বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব ভাষণ তৈরি করবেন। কবি ও শিল্পী তাদের সৃষ্টির মধ্যে ভার-প্রতিমাকে ব্যক্ত করেন; এতে সৃষ্টির সৌন্দর্য ও চাতুর্য প্রকাশিত হয়। অনেক সময় একটি ছত্রে বা একটি বাক্যের মধ্যে গভীর ভাব বীজাকারে অন্তর্নিহিত হয়ে থাকে। ঐ বাক্য বা ছত্রটিকে বিশ্লেষণ করলে তার মধ্যে বহুবিধ বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যাবে এবং তার তাৎপর্য আবিষ্কৃত হবে। সে বক্তব্য এবং বক্তব্যের মধ্যে ফুটমান তাৎপর্যকে বিশদভাবে প্রকাশ করার নাম ভাব-সম্প্রসারণ। মূল ভাবটি বিস্তারের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হয় এবং তাকে পূর্ণভাবে ব্যক্ত করা হয়। ভাব-সম্প্রসারণের মূল উদ্দেশ্য বক্তব্য ও বিষয়কে বিশদভাবে প্রকাশ করা এবং যুক্তি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে মূল ভাবটিকে শিল্প-সৌকর্যময়তা দান করা।
বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ এবং জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু
বিদ্যা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিদ্যাহীন জীবন অন্ধের সমান। আবার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিদ্যা অর্থহীন। সেজন্যে বিদ্যার সঙ্গে জীবনের এবং জীবনের সঙ্গে বিদ্যার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করে উভয়ের সার্থকতা বিধান করতে হবে।
মানবসন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই যথার্থ মানুষ হওয়া যায় না। তাকে সাধনা করে প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হয়। বিদ্যা মানবজীবনের অজ্ঞানতা, কুসংস্কার ও হৃদয়ের অন্ধকার দূর করে জীবনকে মহীয়ান ও সুষমামণ্ডিত করে গড়ে তোলে। বিদ্বানের ভূমিকায় সমাজ ও দেশ হয় সমৃদ্ধির আলোয় আলোকিত। অপরদিকে বিদ্যাহীন লোকের কোনো মূল্য নেই।
বিদ্যার অভাবে সে অন্ধের মতো জীবনযাপন করে। মানুষ অন্ধ হয়ে থাকতে চায় না বলে বিদ্যার এত মূল্য। জ্ঞান-সাধনার পথের শেষ নেই। বিদ্যার উদ্দেশ্য মানুষের চিন্তা-চেতনাকে পরিচালিত করা, দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করা। বিদ্যা হবে জীবনমুখী, জীবনবিবর্জিত নয়। অর্জিত এই বিদ্যাকে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে। জীবনবিমুখ বিদ্যা কোনো কাজে আসে না, বরং জীবনকে তা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অর্থাৎ, যে জীবনের সঙ্গে বিদ্যার কোনো সম্পর্ক নেই, সে জীবন আলোকবর্জিত, অন্ধ।

যে-বিদ্যা জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন, যা জীবনকে সামনে চালিত করতে পারে না, যা জীবনকে এগিয়ে নেয় না, সে-বিদ্যা চলার গতি হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে। মানবজীবনকে সুন্দর, সতেজ ও সরাগ করে গড়ে তুলতে হলে বিদ্যাকে অবশ্যই জীবনধর্মী হতে হবে। জীবনকে গতিময়, বাস্তব ও কর্মমুখী করতে হলে যেমন বিদ্যার্জন অত্যাবশ্যক, তেমনি অর্জিত বিদ্যাও হতে হবে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন হয়ে পড়ে বিচারবুদ্ধিহীন। তার চোখ থাকলেও অন্তর চক্ষু বলে কিছু থাকে না। তাই বিদ্যার সঙ্গে থাকা চাই জীবনের নিবিড় সম্পর্ক। জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যে শিক্ষায়, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা।
আরও দেখুন: