নির্মলেন্দু গুণের কবিতা “স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর” একটি শক্তিশালী ও গভীর অর্থবহ রচনা যা মুক্তি ও শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে কিশোরের চিত্রায়ণ করে। এই কবিতায় কিশোরের উলঙ্গতা স্বাধীনতার পূর্ণতা ও সত্যিকার মুক্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। নির্মলেন্দু গুণ তার ভাষার সরলতা ও প্রাঞ্জলতায় মানুষের অন্তরস্পন্দনকে স্পর্শ করে, যেখানে স্বাধীনতার মানে শুধুমাত্র শারীরিক বন্ধন মুক্ত হওয়া নয়, বরং মানসিক ও আত্মিক স্বাধীনতাও বোঝানো হয়েছে। “স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর” আমাদের চিন্তার পরিধি বিস্তৃত করে এবং স্বাধীনতার সার্থকতা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর – নির্মলেন্দু গুণ
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উল্ঙ্গ শিশুর মত বেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে, প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে, জীবনের রাজপথে, মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তোমার হা-করা মুখে প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি হরতাল ছিল একদিন, ছিল ধর্মঘট, ছিলো কারখানার ধুলো। তুমি বেঁচেছিলে মানুষের কলকোলাহলে, জননীর নাভিমূলে ক্ষতচিহ্ন রেখে যে তুমি উল্ঙ্গ শিশু রাজপথে বেরিয়ে এসেছো, সে-ই তুমি আর কতদিন ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা’ বলে ঘুরবে উলঙ্গ হয়ে পথে পথে সম্রাটের মতো? জননীর নাভিমূল থেকে ক্ষতচিহ্ন মুছে দিয়ে উদ্ধত হাতের মুঠোয় নেচে ওঠা, বেঁচে থাকা হে আমার দূঃখ, স্বাধীনতা, তুমিও পোশাক পরো; ক্ষান্ত করো উলঙ্গ ভ্রমণ, নয়তো আমারো শরীরি থেকে ছিঁড়ে ফেলো স্বাধীনতা নামের পতাকা। বলো উলঙ্গতা স্বাধীনতা নয়, বলো দূঃখ কোনো স্বাধীনতা নয়, বলো ক্ষুধা কোন স্বাধীনতা নয়, বলো ঘৃণা কোন স্বাধীনতা নয়। জননীর নাভিমূল ছিন্ন-করা রক্তজ কিশোর তুমি স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তুমি বেঁচে থাকো আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে, প্রেমে, বল পেন্সিলের যথেচ্ছ অক্ষরে, শব্দে, যৌবনে, কবিতায়।
স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর কবিতা আবৃত্তিঃ