রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা , ভাবসম্প্রসারণ কি তা বললে বোঝায়, কবি, সাহিত্যিক, মনীষীদের রচনা কিংবা হাজার বছর ধরে প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনে নিহিত থাকে জীবনসত্য। এ-ধরনের গভীর ভাব বিশ্লেষণ করে তা সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়াকে বলে ভাবসম্প্রসারণ ।
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা, সূর্য নাহি ফিরে, শুধু ব্যর্থ হয় তারা
প্রবাদে আছে. ‘সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্যে অপেক্ষা করে না।’— এটাই জীবনের নিয়ম। জীবন গতিশীল। গতিশীল জীবনে আজ যা বর্তমান কাল তা অতীত। শত চেষ্টাতেও অতীতকে কখনো ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই অতীতের জন্যে আক্ষেপ না করে বর্তমান যা হাতের মুঠোয়, তার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা লাভের চেষ্টা করা উত্তম।
জীবনে সুখ-দুঃখ আসে পালাক্রমে। গতজীবনের সুখের কথা ভেবে ভেবে বর্তমানের দুঃখ-কষ্টকে মেনে না নেয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা এই দুঃখ-কষ্ট এক সময় আবার অতীতে পরিণত হবে, বর্তমান হয়ে আসবে সোনালি ভবিষ্যৎ। তাই এই পরিবর্তনশীল-জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ ও আনন্দের উৎস হিসেবে বিবেচনা করলে জীবন কখনো বেদনায় ভরে উঠবে না, ব্যর্থতায়ও পর্যবসিত হবে না।
প্রকৃতির চিরায়ত নিয়মে প্রতিদিন সূর্য অস্ত যায়, ঘটে রাত্রির আগমন। অগণিত নক্ষত্র রাতের আকাশে অনির্বচনীয় রূপ ধারণ করে। আবার শুক্লপক্ষের রাত্রি জ্যোৎস্নায় আলোর বন্যায় অন্ধকার দূর করে জগৎকে স্নিগ্ধ আলোয় ভরে তোলে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু কেউ যদি রাতের রূপকে উপভোগ না করে, রাতের বেলায় অস্ত যাওয়া সূর্যের অভাব অনুভব করে তবে সে রাতের যে অনুপম সৌন্দর্য তা থেকেই বঞ্চিত হয়, হারানো সূর্যকে কখনোই সে ফিরে পায় না। তদ্রুপ, অতীতের সোনালি ও সুখময় দিনগুলোর কথা স্মরণ করে কেউ যদি কেবল বেদনায় ডুবে থাকে, তাহলে অতীত তো ফিরে আসেই না, বরং বর্তমানের সব সুখ-দুঃখ থেকে সে বঞ্চিত হয়।

তাই অতীতের সুখস্বপ্নে বিভোর না থেকে বর্তমানকে সহজভাবে মেনে নিয়ে তাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং উপভোগ করতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমানকে নির্মাণ করে জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলা যায়। তাই, যা চলে গেছে, যা কিছু অতীত তাকে নিয়ে আফসোস না করে বর্তমানকে মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অতীতের জন্যে যারা হা-হুতাশ করে তাদের জীবন ব্যর্থতা ও হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কেননা অতীত স্মৃতির রোমন্থনে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হয়।
আরও দেখুন: