ভারত এক খোঁজ কবিতা

ভারত এক খোঁজ কবিতা – জয়দেব বসুর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘদূত’। প্রথমটিতেই হয়েছিলেন বিখ্যাত। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘ভ্রমণকাহিনী’ ও ‘ভবিষ্যৎ’। শেষ লিখেছিলেন ‘সাইকোপ্যাথ’। তার দুটি উপন্যাস ‘উত্তরযুগ’ ও ‘লুপ্ত ন্যাসপাতির গন্ধ’ বেশ সাড়া জাগিয়েছিল পাঠকমহলে। কবিতার জন্য তিনি সুকান্ত পুরস্কার ও শক্তি চট্টোপাধ্যায় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন। জয়দেব বসুকে শেষ দেখা দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ, কবি ভূমেন্দ্র গুহ, গৌতম চৌধুরী, কৃষ্ণা বসু, রাহুল পুরকায়স্থসহ একাধিক তরুণ কবি সাহিত্যিকরা।

ভারত এক খোঁজ কবিতা

 

ভারত এক খোঁজ কবিতা

 

বিশেষ কারণে এত বছর পর আমি অযোধ্যা এলাম,
মাননীয় বিচারক,
এলাম আমার মায়ের জন্মভূমি খুঁজতে।
না, আমার কী ধর্ম আমি জানিনা,
জানিনা আমার বাবা কে,
আমার মা-ও জানত না এসব।
আমার মা মুন্নাবাঈ জন্মেছিল এখানেই এক ঝোপড়ায়,
কোন্ পুরুষের ঔরসে তার জন্ম তা ঠাহর করে
বলতে পারেনি আমার দাদীও, সেক্ষেত্রে জাতপাতের কথা তো ওঠেই না,
মা শুধু জানত কে তার মা,
মাননীয় বিচারক,
একে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলা যায় কিনা ভেবে দেখবেন,
যদিও পরিবার শব্দটার অর্থই আমার কাছে পরিষ্কার না।
বরং শুনুন, বালক বয়সে বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ে বসার আগে
কী আমি দেখেছিলাম?

ভালো মনে নেই আমার, তবু সেই জলহীন, আলোহীন,
পয়ঃপ্রণালীহীন ঘুপচি ঝোপড়া,
ভিখিরি, জোচ্চোর, দাগী, মাতাল… আর
কোন কোন মধ্যরাতে আচম্কা হুইসেল…
ঘরে ঢুকে পড়ত পেটমোটা উন্মত্ত থানেদার…
মুখে মদের গন্ধ… পান খাওয়া কুৎসিত হাসি…
মা আমাকে ঠেলে বার করে দিত- সেই রাত,
সেই অসংখ্য নক্ষত্রের রাত, সোনালী হ্যালোজেনের রাত আমি কাটিয়ে দিতাম রাস্তার পাশে
দেয়ালে ঠেস্ দিয়ে,
অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারতাম
ঠিক কতদিন পর থেকে মা আবার শুরু করবে বমি…

বাস, এইতো সব। অযোধ্যা ছেড়ে আসার পর আমি কী কী করি
তা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। মাননীয় বিচারক,
আমি শুধু শুনেছিলাম, যৌবন থাকতে থাকতেই ঝোপড়া থেকে দালান,
তা থেকে শীষমহল পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল আমার মা;
তারপর, জীবনের লাথ্ খেতে খেতে ঝোপড়ায়
ফিরেই সে মরে।
চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠার জন্য মাফ করবেন,
কিন্ত এত বছর পর মায়ের জন্মভূমি খুঁজতে এসে
কী আমি দেখলাম?

কেউ বলেছে- এখানে এসেছিলেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাড়া খাওয়া এক বাদশা।
আমি জানিনা পৌরণিক কোন চরিত্রের পক্ষে
জন্ম নেওয়া আদৌ সম্ভব কিনা, আমি জানিনা এতদিন আগে আসা
কোন সেনানীর পদচ্ছাপ এতটাই নিশ্চিত কিনা,
কিন্ত, আমি জানি আমার মা এখানে জন্মেছিল- এখানেই,
কেননা, আমিও যে জন্মেছি এখানে।

আমার এন্তেকালের ভয় নেই, আখেরাতের লোভ নেই,
মন্দার বা অমৃত আমাকে আকৃষ্ট করে না,
শুধু এই ঝোপড়ার জন্য- এই জন্মভূমির জন্য আমার রোযা-আমার উপবাস
অষ্টপ্রহর প্রার্থনা-পাঁচওয়াক্ত নামাজ,
মাননীয় বিচারক,
রহম্ করুন, আমার মাতৃভূমি আমায় ফিরিয়ে দিন।
ফিরিয়ে দিন আমি মরিয়া হয়ে ওঠবার আগেই।

 

ভারত এক খোঁজ কবিতা আবৃত্তি:

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

আরও দেখুন:

 

 

Leave a Comment