শীর্ষক সেমিনারের জন্য ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

শীর্ষক সেমিনারের জন্য ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা , জাতীয় ‘শিক্ষা সপ্তাহ’ উপলক্ষে ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারের জন্য ভাষণ |

শীর্ষক সেমিনারের জন্য ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

জাতীয় ‘শিক্ষা সপ্তাহ’ উপলক্ষে ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, মঞ্চে উপবিষ্ট সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী, সুধীবৃন্দ এবং প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এ বছর ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষা সপ্তাহ পালন করছেন। শিক্ষাসপ্তাহের অংশ হিসেবে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এখানে পালন করা হচ্ছে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ। সপ্তাহব্যাপী এ আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। সুধীবৃন্দ, দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সপ্তাহের গুরুত্ব বিশেষভাবে বিবেচ্য। শিক্ষাই উন্নতির চাবিকাঠি। জাতীয় জীবনের অগ্রগতির মূলমন্ত্র হল শিক্ষা।

 

শীর্ষক সেমিনারের জন্য ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

সমাজ ও যুগের চাহিদা, সমকালীন জ্ঞানের যে বিস্তার ঘটেছে তার দিকে লক্ষ রেখে শিক্ষার মানোন্নয়ন অপরিহার্য। বিচিত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য শিক্ষাপদ্ধতি থেকে সর্বোত্তম ফল লাভ করা। সেজন্য শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণার অন্ত নেই। নিত্য নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে শিক্ষাকে অর্থবহ করার উদ্যোগ চলছে। সুধী, আমাদের দেশে নানা রকম উদ্যোগ সত্ত্বেও শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সর্বোত্তম ফল লাভ করা যাচ্ছে না। বরং শিক্ষার মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হওয়ায় প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির ওপর মানুষের আস্থার অভাব ঘটছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে মানের ক্রমাবনতি রোধ না করতে পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে এবং প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা অর্থহীন বলে বিবেচিত হবে। বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষাকে বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বদলে দিতে হবে। নিতে হবে বাস্তবানুগ পদক্ষেপ। আমরা একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন জাতি হয়েও আজ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু ও কার্যকর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে পারি নি। এটা আমাদের অদূরদর্শিতা বা ব্যর্থতা কি না তা ভেবে দেখতে হবে। সুধীমণ্ডলী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষা সংস্কারে বেশকিছু গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেমন : স্কুল বেইজড এসেসমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের আচরণিক শিক্ষা প্রদানের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি সফল হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সামাজিকীকরণ ও ব্যক্তিত্ব উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে।

পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন করে এম.সি.কিউ অবজেকটিভ প্রশ্ন প্রণয়ন, সৃজনশীল পাঠক্রম ও প্রশ্নপ্রণয়ন, এবং গ্রেডিং সিস্টেম প্রবর্তন ইত্যাদি। কিন্তু এ সংস্কার প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। বিশেষত শিক্ষাস্তর ও শিক্ষাক্রমের কাঠামোগত সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। এজন্যে শিক্ষাকে একমুখী করা যেতে পারে। অর্থাৎ একই সিলেবাসে সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা। আরবি, ইংরেজি, বাংলা সব প্রতিষ্ঠানে একই সিলেবাস থাকলে শিক্ষার মানোন্নয়নে ভারসাম্য থাকবে। শিক্ষার মাধ্যম করতে হবে বাংলা ভাষা। তথ্য ও প্রযুক্তিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সুধী, বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতিতে আমরা ‘সাগর সেচা মানিকের’ মত অল্প কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী পাই— গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, তারা, এই শিক্ষা ব্যবস্থার অবদান নয়, তারা নিজ প্রতিভা কিংবা নিবিড় পারিবারিক, পরিচর্যার ফলে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার বিপুল বাধা অতিক্রম করে ফুল হয়ে ফুটছে। পরবর্তী কর্মজীবনে তাদের মেধা দেশের কল্যাণে নিবেদিত হতে দেখা যায় খুব সামান্যই। জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন মানুষের তালিকা যদি করা হয় তাতে এরকম মেধাবী খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু, শামসুর রাহমান, জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে রাজনীতি, সমাজসেবা, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসাবিদসহ যে কোনো উচ্চতর দক্ষতার ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করা হলে দেখা যাবে সেখানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ফসল এই মেধাবীদের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। এ অবস্থার অবসানের জন্য পরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার গুণগত মানের উন্নয়ন করা অপরিহার্য। সুধীবৃন্দ, ‘সবার জন্য শিক্ষা গ্লোবাল মনিটরিং রিপোর্ট ২০০৫’-এ বলা হয়েছে ‘শিক্ষার প্রাণ হল এর গুণগতমান, শিক্ষার্থীরা যা শেখে কীভাবে শেখে এবং কতটুকু লাভবান হয় এটা তাদের ওপর প্রভাব ফেলে।

এটা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে যে শিক্ষার্থীরা যে সব শিখনফল, মূল্যবোধ এবং দক্ষতা অর্জন করে যা তাদের সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালনে সহায়তা করে। প্রায় সব দেশের নীতিমালার এজেন্ডাতে এটি একটি বিষয়। অনেক সরকারই মৌলিক শিক্ষা প্রসারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারার জন্য যে জ্ঞান শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন তা আহরণের জন্য শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার চালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সম্মানিত সুধীবৃন্দ, শিক্ষার জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিক্ষার যথার্থ পরিবেশ সৃষ্টি করা। শিক্ষার গুণগত মানের যে অবনতি তার অন্যতম কারণ হল- ‘শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে বাধা। এছাড়াও শিক্ষার গুণগত মানের অবনতির কারণ অনেক। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে আসছে। কী করে কম পড়ে পরীক্ষায় পাস করা যাবে সেদিকে অনেকের দৃষ্টি। আজকালকার দিনে ডিগ্রি অর্জনের দিকেই সবার দৃষ্টি।

জ্ঞানের গভীরতা বা পরিধি বাড়ুক না বাড়ুক সেদিকে খেয়াল নেই। শিক্ষাঙ্গনে এখন সন্ত্রাসের রাজত্ব। অস্ত্রের ঝঙ্কারে শিহরিত হয় ছাত্রসমাজ। পরিণতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা বরাবর ঘটছে। সেশন জটের কুফল পড়ে শিক্ষার মানের ওপর। এছাড়া শিক্ষকদের অনেকেই শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার চেয়ে গৃহশিক্ষকতা অথবা কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারে অধিকতর তৎপর। বিদ্যা যেখানে অর্থের বিনিময়ে বেচাকেনা হয় সেখানে শিক্ষার মান বড় কথা নয়।

 

শীর্ষক সেমিনারের জন্য ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment