বাক্যবিন্যাস বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

বাক্যবিন্যাস বাক্যতত্ত্ব – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “বাক্যতত্ত্ব” বিষয়ের একটি পাঠ।  পদবিন্যাসের সঙ্গে বাক্যবিন্যাসের কথাও এসে পড়ে। বাক্যবিন্যাসের কিছু সাধারণ নিয়ম এরকম— পরপর বাক্যবিন্যাসের প্রথম কথা হল যৌক্তিক বিন্যাস। একটি বাক্য যেমন বক্তব্য বিষয়ের সঙ্গতির জন্য পূর্ববর্তী বাক্যের অনুগামী হবে, পরবর্তী বাক্যকেও তা আমন্ত্রণ করে আনবে। তবে প্রথম বাক্যটি কারও অনুগামী হবে না।

বাক্যবিন্যাস বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

পরপর বাক্যগুলোর মধ্যে অর্থগত দিক যেমন দেখতে হবে তেমনি গঠনগত দিকও দেখতে হবে। বড় যৌগিক বাক্য বা জটিল বাক্যের মধ্যে হঠাৎ খুব ছোট একটি সরলবাক্য তেমন মানানসই নাও হতে পারে। পরপর বাক্যগুলোর অর্থবোধে কোনো অসুবিধা যেন না হয় তা দেখতে হবে, এজন্যে উপযুক্ত যতিচিহ্ন ব্যবহার করতে হবে।

 

বাক্যবিন্যাস বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

 

যে বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে, বাক্যপরম্পরার বিন্যাসও ঠিক তেমনই হতে হবে। বাক্যের মধ্যে পরপর প্রশ্নবোধক বা বিস্ময়সূচক বাক্যের বিন্যাস বক্তব্যের স্বচ্ছন্দ গতিকে ব্যাহত করতে পারে। তাই এদিকে লক্ষ রাখতে হবে। চা একেকটা বাক্যগুচ্ছ একেকটা একক, কিন্তু এককগুলোতেও আবার একটি বৃহৎ একক থাকে। প্রথম বাক্যে যা উন্মুখতা আনবে পাঠকের, সমাপ্তিতে তার পরিতৃপ্তি ঘটবে।  পুনরুক্তি চলবে না। কখনও দীর্ঘ রচনায় বক্তব্যের প্রয়োজনে পুনরুক্তি আসতে পারে, কিন্তু বলে নিতে হবে, ‘আগেই বলেছি যে’ ইত্যাদি।  ভাড়া বাক্যাংশগুলো যেমন বাক্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী সম্মন্ধে আবদ্ধ, পরপর বাক্যগুলোও তাই। সবগুলো মিলিয়ে একটি বাক্যদেহ, বক্তব্য যার হৃদয়।

 

বাক্যবিন্যাস বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

 

একাধিক শব্দ কী নিয়মে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর এককসমূহ (যাদের মধ্যে বাক্য প্রধানতম একক) গঠন করে এবং এই বৃহত্তর এককগুলোর বৈশিষ্ট্য কী, সেটাই বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।বৃহত্তর খণ্ডবাক্য-সদৃশ (clause-like) এককে প্রদর্শিত আচরণের ওপর ভিত্তি করে শব্দসমূহের শ্রেণীবিভাগ, বাক্যের গঠনের ওপর শব্দের আভিধানিক (lexical) অর্থের প্রভাব, বিভিন্ন প্রকারের বাক্যের মধ্যকার বিধিবদ্ধ (formal) সম্পর্ক আবিষ্কার, ইত্যাদি বাক্যতাত্ত্বিকদের (syntactician) গবেষণার বিষয়।

আধুনিক বাক্যতত্ত্বে বিমূর্তন (abstraction) গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। ধারণা করা হয় প্রতিটি বাক্যের বহিঃস্থ ধ্বনিতাত্ত্বিক (phonetic) রূপ বা তলের (surface structure) বিপরীতে একটি গভীর সাংগঠনিক তল (deep structure) বিদ্যমান, এবং এই তলদ্বয় এক ধরনের “রূপান্তর” (transformation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযুক্ত।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাক্যতত্ত্বের কাজ মানুষের ভাষাবোধের একটি বিধিনির্ভর (formal) মডেল তৈরিতে সাহায্য করা। আবার শ্রেণীকরণবিদ্যার (typology) দৃষ্টিকোণ থেকে বাক্যতত্ত্বের লক্ষ্য বিভিন্ন ভাষার উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খুঁজে বের করে কিছু বর্ণনামূলক (descriptive) সাধারণ বৈশিষ্ট্য সংগ্রহ করা। বাক্যতত্ত্বের বিধিবদ্ধ মডেল হিসেবে নোম চম্‌স্কি-র প্রস্তাবিত ‘Principles and Parameters’ মডেলটি বর্তমান বাক্যতাত্ত্বিকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

আরও দেখুন:

Leave a Comment