মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা সমূহ – অনেকেই আছেন যারা মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কারণ ভাষা শহীদদের নিয়ে কবিতা সবার কাছে অনেক জনপ্রিয়।তাই আমরা চেষ্টা করেছি একুশের কবিতা এখানে তুলে ধরার জন্য। এবং সেইসাথে মাতৃভাষা নিয়ে বিশেষ কবিতা তুলে ধরেছি।
আপনারা যারা একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে কবিতা খোঁজ করছেন তারা এখান থেকে তা অতি সহজেই সংগ্রহ করতে পারবেন । পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলা ভাষা নিয়ে সংগ্রাম একদিকে যেমন আলোচ্য বিষয় অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার দাবিদার। বাংলা ভাষা কে কেন্দ্র করে ১৯৫২ সালে যে রক্তক্ষয়ী এবং মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে তারই প্রেক্ষাপটে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
Table of Contents
মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা সমূহ
মাগো, ওরা বলে – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
‘কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা, আর, আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি— খোকা তুই কবে আসবি! কবে ছুটি?’ চিঠিটা তার পকেটে ছিল, ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা। ‘মাগো, ওরা বলে, সবার কথা কেড়ে নেবে তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না। বলো, মা, তাই কি হয়? তাইতো আমার দেরী হচ্ছে। তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে তবেই না বাড়ী ফিরবো। লক্ষ্মী মা রাগ ক’রো না, মাত্রতো আর কটা দিন।’ ‘পাগল ছেলে’ , মা পড়ে আর হাসে, ‘তোর ওপরে রাগ করতে পারি!’ নারকেলের চিঁড়ে কোটে, উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে এটা সেটা আরো কত কি! তার খোকা যে বাড়ী ফিরবে! ক্লান্ত খোকা! কুমড়ো ফুল শুকিয়ে গেছে, ঝ’রে প’ড়েছে ডাঁটা; পুঁইলতাটা নেতানো,— ‘খোকা এলি?’ ঝাপসা চোখে মা তাকায় উঠোনে, উঠোনে যেখানে খোকার শব শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে। এখন, মা’র চোখে চৈত্রের রোদ পুড়িয়ে দেয় শকুনিদের। তারপর, দাওয়ায় ব’সে মা আবার ধান ভানে, বিন্নি ধানের খই ভাজে, খোকা তার কখন আসে! কখন আসে! এখন, মা’র চোখে শিশির ভোর, স্নেহের রোদে ভিটে ভরেছে।
বঙ্গভূমি ও বঙ্গভাষা – কায়কোবাদ
‘বাংলা আমার মাতৃভাষা বাংলা আমার জন্মভূমি। গঙ্গা পদ্মা যাচ্ছে ব’য়ে, যাহার চরণ চুমি। ব্রহ্মপুত্র গেয়ে বেড়ায়, যাহার পূণ্য-গাথা! সেই-সে আমার জন্মভূমি, সেই-সে আমার মাতা! আমার মায়ের সবুজ আঁচল মাঠে খেলায় দুল! আমার মায়ের ফুল-বাগানে, ফুটছে কতই ফুল! শত শত কবি যাহার গেয়ে গেছে গাথা! সেই-সে আমার জন্মভূমি, সেই-সে আমার মাতা! আমার মায়ের গোলা ছিল, ধন ধান্যে ভরা! ছিল না তার অভাব কিছু, সুখে ছিলাম মোরা! বাংলা মায়ের স্নিগ্ধ কোলে, ঘুমিয়ে রব আমি! বাংলা আমার মা
নানান দেশে নানান ভাষা – রামনিধি গুপ্ত
নানান্ দেশে নানান্ ভাসা (ভাষা)
বিনে স্বদেশীয় ভাসে পূরে কি আশা ?
কত নদী সরোবর,
কি বা ফল চাতকীর |
ধরাজল বিনে কভু ঘুচে কি ত্রিষা (তৃষা) ?
বাংলা ভাষা – অতুলপ্রসাদ সেন
মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা! তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালোবাসা! কি যাদু বাংলা গানে! গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে, গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা! বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন্, হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন- ঐ ফুলেরই মধুর রসে, বাঁধলো সুখে মধুর বাসা! বাজিয়ে রবি তোমার বীণে, আনলো মালা জগৎ জিনে! তোমার চরণ-তীর্থে আজি, জগৎ করে যাওয়া-আসা! ঐ ভাষাতেই নিতাই গোরা, আনল দেশে ভক্তি-ধারা, আছে কৈ এমন ভাষা, এমন দুঃখ-শ্রান্তি-নাশা? ঐ ভাষাতেই প্রথম বোলে, ডাকনু মায়ে ‘মা, মা’ বলে; ঐ ভাষাতেই বলবো হরি, সাঙ্গ হলে কাঁদা হাসা! মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা!

একুশের কবিতা – আল মাহমুদ
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?
পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
একুশের কবিতা – সৈয়দ শামসুল হক
সভ্যতার মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি শিশুর জন্ম থেকে জরাদেহ ক্ষীণশ্বাস মানবের অবলুপ্তির সীমারেখায় বলে গেল সেই কথা। সেই কথা বলে গেল অনর্গল– তপ্তশ্বাস হাহুতাশ পাতাঝরা বিদীর্ণ বৈশাখীর জ্বালাকর দিগন্তে আষাঢ়ের পুঞ্জীভূত কালো মেঘ আসবেই ঠিক। সাগরের লোনাজলে স্নিগ্ধ মাটীর দ্বীপ শ্যামলী স্বপ্নের গান বুকে পুষে নবীন সূর্য্যেরে তার দৃঢ় অঙ্গীকার জানাবেই। সংখ্যাহীন প্রতিবাদ ঢেউয়েরা আসুক, তুমি স্থির থেকো। প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝাবাত অবহেলা করি সঞ্চয় করে যাও মুঠো মুঠো গৈরিক মাটী: সবুজ গন্ধবাহী সোনালী সূর্য্যের দিশা অকস্মাৎ উদ্ভাসিত কোরে দেবে তোমার চলার পথ। সভ্যতার মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি শিশুর জন্ম থেকে জরাদেহ ক্ষীণশ্বাস মানবের অবলুপ্তির সীমারেখায় বলে গেল সেই কথা। সেই কথা বলে গেল অনর্গল– পৃথিবীর জিজীবিষু আত্মার আছে। ঘনীভূত জনতার হৃদয়ে হৃদয়ে উজ্জ্বল শিখা সেই অমর সংবাদে ঢেউ তুলে দিয়ে গেল।।