সারাংশ সারমর্ম ও সারসংক্ষেপ লেখার পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। কোনো গদ্য বা পদ্য রচনার অন্তর্নিহিত মূল ভাবকে সহজ-সরল ভাষায় সংক্ষেপে প্রকাশ করতে সারাংশ বা সারমর্ম বা সারসংক্ষেপ কথাটির ব্যবহার হয়।
কোনো গদ্য বা কবিতা রচনায় যেসব যুক্তি, দৃষ্টান্ত, উপমা ও অলঙ্কার থাকে তা বাদ দিয়ে সহজ-সরল ভাষায় বিষয়টি সংক্ষেপে প্রকাশ করার নামই সারাংশ বা সারমর্ম।
সারাংশ শব্দের অর্থ ‘সার’ অংশ বা ‘মূল’ অংশ। যে কোন একটি লেখা পড়লে আমরা দেখতে পাই, লেখকের মনের মূলভাবটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য মূল ভাবের সহায়ক অনেক কথা বলতে হয়।
একটি ভাবকে যথার্থ ও সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য উপমা, উদাহরণ ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। সে লেখাটির মূল কথা বা সার কথা বা সারবস্তুই আসলে সারাংশ।
ইংরেজিতে তিনটি শব্দ আমরা লক্ষ করি Summary Substance, Precis এ শব্দগুলোর যথার্থ বাংলা শব্দ নাই। এ শব্দটির সঙ্গে ভাব অনুষঙ্গও এক নয়। এ তিনটি ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ সারাংশ নয়। তবে সারাংশ বলতে যে কাজটি বোঝায় তার সঙ্গে ঐ শব্দগুলোর মিল আছে।
Summary লিখতে বললে মূল অংশের অর্ধেক, Substance মূলের এক তৃতীয়াংশে বা তিন ভাগের এক ভাগ ও Precis মূল অংশের চার ভাগের একভাগ লিখতে হয়। Precis এ একটি শিরোনাম ও দিতে হয়।
সারাংশ লেখার সময় আমাদের মূল অংশের তিন ভাগের এক ভাগ লেখা উচিত। তবে এক্ষেত্রে সারাংশের আকৃতির দিকে আমাদের যেমন নজর দিতে হবে তেমন নজর দিতে হবে তার প্রকৃতির দিকেও।
সারাংশে মূলভাবটি যথার্থ ও সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করাটাই মূল বিষয়। বাহুল্য কথার মধ্য থেকে মূল কথাটি খুঁজে বের করাই সারাংশ লেখার উদ্দেশ্য।
একটি রচনা নানা রকম কারণে বড়ো হতে পারে। বিষয়বস্তুর কারণে সেখানে যুক্ত হতে পারে উপমা, উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের বাহুল্য। বিষয়ের আলোচনায় হয়তো এসব কিছুই হয়ত মানিয়ে যায়।
কিন্তু আমাদের সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে এসব বাহুল্য একেবারে পরিতাজ্য। সেখানে অতিরিক্ত বিষয় বাদ দিয়ে সহজ সরল ভাষায় মূল বক্তব্য তুলে ধরতে হবে।
মোট কথা, কোনো লেখা ছোট আকারে আকর্ষণীয় ভাষায় প্রকাশ করার নামই সারাংশ বা সারমর্ম। কবিতার ক্ষেত্রে এই সংক্ষিপ্তকরণকে বলা হয় সারমর্ম এবং গদ্যের ক্ষেত্রে একে সারাংশ হিসেবে অভিহিত করা হয়। আর এটিই সারাংশ ও সারমর্মের প্রধান পার্থক্য।
Table of Contents
সারাংশ সারমর্ম ও সারসংক্ষেপ লেখার পদ্ধতি
সহজ কথায় সারাংশ ও সারমর্ম:
সারাংশ :
একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বিস্তারিতভাবে লিখিত এক বা একাধিক অনুচ্ছেদের মূল বক্তব্যটিকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলে একে সারাংশ বলে।
সারমর্ম বা ভাবার্থ :
কোনাে কবিতার একাধিক পঙক্তির মূল ভাবটি সংক্ষেপে উপস্থাপিত হলে, তাকে সারমর্ম বা ভাবার্থ বলে।
সারাংশ সারমর্ম ও সারসংক্ষেপ লেখার নিয়ম:
১. পঠন:
যে অংশের সারমর্ম ও সারাংশ লিখবে তা বার বার মন দিয়ে পড়বে । মূল ভাবটুকু অনেক সময় উপমা-রূপক বা অলংকারের আড়ালে থাকে। তাই উপমা, রূপক, অলংকার ইত্যাদি বাদ দিয়ে মূল ভাবটি বুঝে নিয়ে তা লিখবে ।
২. অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বর্জন:
মূল ভাবকে যেহেতু খুব সংক্ষেপে লিখতে হয় সেজন্যে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় থাকলে তা বাদ দেবে।
৩. প্রসঙ্গ:
মূল ভাবের বাইরে অন্য কিছুর অবতারণা করা উচিত নয়। রচয়িতার নাম জানা থাকলেও উল্লেখ করবে না।কবি বলেছেন, জাতীয় কথাও লিখবে না।
৪. অনুচ্ছেদ:
সারমর্ম ও সারাংশ একটি অনুচ্ছেদে লিখবে ।
৫. প্রারম্ভিক বাক্য:
প্রারম্ভিক বাক্যটি গােছালাে ও আকর্ষণীয় করতে চেষ্টা করবে।
৬. প্রত্যক্ষ উক্তি:
সারাংশে প্রত্যক্ষ উক্তি থাকলে তা পরােক্ষ উক্তিতে সংক্ষেপ করে লিখবে ।
৭. পুরুষ:
সারমর্ম ও সারাংশের বক্তব্যে উত্তম পুরুষ (আমি/আমরা) বা মধ্যম পুরুষ (তুমি/তােমরা) দিয়ে বাক্য কখনােই লিখবে না।
৮. উদ্ধৃতি:
মূল অংশে উদ্ধৃতি থাকলে তার পুনরাবৃত্তি করবে না। প্রয়ােজনে তার ভাবটুকু উদ্ধৃতি চিহ্ন ছাড়া লিখবে।
৯. ভাষা:
সারমর্ম ও সারাংশ যথাসম্ভব সহজ ভাষায় ও সরল বাক্যে গুছিয়ে লিখতে চেষ্টা করবে।
১০. পুনরাবৃত্তি বর্জন:
একই কথার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। তেমনি প্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া যাবে না।।
সারাংশ সারমর্ম ও সারসংক্ষেপ লিখতে বিবেচ্য:
১. বারবার পড়া:
নির্ধারিত মূল অংশটি বারবার পড়ে তা থেকে মূল কথাটি, অর্থাৎ মূল ভাব খুঁজে বের করতে হবে। মূল বিষয়টি না বুঝে অনুমানের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। মূল ভাবটি রচনার প্রথমাংশ, মধ্যাংশ বা শেষাংশের যে- কোন স্থানে থাকতে পারে। মূল অংশটিই আলোচ্য; অন্য অংশগুলো বর্জনীয়।
২. তাৎপর্য উপলব্ধি:
ভাব সবসময় অভিধানগত অর্থে ধরা পড়ে না। তার ব্যঞ্জনাধর্মী অর্থ বা তাৎপর্যকে উপলব্ধি করতে হবে।
৩. মূলভাবটি বের করা:
বক্তব্যটি বুঝে নিয়ে মূলভাবটি আলাদা করতে হবে এবং অলঙ্কার, উপমা, রূপক এগুলোকেও খুঁজে বের করতে হবে। অপ্রধান কথাগুলো বাদ দিয়ে মূলভাবটিকে সুসংহত কতে হবে।
৪. পুরুষ রূপান্তর:
মূল রচনায় উক্তি-প্রভুক্তি থাকলে তাকে প্রথম পুরুষে রূপান্তরিত করে লিখতে হবে। উদ্ধৃতি বর্জন করতে হবে।
৫. সহজ কথায় প্রকাশ:
সারাংশ বা সারমর্মকে সহজ সরল কথায় প্রকাশ করতে হবে। সাধারণত একটি অনুচ্ছেদে লিখিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। মূল গদ্য বা কবিতার কোনো অংশ হুবহু উদ্ধৃত করা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণীয় নয়। মূলের কোনো অংশকে সামান্য বদল করে লেখাও বাঞ্ছনীয় নয়। মূলভাবের বাইরে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত মতামত, বা মন্তব্য লেখা যাবে না
৬. আকারের হিসাব:
সারমর্ম বা সারাংশ লেখার আকার সম্পর্কে অবহিত থাকা অতি আবশ্যক। কেননা, মূল ভাবকে পাশ কাটিয়ে অথবা মূল ভাবের অর্থ ভালােভাবে না বুঝে এলােমেলাে লেখা দিয়ে লেখা দীর্ঘ করলে চলবে না। লেখাটি যেন মূলের অনুপাতে খুব ছােট বা বেশি বড় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্ধারিত মূল অংশটির তিন ভাগের এক ভাগ হলে সারাংশ যথােপযুক্ত হবে। তবে আকারের দিক বিবেচনা না করে মূল ভাবটি সঠিক ও যথাযথ হয়েছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য অনুশীলন প্রয়োজন। সারাংশ রচনায় ভাষা পড়ে বুঝতে পারা ও সংক্ষিপ্ত করে লেখা এ দুটি বিষয়ের দক্ষতা প্রয়োজন হয়। এ দক্ষতা অর্জন করতে হলে সারাংশ রচনার অনুশীলন করতে হবে। আমরা এখানে অনেক নমুনা তৈরি করে দিয়েছ। সেগুলো দেখে আপনারা নিয়মিত অনুশীলন করতে পারবেন।
অনুধাবন সারাংশ ও সারমর্ম :
আরও দেখুন: