শব্দ দূষণ, উচ্চ মাত্রার শব্দ [ Essay on Sound Pollution ] অথবা, শব্দ দূষণের সমস্যা – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।
Table of Contents
শব্দ- দূষণ রচনার ভূমিকা:
দিন হোক কিংবা গভীর রাত,পৃথিবীর গান কখনও থেমে থাকে না।পৃথিবীর এই শব্দ বৈচিত্র্য কতই না সুন্দর!অথচ একদল কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষ সুন্দর শব্দকে অস্বাভাবিক রকম বাড়িয়ে উৎকট আওয়াজে পরিণত করে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের কাছে অসহ্য কষ্ট আর যন্ত্রণার কারণ করে তোলে।এই উচ্চ মাত্রার শব্দ স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর তাই এর দ্বারা পরিবেশ দূষিত হয়।এই প্রকার দূষণ হল শব্দের দূষণ।
শব্দদূষণ কী?
বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন উচ্চ শব্দ যখন মানুষের সহনশীলতার সীমা অতিক্রম করে স্বাস্থের জন্যে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় তখন তাকে শব্দ -দূষণ বলে।
২০ থেকে ২০,০০০ হার্জের কম বা বেশি শব্দ মানুষের শ্রবণ সীমার বাইরে। তাই মানুষের জন্য শব্দদূষণ প্রকৃতপক্ষে উক্ত সীমার অভ্যন্তরীণ তীব্রতর শব্দের দ্বারাই ঘটে থাকে।
শব্দদূষণের কারণ:
প্রতিদিন প্রতিনিয়ত শব্দ- দূষণ হয়েই চলেছে।শব্দদূষণ নানা ভাবে সৃষ্টি হতে পারে।সেগুলির মধ্যে অন্যতম উচ্চ ধ্বনিতে গাড়ির হর্ন,পূজা – উৎসব – বিয়ে – মেলা উপলক্ষ্যে বেশি সাউন্ড দিয়ে গান বাজানো,বাজি ফাটানো,বিমান হেলিকপ্টারের আওয়াজ,ট্রেনের আওয়াজ,মিছিল বা খেলার মাঠে একসাথে অনেক মানুষের কোলাহল, বোমা বিস্ফোরণ,কলকারখানায় বিভিন্ন যন্ত্রের বিকট শব্দ।এছাড়াও নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শব্দ -দূষণ হয়ে থাকে।যেমন বজ্রপাতের সময় প্রচন্ড শব্দ উৎপন্ন হয়।
শব্দদূষণের কুফল:
শব্দদূষণের কুফল নানাবিধ। শব্দদূষণ মানব স্বাস্থ্যের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। উচ্চগ্রাম শব্দ সহ্য শক্তির সীমা ছাড়িয়ে রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। অসুস্থ মানুষদের কষ্ট ও যন্ত্রণা বাড়িয়ে আরও অসুস্থ করে তোলে।হঠাৎ করে কোনো উচ্চ মাত্রার শব্দ কানে এলে তা স্থায়ী ভাবে শ্রবণ শক্তি নষ্ট করে দিতে পারে।
অনবরত ৬০ ডেসিবেল এর বেশি শব্দ শুনতে থাকলে তা মাথার পক্ষেও যথেষ্ট ক্ষতিকর,দীর্ঘক্ষণ বেশি সাউন্ড শুনলে মাথা ব্যাথার সৃষ্টি হয়।শব্দদূষণ স্বাধীন চিন্তা ভাবনার পথে বাঁধা তাই শব্দদূষণ ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি করে।
অপরিনত শিশুর চেতনার উপর আঘাত হানে ও তার সুস্থ মনকে বিপর্যস্ত করে।শব্দের দূষণ শুধু মানব সমাজের উপরই খারাপ প্রভাব ফেলে না, অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও শব্দ -দূষণ মারাত্মক ক্ষতিকর।বন্য পরিবেশে শব্দ -দূষণ শিকারের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়,পাখিদের প্রজননে অসুবিধা করে ইত্যাদি।
শব্দদূষণের প্রতিকার:
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শব্দ -দূষণ মানুষের দ্বারাই হয়ে থাকে।তাই আমাদের সকলের সচেতনতা আর সামান্য চেষ্টায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গুলো কমানোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা দরকার।যেমন উচ্চ শব্দের বাজি ফাটানো চলবেনা,বিকট শব্দ সৃষ্টি করে এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার কমাতে হবে।উৎসব অনুষ্ঠানে মাইকের সাউন্ড নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
ব্যাটারি চালিত গাড়ি শব্দ -দূষণ করেনা তাই আমরা যদি ব্যাটারি চালিত যানবাহন ব্যাবহার করি রাস্তার যানজটে শব্দদূষণ থেকে রেহায় পাওয়া যাবে।কলকারখানার যে সব যন্ত্রপাতি থেকে শব্দ- দূষণ হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়াও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের দেশে অনেক আইন রয়েছে,দেশের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে আমাদের সেই সমস্ত আইন মেনে চলা উচিত।এই সমস্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাবস্থা মাথায় রেখে আমরা যদি বিবেকসম্পন্ন সক্রিয় নাগরিকের ভূমিকা পালন করি তাহলে শব্দ- দূষণের সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান সম্ভব।
উপসংহার:
আইন আদালত কিংবা পুলিশি কড়াকড়ি করে সব সমস্যা সমাধান করা যায় না।সেজন্য জনগণের সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন।শব্দদূষণ হোক বা অন্য যেকোনো দূষণ নির্মূল হোক এটাই কাম্য।তাই জনগন সচেতন হলে অপরাধ নিঃসন্দেহে কমে যাবে।একই সঙ্গে সরকার,প্রশাসন,দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা আন্তরিক ভাবে অগ্রণী হবে এটাও কাম্য। সবার সমবেত চেষ্টায় দূষণ একদিন নির্মূল হবেই।
আরও পড়ুনঃ