সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা , বিশেষ্যের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম বলে। যেমন : রহিম ভাল ছেলে। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। উল্লিখিত উদাহরণের দ্বিতীয় বাক্যটিতে ‘সে’ শব্দটি ‘রহিম’- এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘সে’ হল সর্বনাম বিশেষ্য পদ অনুক্ত থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ পদের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন – যারা দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারে তারাই তো সত্যিকারের মানুষ।

সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

“বাক্যের মধ্যে অথবা পূর্ববাক্যে ব্যবহূত কোনও ‘নাম’-পদের অর্থাৎ বিশেষ্য বা বিশেষ্যার্থক কোনও পদের (বা পদসমূহের) অথবা পূর্ববর্তী কোনও বাক্য বা বাক্যাংশ কিংবা প্রসঙ্গের পুনরুল্লেখের প্রয়োজন হলে, তার যথাযথ পুনরাবৃত্তি না করে তার পরিবর্তে- ‘সে’, ‘সব’, ‘ইহা’, ‘এই’, ‘উহা’, ‘তা’, ইত্যাদি যে সমস্ত পদ ব্যবহৃত হয়, তাদের বলে সর্বনাম (বা প্রতিনাম)। ‘সর্বনাম পদ ব্যবহার করাতে একই কথার বারবার উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না।

Capture70 সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সর্বনামসমূহকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

১। ব্যক্তিবাচক সর্বনাম (personal pronoun) :  বাক্যে ব্যাকরণিক পক্ষ বা পুরুষ (বক্তা, শ্রোতা, অন্য- এই তিনটিকে) নির্দেশ করে। যেমন- আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তুই, তোরা, তিনি, তাঁরা,তাঁহারা, এ, এরা, ও, ইনি, এঁরা, উনি, ওরা, এঁরা ইত্যাদি। বচন ও কারকভেদে এদের রূপের পার্থক্য ঘটে।

২। আত্মবাচক সর্বনাম (reflexive pronoun) : কর্তা নিজেই কাজটি করেছে- এমন ভাব প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন : সে নিজে অঙ্কটা করেছে। আত্মবাচক সর্বনাম হল- নিজ, নিজে নিজেই নিজে নিজে; স্বয়ং, ষষষ আসনে গিয়ে বস)।

৩। নির্দেশক বা সামীপ্যবাচক সর্বনাম (near demonstrative pronoun) : বক্তার কাছ থেকে কোনো কিছুর নৈকটা, দূরত্ব নির্দেশ করে। এ জাতীয় সর্বনাম হল- এ, এই, এরা, এটি, ও, ওই, ওরা, ইনি, উনি ইত্যাদি। নির্দেশক সর্বনাম ‘এ’, ‘ও’ এবং ‘সে’র সঙ্গে অর্থ ও বচন অনুসারে একবচনের নির্দেশক প্রত্যয় টি/টা/থানা/খানি ও বহুবচনের নির্দেশক প্রতায় গুলি/গুলা/গুলি ও সকলবাচক সর্বনাম ‘সব’ যুক্ত হতে পারে। যেমন— এটি, ওটা, এগুলি, ওগুলো, সেগুলি, সেসব ইত্যাদি।

৪। অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক সর্বনাম (indefinite pronoun) : অনির্দিষ্ট ও পরিচয়হীন কোনো কিছুকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এ জাতীয় সর্বনাম হল- কোথাও, কেউ, কিছু। যেমন- কোথাও কেউ নেই। কিছু একটা করারও উপায় নেই।

৫। প্রশ্নবাচক সর্বনাম (interrogative pronoun) : প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রশ্ন করতে ব্যবহৃত হয়। এ জাতীয় সর্বনাম হল- কে. কি, কী, কোন, কার, কিসে।

সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

 

৬। সংযোগবাচক সর্বনাম (relative pronoun) : দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন- উদাহরণটা এমন হয়েছে যে, তিনি তা বোঝাতে পারেন নি। স্টেশনে এসে দেখি যে, ট্রেনটা চলে গেছে।

৭। সাপেক্ষ সর্বনাম (correlative pronoun) : একটির সাপেক্ষে অন্যটি, অর্থাৎ একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল সর্বনাম। তা দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটায়। যেমন— যেমন কর্ম তেমন ফল। যা ভেবেছি তাই হয়েছে।

বচন ও কারকভেদে সাপেক্ষ সর্বনাম ‘যে…সে’- এর রূপভেদ হয়ে থাকে। যেমন- যাকে যার, যাদের দিয়ে।

৮। পারস্পরিক সর্বনাম (reciprocal pronoun) : দুপক্ষের সহযোগ বা পারস্পরিক নির্ভলতা বোঝায়। যেমন— তোমরা নিজেরা নিজেরা সমস্যাটি মিটিয়ে ফেল। পরস্পর না মিলতে পারলে বন্ধুত্ব গড়বে কী করে? এ সর্বনামকে আত্মবাচক সর্বনামের একটি বিশেষ রূপ বলা যেতে পারে।

৯। সকলবাচক সর্বনাম (inclusive pronoun) = ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের সমষ্টি বোঝায়। যেমন— সবাই গেছে

বনে। সকলেই খাবার খেয়েছেন।

১০। অন্যাদিবাচক সর্বনাম (denoting other বা others) – নিজ ভিন্ন অন্য কোনো অনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এ জাতীয় সর্বনাম হল- অন্য, অপর, পর ইত্যাদি। যেমন— অন্যে সমালোচনা করবে, তা আমি সইব না। অনুকের কাছে গেলে এর খোঁজ পাবে।

সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

 

সর্বনাম-এর পক্ষভেদ (পুরুষভেদ) বা পক্ষভেদে সর্বনাম

‘পক্ষ’ হল নামশব্দের এমন এক ব্যাকরণিক বৈশিষ্ট্য, যা দিয়ে বক্তা, বক্তার সামনের উপস্থিত শ্রোতা এবং যার কথা বলা হচ্ছে এমন অনুপস্থিত সত্তা নির্দেশ করা হয়। প্রচলিত ব্যাকরণে এটি ‘পুরুষ’ নামে পরিচিত। যেমন । আমি তোমাকে তার কথা কলব। এই বাক্যে ‘আমি’ হল বাক্যটির বক্তা, “তুমি” হল শ্রোতা, এবং ‘সে’ (তার) হল উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা যার সম্বন্ধে বলা হচ্ছে। এই তিন ধরনের ব্যক্তিকে বোঝানোর জন্যে তিন ধরনের সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যক্তিভেদে সর্বনামও তিন ভাগে পড়ে। যেমন

১. বক্তাপক্ষ (উত্তম পুরুষ) :  বক্তা যখন নিজের সম্মন্ধে “আমি” ‘আমরা’, ‘আমাকে’, ‘আমাদের’ ইত্যাদি পদ ব্যবহার করে তখন তাকে বক্তাপক্ষ বলে।

২. শ্রোতাপক্ষ (মধ্যম পুরুষ) :  উপস্থিত শ্রোতা হল শ্রোতাপক্ষ। বক্তা যখন থাকে বা যাদের সম্মোধন করে তুমি বা

তোমরা তোমাকে বা তোমাদের বলে তখন তাকে বলে শ্রোতাপক্ষ।

৩. অন্যপক্ষ (মধ্যম পুরুষ) : অনুপস্থিত বা পরোক্ষভাবে উদ্দিষ্ট সত্তা (ব্যক্তি, প্রাণী, কস্তু) হল অন্যপক্ষ। উদাহরণ সে, তারা, তিনি, তাদের, এদের ইত্যাদি। নিচে তিন প্রকার পক্ষের বচনভেদ দেখানো হল

Capture71 সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

 

 

সর্বনামের বিভক্তিগ্রাহী রূপ

বাংলা সর্বনামসমূহ কর্তৃকারক ভিন্ন অন্যান্য কারকে বিভক্তিযুক্ত হওয়ার পূর্বে একটি বিশেষ রূপ পরিগ্রহ করে। সর্বনামের এ রূপটিকে বিভক্তিগ্রাহী রূপ বলা হয়।

কর্তৃকারকে সর্বনামের মূল রূপটিই ব্যবহৃত হয় এবং একে প্রথমা বিভক্তিযুক্ত একবচন ধরা হয়।

Capture.72JPG সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

Capture75 সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

 

 

সর্বনাম ও সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment