বিসর্গ সন্ধি

আজকে আমরা বিসর্গ সন্ধি সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি এর অন্তর্গত।

 

বিসর্গ সন্ধি

 

বিসর্গ সন্ধি

বিসর্গ (ঃ )এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে।

উচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দু রকম :

১. র্-জাত বিসর্গ :

শব্দের শেষে র্ থাকলে উচ্চারণের সময় র্ লোপ পায় এবং র্-এর জায়গায় বিসর্গ (ঃ) হয়। উচ্চারণে র্ বজায় থাকে। যেমন : অন্তর > অন্তঃ + গত = অন্তর্গত (অনৃতোদ্‌গতো)।

২. স-জাত বিসর্গ :

শব্দের শেষে স্ থাকলে সন্ধির সময় স্ লোপ পায় এবং স্-এর জায়গায় বিসর্গ ( ঃ ) হয়। উচ্চারণে স্ বজায় থাকে। যেমন : নমস্ নমঃ + কার = নমস্কার ( নমোকার্ ) ।

বিসর্গসন্ধি দু-ভাবে সাধিত হয় :

১. বিসর্গ ( ঃ ) ও স্বরধ্বনি মিলে

২. বিসর্গ ( ঃ ) ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

১. বিসর্গ ও স্বরধ্বনির সন্ধি

ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে ও-কার হয়। যেমন :

ততঃ + অধিক = ততোধিক

যশঃ + অভিলাষ = যশোভিলাষ

বয়ঃ + অধিক = বয়োধিক

খ. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ, আ, উ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি মিলে র হয়। যেমন :

পুনঃ + অধিকার = পুনরধিকার

পুনঃ + আবৃত্তি = পুনরাবৃত্তি

প্রাতঃ + আশ = প্রাতরাশ

পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত

২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি

ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে বর্গের ৩য়/ ৪র্থ/ ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে র-জাত বিসর্গে র/ রেফ (1) এবং স-জাত বিসর্গে ও-কার হয়। যেমন :

র-জাত বিসর্গ : র

অন্তঃ + গত = অন্তর্গত

পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম

অন্তঃ + ধান = অন্তর্ধান

পুনঃ + বার = পুনর্বার

অন্তঃ + ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত

পুনঃ + মিলন = পুনর্মিলন

স-জাত বিসর্গ :

মনঃ + গত = মনোগত

তিরঃ + ধান = তিরোধান

সদ্যঃ + জাত = সদ্যোজাত

তপঃ + বন = তপোবন

অধঃ + মুখ = অধোমুখ

মনঃ + যোগ = মনোযোগ

মনঃ + রম = মনোরম

মনঃ + লোভা = মনোলোভা

মনঃ + হর = মনোহর

 

বিসর্গ সন্ধি

 

খ. বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে বিসর্গের স্থলে শ; ট/ঠ থাকলে ষ এবং ত/থ থাকলে স হয়। যেমন :

নিঃ + চয় = নিশ্চয়

দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র

ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার

চতুঃ + টয় = চতুষ্টয়

শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ

নিঃ + ছিদ্র = নিশ্ছিদ্র

নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর

দুঃ + তর = দুস্তর

নিঃ + তেজ = নিস্তেজ

ইতঃ + তত = ইতস্তত

দুঃ + থ = দুস্থ

গ. অ/আ ভিন্ন অন্য ঘরের সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে স্বরধ্বনি, বর্গের ৩য় / ৪র্থ / ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ স্থলে র হয়। যেমন :

নিঃ + অবধি = নিরবধি

নিঃ + গত = নির্গত

নিঃ + আপদ = নিরাপদ

নিঃ + ঘণ্ট = নির্ঘণ্ট

নিঃ + বাক্ = নির্বাক

আবিঃ + ভাব =আবির্ভাব

নিঃ + ভয় = নির্ভয়

আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ

দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা

দুঃ + গতি = দুর্গতি

দুঃ + আচার – দুরাচার

দুঃ + বোধ = দুর্বোধ

প্রাদুঃ + ভাব = প্রাদুর্ভাব

দুঃ + মর = দুর্মর

দুঃ + যোগ = দুর্যোগ

দুঃ + লভ = দুর্লভ

ঘ. র-জাত বিসর্গের পরে র থাকলে বিসর্গ লোপ পায় এবং প্রথম স্বর দীর্ঘ হয়। যেমন :

নিঃ + রব = নীরব

নিঃ + রোগ = নীরোগ

নিঃ + রস = নীরস

 

বিসর্গ সন্ধি

 

ঙ. অ/আ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে স হয়। যেমন :

নমঃ + কার = নমস্কার

পুরঃ + কার = পুরস্কার

তিরঃ + কার = তিরস্কার

ভাঃ + কর = ভাস্কর

চ. ই/উ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে ষ হয়। যেমন :

নিঃ + কাম = নিষ্কাম

নিঃ + ফল = নিষ্ফল

চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ

আবিঃ + কার = আবিষ্কার

নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ

বহিঃ + কার = বহিষ্কার

চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ

দুঃ + পাচ্য = দুষ্পাচ্য

ছ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ পায় না। যেমন :

প্রাতঃ + কাল = প্রাতঃকাল

শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া

মনঃ + কষ্ট – মনঃকষ্ট

অন্তঃ + করণ = অন্তঃকরণ

জ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিসর্গ লোপ পেলেও সন্ধি হয় না। যেমন :

অতঃ + এব = অতএব

বিসর্গ সন্ধির কিছু ব্যতিক্রম :

অহঃ + অহ অহরহ

অহঃ + নিশা = অহর্নিশ

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment