়তো পাঠকরা এই সিরিজের আরো কিছু বই উপভোগ করার সুযোগ পেত।

এছাড়াও তিনি রোবট সিরিজ এবং এম্পায়ার সিরিজ লিখেছেন। এই দুটো সিরিজের সাথে তিনি পরবর্তীতে ফাউণ্ডেশন সিরিজের যোগসূত্র তৈরি করেছেন। সিরিজ ব্যতীত আসিমভের অন্যান্য জনপ্রিয় বইসমূহ হচ্ছে : নাইটফল; নেমেসিস; দ্য এ্যান্ড অব ইটারনিটি; দ্য পজিট্রনিক ম্যান। এছাড়া তিনি অসংখ্য ছোট গল্প লিখেছেন। লিখেছেন, সাহিত্য, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে অসংখ্য বই।

আসিমভ ছিলেন মানবতাবাদী। ১৯৮৫ সালে আমেরিকান হিউম্যানিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু সেই পদে আসীন ছিলেন। তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী এবং স্পষ্টভাষী। ধর্ম নিয়ে তার সীমাহীন কৌতূহল ছিল, কিন্তু ধর্মের যুক্তিহীন কুসংস্কারগুলোর বিরুদ্ধে আজীবন প্রতিবাদ করেছেন। তিনি ছিলেন ক্লাস্ট্রোফাইল অর্থাৎ ছোট একটা কামরায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি বিমানে চড়তে ভয় পেতেন। সারা জীবনে সম্ভবত দুবার বিমানে চড়েছিলেন। ভ্রমনের জন্য তার পছন্দ ছিল জাহাজ।

আসিমভের নিজের মতে তার শ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে, “রোবটিক্স এর তিনটি আইন তৈরি করা,” এবং ফাউণ্ডেশন সিরিজ। তাছাড়া অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি “পজিট্রনিক (যা ওই সময়ে ছিল মূলতঃ কাল্পনিক বিজ্ঞান),” সাইকোহিস্টোরি (বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে),” এবং “রোবটিক্স,” এই তিনটি নতুন শব্দ ইংরেজি ভাষায় প্রচলিত করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল আইজাক আসিমভ মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে জানা যায় যে তার মৃত্যুর কারণ ছিল এইডস। ১৯৮৩ সালে বাইপাস সার্জারীর সময় তার দেহে এইডস আক্রান্ত রক্ত ঢুকে যায়। পারিবারিক চিকিৎসকের বারণের কারণে ওই সময়ে ঘটনাটি তিনি প্রকাশ করেননি। চিকিৎসক বলেছিলেন যে প্রকাশ হলে তার পরিবারের ক্ষতি হতে পারে। মৃত্যুর দশ বছর পরে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জ্যানেট আসিমভ ঘটনাটি প্রকাশ করেন।

প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]
প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ

cropped Bangla Gurukul Logo প্রফেসর হ্যারি সেলডন ( ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন ১৯৯৩ ) -আইজাক আসিমভ [ অনুবাদ সাহিত্য ]

Leave a Comment