Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

মাওলানা ভাসানী, আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিবেদন রচনা। Essay on Moulana Bhasani

মাওলানা ভাসানী রচনা । Essay on Moulana Bhasani । প্রতিবেদন রচনা

মাওলানা ভাসানী, আবদুল হামিদ খান ভাসানী [Essay on Moulana Bhasani ] অথবা, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ইতিহাস – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

মাওলানা ভাসানী রচনা । Essay on Moulana Bhasani

মাওলানা ভাসানী রচনার ভূমিকা:

বাংলার কৃষক-মজুর-শ্রমিকের অতি আপনজন যে মানুষটি, তাঁর নাম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। চিরকাল নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। মজলুম মানুষের সুখে-দুঃখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের কথা বলেছেন। সংগ্রাম করেছেন। তাই তিনি সবার কাছে মজলুম জননেতা।

জন্ম ও শৈশব:

সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আবদুল হামিদ খানের জন্ম ১৮৮০ সালে। তাঁর বাবার নাম হাজি শরাফত আলী খান। মায়ের নাম মোসাম্মদ মজিরন বিবি। অল্প বয়সেই তিনি পিতৃ-মাতৃহীন হন। তাঁর এক চাচা ইব্রাহীম খান তাঁকে শৈশবে আশ্রয় দেন। তাঁর কাছে থেকেই তিনি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন।

শিক্ষাজীবন:

গ্রামের পাঠশালায় পড়াশোনাকালীন ইরাক থেকে আগত এক পীর সাহেবের স্নেহদৃষ্টি লাভ করেন আবদুল হামিদ খান। সৈয়দ নাসির উদ্দীন বোগদাদি নামের এই পীর সাহেব তাঁকে পুত্রস্নেহে লালপালন করেন। এই পীর সাহেবের কাছেই তিনি আরবি, ফারসি শেখেন। পরে তিনি আবদুল হামিদ খানকে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। এ সময় তিনি দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হন।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

কর্মজীবন:

মাদ্রাসার পড়া শেষ করে আবদুল হামিদ খান কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি টাঙ্গাইলের কাগমারীর এক প্রাইমারি স্কুলে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। এখানে শিক্ষকতাকালে তিনি জমিদারের অত্যাচার, নির্যাতন দেখতে পান। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংগ্রাম শুরু করেন। ফলে জমিদারের বিষ-নজরে পড়ে তাঁকে কাগমারী ছাড়তে হয়।

সংগ্রামী জীবন:

২২ বছর বয়সে কংগ্রেস নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আবদুল হামিদ খান অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। ১৭ মাস পর তিনি মুক্তি পান। এরপর ১৯২৪ সালে সিরাজগঞ্জে এক সভায় কৃষক সাধারণের ওপর জমিদারের শোষণ, নিপীড়ন ও অত্যাচারের কাহিনি তুলে ধরেন। এ সভায় ভাষণের জন্য তাঁকে নিজের জন্মভূমি ছাড়তে হয়। এবার তিনি চলে যান আসামের জলেশ্বরে।

ভাসানী উপাধি:

১৯২৪ সালে আসামের ধুবড়ি জেলার ভাসানচরে বাঙালি কৃষকদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আবদুল হামিদ খান এক বিশাল প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করেন। এ সমাবেশেই সাধারণ কৃষকেরা তাঁকে ভাসানচরের মওলানা তথা মওলানা ভাসানী নামে আখ্যায়িত করেন। আর তখন থেকেই তিনি হলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

রাজনৈতিক জীবন:

ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসাম থেকে পূর্ববাংলায় চলে আসেন। প্রথমে তিনি পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ও পরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশ শুরু করেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। যুক্তফ্রন্ট এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়।

মাওলানা ভাসানী রচনা । Essay on Moulana Bhasani

গণ-অভ্যুত্থানে মওলানা ভাসানীর ভূমিকা:

মওলানা ভাসানী বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের শাসকেরা ধর্ম ও জাতীয় সংহতির নামে পূর্ববাংলার মানুষকে শোষণ করছে। তাই তাদের সঙ্গে একই রাষ্ট্রের বাঁধনে অবস্থান করা আর সম্ভব নয়। সে কারণে ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে পল্টন ময়দানে ভাষণ দানকালে এ কথাটিই বারবার উচ্চারণ করে জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৫, ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালেও তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর যে অত্যাচার-নিপীড়ন চালাচ্ছে, যে বৈষম্যনীতি অনুসরণ করছে, তা চলতে থাকলে পূর্ব পাকিস্তান একদিন স্বাধীন হয়ে যাবে। তাঁর এ কথা বাস্তব সত্যে পরিণত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে মওলানা ভাসানীর ভূমিকা:

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে দেশব্যাপী পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মওলানা ভাসানীর টাঙ্গাইলের ঘরবাড়ি পাকিস্তানি সেনারা পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ভারতে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে মওলানা ভাসানী:

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলে মওলানা ভাসানী স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। স্বাধীনতার পরও কোনো পদমর্যাদা ও মোহ তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি সব সময় জনগণের পাশে থেকে বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত লংমার্চ পরিচালনা।

মাওলানা ভাসানী রচনা । Essay on Moulana Bhasani

শিক্ষা বিস্তারে মওলানা ভাসানী:

মওলানা ভাসানী নিজে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করতে পারেননি, কিন্তু এ দেশের মানুষের জন্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিস্তার প্রসারে ছিল তাঁর অনেক অবদান। তিনি সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মহীপুরে হাজি মুহম্মদ মুহসীন কলেজ, ঢাকায় আবুজর গিফারি কলেজ ও টাঙ্গাইলে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

মওলানা ভাসানীর মৃত্যু:

মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

উপসংহার:

মওলানা ভাসানীর জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই প্রগাঢ় স্বদেশপ্রেম, প্রগতিশীল আদর্শ ও প্রতিবাদী চেতনার। তিনি চিরকাল শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন এ দেশের কোটি কোটি মানুষের হূদয়ে।

আরও পড়ুনঃ

Exit mobile version