সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি বিষয়ক রচনা – ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি | বাংলা রচনা সম্ভার

সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি বিষয়ক রচনার নমুনা তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। এই নমুনা দেখে শিক্ষার্থীগণ নিজের ভাষায় নিজের মতো রচনা তৈরি করে নেবেন। এই রচনাটি আমাদের “বাংলা রচনা সম্ভার” এর “ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের একটি পাঠ।

 

সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি বিষয়ক রচনা | ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি | বাংলা রচনা সম্ভার

 

সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি বিষয়ক রচনা - ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি | বাংলা রচনা সম্ভার

 

ভূমিকা :

জাতির যুগ-যুগান্তরের স্বপ্ন ও সাধনা, তার ভাবলোকের গৌরব ও সমুন্নতি তিল তিল সফল করে সৃষ্টি হয় সংস্কৃতির ধারা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা, ভাবধারা ও কর্মধারার গৌরবময় প্রতিচ্ছবিই হলো তার সংস্কৃতির। মানবীয় আচার-পদ্ধতি, শিক্ষা-দীক্ষা, মানসিক উন্নতি, পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব– এ সবের ধারা-সমন্বয়ে সৃষ্ট এক অপূর্ব জীবনধারাই হচ্ছে ‘সংস্কৃতি’।

সংস্কৃতির মূল কথা হলো নিজেকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে গড়ে তোলা এবং অপরের নিকট নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। প্রেম ও সৌন্দর্য সংস্কৃতির প্রধান আশ্রয়। এ আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলে সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যায় এবং মানুষ অপসংস্কৃতির দিকে ধাবিত হয়। শিক্ষা ও সভ্যতার অবনতি ঘটিয়ে যে সংস্কৃতি মানুষকে সুন্দর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তাই অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি মানুষকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্যবিকাশকে স্তব্ধ করে দিয়ে শ্রীহীনতার দিকে ঠেলে দেয়।

সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি | ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি | বাংলা রচনা সম্ভার

 

সংস্কৃতি :

সংস্কৃতি হলো মানুষের আচার-আচরণের সমষ্টি । মানুষের জাগতিক নৈপুণ্য ও কর্মকুশলতা, তার বিশ্বাস, আশা-আকাঙ্ক্ষা, নৈতিকতা, রাজনীতি, ভাষা, কলা, মূল্যবোধ সবকিছুই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজের মানুষের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, নীতি, নিয়ম, সংস্কার ও অন্যান্য যে কোনো বিষয়ে দক্ষতার সর্বাধিক সমাবেশ। মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে বাঁচা।’ সংস্কৃতি সম্পর্কে এমারসন বলেন, ‘সংস্কৃতিই খুলে দেয় সুন্দরের চেতনার দরজা।

 সংস্কৃতি সম্পর্কে ম্যাথু আর্নল্ড-এর অভিমত হলো, ‘সংস্কৃতি আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় বিশ্বের সর্বোত্তম জিনিসগুলোর সঙ্গে এবং সেই সঙ্গে মানুষের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে। আবার কালটাজার গ্রাসিয়ান বলেন, ‘মানুষ জন্মায় বর্বর হয়ে, সংস্কৃতিই তাকে করে সুসভ্য’। তবে সংস্কৃতি শনাক্তকরণের কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই, গতি নেই। এটি চলমান জীবনের প্রতিচ্ছবি। এলাকাভিত্তিক এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। একটা নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের জীবন প্রণালী অর্থাৎ মানুষের দৈনন্দিন আচার-আচরণ, কাজকর্ম, পোশাক-পরিচ্ছদ, প্রচলিত লোককাহিনী, ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, চিন্তা-চেতনা সবকিছুই সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে।

 

সংস্কৃতির স্বরূপ :

সংস্কৃতি এক ধরনের পরিশ্রুত জীবনবোধ। জীবনের স্কুল চাহিদাকে ছাপিয়ে ওঠা শ্রেয়বোধ ও সৌন্দর্য অন্বেষাই সংস্কৃতির লক্ষ্য। মানুষের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ ঘটিয়ে নান্দনিক সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্যময় গতি সৃষ্টিই সংস্কৃতির মূল কথা। যা কিছু কুৎসিত, যা কিছু অসুন্দর, যা কিছু অনৈতিক চিন্তা, কর্মে ও আচরণে সেসব থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকাই সংস্কৃতিবানতা। মননচর্চা ও কল্যাশবৃদ্ধি সংস্কৃতির পরিশোষক ও পরিবর্ধক। সংস্কৃতির সাথে তাই গভীর যোগ চিত্রকর্মের, ভব্যতার, সুরুচির, শালীনতার। কল্যাণবোধ, দায়িত্ববোধ, মমত্ববোধের শক্তি সংস্কৃতিরই শক্তি। যে জাতি যত সুরুচিসম্পন্ন ও শালীন পৃথিবীতে সে জাতি তত উন্নত ও সংস্কৃতিবান হিসেবে সম্মানিত ।

 

সংস্কৃতির উৎস ও উপাদান:

জীবন যেমন ব্যাপক, বিচিত্র ও বহুমুখীনতার আশ্রয়ী। সংস্কৃতির উৎস ও উপাদান তেমনি ব্যাপক ও বহুবিচিত্র। ভৌগোলিক সংস্থান, প্রাকৃতিক পরিবেশ, আর্থিক অবস্থা, লৌকিক অভিজ্ঞতা, ধর্মীয় বিধিবিধান, দার্শনিক চেতনা, নৈতিক অনুশাসন, সামাজিক প্রয়োজন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ইত্যাদি অনেককিছুর সমন্বয়ে ও ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এক একটি সংস্কৃতি। প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য গড়ে ওঠে এসব নানা উপাদানের ভিত্তিতে।

পৃথিবীতে বহু সংস্কৃতি রয়েছে, প্রত্যেক সংস্কৃতিই নিজের মতো করে বিকশিত হওয়ার অধিকার রাখে। জাতিতে জাতিতে দেশে দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটি সংস্কৃতি প্রভাবিত ও সমৃদ্ধ হয়। পৃথিবীতে নানা দেশে নানা সংস্কৃতি থাকলেও সব মানবজাতিকে সামগ্রিকভাবে দেখলে আমরা পাই মনের সংস্কৃতির ধারণা আর সমগ্র বিশ্বকে অখণ্ড সত্তা হিসেবে বিবেচনা করলে নানা বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বসংস্কৃতির ধারণায় উপনীত হই। বিশ্বসংস্কৃতি বস্তুত বিশ্বের সাংস্কৃতিক বহুত্বেরই স্বীকৃতিসূচক ধারণা।

 

বাঙালি সংস্কৃতির মূল ধারা :

আবহমান বাংলার পরিবেশ প্রকৃতি ও জীবনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বাঙালির সংস্কৃতি। সুদীর্ঘ কাল ধরে নানা রূপ-রূপান্তরের মধ্য দিয়ে তা অগ্রসর হয়েছে। কালের বিবর্তনে নানা সংস্কৃতির সাথে সংযোগে তা হয়েছে পরিপুষ্ট । দ্রাবিড়-অস্ট্রিক-ভোট-ব্রহ্ম সংস্কৃতির মৌল প্রেরণায় এবং ব্রাহ্ম্য-বৌদ্ধ-জৈন ধর্মের প্রভাবে গড়ে উঠেছিল বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন রূপ। মধ্যযুগে এর ওপর পড়ে মুসলমান সংস্কৃতির বিশেষ করে সুফি সাধনার প্রভাব। তারপর আধুনিককালে ইংরেজি শিক্ষা ও সভ্যতার যোগসূত্রে বাঙালি সংস্কৃতিতে এসেছে ব্যাপক পাশ্চাত্য প্রভাব। বাঙালি তা থেকেও নিয়েছে অনেককিছু । গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে বাঙালি সংস্কৃতি ।

 

অপসংস্কৃতি :

প্রেম ও সৌন্দর্য সংস্কৃতির মূল অশ্রয়। এ আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলেই সংস্কৃতি নাশ হয়। যে জিনিসগুলো অনুসরণ করলে প্রাণের বৃহত্তম দিক কলুষিত হয়, চেতনা লোপ পায় ও জীবন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয় তাই অপসংস্কৃতি যা জীবনকে বিকশিত না করে শ্রীহীনতার দিকে টেনে নেয় তাই অপসংস্কৃতি। শিক্ষা ও সভ্যতার অবনতি ঘটিয়ে যা মানুষকে আদর্শচ্যুত করে তাই অপসংস্কৃতি। আর এ অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে মানবজীবন বিপন্ন হয়। মোট কথা সংস্কৃতির বিকৃত রূপই হলো অপসংস্কৃতি যা সাংস্কৃতিক চেতনাকে নষ্ট করে মূল্যবোধকে ধ্বংস করে।

সংস্কৃতি যেখানে জীবন গড়ে অপসংস্কৃতি সেখানে জীবন নাশ করে। যা সামাজিকভাবে মুগ্ধকর, মোহনীয় এবং চিত্তাকর্ষক অথচ স্থায়ীভাবে তা কোনো ফল দান করে না এবং ধ্বংস ডেকে আনে তাই অপসংস্কৃতি। একটি উদাহরণ— বাঙালি মেয়ে বা নারীদের চিরন্তন সুন্দর পোশাক শাড়ি। কিন্তু বাঙালি নারী যদি উচ্চ শিক্ষিতা হয়ে শাড়ি পরিত্যাগ করে প্যান্ট শার্ট পরিধান করে, লম্বা চুল কেটে বব কাটিং করে, ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক, ভ্রূ তুলে ফেলে, চোখে আলগা পাপড়ি লাগায় ও হাই হিল পরে। ফ্যাশন শোর তালে হাঁটে একে অপসংস্কৃতি না বলে পারা যায় না । এরাই বঙ্গ ললনার আদর্শ বিচ্যুত হয়ে বিদেশীনি সেজে বাংলার শাশ্বত রমনীর আদর্শের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধ্বংস করে নারী সত্ত্বাকে কলঙ্কিত করছে। তাদের এ কর্ম ও চিন্তা চেতনাই অপসংস্কৃতি।

 

অপসংস্কৃতির উৎস :

বিদেশী সংস্কৃতি মাত্রই অপসংস্কৃতি নয়। কেননা সংস্কৃতি হলো মানুষের জীবন চেতনার পরিশ্রুত ও পরিশীলিত রূপ। তাই কোনো কিছুকে গ্রহণ করার আগে বিবেচনা করা উচিত। তা আমাদের জীবনের উন্নতিতে সহায়ক হবে কিনা, আমাদের চিন্তা চেতনাকে আরো উদার ও মহৎ করবে কিনা। যদি না করে তবে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। সংস্কৃতি চর্চার নানা দিক আছে; নানা পথ আছে। সাহিত্য, সঙ্গীত, নাচ ইতালি সংস্কৃতির অঙ্গ । সম্প্রদায়িকতা, হিংসা, কুটিলতা ইত্যাদি সংস্কৃতির পথে বাধাস্বরূপ। আর এগুলোই সংস্কৃতির মূল উৎস। যদি বিদেশী সংস্কৃতি আমাদেরকে বিপথে পরিচালিত না করে তবে তা অপসংস্কৃতি নয় ।

 

অপসংস্কৃতির আক্রমণ :

উনিশ শতকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উদ্দাম প্রবৃত্তির লীলা, ভোগবিলাসী উচ্ছৃঙ্খলতা বাঙালি সংস্কৃতির ওপর চড়াও হয়েছিল। সেগুলোকে বর্জন করে পাশ্চাত্য সভ্যতার সার্থক বহু দিককে গ্রহণ করার প্রেরণা ও আহ্বান জানিয়েছিলেন বাঙালি মনীষা। ফলে সংস্কৃতি হয়েছিল বিকশিত। বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতি আবার আমাদের ঘাড়ে চেপে বসতে চলেছে।

যে অবক্ষয়, স্থূলতা ও মাদক নেশা পাশ্চাত্য যুবসমাজকে গ্রাস করেছে আকাশ-সংস্কৃতির মাধ্যমে তা প্রভাব ফেলেছে এ দেশের তারুণ্যের ওপর। বিদেশীয়ানা ও পরিভোগপ্রবণ মানসিকতা আজ হয়ে উঠেছে আভিজাত্যের লক্ষণ। আমরা ভুলতে বসেছি সংস্কৃতির শক্তি নির্বিচার গ্রহণে নয়, বিচার-বিবেচনা বোধের সাহায্যে তাকে পরিশ্রুত করে তার স্বীয়করণে।

 

বাংলাদেশে অপসংস্কৃতির বিস্তার:

বাংলাদেশে অপসংস্কৃতির বিস্তার ও দাপট বর্তমানে মারাত্মক রূপ নিয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অসুন্দর ও অনাচার। সমাজজীবন থেকে সততা, সর্বজনীনতা, সুস্থতা যেন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গীতে, নৃত্যে প্রকট হয়ে উঠছে অসুস্থতা ও বিকৃতির তাণ্ডব লীলা,  ন্যাক্কারজনক মহড়া। দেশ ও জাতিতে সুস্থ ও সুন্দরের প্রতি অনুপ্রাণিত করার যে মহৎ সাধনা তা আজ চলচ্চিত্র জগৎ থেকে নির্বাসিত । আকাশ-সংস্কৃতি ব্যস্ত পাশ্চাত্যের স্তূপ, উগ্র, ভোগবিলাসী জীবনধারা এবং হিংস্রতা, ক্রুরতা, শঠতা, পৈশাচিকতায় ভরা কাহিনী পরিবেশনে। তারুণ্যকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে অশোভন, স্কুল ও বিকৃত জীবনের দিকে। স্থূলতাকে উস্কে দিয়ে বাণিজ্য করার হীন মনোবৃত্তির পেছনে কাজ করছে পুঁজিবাদী শোষক সংস্কৃতি।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তার শিকার। বাংলাদেশের লুটেরা পুঁজিবাদের সাথে রয়েছে এদের অদৃশ্য গাঁটছড়া। এদের লক্ষ্য সুকৌশলে মানুষকে অন্যায়, অসত্য, সংঘাত ও কুৎসিত পরিবেশকে বাস্তবতা বলে মেনে নেয়ার অপচেষ্টা। তাদের লক্ষ্য সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, স্বৈরতন্ত্র, সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অসামান্য ঐতিহ্যের অধিকারী তরুণ সমাজকে অনৈতিকতার পথে ঠেলে দেয়া। যেন তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, তারা অন্যায়-অবিচার, শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।

 

অপসংস্কৃতি রোধের উপায়:

আমাদের পুরো সমাজটাই আজ অপসংস্কৃতির বিষবাষ্পে উত্তপ্ত ও বিষময় হয়ে পড়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব জরুরি। কিন্তু কোনোকিছুই অতি অল্প সময়ে বা পরিকল্পনা মাফিক দূর করা যায় না। এর জন্য সময়, ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও প্রচেষ্টা থাকা চাই। অপসংস্কৃতির কালো থাবা থেকে আমাদের তরুণ সমাজকে উদ্ধার করতে হলে, সমাজ দেহ থেকে অপসংস্কৃতির প্রভাব দূর করতে হবে, সমাজকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। এর পরবর্তী বলিষ্ঠ ও যোগ্য নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে। সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি কি? এর সুফল কুফলই বা কি? এ সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ভালো করে। জানতে, বুঝতে হবে । এখানে অপসংস্কৃতি রোধের কতিপয় উপায় বা সুপারিশ উল্লেখ করা যেতে পারে।

-সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে।

– সকল প্রকার অবৈধ ব্যবসায়, কালোবাজারি ও অবৈধ অর্থের আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে। 

-সেন্সর বিহীন কোনো বিদেশী সংস্কৃতি আমদানি করা যাবে না।

-বিদেশী রীতিনীতির ভালোমন্দ যাচাই করে ভালোটুকু গ্রহণ, খারাপটুকু বর্জন। 

-শিক্ষিত মহলকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। 

-দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র প্রসার ও দেশীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিকাশ ও প্রসার। –

-সমাজে শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও তাদেরকে সচেতন করে তোলা ।

-অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবি, নাটক বা প্রোগ্রাম টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র মাধ্যমে প্রকাশ না করা ।

– আকাশ সংস্কৃতির সুনিয়ন্ত্রিত |

-সত্য ও সুন্দরকে আশ্রয় করে জীবন বর্ধনশীল অনুশাসনকে মেনে চলতে হবে। বিদেশী সংস্কৃতির মোহ ত্যাগ করতে হবে।

-ধর্মীয় গোঁড়ামী ও কুসংস্কার ত্যাগ করে মুক্তবুদ্ধি ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে হবে।

 

উপসংহার :

বিশ্বের মানবসমাজের যে কোনো সুকৃতিকে গ্রহণ করে নিজের সংস্কৃতির পরিপুষ্টি সাধন যে কোনো সংস্কৃতিবান জাতির লক্ষ্য। আমরাও বিশ্বের তাবৎ সাংস্কৃতিক সদর্থক মূল্যবোধকে গ্রহণ করব নিশ্চয়ই। কিন্তু সচেতন ও সতর্কভাবে সব আবিলতাকে বর্জন করতে হবে। তাই বর্তমানে স্কুল রুচিহী নৈতিকতা-বিনাশী অপসংস্কৃতির হাত থেকে তরুণ প্রজন্ম তথা সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব সচেতন সবার।

সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি | ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি | বাংলা রচনা সম্ভার

 

ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তানি শাসনামলে সংস্কৃতি ছিল আমাদের চেতনার অগ্নিমশাল, ছিল সংগ্রামের হাতিয়ার। আজ বিনোদনের নামে সেই সাংস্কৃতিক চেতনার অপমৃত্যু ঘটানোর ষড়যন্ত্র চলছে অদৃশ্যে। এ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে তরুণকে। আমাদের সব সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতার লক্ষ্য হবে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনোজাগতিক মুক্তি অর্জন। আমাদের সংস্কৃতিকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে অপসংস্কৃতির করাল থাবার হাত থেকে।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment