শুধাল পথিক সাগর হইতে কী অধিক ধনবান? | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

শুধাল পথিক সাগর হইতে কী অধিক ধনবান? | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , বাক্যের অলংকারের আড়ালে নিহিত সারসত্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। সহজ, সরল ও বাহুল্যবর্জিত বাক্য ব্যবহারে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রয়োজনানুসারে প্রাসঙ্গিকভাবে দৃষ্টান্ত, তথ্য ও উদ্ধৃতি ব্যবহার করতে হবে।

শুধাল পথিক সাগর হইতে কী অধিক ধনবান? জ্ঞানী কহে, ‘বাছা, তুষ্ট হৃদয় তারো চেয়ে গরীয়ান

আত্মতুষ্টিই মানবজীবনের সবচেয়ে চরম ও পরম পাওয়া। কেননা সন্তুষ্টিতে যে সুখ রয়েছে তার কোনো তুলনা নেই। রত্নাকর সাগরের চেয়েও পরিতুষ্ট হৃদয় অধিক সুখসম্পদে সমৃদ্ধ। পার্থিব এ-জীবনে চাওয়া পাওয়ার যেমন শেষ নেই, তেমনি তার অভাববোধও কোনোদিন শেষ হয় না। নতুন নতুন পাওয়া মানুষের মনে নতুন নতুন অভাববোধ জাগ্রত করে। এভাবে এক ধারাবাহিক অতৃপ্তি মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। সে আরও চায়। মহাসাগরের তলদেশে অসংখ্য রত্নরাজির অফুরন্ত ভাণ্ডার পর্যন্ত সেচে আনতে চায়। ফলে সে সম্পদের পাহাড় গড়লেও তাতে তার সন্তুষ্টি আসে না, সে তৃপ্তি পায় না।

 

শুধাল পথিক সাগর হইতে কী অধিক ধনবান? | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

সুখ তার কাছে কেবলই পলায়নপর সোনার হরিণ হয়ে তাকে হাতছানি দেয়, কিন্তু ধরা দেয় না। ধনসম্পদের প্রতি মানুষের অতিরিক্ত লোলুপতা মানুষকে যান্ত্রিক করে তোলে। সারাক্ষণ তার চিন্তা পড়ে থাকে সম্পদের স্তূপের পাশে। এই সম্পদ আহরণ নিয়েই তার যত ব্যস্ততা। জীবনের যে অপরাপর উদ্দেশ্য আছে, কর্তব্য আছে, সে তা ভুলে যায়। এভাবে পার্থিব তুচ্ছ বস্তুগত ধন আহরণ করতে গিয়ে সে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, খুন, ব্যভিচার ইত্যাদি জঘন্য কাজে লিপ্ত হতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। এ সব পাওয়া না পাওয়ার অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে সে কখনোই সুখের নাগাল পায় না। কারণ অতৃপ্তির বেদনা সারাক্ষণ তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারে।

 

শুধাল পথিক সাগর হইতে কী অধিক ধনবান? | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

সে বঞ্চিত হয় হৃদয়ের পরম চাওয়া ও পাওয়ার শান্তি থেকে। অপরপক্ষে, জ্ঞানীব্যক্তি অল্পতেই তুষ্ট থাকেন। অর্থসম্পদকে ঘিরে তাঁর আশা কম। চলার জন্যে যেটুকু প্রয়োজন ততটুকু পেলেই তিনি তৃপ্ত। অতৃপ্তির বেদনা তাঁকে কখনোই গ্রাস করতে পারে না। তাঁর এই আত্মতৃপ্তিই তাঁর মনোবল বাড়িয়ে দেয়। পার্থিব ধনসম্পদ দুপাশে পায়ে ঠেলে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যান জীবনের প্রকৃত গন্তব্যের দিকে— যেখানে রয়েছে মনস্তুষ্টির অপার সুখ। তাই মানুষকে পরিতৃপ্ত হৃদয়ের বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে।

ভাব-সম্প্রসারণ: শিক্ষাকে জাতির মেরুন্ড বলা হয়। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, নিক্ষরতা যে কোনো জাতির জন্যে হুমকিস্বরুপ। শিক্ষাই আলো, নিরক্ষরতা অন্ধকার। শিক্ষা ছাড়া- এ -পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই। নিরক্ষর ব্যক্তি তার নিরক্ষরতার জন্যে এ- পৃথিবীতে রূপ-রস-গন্ধ, ন্যায়- অন্যায়, লাভ-লোকসান, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ সবকিছু থেকে হয় বঞ্চিত, হয় প্রতারিত। তার জীবনটাই অভিশপ্ত ও ব্যর্থ।

মানবসন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই যথার্থ মানুষ হওয়া যায় না। মানুষকে যথার্থ মানুষ হতে হলে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আর এই জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার। শিক্ষার স্থান মানবজীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে উন্নতি অসম্ভব। পৃথিবীবেতে শিক্ষা বা জ্ঞানই একমাত্র সম্পদ যা জীবনের মতো মূল্যবান। জীবন ছাড়া দেহের যেমন মূল্য নেই, শিক্ষা ছাড়া তেমনি জীবনেরও কোনো মূল্য নেই। যে ব্রক্তি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তার মনুষ্যজীবন ব্যর্থ। তাকে চরম দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাতে হয় । জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত নয় বলে পদে পদে সে অন্ধকার দেখে।

চোখ থাকতেও সে অন্ধের মতো বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবনযাপন করে। আধুনিক বিশ্বে অক্ষরহীন ব্যক্তি প্রায় অচল । উন্নত জীচনের সঙ্গে তার পরিচয় থাকে না. উন্নত জীবন সম্পর্কে কোনো ধারণাও সে করতে পারে না। উন্নত পেশা লাভেও সে বঞ্চিত থাকে । দারিদ্রই তাদের চীবনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাাঁড়ায়। দারিদ্র ও দুঃখ-কষ্টে থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ সে জানে না। এই ধরনের মানুষ শুধু ধুঁকে মরে। নিক্ষরতার অভিশাপ বয়ে বেড়ানোই এদের একমাত্র নিয়তি। শুধু ব্রক্তি জীবনেই নয়, জাতীয় জীবনেও নিরক্ষরতার দুর্ভাগ্য নিয়ে আসে।

 

শুধাল পথিক সাগর হইতে কী অধিক ধনবান? | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

জাতি যদি নিরক্ষর হয় তবে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হয় িএবং নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার জাতীয় জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। নিরক্ষর জাত আধুনিক উন্নত জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং নানা সমস্যপায় জড়িয়ে পড়ে। বস্তুত ব্যক্তি ও জাতীয় চীবনের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়ার অন্য কোনো উপায় নেই। অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত নিরক্ষর জনগোষ্ঠী তাই জাতির জন্যে বোঝাস্বরুপ। শিক্ষা প্রত্যেক নর নারীর জন্যে ফরজ। শিক্ষা ব্রতীত কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ আজ নিক্ষরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তুরস্ক তার অগ্নি সন্তান কামাল পাশার নেতৃত্বে মাত্র বিশ বছরে শিক্ষার মান ৮০ ভাগে উন্নীত করেছিল।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইংল্যান্ড,আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানির মতো দেশগুলোর শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষিত। ফলে তার এত উন্নত। আমাদের দেশেও প্রাথমিক শিক্ষা বাধঃ্যতামূরক করা হয়েছে। বর্তমান যুগে নিক্ষরতার মানবজীবনের সবচাইতে চড় অভিশাপ। শিক্ষা -বিবর্জিত মানুষ জাতিকে পিছিয়ে দেয়, জাতিকে পণিত করে ন্যুজ, গর্বহীন, দীপ্তিহীন জনগোষ্ঠীতে। বস্তুত শিক্ষার প্রসারই পারে সব কুসংস্কার, জড়তা দূর করে জাতিকে গতিশীল করতে । তাই জাতীয় জীবেনে তথা একটি উন্নত দেশেরে জন্যে চাই শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। এজন্য বর্তমান বিশ্বে শিক্ষাকে উন্নয়নের পূর্বশর্ত বিবেচনা করা হয়ে হয়ে থাকে।

পৃথিবীতে মূর্খের কোনো স্থান নেই। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতির জন্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনে পর্যন্ত নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে সবাইকে মুক্ত করতে হবে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment