লাল মখমলের জুড়িগাড়ি
লাল মখমলের জুড়িগাড়ি ( দি টেনটেড থ্রোন – এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ]
![লাল মখমলের জুড়িগাড়ি ( দি টেনটেড থ্রোন - এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ] 1 লাল মখমলের জুড়িগাড়ি ( দি টেনটেড থ্রোন - এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/empires-of-the-moghul-4-the-tainted-throne-alex-rutherford-186x300.jpg)
লাল মখমলের জুড়িগাড়ি
মেহেরুন্নিসা সম্রাটের একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষের লাগোয়া বারান্দায় একপ্রান্ত ঘেষে স্থাপিত রেশমের চাঁদোয়ার নিচে থেকে তাকিয়ে দেখে। প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে। দক্ষিণে খুররমের বিজয়ের সংবাদ এসে পৌঁছাবার পর থেকেই সে এই অন্তরঙ্গ উদ্যাপনের বিষয়টা পরিকল্পনা করছিলো। খাবারের বন্দোবস্ত ছিল চমৎকার, বিশেষ করে তাঁর নির্দেশে তাঁর পার্সী রাধুনির তৈরি করা পদগুলো–ডালিমের রসে ফোঁটান তিতিরের মাংস, আখরোট আর পেস্তা দিয়ে ঠাসা আস্ত ভেড়ার রোস্ট, জাফরান এবং শুকনো টক চেরী সহযোগে দিয়ে রান্না করা পোলাও–এবং মিষ্টি আঁশের, সুগন্ধিযুক্ত তরমুজ আর জাম যা জাহা-ঙ্গীরের পছন্দ। তাঁর আদেশে শেষের পদটা বরফ চূর্ণ পাত্রে পরিবেশন করার বদলে এমন একটা ট্রে’র উপরে পরিবেশিত হয় যার নিম্নভাগে মুক্তা আর হীরক খণ্ড বিছানো রয়েছে। সঙ্গীত শিল্পী, নর্তকী আর পায়রার ঝক ভালোমতই মনোরঞ্জন করেছে, কিন্তু এখন সবাই বিদায় নিয়েছে এবং তারা চারজন কেবল একাকী রয়েছে।
আরজুমান্দকে দেখতে দারুণ রূপসী দেখাচ্ছে, বারান্দার চারপাশের দেয়ালে আয়নাযুক্ত ক্ষুদ্র চোরকুঠরিতে রক্ষিত তেলের জ্বলন্ত প্রদীপের আলোয় আপন ভাস্তিকে খুটিয়ে দেখতে দেখতে মেহেরুন্নিসা ভাবে। জাহা-ঙ্গীর তাকে তার কন্যা জাহানারর ভূমিষ্ঠ হওয়াকে স্মরণীয় করে রাখতে রুবি আর পান্নার যে মুকুটটা দিয়েছিল সেটায় তাকে ভীষণ মানিয়েছে। সেইসাথে মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা। আরজুমান্দ আবারও গর্ভবতী হয়েছে এবং তাঁর ত্বক আর চুল যেন বাড়তি জেল্লা ছড়াচ্ছে। মেহেরুন্নিসা গোড়ালির কাছে ফুলে থাকা রেশমের চওড়া লাল পাজামার উপরে তাঁর সংক্ষিপ্ত আঁটসাট চোলির কারণে নিরাভরণ নিজের মসৃণ, সমতল উদরের দিকে চোখ নামিয়ে তাকায়। সে প্রতি মাসে সন্তান ধারণের লক্ষণের জন্য আশা করে থাকে এবং প্রতি মাসে তাকে হতাশ হতে হয়। তার খুব ইচ্ছে জাহা-ঙ্গীরের ঔরসে সন্তানের জন্ম দেয়া–বিশেষ করে পুত্রসন্তান। সে তাকে তাহলে আরো বেশি ভালোবাসতে ব্যাপারটা সেরকম নয়, কিন্তু এটা দীর্ঘ সময়ের জন্য তাঁদের আরো কাছাকাছি বেঁধে রাখবে এবং অন্যদের চোখে তার মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দেবে। মোগল রাজবংশের সাথে তাঁর নিজের রক্তের মিশ্রণ এবং পুরুষানুক্রমে সেটা উত্তরপুরুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে চিন্তা করতেই কেমন ভালো লাগে। কিন্তু সময় শেষ হয়ে আসছে। তার দেহ যদিও এখনও সুঠাম আর হালকা পাতলা রয়েছে কিন্তু গতমাসে সাল্লা তার দীঘল কালো চুলের বেণীর মাঝে একটা পাকা চুল খুঁজে পেয়েছে। প্রথমবারের মত সেটা পাওয়া গেলেও নিশ্চিতভাবেই এটা শেষবার নয়।
তাঁর পরিবারের অন্য আরেকজন অল্পবয়সী সদস্য–আরজুমান্দ যে এরচেয়ে বরং সম্রাটদের জননী আর পিতামহী হতে পারে। মেহেরুন্নিসা ভোজসভা শুরু হবার সময় তাকে হাতির দাঁতের বোতামযুক্ত, সাদা রেশমের মুক্তাখচিত যে জোব্বা উপহার দিয়েছে তাঁর ভাস্তি এই মুহূর্তে সেটা খুররমকে দেখাচ্ছে। সে তার পাশে উপবিষ্ট জাহা-ঙ্গীরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে তাকে নিজের পুত্র আর আরজুমান্দের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার অভিব্যক্তিতে পরিষ্কার গর্বের ছাপ ফুটে রয়েছে। সেদিনই সন্ধ্যাবেলা তিনি তাকে বলেছিলেন, দাক্ষিণাত্যে পারভেজের পরিবর্তে খুররমকে পাঠাবার তোমার পরামর্শটা ঠিক ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম না সে এমন দায়িত্বের যোগ্য হয়েছে কিনা কিন্তু আমার চোখে যা ধরা পড়েনি তুমি সেটা দেখতে পেয়েছিলে–যে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সাহসিকতার সাথে সাথে তাঁর সেই বুদ্ধিও রয়েছে।’
কিন্তু খুররম এখন যখন তাঁর আব্বাজানের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে কিছু একটা বলে আর জাহা-ঙ্গীর হাসি মুখে উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়, সহসা একটা সন্দেহ তাঁর মনে উঁকি দিয়ে যায়। তাঁর পরিবারের উপকারের জন্য–সেই সাথে তাঁর নিজের ভাস্তির সুখের কথা বিবেচনা করে–খুররমের সাথে আরজুমান্দের বিয়ের ব্যাপারটাকে বাস্তবতা দিতে সে তার ক্ষমতায় যতটুকু সম্ভব সব কিছুই করেছে। তাঁর মনে একটা বিষয়ে কখনও কোনো ধরনের সন্দেহ ছিল না যে খুররম যদি তার আব্বাজানকে অভিভূত করতে পারে সেটা তার নিজের পরিবারের জন্য মঙ্গলজনক হবে–এজন্যই সে জাহা-ঙ্গীরকে পরামর্শ দিয়েছিল তাকে দাক্ষিণাত্যের নেতৃত্ব দিতে। কিন্তু যদি তাঁর নিজের স্বার্থ আর তার বৃহত্তর পরিবারের স্বার্থ পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যায়? খুররম কতটা সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করবে, জাহা-ঙ্গীর কতটা মুগ্ধ হবে এর মাত্রা সে আন্দাজ করতে পারেনি… সেদিনই দুপুরের দিকে দেওয়ানি আমের সিংহাসনের একপাশে অবস্থিত জালি পর্দার পেছন থেকে সে যখন তাকিয়ে ছিল তখন জাহা-ঙ্গীরকে নিজের সিংহাসন থেকে নেমে এসে নিজ সন্তানের মাথা মোহর আর রত্নপাথর বর্ষিত করতে দেখে সে ভীষণ অবাক হয়েছে। তিনি তাকে একবারও বলেননি যে এমন। একটা পদক্ষেপের পরিকল্পনা তিনি করছেন, এটাও বলেননি যে তিনি এরপরই, ঠিক যেমনটা তিনি করেছেন, খুররমকে যুদ্ধের সময় লাল তাবু ব্যবহারের অধিকার আর সেই সাথে কিসার ফিরোজের শাসকের উপাধি দান করবেন–দুটো বিষয় পরিষ্কার ইঙ্গিত করছে যে তিনি তাকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসাবে ঘোষণা করতে ইচ্ছুক।
খুররম এখন যখন দরবারে ফিরে এসেছে জাহা-ঙ্গীর তাকে সম্ভবত সাম্রাজ্য পরিচালনার কাজে আরো বেশি করে নিয়োজিত করতে চাইবেন। খুররম, তাঁর চেয়ে হয়ত, তাঁর কাছে বেশি বিশ্বস্ত হয়ে উঠবে যার প্রতি তিনি স্বাভাবিকভাবেই বেশি মনোযোগ দেবেন। জাহা-ঙ্গীরকে, সম্রাট হিসাবে, নিয়মিত অনেক দায়িত্ব পালন আর তত্ত্বাবধান করতে হয়। সে নিশ্চিত, তাঁর উদ্যম আর স্বচ্ছ চিন্তাশক্তির কারণে জাহা-ঙ্গীরের এই বোঝার অনেকটাই সে পালন করতে সক্ষম–বস্তুতপক্ষে সে ইতিমধ্যেই তাঁর কাছে এর প্রমাণ রাখতে শুরু করেছে। তিনি মাত্র কয়েক মাস পূর্বে কাবুলের উত্তরপশ্চিম দিকে ভ্রমণরত বণিকদের শিবিরে রাতের বেলা ডাকাতদের আক্রমণের ব্যাপারে তাঁদের অভিযোগের ব্যাপারে তাকে বলেছিলেন। তাঁর পরামর্শ তাকে এতটাই প্রীত করেছিল যে তিনি ট্রাঙ্ক রুট বরাবর আরো অনেকগুলো রাজকীয় সরাইখানা নির্মাণের আদেশ দেন যেখানে পর্যটকের দল নিজেদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় এবং তাদের পণ্য আর পশুর জন্য সুরক্ষিত আস্তাবল নিশ্চিতভাবে খুঁজে পাবে।
এমন নয় যে সে কেবল এসব গতানুগতিক বিষয়েই সাহায্য করতে পারবে। সে ইতিমধ্যে জটিল সিদ্ধান্তের কারণে জাহা-ঙ্গীরের উপরে চেপে বসা দুশ্চিন্তার ভার উপলব্ধি করতে পেরেছে। সে যদি সাথে সাথে আবেগ কিংবা প্রণোদনার বশে কাজ না করে–যার জন্য সে প্রায়শই অনুতপ্ত হয়–সে প্রায়ই সেগুলো ফেলে রাখে, এবং বিশেষ করে সে যখন হতবুদ্ধি বা উদ্বিগ্ন থাকে মনকে প্রশান্ত করতে সে সামান্য আফিম আর সুরার আশ্রয় নেয়। সে তাঁর আব্বাজানের কাছে এবং জালি পর্দার পেছন থেকে জাহা-ঙ্গীরের উপদেষ্টাদের বৈঠকের আলোচনা শুনে রাজকীয় দপ্তর পরিচালনার ব্যাপারে অনেক কিছু জেনেছে বলে দায়িত্ব ভাগাভাগি করতে পারবে… এবং তাঁর কাছে এটা কেবল একটা দায়িত্ব না বরং গভীর সন্তুষ্টির বিষয়।
জাহা-ঙ্গীরের উচ্চগ্রামের হাসিতে তাঁর ভাবনার জাল ছিন্ন হয়। খুররম নিশ্চয়ই তাকে আমোদিত করার মত কিছু একটা বলেছে এবং তিনি তাঁর পুত্রের কাঁধ চাপড়ে দিচ্ছেন। খালি চোখে দেখলে একটা সুখী পারিবারিক দৃশ্য বলে মনে হবে কিন্তু মেহেরুন্নিসার কাছে সহসাই এই দৃশ্যটা অনেক অশুভ কিছু একটা সম্ভাবনা উপস্থাপন করে এবং অনেক আগেই এটা বুঝতে না পারার জন্য সে নিজেরই উপরেই ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে। তাকে জীবনে আরো একবার অপেক্ষা আর পর্যবেক্ষণ করতে হবে কিন্তু নিজের স্বার্থের ব্যাপারে তাকে সব চেয়ে বেশি দৃষ্টি রাখতে হবে। জাহা-ঙ্গীরের কাছে অন্য কেউ না বরং সে নিজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ জাহা-ঙ্গীর যেন সেটা বুঝতে পারে তাকে এটা প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে।
*
‘জাহাপনা, ইংল্যান্ড থেকে আগত দূত দেওয়ানি আমের বাইরে অপেক্ষা করছেন,’ শরতের এক পড়ন্ত বিকেলবেলা মেহেরুন্নিসার সাথে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষে বসে থাকার সময় কর্চি এসে বলে।
‘চমৎকার। আমার পরিচারকদের আসতে বলো। তাঁর পরিচারকেরা তাকে সজ্জিত করার কাজ শুরু করলে সে মুচকি হাসে। সে এই বৈঠকের জন্য খানিকটা কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করেছিল। মোগল রাজদরবারে আট সপ্তাহ আগে সংবাদ আসে যে সুরাট বন্দরে ইংল্যান্ড থেকে একজন দূত এসেছে। আগ্রা অভিমুখে দূত মহাশয়ের অগ্রসর হবার গতি মন্থর হওয়ায় তিনি উপহার সামগ্রী আগেই প্রেরণ করেছিলেন। উপহার সামগ্রীগুলোর একটা, উঁচু চাকার উপরে প্রকাণ্ড তরমুজের আকৃতির গিল্টি করা একটা অদ্ভুত দর্শন জুড়ি গাড়ি–জাহা-ঙ্গীর আগে কখনও এমন কিছু দেখেনি–তাকে ভীষণ প্রীত করে যদিও লাল মখমলে ছত্রাকের দাগ রয়েছে–নিঃসন্দেহে প্রত্যন্ত দ্বীপ যেখান থেকে দূতমহাশয় লবণাক্ত সাতসেঁতে জাহাজে দীর্ঘ ভ্রমণ শুরু করেছিলেন তার ফলে এমনটা হয়েছে। জুড়িগাড়িটা মেহেরুন্নিসাকেও পুলকিত করেছে এবং সে তাকে সেটা উপহার দিয়ে নিজের কারিগরদের নির্দেশ দিয়েছে হুবহু আরেকটা জুড়িগাড়ি তার জন্য তৈরি করতে। কিন্তু তাকে তার আগে জানতে হবে গাড়িটা কীভাবে টেনে নেয়া হবে–ষাড় নাকি ঘোড়া দিয়ে, আর কীভাবে তাঁদের গাড়ির সাথে জুড়ে দেয়া আর নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
‘এই দূতমহাশয় কি অভিপ্রায় বলে আপনার মনে হয়?’ জাহা-ঙ্গীর একটা লম্বা আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে দেখার সময় মেহেরুন্নিসা তাকে জিজ্ঞেস করে।
‘আমার ধারণা, পর্তুগিজ আর ডাচদের মত বানিজ্যের সুবিধা। আমি সুরাটে তার দেশের লোকদের একটা ছোট ঘাঁটি স্থাপন করার এবং কয়েকটা মৌলিক দ্রব্য রপ্তানির অনুমতি দেয়ার পর থেকেই তাঁরা নীল, কেলিকোর সাথে সাথে মূল্যবান রত্নপাথর আর মুক্তার মত দামি সামগ্রী কেনাবেচা করার অধিকারের জন্য আমার কাছে অনুরোধ করছে। আমি তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে দেরি করছিলাম, তাদের দেশের শাসক এখন তাই তাদের পক্ষ সমর্থন করার জন্য কাউকে প্রেরণ করেছেন।
‘তাঁদের প্রস্তাবে দ্রুত রাজি না হয়ে আপনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি যা শুনেছি তাতে মনে হয় এইসব ভিনদেশী বণিকেরা ক্রমশ ধৃষ্ট, ঝগড়াটে হয়ে উঠছে এবং আমাদের রাস্তায় নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে আর স্থানীয় লোকদের অপমান করছে।
‘বাণিজ্য সম্পদ বৃদ্ধি করে। কিন্তু আমি তোমার সাথে একমত। তাঁদের অবশ্যই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
জাহা-ঙ্গীর পনের মিনিট পরে দর্শনার্থীদের জন্য নির্ধারিত দেওয়ানি আমে তূর্যধ্বনির মাঝে প্রবেশ করে এবং সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়, তার প্রধান উপদেষ্টা আর অমাত্যরা বেদীর নিচে উভয়পাশে দলবদ্ধভাবে এবং খুররম সম্রাটের খুব নিকটের সম্মানজনক স্থানে অবস্থান নেয়।
তূর্যধ্বনি আর দামামার গুরুগম্ভীর শব্দের আরেকদফা সুতীব্র ঝঙ্কার সহযোগে দূতমহাশয়ের আগমন ঘোষিত হয়। জাহা-ঙ্গীর উচ্চস্বরে হেসে ওঠা থেকে অনেক কষ্টে নিজেকে নিবৃত্ত করে। একটা দীর্ঘদেহী অবয়ব যার গাঢ় বেগুনী রঙের সংক্ষিপ্ত, ঢোলা পাজামার মত দেখতে পোষাকটা, চিরে ফালা ফালা করা হয়েছে নিচের উজ্জ্বল লাল কাপড় প্রকাশ করতে এবং সেটা আবার হাঁটুর উপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা নিচে তাঁর ভীষণ সরু দুটো পা ধুসর একটা উপকরণ দিয়ে আবৃত ধীরে ধীরে বেদীর দিকে এগিয়ে আসে। ব্রোকেডের একটা উজ্জ্বল হলুদ রঙের আঁটসাট জ্যাকেট কুঁচকির ঠিক উপরে শক্তভাবে সুচ্যগ্র হয়ে শেষ হতে তার চূড়ান্ত কৃশতার বিষয়টাকে গুরুত্ব প্রদান করেছে। লোকটা জাহা-ঙ্গীরের কাছাকাছি আসতে তাঁর বাকান পালকশোভিত উঁচু কিনারাযুক্ত টুপির নিচে একটা টকটকে লাল মুখ দেখতে পায়–ধুসর ত্বকের উপরে সূর্যের আলোর প্রভাব?–তার গলার চারপাশে শক্ত দেখতে সাদা উপাদানের তৈরি একটা চওড়া বৃত্ত সবকিছুকে আরও বেশি চমকপ্রদ করে তুলেছে। তার কাঁধের উপরে পড়ে থাকা খয়েরী চুল পাতলা হয়ে এসেছে কিন্তু সেটা পুষিয়ে দিয়েছে কোঁকড়ানো গোফের বাহার। অদ্ভুতদর্শন এই লোকটার বয়স আন্দাজ করা কঠিন কিন্তু জাহা-ঙ্গীর অনুমান করে লোকটার বয়স ত্রিশের কোটার শেষের দিকে।
তার পেছনে রয়েছে অল্পবয়সী এক তরুণ-বলা যায় সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ–একই রীতির পোষাক পরিহিত কেবল একটাই পার্থক্য তাঁর কাপড়গুলো সব গাঢ় খয়েরী রঙের কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি আর তাঁর মাথায় টুপি নেই। মধ্যম উচ্চতার লোকটার মাথার চুলের রঙ বার্লির মত এবং বার্থোলোমিউ হকিন্সের মত নীল চোখ–যে অতিসম্প্রতি সদ্য লাভ সম্পদে বোঝাই সিন্দুক নিয়ে ইংল্যান্ড ফিরে গিয়েছে জাহা-ঙ্গীর আক্ষেপ করে–যা এই মুহূর্তে সোনালী সিংহাসনে অধিষ্ঠিত তাঁর নিজের দিকে খানিকটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। তার ডানহাতে রয়েছে লম্বা পায়ের, ধুসর চামড়ার একটা কুকুরের গলায় বাঁধা গলবন্ধনীর সাথে সংযুক্ত দড়ি, কুকুরটা এতটাই শুকনো দেখতে যে জাহা-ঙ্গীর তার পাজরের প্রতিটা হাড় আলাদা করে গুনতে পারে। দূতমহাশয় থেকে দেখতে খুব একটা আলাদা নয় জন্তুটা।
![লাল মখমলের জুড়িগাড়ি ( দি টেনটেড থ্রোন - এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ] 2 বালিতে রক্তের দাগ ( দি টেনটেড থ্রোন - এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/13649887._UY630_SR1200630_-300x158.jpg)
জাহা-ঙ্গীরের উজির মাজিদ খানের কাছ থেকে ইঙ্গিত পেয়ে বেদী থেকে দশফিট দূরে দূতমহাশয় দাঁড়িয়ে যায় এবং মাথার টুপি নামিয়ে নিয়ে সেটা ডানবাহুর নিচে গুঁজে দিয়ে একটা সরু পা নিজের সামনে সোজা বাড়িয়ে দিয়ে, অন্য পা ভাঁজ করে এবং কোমর থেকে দেহের উপরের অংশ সামনের দিকে নত করার সময় ডান হাত বৃত্তাকারে আন্দোলিত করে। বিচিত্র একটা অভিবাদন রীতি, এবং তরুণ লোকটা জাহা-ঙ্গীরের ধারণা যে নিশ্চিতভাবে তার কর্চি একই ভাবে অভিবাদন জানায়। সে হাত নেড়ে তার পণ্ডিতদের একজনকে যে দোভাষীর কাজ চালাবার মত চলনসই ইংরেজি জানে সামনে এগিয়ে যেতে বলবে যখন দূতমহাশয় নিজেই ভাঙা ভাঙা কিন্তু তারপরেও স্পষ্টতই বোধগম্য ভঙ্গিতে পার্সীতে কথা বলতে শুরু করে।
‘মহামান্য সম্রাট, অধমের নাম স্যার টমাস রো। আমি আমার নিজের রাজা, ইংল্যান্ডের প্রথম আর স্কটল্যাণ্ডের ষষ্ঠ জেমসের কাছ থেকে আপনার জন্য শুভেচ্ছা বয়ে নিয়ে এসেছি। শাসক হিসাবে আপনার মহত্বে কথা শুনে তিনি তার দেশ থেকে আপনাকে কিছু উপহার দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আমি ইতিমধ্যেই এখানে আসবার আগেই কিছু উপহার পাঠিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি নিজে আরো নিয়ে এসেছি–চিত্রকর্ম, রূপার আয়না, চমৎকার পাকা চামড়া, পরিচিত পৃথিবীর মানচিত্র, আমাদের দ্বীপের উত্তরে প্রস্তুতকৃত একটা পানীয় আমরা যাকে হুইস্কি বলি, চারটা চমৎকার ঘোড়া দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রার ধকল তাঁরা খানিকটা সামলে নেয়ার পরে যা আমি নিজে মহামান্য সম্রাটকে উপহার দেব এবং আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি তারা আপনার তারিফের যোগ্য এবং আমাদের দেশের এই শিকারী কুকুরটা–আমরা ইংরেজিতে একে গ্ৰেহাউন্ড বলি। পৃথিবীতে এর চেয়ে দ্রুতগামী কুকুর আর হয় না। রো এবার তরুণের দিকে ঘুরে তাকায়, যে ঠিক তার ডান কাঁধের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অল্পবয়সী লোকটা এবার সামনে এগিয়ে আসে এবং কুকুরের গলা থেকে দড়িটা খুলে নেয়। জাহা-ঙ্গীর ভেবেছিল ভিনদেশী সারমেয় বুঝি দৌড়ে পালাবে কিন্তু এই মুহূর্তের জন্য নিশ্চয়ই তাকে যত্নের সাথে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। জন্তুটা কয়েক পা সামনে এগিয়ে এসে নিজের ডান থাবা অবিকল রোয়ের মত সামনে বাড়িয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে, দূতমহাশয়ের নিজস্ব অভিবাদন রীতি অনুকরণ করে।
‘আমার দরবারে আপনাকে স্বাগতম। আপনার প্রভুকে তার উপহার সামগ্রীর জন্য আমার তরফ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাবেন। জাহা-ঙ্গীর তাঁর কচিদের একজনকে কুকুরটা সরিয়ে নেয়ার জন্য ইঙ্গিত করে। আমি বিশ্বাস করি দূর্গে আপনার বাসস্থান আরামদায়ক হবে এবং আগামী দিনগুলোতে আশা করি আপনার সাথে নানা বিষয়ে আরো আলোচনা হবে।
রোকে চোখেমুখে খানিকটা বিভ্রান্তি ফুটে উঠলে অল্পবয়সী লোকটা সামনে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে তার কানে কিছু একটা বলে। দূতমহাশয়কে সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে দেখে সে বলে, জাহাপনা, আমার প্রভুকে মার্জনা করবেন। তিনি সামান্য পার্সী শিখেছেন, আপনাকে সম্বোধন করার জন্য যা যথেষ্ট–এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করে শিখবেন বলে আশা রাখেন–কিন্তু ভাষাটা তিনি এখনও খুব সামান্যই বুঝতে পারেন। আমি তার দোভাষি এবং পথসঙ্গী। অধমের নাম নিকোলাস ব্যালেনটাইন। দূতমহাশয় আপনার সহৃদয়তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা সত্যিই আরামদায়ক। তিনি আপনার সাথে আলোচনার জন্য তিনি অপেক্ষা করবেন যখন তিনি আশা করেন আপনার বিশাল সাম্রাজ্যের সাথে আমাদের বাণিজ্যের অভিপ্রায় আপনি সহানুভূতির দৃষ্টিতে বিবেচনা করবেন। তার ইচ্ছা আমি আপনাকে বলি যে আমরা কেবল আমাদের নিজেদের পণ্যই আপনার কাছে বিক্রি করবো না সেই সাথে আমাদের জাহাজ আপনার সাম্রাজ্য থেকে হজ্জযাত্রীদের আরবেও পৌঁছে দিতে পারবে। আমরা দ্বীপের অধিবাসী আর আমাদের জাহাজ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়। জাহাজগুলো বিশাল সমুদ্র অনায়াসে অতিক্রম করতে সক্ষম এবং আমাদের কামানগুলো অন্য যেকোনো জাতির জাহাজ ধ্বংস করতে পারদর্শী। জাঁহাপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, গত বছরের কথা, আপনার উপকূলের কাছেই পর্তুগিজরা ইংরেজদের দুটো জাহাজ আক্রমণ করার মত ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছিল। আমরা তাদের ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।
জাহা-ঙ্গীর বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে–ভিনদেশি যুবকের মুখে প্রায় নিখুঁত ফার্সী ভাষা শুনেই কেবল নয় সেই সাথে স্পষ্টভাবে প্রস্তাব পেশ করতে দেখে সে বিস্মিত হয়েছে। একজন মোঘল–বা বস্তুতপক্ষে একজন পার্সী–প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে আরও অনেকবেশি সময় গ্রহণ করতো। কিন্তু ইংরেজ রাজা তার উপহার সামগ্রী ছাড়াও যে আরও কিছু সহায়তা করতে আগ্রহী সেটা স্পষ্ট হয়ে ভালোই হয়েছে। মুসলিম হজ্জযাত্রীদের গুজরাতের বন্দর থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে তাদের যাত্রার প্রথম পর্যায়ে সাগর অতিক্রম করে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে এতদিন পর্যন্ত আরব আর পর্তুগিজ জাহাজগুলো নিজেদের ভিতরে কার্যত একচেটিয়া ব্যবসা করে এসেছে। আরব জাহাজগুলো অধিকাংশ সময়েই গভীর সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী হয় না–মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই তিন যাত্রী নিয়ে একটা জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যেতে জাহাজের সবার সলিল সমাধি ঘটেছে। আর আরব নাবিকেরা হজ্জযাত্রীদের জাহাজ আক্রমণকারী জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারে না।
পর্তুজিগদের বেলায়, তাঁরা তাঁদের যাত্রীদের কাছে তাঁদের প্রভুর প্রতিকৃতি অঙ্কিত–যিশু নামে শ্মশ্রুমণ্ডিত একজন অল্পবয়সী লোক এবং ধুসর মুখের এক কুমারী রাণি যার নাম মেরী–যে অনুমতিপত্র বিক্রি করে জাহা-ঙ্গীর সেটা দেখেছে। পর্তুগিজ জাহাজগুলো শক্তিশালী আর তাঁদের সশস্ত্র নাবিকেরা জলদস্যুদের ভালোমতই প্রতিরোধ করতে পারে কিন্তু পর্তুগিজরা গোয়ায় তাঁদের বাণিজ্য কেন্দ্রে ক্রমশ আরো বেশি উদ্ধত হয়ে উঠছে। তাদের পুরোহিতেরা হিন্দু আর মুসলমান জনসাধারণ উভয়ের ভিতরেই আগ্রাসী ভঙ্গিতে ধর্মান্তরিতকরণের প্রয়াস চালাচ্ছে এমনকি মক্কায় যাবার জন্য জাহাজের প্রতিক্ষারত হজ্জযাত্রীদেরও তাঁরা প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছে যে তাদের বিশ্বাস ভ্রান্ত। পর্তুগিজরা সেই সাথে যাত্রীদের কাছ থেকে পরিবহণের জন্য ক্রমশ বেশি অর্থ দাবি করছে। ইংরেজ রাজা দরবারে একজন দূত প্রেরণ করেছেন এই বাস্তবতা হয়ত তাঁদের নিজেদের দাবির ব্যাপারে নমনীয় হতে সাহায্য করবে।
‘আপনার প্রভুকে জানাবেন আমি তার প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবো এবং সেই জন্য আগামীতে আমরা আলোচনা করবো, জাহা-ঙ্গীর বলে। সে বেদীর ডানপাশে দাঁড়িয়ে থাকা তূর্যবাদকের উদ্দেশ্যে হাল্কা মাথা নাড়ে এবং লোকটা সাথে তার ব্রোঞ্জের তৈরি বাদ্যযন্ত্র ঠোঁটে রেখে সাক্ষাৎকার পর্ব সমাপ্তির ইঙ্গিতবাহী স্বল্পস্থায়ী একটা আওয়াজ করে। জাহা-ঙ্গীর উঠে দাঁড়ালে, দূতমহাশয় পুনরায় পা লম্বা করে দিয়ে নিজস্ব রীতিতে সুনির্মিত ভঙ্গিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে। সে যখন পুনরায় সোজা হয়ে দাঁড়ায় তার লাল মুখ আরও লালচে দেখায় আর তার ব্রোকেডের হলুদ জ্যাকেটের বাহুর নিচে ঘামের গাঢ় বৃত্ত সৃষ্টি হয়। লোকটা কি কোনো কারণে বিচলিত হয়ে রয়েছে নাকি এটা কেবল হিন্দুস্তানের অস্বাভাবিক গরমের ফল?
*
‘আরও ওয়াইন নিয়ে এসো, জাহা-ঙ্গীর তার কচিকে আদেশ দেয়। রো’র মুখ ঘামে ভিজে চকচক করছে, মাংসপেশী শিথিল–গত তিন ঘন্টা ধরে সে ক্রমাগতভাবে যে বিপুলপরিমাণ সুরা নিঃশেষ করেছে তার ফল। জাহাঙ্গীর পান করার এমন ক্ষমতাসম্পন্ন লোক কখনও দেখেনি, কিন্তু ওয়াইন রো’র রসিকত বোধ ভোঁতা না করে বরং উল্টোই করে বলে মনে হয়। সে যত বেশি পান করে জাহাঙ্গীর তত বেশি তার আলাপচারিতায় আনন্দ লাভ করে, তার আগ্রহী ঠোঁটের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকা তথ্য উপভোগ করে। রো স্পষ্টতই একজন শিক্ষিত মানুষ যদিও সে যেসব পণ্ডিতদের লেখা উদ্ধৃত করতে পছন্দ করে–গ্রীক আর রোমান দার্শনিক, সে বলেছে, তাঁদের অনেকেই প্রায় দু’হাজার বছর পূর্বে মারা গিয়েছেন–জাহাঙ্গীরের কাছে তাঁদের বেশিরভাগই অপরিচিত। তিনি গত চারমাস ধরে দরবারে অতিবাহিত অবস্থান করায় দূতমহাশয়ের পার্সী অনেক উন্নত হয়েছে এবং জাহাঙ্গীর যদিও উল্টো ফলাফল আশা করেছিল কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওয়াইন তাকে স্বচ্ছন্দভাষী করে তুলেছে। জাহাঙ্গীর মাত্র গতকালই তাঁর দরবারের এক পণ্ডিতের সাথে তাকে প্রাণবন্ত ভঙ্গিতে যুক্তি পেশ করতে শুনেছে যে পরশ পাথরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা–এমন একটা পদার্থ কেউ কেউ মনে করেন যার অবর ধাতুকে সোনা বা রূপায় পরিণত করার ক্ষমতা রয়েছে। এবং এটা অনন্ত জীবনের রহস্যও ধারণ করে–পুরোপুরি অযৌক্তিক আলাৎপালা। জাহাঙ্গীর ব্যক্তিগতভাবে, এমন কোনো কিছু যা প্রমাণ করা সম্ভব নয় সেসব বিষয়ে সাধারণত সন্দেহপ্রবণ, তার যুক্তির সাথে একমত পোষণ করে।
তাদের সামনের টেবিলের উপরে মানচিত্রের একটা বই খোলা অবস্থায় রয়েছে রো’র ভাষ্য অনুযায়ী যার স্রষ্ঠা মারকেটর নামে জনৈক মানচিত্র-প্রস্তুতকারী, দরবারে উপস্থিত হবার পরপরই জাহাঙ্গীরকে যা সে উপহার দিয়েছিল। রো বইটাকে ‘অ্যাটলাস’ বলে, ব্যাখ্যা করে বোঝায় যা একজন পৌরাণিক পুরুষের নাম যিনি নিজের কাঁধে পুরো পৃথিবীর ওজন বহন করছে প্রচ্ছদের উপরে যা অঙ্কিত রয়েছে। জাহাপনা, আমি জানি সিংহাসনে আরোহণের সময় আপনি “পৃথিবীর অধিকারী” উপাধি গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু দেখেন আসলেই বাইরের পৃথিবী কতটা বিশাল, দূতমহাশয় খানিকটা কৌতূকপূর্ণ কণ্ঠে কথাটা বললেও জাহাঙ্গীর হাসতে বাধ্য হয়। সে মুগ্ধচিত্তে বারবার বইটা নিয়ে বসে, ভারি পাতাগুলো যত্নের সাথে উল্টে সে জীবনে কখনও নামও শুনেনি এমন সব রেখাঙ্কিত এলাকা খুটিয়ে দেখে, পুরোটা সময় তাঁর মাথায় রো’র জন্য প্রশ্ন গিজগিজ করতে থাকে, এই জন্যই সে তাকে আবারও নিজের ব্যক্তিগত নিভৃত কক্ষে পুনরায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
‘আপনি নিজ মুখে আমায় যা বলেছেন সেটা অনুসারে, এটা মনে হয় যে স্পেনিশ, ডাচ আর পর্তুগিজরা ইংরেজদের চেয়ে অনেক ভালো ভ্রমণকারী? আপনি অন্য একদিন ম্যাগিলান নামে যে লোকটার কথা বলেছিলেন–প্রথম ব্যক্তি যার জাহাজ পুরো পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিল–সে একজন পর্তুগিজ, তাই না?
রো আরেকটু আরাম করে বসতে চেষ্টা করে। তাঁর পা লম্বা আর সরু হওয়ায় বেশিক্ষণ আসনপিড়ি করে বসে থাকাটা তার জন্য কষ্টকর। হ্যাঁ, জাঁহাপনা। এটা সত্যি কথা যে গুটিকয়েক ভিনদেশী অভিযাত্রী সমুদ্রযাত্রায় ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছে, কিন্তু আমাদের ইংরেজ নাবিক আর তাঁদের জাহাজ কারো চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আমার দেশের মানুষ সম্প্রতি উত্তর আমেরিকাসের একটা স্থানে প্রথম বসতি স্থাপন করেছে আমাদের মহানুভব রাজা জেমসের নামানুসারে এলাকাটার নাম তাঁরা রেখেছে জেমসটাউন। নিজের প্রত্যন্ত ছোট দ্বীপের গুরুত্ব সম্পকে রো’র অনড় বিশ্বাস জাহাঙ্গীরকে সবসময়ে আমোদিত করে। দূতমহাশয় এতটা উৎসাহের সাথে যে জীবনের কথা বর্ণনা করেন, সাধারণ মানুষের অভ্যেস থেকে শুরু করে দরবারের রীতি রেওয়াজ পর্যন্ত, জাহাঙ্গীরের কাছে সবকিছুই কেমন সেকেলে মনে হয়, যদিও সৌজন্যতাবোধ আর সে রোকে ক্রমশ পছন্দ করতে শুরু করায় এমন কিছু বলা থেকে তাকে বিরত রাখে। ‘আপনি যা কিছু বলেছেন তা যদি সত্যি হয় এবং আপনার দেশ যদি বাস্তবিকই আমার হজ্জযাত্রীদের বহন করার জন্য জাহাজের যোগান দেয় আমি হয়ত আপনার কাঙ্খিত বাণিজ্যিক রেয়াত প্রদানে সম্মত হতে পারি, কিন্তু সেখানে কিছু শর্ত থাকবে।
‘অবশ্যই, জাহাপনা। সে যে পরিমাণ ওয়াইন পান করেছে তারপরেও রো’র চোখ সহসা একাগ্র দেখায়। দূতমহাশয়ের আগমনের পর থেকে বিগত মাসগুলোতে, জাহাঙ্গীর প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সবসময়ে সতর্ক থেকেছে যদিও সে তার এই রাজা জেমসের জন্য উপহার পাঠিয়েছে, যত্নের সাথে যা বাছাই করা হয়েছে যেন একাধারে আকর্ষণীয় হয় কিন্তু সেই সাথে খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ না হয় যে ইংরেজ শাসক অস্বস্তিবোধ করে, যিনি সঙ্গত কারণেই মোগলদের মত ঐশ্বর্যের অধিকারী নন। সে নিজে যদিও সোনা। মোড়ান স্ফটিকের একটা বাক্স খুব পছন্দ করেছে, ইংরেজদের অন্য উপহারের অনেকগুলোই ইতিমধ্যে নষ্ট হতে শুরু করেছে–চামড়ায় ফাটল ধরেছে সম্ভবত গরমের ফলে হয়েছে, ছবির ফ্রেম থেকে গিল্টির পরত উঠে আসতে শুরু করেছে, এবং সে ইতিমধ্যে জুড়িগাড়ির ছাতার গন্ধযুক্ত আস্তরন। বদলে গুজরাত থেকে নিয়ে আসা সবুজ ব্রোকেড লাগিয়েছে। রো তারপরেও এমন কিছু নিয়ে এসেছে যা অন্য কোনো দূত আগে কখনও নিয়ে আসেনি–বৃহত্তর পৃথিবী সম্বন্ধে তথ্য, যেমন মানচিত্র এবং এই নতুন পৃথিবী’ সেখানে পাওয়া যায় এমন সব উদ্ভিদ আর প্রাণীর বর্ণনা যে বিষয়ে কথা বলতে সে ভীষণ পছন্দ করে। তার আগমনের কিছুদিন পরেই সে জাহাঙ্গীরকে একটা সুতির ব্যাগ উপহার দিয়েছিল যেটায় কিছু শক্ত আর গোলাকৃতি উদ্ভিদের কন্দ ছিল–সে সেগুলোর নাম বলেছিল ‘আলু’–এবং আন্তরিকভাবে দাবি করেছিল যে কন্দগুলো পোড়ালে বা সিদ্ধ করলে খেতে দারুণ হয়।
কর্চি এতক্ষণে ফিরে এসেছে। জাহাপনা। এই সুরাটা–গোলাপজলের সুগন্ধিযুক্ত–সম্রাজ্ঞীর কাছ থেকে প্রেরিত একটা বিশেষ উপহার। তিনি আমাকে বলতে বলেছেন যে তিনি নিজ হাতে এই সুরা প্রস্তুত করেছেন।’
‘চমৎকার। দূতমহাশয় এবার, দেখা যাক আপনি আমার জন্য যে হুইস্কি নিয়ে এসেছিলেন সেটার তুলনায় এই সুরা কতটা জোরালো মাদকতার অধিকারী… এবং আমি চাই আপনি তোক পাঠিয়ে আপনার সেই কচিকে ডেকে নিয়ে আসেন যে আমাকে আরো কিছু ইংরেজি গান গেয়ে শোনাবে…’
*
![লাল মখমলের জুড়িগাড়ি ( দি টেনটেড থ্রোন - এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ] 3 বালিতে রক্তের দাগ ( দি টেনটেড থ্রোন - এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/16044954-191x300.jpg)
মালকিন, সম্রাট গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
মেহেরুন্নিসা তেলের প্রদীপের আলোয় বই পড়া বন্ধ করে চোখ তুলে তাকায়, যদিও এখন ভোরের প্রথম আলো গবাক্ষের ভিতর দিয়ে পরিশ্রুত হয়ে প্রবেশ করছে তার এখন আর এটার প্রয়োজন নেই। আর দূতমহাশয়?
“তিনিও ঘুমে আচ্ছন্ন, মালকিন।
‘সম্রাটকে এখানে তাঁর নিজের কক্ষে বয়ে নিয়ে আসবার জন্য পরিচারকদের আদেশ দাও এবং ইংরেজ ভদ্রলোকের ভৃত্যকে এসে তাকে তার আবাসিকস্থলে নিয়ে যেতে বলো।
রোয়ের সাথে জাহাঙ্গীরের পানাহার পর্বের ভোর পর্যন্ত স্থায়ী হবার এটাই প্রথম ঘটনা না এবং মেহেরুন্নিসা খুব ভালো করেই জানে কর্চি কি বোঝাতে চেয়েছে যখন সে বলেছে যে তার স্বামী ঘুমে আচ্ছন্ন: সম্রাট জ্ঞান হারিয়েছেন। রোর সাথে পানাহারের এসব জমায়েত ক্রমশ আরো বেশি বেশি হতে শুরু করেছে। জাহাঙ্গীর অজুহাত দেখায় যে অনেক আকর্ষণীয় বিষয় রয়েছে তাঁদের আলোচনা করতে হবে, অজস্র ধারণা অনুসন্ধান করতে হবে। তিনি গতকাল তাকে বলেছিলেন রোর কাছে তিনি নতুন ঔষধ নিয়ে তার কিছু পরীক্ষা-চিনার গাছের পাতা গাজিয়ে তোলা পানি ব্যবহার করে–ক্ষতস্থান দ্রুত নিরাময়কারী একটা মলম আবিষ্কারের বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে চান। সে এই মলমটা একজন কর্চির উপরে পরীক্ষা করেছে যে শিকারের গিয়ে একটা মর্দা হরিণের শিং এর গুতো খেয়েছে। কিন্তু কয়েক ঘন্টা আগে একটা ক্ষুদ্র জালি পর্দার ভিতর দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে সে জানতে পেরেছে যে জাহাঙ্গীর আর রো কিছুক্ষণের ভিতরেই চটুল বিষয়ে আলোচনা শুরু করে, আদি রসাত্মক গান–পার্সী আর ইংরেজি–যা তাঁরা পরস্পরকে শিখিয়েছে গলা ছেড়ে গাইতে থাকে, এবং পাঞ্জা লড়ে শক্তির পরীক্ষার প্রয়াস নেয় যা দৈহিকভাবে অনেকবেশি শক্তিশালী জাহাঙ্গীর অবিকার্যভাবে জিতে।
তাঁদের তখন একজন সম্রাট আর ভিনদেশী শাসকের দূতের চেয়ে এক জোড়া দুষ্ট ছেলে মনে হয়, কিন্তু ইংরেজ রাজদরবারে এমন পানোৎসব সম্ভবত সাধারণ বিষয়। নিজের দরবারের সুর্নিমিত আনুষ্ঠানিকতার তুলনায় সম্ভবত, যেখানে তাকে অবশ্যই একজন মানুষের চেয়েও ক্ষমতা আর ঐশ্বর্যের প্রতিমূর্তি হিসাবে আচরণ করতে হবে, জাহাঙ্গীরের কাছে এটা নিশ্চিতভাবেই আকর্ষণীয়। রো যখন তার উপস্থিতিতে সশব্দে এবং দীর্ঘস্থায়ী বাতকর্ম করে জাহাঙ্গীর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে এবং তাঁর কাঁধ চাপড়ে দেয়। তারা যদিও মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করে কিন্তু এই আড্ডাগুলো হয়ত খারাপ কিছু না। জাহাঙ্গীরকে এসব শমিত করে এবং, কোনো কোনো রাতে সম্রাটকে তার শয্যা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ছাড়া, তাঁর কাছ থেকে কিছু কেড়ে নিচ্ছে না। সম্রাটের জন্য এসব কারণে সে অনেক কিছু করার সুযোগ পাওয়ায়, বস্তুতপক্ষে উল্টোটা সত্যি। সে অবশেষে প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে, ঘুম থেকে জেগে উঠলে সে তখন তার যত্ন নেয়, ব্যাথা দূর করতে চন্দনকাঠ আর ঘৃতকুমারী পাতার মিশ্রিত নির্যাস তার কপালের দু’পাশে ঘষে দেয়।
![লাল মখমলের জুড়িগাড়ি ( দি টেনটেড থ্রোন - এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ] 4 বালিতে রক্তের দাগ ( দি টেনটেড থ্রোন - এম্পায়ার অভ দা মোগল ) -অ্যালেক্স রাদারফোর্ড [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/16173417.jpg)
কখনও কখনও, আগের রাতের পানোৎসবের কারণে চোখ তখনও ঝাপসা হয়ে থাকায়, সে তাঁর উপদেষ্টাদের বৈঠকে আলোচিত বিষয়বস্তুসমূহে খাজনা বৃদ্ধি, তার অমাত্যদের জায়গীর আর খিলাত বিতরণ, এবং তার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের শাসকদের প্রয়োজনীয় আদেশ পাঠান মনোনিবেশ করাটা তার জন্য খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাকে এসব বিষয় সে যখন সুরার প্রভাব মুক্ত থাকে তখনও বিরক্ত করে। সে, অবশ্য, কখনও একটা অধিবেশনও বাদ দেয় না, রাজমহিষীদের প্রেক্ষণিকার জালি অন্ত ওপটের পেছনে একায়ত ভঙ্গিতে বসে সবকিছু শোনে এবং তিনি যদি কখনও বিষয়টা নিয়ে কিছু জানতে চান তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারবে। সে প্রায় প্রতিদিনই রাজকীয় নথিপত্র পাঠ করার প্রস্তাব দেয় যা তার কাছে ভীষণ বিরক্তিকর বলে মনে হয় এবং সে পুরোটা পাঠ করে বিষয়বস্তুর সারাংশ তাকে জানায় এবং তিনি সাথে সাথে সম্মতি দান করেন, নিজের কাঁধ থেকে কিছুটা দায়িত্ব তার কাঁধে চাপিয়ে দিতে পেরেই তিনি আনন্দিত। সে তার কাছে ঠিক যেমনটা আশা করেছিল, তিনি আজকাল প্রায়ই তাঁর কাছে পরামর্শ চায়, এমনকি কখনও কৌতুক করেন যে বেচারা মাজিদ খান তাঁর উজির যেকোনো দিন বুঝি চাকরিটা হারাবে। প্রভাব আর ক্ষমতার মধ্যবর্তী সীমারেখা খুব একটা প্রশস্ত না, এবং সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সে প্রায়ই অনুভব করে রেখাটা সে অতিক্রম করতে শুরু করেছে…
তাঁর ভয় যে জাহাঙ্গীর হয়ত খুররমের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করতে শুরু করবে এখন পর্যন্ত অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। খুররম আর আরজুমান্দের আরেকটা পুত্র সন্তান, দারা শুকোহ্, ভূমিষ্ঠ হওয়ায় তিনি ভীষণ আনন্দিত, কিন্তু তিনি আর খুররম আজকাল যদিও অনেক বেশি সময় একত্রে অতিবাহিত করেন সাধারণত এসময় তারা বাজপাখি উড়াতে বা শিকারে যান, বা তীরন্দাজিতে পরস্পরের দক্ষতা পরীক্ষা করেন নয়তো একসাথে হাতির লড়াই দেখেন। যুবরাজ দাক্ষিণাত্য থেকে ফিরে এসে শাসনকার্যের খুঁটিনাটি বিষয়ে নিজেকে যুক্ত করার সামান্যতম আগ্রহ প্রদর্শন না করায় ব্যাপারটা তাকে আরও বেশি উৎফুল্ল করেছে এবং তাঁর নিজের আকাঙ্খ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যরা অবশ্য তাঁর ক্রমবর্ধমান প্রতিপত্তি খেয়াল করেছে। গত সপ্তাহে রাজকীয় হেরেমে সরাসরি তাকে সম্বোধন করে প্রেরিত প্রায় আধ ডজন আবেদন পত্র এসেছে। জাহাঙ্গীরকে সে শীঘ্রই জিজ্ঞেস করবে যে তাকে ঝামেলার হাত থেকে বাঁচাতে সে কি তার নিজের নামে অধ্যাদেশ জারি করা শুরু করতে পারে। তিনি তাকে খোদাই করা যে পান্নাটা দিয়েছেন যেখানে তাঁর উপাধি, নূর মহল উত্তীর্ণ রয়েছে, সেটা ব্যবহার করবে…।
দরজার পাল্লা দুটো খুলে যায় এবং একটা বাঁশের খাটিয়া নিয়ে চারজন পরিচারক ভেতরে প্রবেশ করে যার উপরে জাহাঙ্গীর চিত হয়ে দু’হাত দু’পাশে ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে রয়েছে, পরিশ্রমের কারণে তাঁদের সবার পা সামান্য বেঁকে রয়েছে। সে তার ভারি, ছন্দোবদ্ধ শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পায়।
‘খাটিয়াটা ওখানে নামিয়ে, তারপরে আমাদের একা রেখে তোমরা বিদায় নাও, মেহেরুন্নিসা, গবাক্ষ দিয়ে প্রবেশ করা উজ্জ্বল সূর্যালোক থেকে দূরে কক্ষের অন্ধকার কোণের দিকে ইঙ্গিত করে, আদেশ দেয়। পরিচারকের দল তাঁদের একা রেখে কক্ষ ত্যাগ করা মাত্র সে পিতলের পাত্রে রক্ষিত পানিতে রেশমের রুমাল ভিজিয়ে নেয়, তারপরে জাহাঙ্গীরের কাছে এগিয়ে এসে তাঁর পাশে হাঁটু মুড়ে বসে। কি গভীর ঘুমে লোকটা আচ্ছন্ন হয়ে আছে, সে তার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে, মাস অন্তে বছর অতিক্রান্ত হবার সাথে সাথে আগের চেয়ে একটু মাংসল দেখায় কিন্তু এখনও দেখতে সুদর্শন রয়েছেন। সে তার কপালের ঘাম মুছিয়ে দিতে শুরু করতে, তাঁর জন্য একটা স্নেহার্দ্র অনুভূতি তাকে আপুত করে। সে জীবনে যা কিছু চেয়েছে, এই লোকটা তাকে সবকিছু দিয়েছে–এখনও অনেক কিছু দিতে পারে।
জাহাঙ্গীর নড়াচড়া শুরু করে। সে সহসাই চোখ খুলে তাকায় এবং খানিকটা অনুতাপপূর্ণ ভঙ্গিতে হাসে। আমার মনে হয় আমি আবারও তোমার তৈরি সুরা একটু বেশিই পান করে ফেলেছি।
আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ
- মিসেস আরিয়াদে অলিভার -হ্যালুইন পার্টি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- কোয়ারী হাউসের দিকে -হ্যালুইন পার্টি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- পাহাড়ের মাথায় উঠে -হ্যালুইন পার্টি ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- ভ্রুকুটি করলো পোয়ারো -হিকরি ডিকরি ডক (১৯৫৫) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- এলিজাবেথের নোটের কাগজে -হিকরি ডিকরি ডক (১৯৫৫) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- মিস লেমনকে নোট দিতে -হিকরি ডিকরি ডক (১৯৫৫) ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]