সাধু রীতির ও চলিত রীতির গদ্যের বৈশিষ্ট্য | বাংলা ভাষা | ভাষা ও শিক্ষা , সাধু রীতির গদ্যের বৈশিষ্ট্য : সন্ধি ও সমাসবদ্ধ দীর্ঘাকৃতি পদের প্রয়োগ, যেমন— চতুর্থাংশ মহাবুদ্ধিসম্পন্ন, বয়োবৃদ্ধিসহকারে, অস্থিরচিত্ত, শ্রবণেপ্রিয় প্রভৃতি। এরকম শব্দের সংখ্যা অনেক।
সাধু রীতির ও চলিত রীতির গদ্যের বৈশিষ্ট্য | বাংলা ভাষা | ভাষা ও শিক্ষা
সাধু রীতির গদ্যের বৈশিষ্ট্য
১। সাধু ভাষায় তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের প্রাধান্য, যেমন- গলধর্ম, নিরীক্ষণ, দিবাকর প্রভৃতি অসংখ্য শব্দ ।
২। অসমাপিকা ক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গরূপ, যেমন- করিলে, করিয়া, বলিয়া, হইয়া, ভূলিয়া, বদলাইয়া ইত্যাদি।
৩। সমাপিকা ক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গরূপ, যেমন— জন্মাইল, হইলেন, করিলেন, হইবেন, করিয়াছিলেন ইত্যাদি।
৪। সর্বনাম পদের পূর্ণাঙ্গরূপ, যেমন— তাহারা তাহাদিগের ইত্যাদি।
৫। অনুসর্গের পূর্ণাঙ্গরূপ, যেমন— হইতে।
৬। এ ভাষায় বাক্যরীতি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে চলে, প্রথমে উদ্দেশ্য ও পরে বিধেয়— বাক্যের প্রথমে বিশেষণযুক্ত বা বিযুক্ত কর্তা, মধ্যে কারক চিহ্নিত ক্রিয়া-বিশেষণ প্রভৃতি পদ এবং শেষে রিয়াপদ থাকে, যেমন: ‘নিঃসঙ্গ পশুপতি আম্রকাননে দ্রুত প্রবেশ করিলেন। এখানে নিসা (বিশেষণ) + পশুপতি (কর্তা) + আম্রকাননে, (অধিকরণ) + দ্রুত (ক্রিয়া-বিশেষণ) + প্রবেশ করিলেন । মিশ্র ক্রিয়া।
৭। সাধু ভাষা বা সাধু রীতির গদ্য এক প্রকার আভিজাত্য ও গাম্ভীর্যের অধিকারী।
৮। সাধু ভাষা বা সাধু রীতির গদ্য নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার অনুপযোগী।
৯। সাধু ভাষা মার্জিত ও সর্বজনবোধ্য, কিন্তু বহুলাংশে কৃত্রিম।
চলিত রীতির গদ্যের বৈশিষ্ট্য
১। চলিত ভাষায় তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রাধান্য। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘দেশি বিদেশি হাল্কা তার সব শব্দই ঘেঁষাঘেঁষি করতে পারে তার আন্তিনায়।… পার্সি আরবি কথা চলিত ভাষা বহুল পরিমাণে অসংকোচে হজম করে নিয়েছে।
২। অসমাপিকা ক্রিয়ার সংক্ষিপ্তরূপ, যেমন— করে ( করিয়া) বসে + বসিয়া), চেয়ে ( চাহিয়া) ইত্যাদি।
৩। সর্বনাম পদের সংক্ষিপ্তরূপ, যেমন- তাঁর [ তাহার), তার (তাহার), তারা (তাহারা) ইত্যাদি।
৪। অনুসর্গের সংক্ষিপ্তরূপ, যেমন : বাইরের ( বাহিরের), কাছে ( নিকটে) থেকে (< থাকিয়া) ইত্যাদি।
৫। পদবিন্যাস ও বাক্যের গঠনভঙ্গি বিশেষ প্রকৃতির।
৬। ভাষা কিছুটা লঘু সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ গতিময় এবং জীবন্ত।
৭। চলিত ভাষা বা চলিত রীতির গদা কৃত্রিমতাবর্তিত এবং তা মানুষের মনোভাব প্রকাশের জন্যে অপেক্ষাকৃত বেশি উপযোগী।
৮। চলিত ভাষা কথনভগির অনুকূল বিধায় এখানে সমাস ও সমাসবার পদসমূহকে তেন্তে সহজ করা হয়, যেমন: দারুনির্মিত কাঠের তৈরি, নানা আভরণভূষিত নানারকম গয়না পরা মুষ্টিবদ্ধ হস্ত মুঠো করা মাত ইত্যাদি।
৯। অর্থের চেয়ে ধ্বনির প্রাধান্য মানুষের মনে সহজে প্রবেশ করে এবং প্রাধান্য পায় বলে বাংলা ‘চলিত ভাষা’ ধ্বন্যাত্মক শব্দ এবং শব্দদ্বৈতের ব্যবহার ও প্রাধান্য বেশি।
১০। যা ‘সাধু ভাষা’ মেনে নেয় না এমন বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচনমূলক বাক্য চলিত ভাষা’ সহজে গ্রহণ করে।

আরও দেখুন: