অধ্যবসায়, অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা [ Short Essay on Perseverance ] অথবা, জাতীয় জীবনে অধ্যবসায় – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

Table of Contents
অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা রচনার ভূমিকা :
পৃথিবীতে সফলতার জন্য চাই সাধনা: সাধনার জন্য চাই একাগ্রতা নিষ্ঠা। বারবার কোন কাজের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে নিজেকে সাফল্যের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার জন্য মহান প্রচেষ্টা, তারই নাম অধ্যবসায়। অর্থাৎ পরম ধৈর্যের সাথে কঠোর পরিশ্রমের নামই অধ্যবসায়। এই পৃথিবীতে যাঁরা বড় হয়েছেন, খ্যাতিমান হয়েছেন, তাঁরা সবাই অধ্যবসায়ের দ্বারাই হয়েছেন।

মূল বক্তব্যঃ
(ক) অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা:
মানবজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ, অধ্যবসায় ছাড়া জগতে কেউ সাফল্য অর্জন করতে পারে না। পৃথিবীতে কিছু মহৎ, যা কিছু সুন্দর, কিছু কল্যাণকর সবই অধ্যবসানোর দ্বারা অর্জিত হয়েছে। তাই অধ্যবসায় মানব সভ্যতার অগ্রগতির চাবিকাঠি, ব্যক্তিগত জীবনের উন্নতির সোপান। মানব জীবনে চলার পথে নানা বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে পায়ে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই জীবনে উন্নতি আসবে। অধ্যবসায়ের দ্বারাই মানুষ জগতে অসাধ্য সাধন করেছে। বড় বড় শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, স্থপতি, সেনানায়ক, ধর্ম প্রচারক সবাই অধ্যবসায়ের ফলে স্বার্থকতা লাভ করেছে।

(খ) ছাত্র জীবনে অধ্যবসায়:
ছাত্র জীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আলস্যপরায়ণ এবং শ্রমবিমুখ ছাত্র ছাত্রী কখনো বিদ্যার্জন করতে পারে না। অধ্যবসায়ী ছাত্র-ছাত্রী অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও সফলতা লাভ করতে পারে। কোন ছাত্র একবার বিফল হলে বসে থাকলে চলবে না, পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে তার অধ্যবসায়ে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। ছাত্র/ছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি অধ্যবসায়ী হওয়া দরকার। কারণ তাদের সাফল্যের ওপরই জাতির সাফল্য বেশির ভাগ নির্ভর করে।

(গ) জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়:
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের কোন বিকল্প নেই। ছাত্রজীবনে ও ব্যক্তিগত জীবনে যেমন অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীতা রয়েছে, একইভাবে জাতীয় জীবনেও অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীতা বর্তমান। অধ্যবসায়ী না হলে কোন জাতি উন্নতি ও অগতি লাভ করতে পারে না। একমাত্র অধ্যবসায়ী জাতিই উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করতে পারে এবং সার্বিক সাফল্যের প্রতীক হিসেবের বিশ্বের দরবারে পরিচিত হতে পারে। আর এতে করে জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব কতখানি তা সহজেই অনুমেয়।

(ঘ) অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ :
জীবন সংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র অধ্যবসায়। রাজা রবার্ট ব্রুস ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সপ্তম বারের চেষ্টায় জয়লাভ করেছিল। অর্ধ পৃথিবীর অধীশ্বর নেপোলিয়ন তাঁর জীবনের কার্যকলাপের জন্য রেখে গিয়েছেন অধ্যবসায়ের অপূর্ব নিদর্শন। কোন কাজকে তিনি অসম্ভব বলে মনে করতেন না। তাই তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতা হতে পেরেছিলেন। শুধু অধ্যবসায়ের বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, জগদীশচন্দ্র বসু ও নজরুল ইসলাম বিশ্ববিখ্যাত হতে পেরেছিলেন।

উপসংহার :
আমাদের সবাইকে হতে হবে কঠোর অধ্যবসায়ী। যখনই কোন ব্যর্থতা, কোন দুঃখ, কোন বিপদ এসে আমাদের জীবনকে বিষময় করে তোলে, তখনই অধ্যবসায়ী মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের কথা স্মরণ করে তাদের আদর্শ অনুকরণ। করা উচিত। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাদেরই সাহায্য করেন, যারা অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী।
জীবনের সঙ্গে সময়, কর্ম এবং কর্মের সঙ্গে অধ্যবসায়- এ যেন একই সুতোয় গাঁথা মালা। একটি বাদ পড়লে অপরটিতেও টান পড়ে। প্রত্যেক মানবজীবনে এক কর্মযজ্ঞ নিরন্তর চলমান, আর এই কর্মযজ্ঞে সাফল্য ব্যর্থতা দুইই যেন “চক্রবৎ পরিবর্তন্তে”। তবু মানুষ সর্বদা সাফল্যের প্রতিই ধাবমান হয়, আর অধ্যবসায় হল যেন এই সফলতার গুপ্ত চাবিকাঠি।
অধ্যবসায় ছাড়া মানবজীবনে সাফল্য এক দিবাস্বপ্ন মাত্র। অধ্যবসায় তাই প্রতিটি মানুষের জীবনে এক অবশ্য পালনীয় অভ্যাস যা তাকে পরিবর্তে সাফল্য এনে দেয়। এযাবৎকালের যত সফল মানুষের উদাহরণ আমরা দেখতে পাই, প্রত্যেকের জীবনে অধ্যবসায় এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
অধ্যবসায় রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এরকম নতুন নতুন ও পরীক্ষায় সম্ভাব্য রচনা পাওয়ার জন্য আমাদের পাতায় যুক্ত থাকুন। আমরা নিয়মিত নতুন রচনা আপডেট করে থাকি। সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আরও দেখুন: