মানুষকে ভুল করিতে না দিলে – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব ভাষণ তৈরি করবেন। সম্প্রসারিত ভাবের আয়তন ততটুকুই হবে, যতটুকুতে ভাবের প্রকাশ সম্পূর্ণতা পায়। বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। এতে বক্তব্যের ভাব-গাম্ভীর্য ও ওজস্বিতা বিনষ্ট হয়।
মানুষকে ভুল করিতে না দিলে, মানুষকে শিক্ষা লাভ করিতে দেওয়া হয় না
চিরচঞ্চল মানবজীবনের গতিরোধে ভুলের ভূমিকাই বেশি। ভুল করা কি দূষণীয়? দূষণীয় নয়, কারণ ভুল জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ভুলের মধ্য দিয়েই মানুষকে জগতের সকল অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। ভুল না করার পূর্বশর্ত হচ্ছে ভুল করা এবং সে ভুল থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করা ও নিজেকে সংশোধন করে নেওয়া।
কাজে ভুল হলেও জীবনের জন্যে কাজ করতে হয়। ভুল করার মধ্যেই মানুষের শিক্ষার তাৎপর্য নিহিত। কাজ করলেই ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে, কাজ না করলে ভুলও হবে না। কর্মহীন জীবন স্থবির হয়ে যায়। জীবনে চলার পথে নানা কাজে ভুল হলেও মানুষ কখনো থেমে থাকে না। ভুলের মধ্য দিয়েই জীবনের নতুন নতুন অভিজ্ঞতাকে অর্জন করে নেয়। ভুল শুধরে শুধরে মানুষ কাজে দক্ষ হয় এবং ক্রমেই ভুলের মাত্রা কমতে থাকে। যারা শিখতে চায় তাদের কাজে ভুল হবেই। শিক্ষা গ্রহণ মানবজীবনের সর্বকালের বৈশিষ্ট্য। শিক্ষার ভেতর দিয়েই মানুষ জীবনের পথে এগিয়ে চলে।
সব কাজই যে নির্ভুল হবে এমন কোনো কথা নেই। কারণ অনেক কাজেই উদ্যোগী মানুষকে প্রথম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হয়। সেখানে ভুল-ভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক। কাজের বেলায় নির্ভুল কাজ করতে হবে এমন শর্ত আরোপ করে দেওয়াই ভুল। কেননা নির্ভুল কাজের অঙ্গীকার কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই জীবনে ভুল স্বীকার করে নেওয়াই যথার্থ সত্য, অস্বীকারে থাকে মিথ্যার চাতুর্য। ভুলভ্রান্তি সত্যকে পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় নয়, বরং ভুলভ্রান্তি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেই মানুষ প্রকৃত সত্যকে উদ্ঘাটন করে।

তাই জীবনে ভুলকে অপরাধ না ভেবে স্বাভাবিক ঘটনা বলে গ্রহণ করতে হবে। তবে অসতর্কতা ও অসাবধানতার জন্যে যে ভুল হয় তা ভুলের পর্যায়ে পড়ে না, কেননা তা সতর্কতার অভাবে সংঘটিত হয়। পৃথিবীতে যারা মিথ্যা ও ভুল-ভ্রান্তিকে বাদ দিয়ে কেবল সত্য লাভের পথ খোঁজে, তারা কখনোই সত্যের নাগাল পায় না। মানবজীবনের একেকটি ভুল মানুষকে এক বা একাধিক সত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। শিশু যেমন আছাড় খেতে খেতে হাঁটতে শেখে, মানুষও তেমনি ভুলভ্রান্তির মধ্য দিয়ে সত্যকে চিনে নেয়। ভুল করে এবং ভুল শুধরে মানুষ শিক্ষার অপূর্ণতা দূর করে। জীবনের জন্যে কাজ আর কাজ করতে গেলেই ভুল হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই ভুল করাটা দোষের নয়, বরং ভুলের ভয়ে কাজ থেকে বিরত থাকাই দোষের।
আরও দেখুন: