Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

সরস্বতী পূজা রচনা । Essay on Saraswati puja । প্রতিবেদন রচনা

সরস্বতী পূজা রচনা: বিদ্যা ও ললিতকলার দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে উৎসব পালিত হয়। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। তিথিটি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত।

সরস্বতী পূজা রচনা

সরস্বতী পূজা রচনা । Essay on Saraswati puja

ভূমিকা:

সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার দেবী। সরস্বতীর দেবীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে সরস্বতী পুজো উৎসব আকারে পালিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের “পুরষ্কার” কবিতায় আবেগঘনভাবে সরস্বতীর বন্দনা করেছেন। উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায়। বৌদ্ধ ও পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈনরাও সরস্বতীর পূজা করেন। জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, বালি(ইন্দোনেশিয়া) ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে।

অর্থে ও উৎপত্তিতে সরস্বতী:

সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী।

বৃহস্পতি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবতা, বৃহস্পতি পত্নী সরস্বতীও জ্ঞানের দেবী হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে সরস্বতী কেবল জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবীতে পর্যবসিত হলেন। পণ্ডিতরা অনেকেই মনে করেন যে সরস্বতী প্রথমে ছিলেন নদী, পরে দেবী হয়েছেন। এ বিষয়ে সাহিত্যিক রমেশচন্দ্র দত্ত লিখেছেন, “আর্য্যাবর্তে সরস্বতী নামে যে নদী আছে তাই প্রথমে দেবী বলে পূজিত হয়েছিলেন।” প্রতিমাকল্পে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। দেবীর বাহন হাঁস।

সরস্বতী পূজা রচনা । Essay on Saraswati puja

সরস্বতীর পরিবার:

শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী দূর্গা ও মহাদেবের কন্যা হলেন সরস্বতী। লক্ষ্মী–কার্তিক–গণেশের সহোদরা ভগ্নী। পর্বতরাজ হিমালয় হলেন সরস্বতীর দাদু। সরস্বতী সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার সহধর্মিণী, পালনকর্তা বিষ্ণুপত্নী লক্ষ্মী ও ধবংসকর্তা মহেশ্বরজায়া পার্বতীর সঙ্গে একযোগে “ত্রিদেবী” নামে পরিচিতা। এই ত্রিদেবীর কাজ হল ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে যথাক্রমে জগৎ সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংস করতে সাহায্য করা।

বিভিন্ন নামে দেবী সরস্বতী:

সরস্বতী বিদ্যাদেবী, জ্ঞানদায়িনী, বীণাপাণি, কুলপ্রিয়া, পলাশপ্রিয়া বাগদেবী, সারদা, শতরূপা, মহাশ্বেতা, ভারতী প্রভৃতি নামে অভিহিতা।

তিথি:

বর্তমানে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে দেবীর পুজো করা হয়। তিথিটি বসন্ত পঞ্চমী বা শ্রীপঞ্চমী নামেও পরিচিত।উনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির ওপর তালপাতার দোয়াত-কলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। শহরে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করতেন। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।

সরস্বতী পূজা রচনা । Essay on Saraswati puja

পূজার উপকরণ:

অন্যান্য সকল পুজোর মতো এই পূজায় বিশেষ কয়েকটি সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে বিশেষ কিছু উপকরণ হল- অভ্র-আবির, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম, যবের শিষ, বাংল বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট-পেন্সিল, গাঁদা ও পলাশ ফুল, ফল-মূল, অন্যান্য ফুল ও বেলপাতা। বসন্তের আমের মুকুল দেওয়া হয় দেবীকে। বসন্তের অন্যতম ফুল পলাশ দেবীর পছন্দের বলে জানা যায়। বিদ্যার দেবীকে ছোটোরা শ্লেট-পেন্সিল, আর বড়রা তাদের বইখাতা অর্পণ করে আশীর্বাদের জন্য।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

পূজা পদ্ধতি:

সরস্বতী পুজোর দিন একদম ছোটো শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত। বসন্ত পঞ্চমীর দিন ভোরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী পূজা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সকলে খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার পোশাকে দেবীর পুজো করবে। সেদিন মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না, নিরামিষ খেতে হয়। পুজোর আগে মঙ্গল কামনায় উপবাস রাখা হয়। ওইদিন লেখাপড়ায় নিষেধ থাকে। পূজার আগে বিদ্যার্থীদের কুল খাওয়া বারণ। পূজার শেষে পুষ্পাঞ্জলি। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। পরদিন সকালে আবার পূজা করার পর চিড়ে ও দই মেশানো দধিকর্মা নিবেদন করে নিয়মবিধি সমাপ্ত হয়। পূজাশেষে সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও পূজার দু-তিন পরে দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

দেবী ও বিদ্যার্থীর সম্পর্ক:

সরস্বতী বিদ্যার দেবী রূপে পূজিত। শিশুদের হাতেখড়ি দেওয়া হয় তাঁর পূজা করে। প্রায় প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর পূজা হয়। বিদ্যার্থীরা সরস্বতীর আশীর্বাদে বিদ্যালাভের আশায় তাঁর আরাধনা করে।

সরস্বতী পূজা রচনা । Essay on Saraswati puja

অন্য রূপে এই দিন:

সরস্বতী বিদ্যার দেবী। ছোটো শিশু থেকে বড় সকলেই তাঁর পূজা করে। এই একটা দিন বিদ্যার্থীদের পড়াশোনা থেকে অঘোষিত ছুটি থাকে। এই দিনটি বিশেষভাবে আলাদা বাঙালীদের কাছে। বসন্তের পঞ্চমী তিথিতে বাসন্তী রঙে সেজে ওঠে আবালবৃদ্ধবণিতা। ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবীতে, মেয়েরা শাড়িতে বিশেষ সাজে সেজে ওঠে। আসলে সরস্বতী পুজো বাঙালীদের “ভ্যালেন্টাইনস ডে” হিসেবে পালিত হয়। সমগ্র বাঙালী জাতির প্রেমের দিবস সরস্বতী পুজোর দিনটি।

উপসংহার:

বিদ্যার্থীদের কাছে দেবী সরস্বতীর আরাধনার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকলে বিদ্যার আলোকে, বুদ্ধিমত্তায় চিরকাল সত্যের প্রতি অনুরাগী থাকার আশীর্বাদ চায়। দেবীর কাছে সকলে যেন মিলিতভাবে বলে ওঠে,

“সরস্বতী বিদ্যেবতী

তোমায় দিলাম খোলা চিঠি,

একটু দয়া করো মাগো

বুদ্ধি যেন হয়,

এসব কথা লিখছি তোমায়

নালিশ করে নয়।”

আরও পড়ুনঃ

Exit mobile version