২৫ মার্চ এর কবিতা সমূহ

২৫ মার্চ এর কবিতা সমূহ – ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। চালিয়েছিলো গণহত্যা। সেই রাতে অকাতরে জীবন দিয়েছে বাংলার অগণিত বাবা-মা-ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন। সেই হত্যাযজ্ঞের শহীদদের স্মরণে ও শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে কিছু কবিতা নিবেদন করা হলো-

 

২৫ মার্চ এর কবিতা সমূহ

 

২৫ মার্চ 2 ২৫ মার্চ এর কবিতা সমূহ

 

২৫ মার্চ,১৯৭১ গণহত্যার প্রথম প্রহর

 

দানব নামে রাজপথে, বিভিষিকাময় দানব
ঘুমন্ত নগরী কেঁপে উঠে, বুলেট আর বারুদে
আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে ঘরবাড়ি।
লাশের স্তুপ চারদিক;
নারী,শিশু,পঙ্গু ,যুবা, পুরুষ।
হায়েনার ছোবলে বাদ যায়নি নিরীহ পথচারি,
আর ফুটপাতের ঘুমন্ত বৃদ্ধা,
রিক্সাওয়ালা। ২৫শে মার্চ,১৯৭১ ঢাকা।
রণহুঙ্কারে কাঁপে মাটি।

ইয়াহিয়ার দোসর জুলফিকার ভূট্টো,
টিক্কা খান,সেনা কমান্ডার আরবাব
ঢাকায় চালায় গণহত্যা। মানুষ নয়,
মাটি চাই এই তাদের পোড়া মাটি নীতি
অপারেশন সার্চলাইট নামে অন্ধকার রজনীতে
আলোর শিখা যায় দেখা, কামানের স্ফুলিঙ্গে।
মানুষের লাশ পড়ে চাপা, ট্যাঙ্কের তলায়।

পিলখানা, রাজার বাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে
হত্যার মহোৎসব। তরুণ ছাত্র, শিক্ষক,
বাঙালী ইপিআর, পুলিশ সেদিন প্রথম
প্রহরের টার্গেট। সফল অপারেশন।
বাহ্ বাহ্ সাবাস এইতো চাই !শয়তান ভূট্টো !!
প্রসংশায় মূখর, সফল সেনাঅভিযান।

রক্তের স্রোতে বহমান বুড়িগঙ্গা
একটা শিশু কেঁদে উঠে,
বেয়ারিশ লাশের সারির পাশে
বারুদের ভেতর জন্মায় প্রতিরোধ, চারদিকে।
ইতারে ভাসে নেতার কন্ঠ,
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
গর্জে ওঠে বীর বাঙ্গালী, সাহসে, আবেগে, নির্ভিক।
ভূমিষ্ঠ হবে এক নয়া শিশু-জাতি;কান্না, বেদনা,আর মৃত্যুর মাঝে;
অবুঝ শিশুর ক্রন্দন, সাহসী এক উচ্চারণ।

ব্যস্ত পাকিজান্তা, অপরাধ লুকায় মাটির ভেতর
গণকবরে চাপা দেয় শহীদের লাশ।
প্রভাতে সূর্যের চেয়ে লাল ঢাকার রাজপথ।
খুনির ঘুম নেই চোখে, কারফিউ চলছে।
ব্যস্ত কিছু মিলিটারি ভ্যান, সাঁজোয়া যান।
লাশ আর লাশ এখানে সেখানে

 

২৫ মার্চ 1 ২৫ মার্চ এর কবিতা সমূহ

 

১৯৭১ কালো ২৫ শে মার্চ

১৯৭১ সালের কালো ২৫শে মার্চ ছিল,
অন্ধকারাচ্ছন্ন এক ভয়াল রাত।
অপারেশন সার্চ লাইটের নামে ১৯৭১,
ওরা বাঙালীদের করেছে নিপাত।
মেরেছে ৩০ লক্ষ মানুষ, করেছে লুটপাট,
নির্বিচারে পাকিস্তানি সৈনিক চালিয়েছে গুলি।
১৪ই ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয়েছিল,
নিয়েছে ইজ্জত দুই লাখ মা বোনের, উড়িয়েছে খুলী।
এমনি করে টানা নয় মাস
চলেছে অত্যাচার।
বীর বাঙালীরাও বসে ছিলনা
হাতে তুলে নিয়েছিল হাতিয়ার।
৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে
আমাদের হয়েছে জয়।
১৬ই ডিসেম্বর তারা করেছে আত্নসমার্পন,
কারণ মনে ছিল মরনের ভয়।
সেই বাঙালীর উত্তরসরী তুমি,
মাথা নীচু করে কেন হাঁটো।
যুদ্ধাপরাধী – আছে যত বাংলাতে সব যাবে ভেসে,
১৯৭১ এর ন্যায় আবার গর্জে যদি ওঠে।

২৫ মার্চ 3 ২৫ মার্চ এর কবিতা সমূহ

পতাকা

পতাকা হাতে দৌড়চ্ছ তুমি
উল্লাস করছো তুমি
হে তরুণ!
টিশার্টের বুকে লাল সবুজ এঁকে
মিছিলে হেঁটে যাওয়া যুবক
সবুজজমিনে লালপেড়ে শাড়ি পরিহিতা চঞ্চল যুবতি
তুমি কি দেখো ওই সবুজে
ওই লাল বৃত্তের ভেতর
হাজার বছর সংগ্রামের ইতিহাস!
রক্তাক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ।
দেখতে কি পাও?

গাঢ় সবুজের মাঝে রক্তিম বৃত্ত
কখনো টগবগে লাল সূর্য
কখনো তাজা তরুণের রক্তের ছোপ!
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার!
এখানেই রয়েছে বায়ান্নো
একাত্তর
মার্চ এর কালরাত!
বিজয়ের ডিসেম্বর!
রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি!
তাকালেই দেখা যায় বিশাল গণমিছিলের ঢেউ
কারফিউ ভেদ করে আছড়ে পড়েছে রাজপথে।

ওই লাল বৃত্তের দিকে তাকালেই দেখা যায়–
উত্তাল উনসত্তর!
আগরতলা ষড়যন্ত্র!
মাওলানা ভাসানি,
বঙ্গবন্ধু!
তর্জনী উঁচানো সাত-ই মার্চ!
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম!
এবারের সংগ্রাম আমদের স্বাধীনতার সংগ্রাম!
ওই সবুজের মাঝেই রয়েছে মুজিব নগর
তাজউদ্দীন
আর ত্রিশ লাখ শহিদের বুকে গজিয়ে ওঠা
ঘাসের ঠিকানা।

বাঙালির মুক্তি আর মুক্তচিন্তার ঠিকানা ছিলো
যেই লালসবুজের খামে!
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিজয়ের সনদ ছিলো
যেই রক্তাক্ত চিঠিতে।
অশুভ পঁচাত্তর!
পঙ্কিল আগস্ট!
কেড়ে নিয়েছিলো সেই খাম!
ছিড়ে ফেলেছিলো সেই চিঠি!
প্রতারক বুলেটে ঝাঁঝরা হয়েছিলো
শান্তির ডাকপিয়ন!

পতাকা হাতে দৌড়চ্ছ তুমি
উল্লাস করছো তুমি, হে তরুণ!
টিশার্টের বুকে লাল সবুজ এঁকে
মিছিলে হেঁটে যাওয়া যুবক
সবুজ শাড়িতে লাল পাড় পরিহিতা চঞ্চল যুবতি
তুমি কি দেখো ওই সবুজে
ওই লাল বৃত্তের ভেতর
হাজার বছর সংগ্রামের ইতিহাস!
রক্তাক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ।
দেখতে কি পাও?

২৫ মার্চ 2 ২৫ মার্চ এর কবিতা সমূহ

তীর্থ

মা ডাকছেন। বেলা কি হয়ে গেলো শেষে! পুঁইয়ের নাক থেকে রোদ হাসে, তখনো লতায় আমার ঘুম।

মা আসেন। জলের রোগ রেখে বলে চলেন, ব্যয়ের খাতায় উঠেছে যেসব দিন। দোয়েলের ঠোঁটে কলুই আসে, আমার মগজে বিরবির করে ভূতের সোড়গোল।

মা, মা হাসেন। লেবুর ঘামে দুনিয়া বুঁদ, শর্তের ডালে ডালে শোধবার ডাকে। মুখ নাই আর, আমিও নাই ছুটিবারের ভোটে।

কোথায় শবজোট, কোন কাঁধে সহ্যের কফিন। কোনো ন্যাপকিনে আমি নেই। মাও নেই কোনো ফুলভ্রমে!

২৫ মার্চ ২৫ মার্চ এর কবিতা সমূহ

বিজয়ী সূর্য

পলাশীর প্রান্তরে ডোবা সূর্য-
অবশেষে শৃঙ্খলবন্দি হয় আবার।

কাঁদে বাংলা সিরাজের শোকে
তিমিরে কাটে বহুকাল-
কখনো দস্যু, কখনো হায়েনা,
দালাল- বেনিয়া আরো কত রূপ।

যে যার মতো স্বার্থের বিষাক্ত
নখরাঘাতে বিদীর্ণ করেছে বাংলা।
আগুনে জ্বালিয়ে করেছে ছারখার,
তারপর এলো মর্টার, এলো গ্রেনেড,
সাঁজোয়া যান আরো কত কী!

চেয়েছিলো ছো মেরে নিয়ে যেতে
অবশেষে পারেনি, উঠলো সূর্য-
২৬ মার্চ মুক্তি পেলো বন্দিসূর্য,
বিজয়ী সূর্য উঠলো ডিসেম্বরে।

২৫ মার্চ এর কবিতা

 

২৫ মার্চ এর ইতিহাস সংক্ষিপ্তঃ

ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কাপুরুষের মতো ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায়, যা কালরাত হিসেবে পরিচিত।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। রাতে সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। এদিন মধ্যরাতে ট্যাংক নিয়ে ঢাকার পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে সেদিন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড।

 

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment