শিক্ষাদান সম্পর্কিত একটি ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

শিক্ষাদান সম্পর্কিত একটি ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা , ‘মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান সম্পর্কিত একটি ভাষণ ।

শিক্ষাদান সম্পর্কিত একটি ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

‘সর্বস্তরে মাতৃভাষা চর্চা’ শীর্ষক সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, মঞ্চে উপবিষ্ট সম্মানিত সুধীবৃন্দ, আসসালামুআলাইকুম । “নানান দেশের নানান ভাষা / বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?” মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা সহজ ও পূর্ণাঙ্গ হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘শিক্ষায় মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ স্বরূপ।’ অর্থাৎ মাতৃদুগ্ধ শিশুর পক্ষে যেমন পুষ্টিকর, বিদ্যাশিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষা তেমন সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। মাতৃভাষা প্রাণ-মনকে দেয় তৃপ্তি আর চিন্তা চেতনাকে দেয় দীপ্তি। তাই সর্বস্তরে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।

 

শিক্ষাদান সম্পর্কিত একটি ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

সুধীবৃন্দ, বঙ্গবাণী তথা মাতৃভাষার প্রতি হিংসা নয়, অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে যুগ যুগ ধরে বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে। বাংলা ভাষার যোগ্য মর্যাদা দানের জন্য আত্মবিসর্জন দিয়েছে এদেশের মানুষ। নানা মাত্রিকতায় ভালোবাসার সেই বিরল ত্যাগের পথ ধরেই বাংলা ভাষা তার ইতিহাসের সর্বকালের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যদার আসন লাভ করেছে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাদেশ। বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা, জাতীয় ভাষা ও মাতৃভাষা। তাই শিক্ষার পূর্ণতার জন্য চাই মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা। কেননা, মাতৃভাষায় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করা যত সহজ অন্য ভাষায় তত সহজ নয়। মাতৃভাষায় জ্ঞানানুশীলন ব্যতীত বিশ্বে কোনো জাতিই উন্নতি লাভ করতে পারে নি।

ইউরোপে যতদিন লাতিন ভাষা প্রচলিত ছিল, ততদিন সেখানকার জাতীয় সংস্কৃতির স্রোত ছিল রুদ্ধপ্রায়। যখন তারা লাতিন ছেড়ে আপন আপন মাতৃভাষা অবলম্বন তাই করে তখন থেকেই সেখানে সর্বাঙ্গীণ জাতীয় উন্নতি দেখা দেয়। তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব স্বীকার্য। মোন সব দেশেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সুধী, মাতৃভাষাই যে শিক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ বাহন— এ সম্মন্ধে আধুনিক পৃথিবীর কোনো অংশেই দ্বিমত নেই। বিশেষ করে ১৯৫৩ সালে ইউনেস্কো-র The Use of Vernacular Languages in Education’ নামক পুস্তকটি প্রকাশিত হওয়ার পর এ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে যে, ‘মাতৃভাষার মাধ্যমেই শিক্ষা লাভ’ যথার্থ হয়।

এজন্য উন্নত-অনুন্নত সব দেশই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষাকে যথাযথ স্থান দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপানের মতো উন্নত এবং নেপাল ভুটানের মতো অনুন্নত দেশের কথা বলা যায়। সব ধরনের বিদ্যা অর্জন তথা শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানের মাধ্যম তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষা। সমবেত সুধীবৃন্দ, শিক্ষা দানের অথবা গ্রহণের জন্যে সর্বস্তরে মাতৃভাষা চর্চার যে বিকল্প নেই, তা একটু চিন্তা করলেই সহজে বোধগম্য হয়। আমি এর আরো কতকগুলো কারণও উল্লেখ করছি— মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা সহজেই সে বিষয়টি আয়ত্ত করতে পারে। দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্যে তথা সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে মাতৃভাষার প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

 

শিক্ষাদান সম্পর্কিত একটি ভাষণ | ভাষণ | ভাষা ও শিক্ষা

 

মায়ের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে, দেশের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে যোগসূত্র গড়তে হলে প্রয়োজন মাতৃভাষার। সবচেয়ে বড় কথা মাতৃভাষা মায়ের ভাষা, স্বদেশি ভাষা— যে ভাষার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সর্বত্রই বাংলাভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বাংলাভাষার মাধ্যমে সরকারি অফিস-আদালতে নির্দেশাদি দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উচ্চতর শিক্ষা উপযোগী পুস্তকাদি বাংলাভাষায় রচনা ও অনুবাদের জন্যে পরিভাষাও রচিত হয়েছে। স্বদেশ ও মাতৃভাষার প্রতি শুদ্ধা যতই দৃঢ় হবে, ততই বিদেশি ভাষার সাহায্যে শিক্ষাদানের চিন্তা দূর হবে।

জীবন ও শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করার একমাত্র পথ হচ্ছে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান। শিক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ দান হচ্ছে ব্যক্তিসত্তার পূর্ণতা সাধন। আর এ জন্যে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানই হচ্ছে সর্বজনস্বীকৃত পদ্ধতি। শিক্ষার আনন্দ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে চাইলে এবং প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে চাইলে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তার অপরিহার্য। এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষাজীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনুধাবনের প্রতিটি মুহূর্তে স্মরণ রাখতে হবে, মধুকবির বিখ্যাত ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাকে, আর মনে মনে উচ্চারণ করতে হবে ।

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন; / তা সবে (অবোধ আমি!)

অবহেলা করি, পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ / পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।

শেষ করছি রবীন্দ্রনাথের একটি বক্তব্য ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলে। কবিগুরু লিখেছেন “ এতকাল ধরিয়া ইংরেজের স্কুলে পড়িতেছি, কিন্তু ছাত্রদশা তো কোনোমতেই ঘুচিল না। বিদ্যা বাহির হইতেই কেবল জমা করিলাম, ভিতর হইতে কিছু তো দিলাম না। কলসে কেবলই জল ভরিতে থাকিব, অথচ সে জল কোনোদিনই যথেষ্ট পরিমাণে দান-পানের উপযোগী ভরা হইবে না, এ যে বিষম বিপত্তি। ভয়ে ভয়ে ইংরেজের ডাক্তার ছাত্র পুঁথি মিলাইয়া ডাক্তারি করিয়া চলিল, কিন্তু শারীরবিদ্যায় বা চিকিৎসা-শাস্ত্রে একটা কোনো নূতন তত্ত্ব বা তথ্য যোগ করিল না।

ইংরেজের এঞ্জিনিয়ার ছাত্র সতর্কতার সহিত পুঁথি মিলাইয়া এঞ্জিনিয়ারি করিয়া পেন্সন লইতেছে, কিন্তু যন্ত্রতত্ত্বে বা যন্ত্র-উদ্ভাবনায় মনে রাখিবার মতো কিছুই করিতেছে না। আমাদের শিক্ষাকে আমাদের বাহন করিলাম না, শিক্ষাকে আমরা বহন করিয়াই চলিলাম।’ কেন এমন ঘটল, ‘ইংরেজি ইস্কুলে এত দীর্ঘ কাল দাগা বুলাইয়া কেন আমরা কোনো বিষয়ে জোরের সঙ্গে কৌলীন্য প্রকাশ করিতে পারিলাম না… ইহার কারণ, বিদ্যাটাও যেখান হইতে ধার করিয়া লইতেছি বুদ্ধিটাও সেখান হইতে ধার করা। কাজেই নিজের বিচার খাটাইয়া এ বিদ্যা তেজের সঙ্গে ব্যবহার করিতে ভরসা পাই না।’

ফলে এ শিক্ষা মুখস্থ, অজীর্ণ শিক্ষা থেকে যায়, তার সঙ্গে আমাদের জীবন, সমাজ ও প্রকৃতি-পরিবেশ, কোনো কিছুরই সংগতি স্থাপিত হয় না, তা আমাদের চিত্তে স্বাধীন কল্পনা, চিন্তা ও সৃষ্টি-আকাঙ্ক্ষার উদ্বোধন ঘটায় না। তাই মাতৃভাষার বিকল্প যে কোনো ভাষাই হতে পারে না, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।

[অথবা (‘বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক’) ভাষণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য]

সম্মানিত সুধীবৃন্দ,

আজকের এই মহতী আলোচনা সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বিষয়টি হল— ‘বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা’। আপনারা জানেন বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রের ভাষা বাংলা’। এভাবে সংবিধানে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা ভাষার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন, আইন ও বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ ভাষার অবস্থান, সীমানাবিস্তার, উপযোগিতা ও সীমাবদ্ধতা কোন পর্যায়ে কী হবে এর বিশদ ব্যাখ্যা সংবিধানে হয়তো থাকার কথা নয়। সংবিধান রাষ্ট্রের মূল আদর্শের দিকনির্দেশক।

সেদিক দিয়ে প্রজাতন্ত্রের ভাষা যে বাংলা এ বিষয়ে যথাযথভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা প্রবর্তন, বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নতকরণ— তার কি কোনো প্রতিফলন আমাদের জীবনে, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় সত্যিকারভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি? রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছরেরও অধিক কাল পরে এ ধরনের প্রশ্ন মনে জাগ্রত হওয়া বিস্ময়কর বৈকি ।

সুধী

১৯৭৪ সালের ৩০ মে ড. কুদরাত-এ-খুদা কর্তৃক পেশকৃত ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’-এ অধ্যায় ৪-এ ‘শিক্ষার মাধ্যম ও শিক্ষায় বিদেশি ভাষার স্থান’ অংশে বাংলা ভাষাকে ‘জাতীয় ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং দেশের চিন্তা ও সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এর অপরিহার্য প্রয়োজনের কথা ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে— ‘জাতীয় ভাষা হচ্ছে জাতির চিন্তা ও সংস্কৃতির আধার; অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধন এবং জাতীয়তাবোধ বিকাশের প্রধান উৎস।

এই ভাষার সাহায্যে দেশের সকল শ্রেণির জনগণ অনুভব, চিন্তা ও কাজ করতে সক্ষম হয়। জাতীয় ভাষার জাতিগত ঐক্যসাধনের সর্বপ্রথম মাধ্যম, জাতীয় মর্যাদাবোধের প্রধানতম প্রতীক এবং জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা প্রচারের শ্রেষ্ঠ বাহন। প্রত্যেক দেশে জাতীয় ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষাদানের নিমিত্ত ‘যথোচিত’ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ যাবৎ এই ‘যথোচিত’ ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রকাশিত হয়েছে। এ শিক্ষানীতিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলা ভাষার অবস্থান কী হবে এবং শিক্ষার মাধ্যম- হিসেবে কোন স্তর পর্যন্ত এ ভাষায় শিক্ষাদান করা যাবে বা দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে আন্তর্জাতিক কোন ভাষা কীভাবে ব্যবহৃত হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।

বর্তমান পৃথিবীতে ইংরেজি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক লোকের ব্যবহৃত ভাষা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তথ্য বিনিময় ও লেনদেনের ব্যাপারে ইংরেজির শ্রেষ্ঠত্ব অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি এমন মর্যাদা লাভ করেছে যাকে উপক্ষো করা চলে না। কিন্তু তাই বলে বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে নয়। নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে আপনারা আমার সঙ্গে একমত ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সুধীবৃন্দ,

আমরা জানি যে, ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য যে আন্দোলন সূচিত হয়েছিল তা বাঙালি ও জাতীয়তাবাদের জাগরণ ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। অথচ এই সুদীর্ঘ অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও আমরা এখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাষানীতি প্রণয়ন করতে পারি নি। ১৯৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারির আন্দোলন ও ভাষাশহীদদের ত্যাগ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

অথচ নানা বিষয়ে নীতি (যেমন— ওষুধনীতি, শ্রমনীতি, পাটনীতি ইত্যাদি) প্রণীত হলেও যে বাংলা ভাষা একদিকে মাতৃভাষা, রাষ্ট্রভাষা, জাতীয় ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যমের ভাষা এই বহুমাত্রিকতা রয়েছে যে ভাষার, তার কোনো ভাষানীতি বা Language Policy-এ পর্যন্ত প্রণীত হয় নি। তাই একুশ শতকের এই একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের দাবি সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই; রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা ভাষানীতি চাই । সুধীমণ্ডলী, এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি।

আরও দেখুন:

Leave a Comment