সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য বা বাক্যের গুণ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য বা বাক্যের গুণ – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “বাক্যতত্ত্ব” বিষয়ের একটি পাঠ। একটি সার্থক বা আদর্শ বাক্য গঠন করতে হলে বাক্যের তিনটি গুণ থাকা চাই : ১. আকাঙ্ক্ষা ২. আসত্তি (অর্থাৎ নৈকট্য) এবং ৩. যোগ্যতা। ১. আকাঙ্ক্ষা (expectancy): বাক্যের অর্থ ভালভাবে বোঝার জন্যে যতগুলো পদের প্রয়োজন তার সব ক’টি যদি বাক্যে না থাকে এবং কোনো এক বা একাধিক পদ অবশিষ্ট থাকে, তবে ওই অবশিষ্ট পদ শোনার ইচ্ছাকে বাক্যের ‘আকাঙ্ক্ষা’ বলে।

সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য বা বাক্যের গুণ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

এভাবেও বলা যায়, বাক্যের অর্থোপলব্ধির জন্য এক বা একের বেশি পদ শোনার যদি বাসনা হয়, তাহলে বাক্যের সঙ্গে ওই অবশিষ্ট পদ-সম্পর্ককে আকাঙ্ক্ষা (expectancy) বলে। যেমন— ১. ‘ঢাকা বাংলাদেশের’ । ২. ‘অর্থই অনর্থের’— বলা হলে, তাতে বাক্যের অর্থোপলব্ধি হয় না। মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন থেকে যায়— ‘ঢাকা বাংলাদেশের কী?’ অথবা ‘অর্থ অনর্থের কী?” অর্থাৎ আরও কিছু শোনার বাসনা বা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলে বাক্যটি সম্পূর্ণ হতো।

 

সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য বা বাক্যের গুণ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

 

যেই প্রথম বাক্যের সঙ্গে ‘রাজধানী’ (ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী) এবং দ্বিতীয় বাক্যের সঙ্গে ‘মূল’ (অর্থই অনর্থের মূল) শব্দ যোগ করা হল, অমনি শোনার আকাঙ্ক্ষা মেটার সঙ্গে সঙ্গে বাক্যের অর্থোপলব্ধির মধ্য দিয়ে বাক্যটি পূর্ণাঙ্গ হল। ২. আসত্তি (proximity): বাক্যে ব্যবহৃত পদসমষ্টি পরস্পর অন্বয়যুক্ত বা সম্পর্ক অনুযায়ী যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট বা সংস্থাপিত হলে তাকে ‘আসত্তি’ বলে।

এককথায়— ‘আসত্তি’ হল বাক্যে ব্যবহৃত পদগুলোর ব্যাকরণসম্মত অবস্থান বা বিন্যাস। অন্যভাবেও বলা যায়, বাক্যের সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশের জন্যে বাক্যস্থিত পদগুলোকে সঠিকভাবে সাজিয়ে লেখা বা বলার নামই আসত্তি। যেমন : ক. শেরেবাংলা মহান নেতা ছিলেন। খ. ‘গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা’।

 

সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য বা বাক্যের গুণ | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা

 

এখানে ক–তে যদি বলা হত— ‘শেরেবাংলা মহান ছিলেন নেতা’ এবং খ–তে ‘মেঘ বরষা গরজে ঘন গগনে’ তাহলে বক্তার মনোভাব কোনোটিতেই সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ পেত না, যদিও দুটি উদাহরণেই বাক্য গঠনের প্রয়োজনীয় সব ক’টি পদ রয়েছে। তাই বাক্যে ব্যবহৃত পদ বা পদসমষ্টিকে পরস্পর অন্বয়যুক্ত বা সম্পর্ক অনুযায়ী যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট হতে হবে।

কেননা যথাস্থানে পদগুলো সাজালে যায়, উপযুক্ত পদের নৈকট্যই ‘আসত্তি’, অথবা পরস্পর মিলযুক্ত পদসমূহের সন্নিহিত অবস্থানই ‘আসত্তি’। পদের জালে তবেই অর্থ স্পষ্ট হয়। মধ্যে পারস্পরিক দীর্ঘ ব্যবধান অথবা এলোমেলো পদক্রম থাকলে বাক্য সঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না। তাই বলা ৩. যোগ্যতা (propriety): বাক্যস্থিত পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মিলবন্ধনের নাম ‘যোগ্যতা’।

ব্যাকরণে বাক্য গঠনের যোগ্যতা বলতে বাক্যের ভাবসত্য প্রকাশ ক্ষমতাকে বোঝায়। যেমন : ক. সূর্য পূর্ব দিকে উঠছে। খ. পাখিরা আকাশে ওড়ে কিন্তু যদি বলা হত— ক. সূর্য পশ্চিম দিকে উঠছে। খ. মাছেরা আকাশে ওড়ে। তাহলে আকাঙ্ক্ষা ও আসত্তি অনুযায়ী পদগুলো ব্যবহৃত হলেও ভাবসত্য বা যুক্তিসঙ্গত অর্থের অভাবে বক্তার মনোভাব প্রকাশে অর্থগত ও ভাবগত সমন্বয় সাধিত হত না। এবং ‘যোগ্যতা’র অভাবে বাক্য হিসেবেও গণ্য হত না। কারণ এই উদাহরণগুলো আমাদের ধারণা ও জ্ঞানের বাধা স্বরূপ হচ্ছে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আমরা সূর্যকে পূর্বদিকে উঠতে শুষীক দেখি, পশ্চিম দিকে নয়, আর মাছেরা নয় পাখিরাই যে আকাশে ওড়ে তা বলা বাহুল্য। তাই সার্থক বাক্যের জন্যে বাক্যের অর্থগত ও ভাবগত মিলনের জন্যে ব্যবহৃত পদের সুষম সমন্বয় তথা যোগ্যতা থাকতে হবে।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment