বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ

আজকে আমরা বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি এর অন্তর্গত।

 

বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ

 

বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ

আগেই বলা হয়েছে : পদ পাঁচ প্রকার : বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া।

বিশেষ্যপদ

বাক্যে ব্যবহৃত যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, সমষ্টি, স্থান, কাল, ভাব, কাজ বা গুণের নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্যপদ বলে। এক কথায়, কোনো কিছুর নামকে বিশেষ্যপদ বলে। যেমন : নজরুল, মানুষ, বই, খাতা, লেখাপড়া, পশু, সভা, সমিতি, ঢাকা, খুলনা, শয়ন, ভোজন ইত্যাদি।

বিশেষ্যপদের নানা শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। যেমন :

১. সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য :

যে বিশেষ্যপদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, প্রাণী, স্থান, নদী, সমুদ্র, পর্বত, গ্রন্থ ইত্যাদির নির্দিষ্ট নাম বোঝায়, তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। একে নামবাচক বিশেষ্যও বলা হয়। যেমন :

ব্যক্তির নাম :

আলাওল, বঙ্কিম, নজরুল, সুকান্ত, রোকেয়া, সমীরণ বড়ুয়া, রবার্ট, মিল্টন, হ্যারি। প্রাণীর নাম : গরু, ছাগল, ভেড়া, সিংহ, বাঘ, হাঁস, মুরগি, ময়না, টিয়া, শালিক, হিপপোটেমাস। স্থানের নাম : খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, শ্রীপুর, শেরপুর, গোপালগঞ্জ, দিল্লি, মস্কো, লন্ডন, প্যারিস।

নদ-নদীর নাম :

ব্রহ্মপুত্র, বুড়িগঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, নীলনদ, আমাজান, হোয়াংহো

সমুদ্রের নাম :

বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, আরব সাগর ।

পাহাড়-পর্বতের নাম :

গারো পাহাড়, হিমালয়, লালমাই, কেওক্রাডাং, হিন্দুকুশ, ককেশাস, আন্দিজ। গ্রন্থের নাম : গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা, হিমু অমনিবাস, বেড়াল মানবী, বাঁধ ভেঙে দাও ৷

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বাক্যে প্রয়োগ

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি।

সুন্দরবন খুলনা বিভাগে অবস্থিত।

আমাদের বাড়ি ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে ।

আমি ‘অগ্নিবীণা’ পড়েছি।

গরু গৃহপালিত পশু।

আমি হিমালয় দেখি নি।

লন্ডনে নজিবের মামা থাকেন ।

দুবলারচর বঙ্গোপসাগরের একটি চর।

২. শ্রেণিবাচক বিশেষ্য :

যে বিশেষ্যপদ দ্বারা ব্যক্তি, প্রাণী, স্থান, নদী, পর্বত ইত্যাদির সাধারণ নাম বোঝায়, তাকে শ্রেণিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : মানুষ, পাখি, পর্বত, কবি, শহর, বই, গাছ, বাঙালি, মাছ, সাগর ইত্যাদি।

সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের সাথে শ্রেণিবাচক বিশেষ্যের আপাত মিল লক্ষ করা গেলেও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের দ্বারা সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী বা স্থানের নাম বোঝায় ৷

 

বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ

 

কিন্তু শ্রেণিবাচক বিশেষ্যপদ এসবের সাধারণ বা অনির্দিষ্ট নাম প্রকাশ করে। যেমন :

সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য (নির্দিষ্ট)শ্রেণিবাচক বিশেষ্য (অনির্দিষ্ট)
১. রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি।১. কবি চিরকাল বরণীয়।
২. মানুষটি ক্ষুধায় কাতর ।২. মানুষ মরণশীল।
৩. পোড়াবাড়ির চমচম খুব ভালো মিষ্টি।৩. মিষ্টি সবাই পছন্দ করে না।
৪. আমি ইলিশ মাছ খেতে ভালোবাসি।৪. সবাই মাছ খেতে ভালোবাসে।
৫. আমরা ঢাকা শহরে থাকি।৫. আমরা শহরে থাকি।
৬. আমি ‘অগ্নিবীণা’ পড়ছি।৬. আমি বই পড়ছি।
৭. হিমালয় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত।৭. পর্বতে ওঠা খুব বিপজ্জনক।
৮. ময়না পাখি কথা বলে।৮. পাখি আকাশে ওড়ে।
৯. পদ্মা বাংলাদেশের বড় নদী।৯. নদী সাগরে গিয়ে মেশে।
১০. সুন্দরীগাছ সুন্দরবনে পওয়া যায়।১০. গাছ আমাদের প্রাণ বাঁচায়।

 

৩. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য :

যে বিশেষ্যপদ দ্বারা একজাতীয় ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সমষ্টি বোঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : জনতা, সভা, সমিতি, শ্রেণি, দল, সংঘ, পাল, ঝাঁক, গুচ্ছ, মালা, সারি ইত্যাদি ৷

 

বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ

 

বাক্যে প্রয়োগ

জনতাই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে।

সভা নয়টায় শুরু হয়েছে।

এখানে একটা বহুমুখী সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে।

বিশেষ্যপদের নানা শ্রেণিবিভাগ রয়েছে।

দল বদল করে আর কতদিন চলবে?

একপাল হরিণ আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেল ।

ইংরেজদের নৌবহর বিশ্বখ্যাত ।

আমি সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ দেখেছি।

৪. ভাববাচক বিশেষ্য :

যে বিশেষ্যপদ দ্বারা ক্লিয়ার ভাব বা কাজের নাম বোঝায়, তাকে ভাববাচক বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : ভোজন, শয়ন, দর্শন, গমন, শ্রবণ, করা, দেখা, শোনা ইত্যাদি।

ভাববাচক বিশেষ্য ও ক্রিয়াপদ এক নয়। যেমন :

ভাববাচক বিশেষ্য

ক্রিয়াপদ

১. কোটবাড়ি দর্শন করে এলাম।১. আমি কোটবাড়ি দেখেছি।
২. মহারাজের ভোজন-পর্ব শেষ হয়েছে।২. আমরা খেয়েছি।
৩. বাবার শয়ন এখনো সম্পন্ন হয় নি।৩. বাবা শুয়েছেন।
৪. খুকুর নাচন দেখে যা ।৪. খুকু নাচছে।
৫. তার বোধহয় ফেরা হবে না।৫. সে ফিরেছে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment