সারাংশ, সারমর্ম বা ভাবার্থ ও সারসংক্ষেপ

সারাংশ, সারমর্ম বা ভাবার্থ ও সারসংক্ষেপ, বক্তা বা লেখক মনের বিচিত্র ও গভীর ভাব তাঁর নানা উপমা, অলংকার, বিশেষণ ইত্যাদির সাহায্যে প্রকাশ করেন। রচনা গদ্য কিংবা কবিতা যাই হোক, তার মৌলিক অংশটুকু বিবেচনার বিষয়। বক্তা বা লেখকের বক্তব্যের সার বা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশই সারাংশ। পক্ষান্তরে কোনো গদ্য বা পদ্য রচনার মূলভাব বা মর্মকথা সক্ষেপে গুছিয়ে লেখার নামই সারমর্ম। প্রদত্ত গদ্য বা গদ্যাংশের ভাষা বড় কথা নয়, ভাষাতীত ভাব, অর্থাৎ ভাবের মর্মার্থ বিবেচনার বিষয়। মূলীভূত ভাবের যথার্থ ব্যঞ্জনা বা লেখকের উদ্দিষ্ট বক্তব্য খুঁজে বের করাই সারমর্ম লিখনের প্রথম শর্ত। কল্পনা বা ভাব দ্যোতনার মাধ্যমে নিজস্ব ভাষায় সংক্ষেপে সারমর্ম লিখতে হয়।

সারাংশ, সারমর্ম বা ভাবার্থ ও সারসংক্ষেপ সারাংশ সারমর্ম লিখন

 

সারাংশ, সারমর্ম বা ভাবার্থ ও সারসংক্ষেপ

 

কবি-সাহিত্যিকগণ যখন তাঁদের সাহিত্যের রচনাকে সৃষ্টি করেন তখন মূলকথাটি রসমধুর করে অর্থাৎ খুবই মর্মগ্রাহী করে প্রকাশ করেন। এর মূল লক্ষ্য হল শ্রোতা বা পাঠকের মনকে আকর্ষণ করা। আর এ-জন্যে মূলকথাটির সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয় ছন্দ, অলঙ্কার, উপমা, দৃষ্টান্ত ইত্যাদি। ফলে মূল বক্তব্যের গায়ে লাগে রসের প্রলেপ। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘শুধু কথা যখন খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে, তখন কেবলমাত্র অর্থকে প্রকাশ করে। কিন্তু, কথাকে যখন তির্যক ভঙ্গি ও বিশেষ গতি দেওয়া যায়, তখন সে আপন অর্থের চেয়ে আরও কিছু বেশি প্রকাশ করে। সেই বেশিটুকু যে কী, তা বলা শক্ত। কেননা, তা কথার অতীত; সুতরাং অনির্বচনীয়। যা আমরা দেখছি, শুনছি, জানছি তার সঙ্গে যখন খুঁজে বের করা একটু কঠিনই হয়।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অনির্বচনীয়র যোগ হয়, তখন তাকেই আমরা বলি ‘রস’। অর্থাৎ, সে-জিনিসটাকে অনুভব করা যায়, ব্যাখ্যা করা যায় না।’—এভাবে কথার মধ্যে রস সংযোজনের ফলে মূল কথার আসল চেহারাই যায় পাল্টে, তখন তা থেকে মূলকথাকে যেমন—

রজনী শাঙনঘন ঘন দেয়া গরজন,

রিমিঝিমি শব্দে বরিষে । পালঙ্কে শয়ান রঙ্গে বিগলিত চীর অঙ্গে

নিন্দ যাই মনের হরিষে।। [-গীতগোবিন্দ]

 

সারাংশ, সারমর্ম বা ভাবার্থ ও সারসংক্ষেপ

 

—একটি বাদলার রাতে একটি মেয়ে মনের আনন্দে বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে, বিষয়টা এই মাত্র। সারাংশ বা কাজ হল, এই আসল কথাটি খুঁজে বের করা। বেশ বা সারমর্মের সারসংক্ষেপ। প্রদত্ত অনুচ্ছেদে লেখকের ভাববস্তু যুক্তি, দৃষ্টান্ত, অলংকারাদির সাহায্যে বিস্তৃত আকারে প্রকাশিত থাকে। যেমন একটি গাছ শাখা-প্রশাখায়, পত্রে-পুষ্পে নিজেকে বিকশিত করে তুলে ধরে। সারসংক্ষেপ লিখনের সময় যুক্তি, দৃষ্টান্ত ও অলংকারাদির গৌণভাবকে বর্জন করে কেবল মূল ভাবটিকে গ্রহণ করতে হয়। সারসংক্ষেপের আয়তন ঠিক কতটা হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। সাধারণত মূলের এক-তৃতীয়াংশ হতে পারে।

ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য অনুশীলন প্রয়োজন। সারাংশ রচনায় ভাষা পড়ে বুঝতে পারা ও সংক্ষিপ্ত করে লেখা এ দুটি বিষয়ের দক্ষতা প্রয়োজন হয়। এ দক্ষতা অর্জন করতে হলে সারাংশ রচনার অনুশীলন করতে হবে। আমরা এখানে অনেক নমুনা তৈরি করে দিয়েছ। সেগুলো দেখে আপনারা নিয়মিত অনুশীলন করতে পারবেন।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment