২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, কালরাতের গণহত্যা দিবস প্রতিবেদন রচনা । 25 march Genocide Day Essay

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, কালরাতের গণহত্যা দিবস [ 25 march Genocide Day Essay ] অথবা, গণহত্যা দিবস  – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা । 25 march Genocide Day Essay । প্রতিবেদন রচনা
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা । 25 march Genocide Day Essay । প্রতিবেদন রচনা

 

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনার ভূমিকাঃ

১৯৪৭ সালের আগষ্টে ভারতীয় উপমহাদেশের ৩০০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ব্রিটিশ ইডিয়া দুইটি স্বাধিন উপমহাদেশে ভাগ হয়ে যায়। দুই ভাগের মধ্যে এক ভাগ ছিল হিন্দু ধর্মাবলী নিয়ে যা আমরা ভারত নামে চিনি এবং অপরটি ছিল মুসলিম ধর্মাবলী নিয়ে যা আমরা পাকিস্তান নামে চিনি। পাকিস্তান দেশটি শুধু ধর্মেই একতাবদ্ধ। অর্থ ,সরকার, সম্পদ সবই পশ্চিম পাকিস্তানের দখলে। অন্যদিকে ভারতের আরেক দিকে হাজার হাজার মাইল দূরের পূর্ব পাকিস্তান জর্জরিত দারিদ্র আর দুঃখ-কষ্টে। এই দুই বিচ্ছিন্ন অংশের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিবাদ দেখা দেয় তা হলো ভাষা নিয়ে। তাদের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে।

স্বাধীনতার পূর্ব ইতিহাসঃ

পাকিস্তানের ৫৬% ভাগ মানুষ কথা বলতো বাংলা ভাষাতে যেটা মূলত পুর্ব বাংলার মাতৃভাষা। আর বাকি ৪৪% কথা বলতো উর্দু ভাষাতেযা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা। আর তাই পশ্চিম পাকিস্তান জোরপূর্বক তাদের মাতৃভাষা উর্দু পূর্ব বাংলার মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছিলো। তাদের সবসময় মনে হয়েছে তারা যেন পসচিম পাকিস্তানের উপনিবেশ। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন পুর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রাভাষা হবে উর্দু। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের কাছ থেকেও একই ঘোষনা আসে। এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারী হরতালের ডাক দেয়।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা । 25 march Genocide Day Essay । প্রতিবেদন রচনা
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা । 25 march Genocide Day Essay । প্রতিবেদন রচনা

১৯৫২ ভাষা আন্দোলনঃ

১৪৪ দ্বারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলা চত্ত্বরে ছাত্ররা অবস্থা নেয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চায় শ্লোগান দিতে দিতে তারা যখন এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন পুলিশ মিছিলি এর উপর গুলি বর্ষন শুরু করে। এতে শহীদ হন সালাম, বরকত ,রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারী ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনার উদ্বোধন করা হয়। তখনো পশ্চিম পাকিস্তান থেমে যায় নি। শহীদ মিনারের সেখানেও হস্তক্ষেপ করে।

পরেরদিন পুলিশ শহীদ মিনার ভেঙ্গে দেয়। এতে করে আন্দোলন আরো ছড়িয়ে পড়ে। ৪ বছর পর ১৯৫৬ সালে সঙ্ঘঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র। গণপরিষদ থেকে পাকিস্তান একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রে গঠিত হয়। পশ্চিম প্রদেশের নাম দেয়া পসচিম পাকিস্তান এবং পূর্ব বাংলার নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু নাম পরিবর্তন করলেই তো শাসকগোষ্ঠীর আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায় না।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনঃ

এই প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিৎ একটি রাজনৈতিক বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের সায়িত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেষ করেন। আইয়ুব খানের নির্যাতন নিপিড়ন এর বিপক্ষে যখন এটি পেষ করা হয় তখন এর পক্ষে জনসমর্থন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই একটি ঘটনা যেখানে জনসমবেশের সমর্থন খুব দ্রুত পাওয়া যায়। যখন জনগণ শেখ মুজিবকে আস্তে আস্তে পছন্দ করা শুরু করল তখন শেখ মুজিবর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের অপছন্দের তালিকায় পড়ে গেল ।

১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ

১৯৬৮ সালে আইয়ুব খান সরকার শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। এছাড়া আগরতলা ষড়যন্ত্রের আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হকক কারাবন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়। এভাবে একের পর এক অত্যাচার চালানো শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তান। আর এতে করে বৃদ্ধি পেতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের আন্দোলন ও। ২৪ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থান।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুন খান সরকারের ক্ষমতায় থাকার সমাপ্তি ঘটে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খান। শাসকঘোষ্ঠী আগরতলা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিবুর রহমানেরও কারা মুক্তি মিলে। সে বছরই রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র নেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেন। ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ করেন বাংলাদেশ। এরপর শুরু হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচন। আওয়ামী লিগ নির্বাচনে জয় লাভ করলেও ক্ষমতায় আস্তে দেয়নি ইয়াহিয়া খান। ইয়াহিয়া খান তার প্রতিশ্রুতি ভঙ করে । আন্দোলনের হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে।

৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়াদানে ভাষণঃ

এরপর ৭ই মার্চ রেস্কোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষন দেন যা মানুষের মধ্যে আরো উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়। এতে করে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।

২৫ মার্চের কালো রাতঃ

এর মধ্যে হঠাৎ ২৫ শে মার্চ রাত ১২টায় চালানো হয় নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর উপর নির্মম অত্যাচার। এসব দেখে বঙবন্ধু টের পান যে হয়ত তাকে খুন করা হবে অথবা তাকে গ্রেফতার করা হবে। ২৬ মার্চ সকালে তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার এর বাসা থেকে ওয়্যারলেস যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা । 25 march Genocide Day Essay । প্রতিবেদন রচনা
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা । 25 march Genocide Day Essay । প্রতিবেদন রচনা

স্বাধীনতা অর্জনঃ

এটি চটগ্রামে প্রেরণ করা হয়। চট্রগ্রামের আগরাবাদ থেকে দুপুরবেলা আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান ঘোষনা পত্রটি পাঠ করেন। এদিকে অপারেশন সার্চলাইট এর মূল টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ যুবকদের। ২৫ মার্চ কালরাতের তাদের নীল নকশা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয় মৃত্যুপুরিতে। ২ দিনে ৫ শতাধিকেরও বেশি ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মচারীকে হত্যা করা হয়। ৯ মাসের ত্যাগ তিতিক্ষার পর অর্জিত হয় আমাদের গৌরাবন্বিত স্বাধীনতা। আর এই সবকিছু শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস দিয়ে।

উপসংহারঃ

বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়। নানা অত্যাচার নিপিড়ীন সহ্য করে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে। সকল শহীদ আমাদের জন্য গৌরব।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment