সেই ধন্য নরকুলে লোকে যারে নাহি ভুলে | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , সাধারণত ভাবটি রূপকধর্মী , সংকেতময় বা তাৎপর্যপূর্ণ শব্দগুচ্ছের আবরণে প্রচ্ছন্ন থাকে । নানা দিক থেকে সেই ভাবটির ওপর আলোকপাত করে তার যরূপ তুলে ধরা হয় ভাবসম্প্রসারণে । ভাবটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পারি , এ ধরনের গদ্য বা পদ্যাংশে সাধারণত মানবজীবনের কোনো মহৎ আদর্শ , মানবচরিত্রের কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য , নৈতিকতা , প্রণোদনমূলক কোনো শক্তি , কল্যাণকর কোনো উক্তির অৎপর্যময় ব্যঞ্জনাকে ধারণ করে থাকে ।
সেই ধন্য নরকুলে লোকে যারে নাহি ভুলে
যাঁরা পরোপকারে জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে কীর্তি স্থাপন করে গেছেন তাঁরা কীর্তিমান। তাঁরা মরেও অমর হয়ে আছেন। মানুষ মরণশীল; এটি চিরন্তন সত্য। তবুও যাঁরা কীর্তিমান তাঁরা তাঁদের সেবামূলক সৎকর্মের মাধ্যমে মানবসমাজে বেঁচে থাকেন বহু যুগ ধরে। তাঁদেরকে সাধারণ মানুষেরা মনের মন্দিরে রেখে পূজা করে। মানুষ অমরত্ব প্রাপ্ত হয় তাঁর সৎ কর্মের মাধ্যমে। কর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে সাধারণ মানুষের অন্তরে চিরদিন। অর্থাৎ যেসব মানুষ নিঃস্বার্থভাবে পরোপকারে আত্মনিয়োগ করেন, মানুষের কল্যাণে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন- মৃত্যুর পরেও তাঁরা অমর হয়ে থাকেন মানুষের মাঝে। এভাবে কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব তাঁদের সৎকর্মের জন্য অমরত্ব প্রাপ্ত হন।
এসব লোকের দৈহিক মুত্যু হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁরা অমর। সর্বদাই তাঁরা মানবের অন্তরে বিরাজ করেন। মানুষ তাঁদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের জীবনাদর্শই যুগ যুগ ধরে মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে। সুতরাং তাঁদের মৃত বলে মনে হয় না।মানুষের গর্ভে জন্মালেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রকৃত মানুষ হতে চাই কঠিন অধ্যবসায়। এ সাধনায় উত্তীর্ণ মানুষই প্রকৃত মানুষ।
সে ধন্য, সে আরাধ্য, পৃথিবীময় তার জয়গান, লোকের অন্তরে তার বাস, মনের মন্দিরে পায় পূজা, বেঁচে থাকে অনন্তকাল।মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কর্মের মধ্যে, তার বয়সের মধ্যে নয়। কত কোটি কোটি মানুষ এ পৃথিবীতে এসেছে। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর কেউ তাদেরকে মনে রাখতে পারে নি। তারা ভেসে গিয়েছে কলস্রোতে।

তবু যেসব কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গ মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁরা অমর। তাই সক্রেটিস, প্লেটো, গ্যালিলিও প্রমুখ কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের মৃত্যু হয়েছে বহুদিন পূর্বে কিন্তু তাঁরা আজও চির ভাস্বর মানুষের হৃদয়ে। তাই কীর্তিমান ব্যক্তিগণই মানুষের মধ্যে ধন্য।
আরও দেখুন: