বাক্যে পদের ব্যবহার | বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা

বাক্যে পদের ব্যবহার | বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা , শব্দের অপপ্রয়োগ ও শব্দ প্রয়োগের জটিলতা : আমরা জানি, বাক্য তৈরি হয় শব্দ সাজিয়ে। একটা বাক্য মানে কিছু শব্দের সমাহার। বাক্যে শব্দগুলো এলোপাথাড়িতারে বসে না। বাকো কোন শব্দের পর কোন শব্দ বসাতে হয় তার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। অর্থাৎ একটি বাক্য হল কয়েকটি শব্দের সারি এবং সেই সারিতে কার পাশে কে আসন গ্রহণ করবে তার নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে শব্দগুলোকে পর পর বসাতে হয়। অন্যথা যথাযথ বাক্যগঠন হবে না।

বাক্যে পদের ব্যবহার | বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা

বাক্যে যখন শব্দগুলো ব্যবহৃত হয় তখন ব্যাকরণের বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনেই ব্যবহৃত হয়। বাক্য গঠনের নিয়মানুযায়ী, বাক্যে পদসমূহ সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করলেই যে ঠিক বাকা গঠিত হবে এমনটি বলা যায় না। কারণ থাকো যে—শব্দ যেখানে বসা উচিত সেখানেই বসল, কিন্তু কখনো-কখনো দুটো শব্দ ফাঁক ফাঁক না বসে একেবারে গায়ে গা লাগিয়ে বসে, কখন আলাদা বসবে, আর কখনই-বা জড়াজড়ি করে বসবে তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। দুটি উদাহরণ দেয়া যাক :

ক.  এ দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের কন্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

এদেশের বুদ্ধিজীবীসমাজের কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জনাব …..।

[দুটো বাক্যই শুদ্ধ, কিন্তু অর্থের ভিন্নতা স্পষ্ট]

বাক্যে পদের ব্যবহার | বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা

 

খ.  আজকের কবিতা পাঠক কবিতা বুঝতে চান না।

অর্থহীন বাক্য। অর্থ বোঝাতে চাইলে অবশ্যই লিখতে হবে ‘কবিতাপাঠক’ বা কবিতা-পাঠক।

উল্লিখিত উদাহরণের পরিপ্রেক্ষিতে যে নিয়মটি বলা যায়, তা হল :

সমাসবদ্ধ পদ হলে শব্দগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে। লিখতে হবে, তাদের মধ্যিখানে কোনো ফাঁক রাখা চলবে না। কিন্তু সমাসবদ্ধ পদটি যদি দীর্ঘ হয়, দৃষ্টিকটু লাগে, বা পড়তে অসুবিধে হয়, তা হলে যারস্থানে হাইফেন দিয়ে লেখা যাবে। যেমন বুদ্ধিজীবী সমাজ, কবিতা পাঠক ইত্যাদি।

সমাসবদ্ধ পদ হলে একাধিক শব্দ একশব্দে রূপান্তরিত হয়- ব্যাকরণের এই নিয়ম মেনে চলা তেমন কঠিন কাজ নয়। কিন্তু এমন ক্ষেত্রও আছে যেখানে ব্যাকরণ কিছু বলে না। যেমন অনেক, আগামী, এক, এত কত কিছু, কোনো, গত, ভত, পর, প্রতি, বহু বার বিশেষভাবে মতো মহা, মাত্র, যত, সব, সারা, রকম। এসব শব্দের পূর্বে বা পরে শব্দ থাকলে উভয় শব্দ কি একত্রে হবে, না আলাদা আলাদা হবে। যেমন গত কাল হবে, নাকি গতকাল। এত দিন হবে, নাকি এতদিন?

এছাড়া বাক্যের মধ্যে বহুবচনের অপপ্রয়োগ, বিশেষ্যের জায়গায় বিশেষণ কিংবা যথাযথ বিশেষণ বা বিশেষণের দ্বিত্বজনিত ভুল, বাচা, লিফা, প্রবাদ-প্রবচন, পুনরুক্তি বা বাহুল্যজনিত ভুল হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলোর নিয়ম দেওয়া হল

স্বত্ব, সত্ত্ব, সত্তা

স্বত্ব :  (স্ব+ত্ব)। “স্ব” মানে নিজে। শব্দটি বিশেষণ, এর সঙ্গে ত্ব যোগ করে একে বিশেষ্য পদে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এখন মানে দাড়াল- নিজত্ব, অর্থাৎ নিজের অধিকার যেখানে আছে, এক কথায় এর অর্থ ‘মালিকানা। যেমন— মন্নুজান নিজের সমস্ত বিষয়সম্পত্তি স্বত্ব ত্যাগ করে তাঁর ভাই হাজী মুহম্মদ মহসীনকে দিয়ে দিয়েছিলেন।

সত্ত্ব  : (সৎ+ত্ব)। ৎ আর ত সন্ধির ফলে ত্ত হয়েছে, সেইসঙ্গে ব-ফলা তার নিজের জায়গাতেই আছে।

ক. ‘সৎ’ শব্দের এক অর্থ হচ্ছে “বিদ্যমান’। ‘সত্ত্ব’ শব্দের অর্থ এর ফলে অস্তিত্ব বা বিদ্যমানতা। যে মেয়ে মা হতে যাচ্ছে তাকে আমরা বলি, ‘মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা’, অর্থাৎ মেয়েটির ‘অন্তঃ”তে (অভ্যন্তরে ভেতরে) আরেকটি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। ‘সত্ত্বেও কথাটা এখান থেকেই এসেছে। যেমন- নিষেধ সত্ত্বেও (অর্থাৎ নিষেধ বিদ্যমান থাকবে), এ কাজ করলে কেন?

খ. ‘সত্ত্ব’ শব্দের দ্বিতীয় অর্থ— প্রকৃতির তিনটি গুণের (সত্ত্ব রজঃ তমঃ) মধ্যে শ্রেষ্ঠ গুণ। মানুষের মনের যে-সব শ্রেষ্ঠ অনুভূতি আছে, যেমন দয়া প্রেম ন্যায়নিষ্ঠা মনুষ্যত্ববোধ বিবেক ইত্যাদি সব সম্মিলিত করলে যা দাড়ায় তা-ই সত্ত্বগুণ। যার এইগুণ আছে তাঁকে বলি ‘সাত্ত্বিক’ লোক। ‘সাত্ত্বিক’ বিশেষণ পদে তা যোগ করে (সাত্ত্বিক+তা) ‘সাত্ত্বিকতা’ বিশেষ্য পদ তৈরি করা যায়।

গ. ‘সত্ত্ব’ শব্দের তৃতীয় অর্থ- রস, ফলের রস। “আমসত্ত্ব’ তো আসলেই আমের রস, তবে জ্বাল দিয়ে দিয়ে ঘ করে তারপরে শুকিয়ে নেওয়া। [‘সত্ত্ব’ শব্দের মতো আরেকটি শব্দ তৈরি হয়েছে – তত্ত্ব। অর্থাৎ তার অনুপ বা প্রকৃতি। তত্ত্ব তাত্ত্বিক, তত্ত্বীয়- এগুলো পরশরসম্পৃক্ত শব্দ।

সত্তা :  (সৎ + তা) “সৎ” শব্দের এক অর্থ যে বিদ্যমান তা আগেই বলেছি, ‘তা’ হল বিশেষ্যে রূপান্তরিত হওয়ার চিহ্ন। মানে দাঁড়াল তা হলে বিদ্যমানতা, অস্তিত্ব। যেমন- সত্তা হারিয়ে ফেলা। এই ‘সত্তা’ আর আগের ‘সত্ত্ব’ অর্থের দিক থেকে একই, তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে তফাত আছে। এই সত্তা থেকেই সততা শব্দের উৎপত্তি। সততা ব্যাকরণ সিদ্ধ শব্দ নয়।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

টি, টা, খানা, খানি, গুলি, গুলো, রা, এরা, গণ, বৃন্দ, সমূহ:

-টি, টা, খানা, খানি, গুলি গুলো, রা, এরা, গণ, বৃন্দ সমূহ- এইগুলো কখনোই আলাদা বসবে না। আবার একবচন শব্দের সঙ্গে টি, টা, খানা খানি, কিংবা, গুলি গুলো রা.-এরা, গণ, সমূহ যোগ করে যখন বহুবচন করা হবে তখনও শব্দগুলো আলাদা বসবে না। আমরা ভুল করে লিখি বই গুলি, চিঠি গুলি, গ্রন্থ সমূহ ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সবই জোড়া লাগবে, তাই লিখতে হবে বইগুলি চিঠিগুলি গ্রন্থসমূহ। কিন্তু সমূহ আনন্দ, সমূহ বিপদ সমূহ ক্ষতি সমূহ সর্বনাশ এসব ক্ষেত্রে আলাদা হবে।

না, নি, নেই, নয়

না, নাই, নি, নয় এই নেতিবাচক শব্দ সবসময়ে পৃথক শব্দ হিসেবে বসবে। কখনো কোনো শব্দের সঙ্গে ঘুড়ে যাবে না। যেমন- করিনা, যাইনা, যাইনি, বলিনি, করিনি, যেওনা, দেখেনা ইত্যাদি না হয়ে, হবে করি না, যাই না, যাই নি, বলি নি, করে নি, যেও না, লেখে না ইত্যাদি।

 নয় তো / নয়তো

নিচের উদাহরণ দুটো লক্ষ কর

ক. আজ নয়, তো কাল যাবে। খাঁটি মুক্তো নয় তো, নকল মুক্তো, কিছুকাল পরে নিজেই জানান দেবে।

খ. তোমার মন গেলে তুমি যেও, নয়তো যেও না। রাত দশটার মধ্যে ঘরে পৌঁছতে হবে, নয়তো মা খুব ভাববে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, উল্লিখিত উদাহরণসমূহে ‘নয় তো’ এবং ‘নয়তো শব্দের ভেতরে অর্থের ভিন্নতা রয়েছে। “নয় তো” মানে “নয়” এর “নয়তো বোকাচ্ছে বিষয় পথ। একই ভাবে হয় তো” হচ্ছে হাঁ-সূচক, আর “হয়তো হচ্ছে সম্ভাব্যতা, অনিশ্চয়তা

না হয় / নাহয়

উদাহরণ: ক. সে না হয় শয়তান, তার ছেলে তো লোক খারাপ নয়।

আমি নিজে না হয় মুখ্যুসুখ্যু লোক, কিন্তু ছেলেমেয়েকে যদ্দুর পারি লেখাপড়া শিখিয়েছি।

খ.  তুমি নাহয় ভোরবেলায় তার বাড়ি গিয়ে কথাটা তাকে বলে এসো, দেরি হলে তাকে আর বাসায় পাবে না। ক-অংশের উদাহরণ দুটিতে ‘না হয় কোথাও নেতিবাচক অর্থ বোঝাচ্ছে না, দুটি বাক্যই সম্পূর্ণত হাঁ-সূচক। দ্বিতীয়ত, “হয়” শব্দ গুরুত্বপূর্ণ, ‘না’ অলঙ্কার হলেও হয় মোটেই অলঙ্কার নয়, বড়োই জরুরি শব্দ। কারণ, প্রথম বাক্যের অর্থ সে শয়তান হলেও তার ছেলে ভাল লোক, আর দ্বিতীয় বাকা বলছে- আমি নিরক্ষর ঠিকই, কিন্তু সন্তানদের অশিক্ষিত রাখি নি।

খ-অংশের উদাহরণ দুটোয় ‘নাহয়’ অর্থ বোঝাচ্ছে- বরং পক্ষান্তরে। এক্ষেত্রেও ‘না’ কথাটিতে মেডিবাচক কিছু প্রকাশিত হচ্ছে না।

না হলে / নাহলে

ক. তার সঙ্গে দেখা না হলে এখনি ফিরে আসব, তুমি ধৈর্য ধরে আধঘণ্টা বস।

যোগ-বিয়োগ শেখা না হলে গুণ-ভাগ কেউ করতে পারে?

আপনি আমার পাশে বসতে পারলে বসুন, তা না হলে দাঁড়িয়ে থাকুন।

খ.  নাচ নাহলে গান- অনুষ্ঠানে কিছু তো একটা হবে। যা হয় তাই দেখব, তাই শুনব।

যা ঘটনা, সত্যি করে সব বল, নাহলে আমি সব বলে দিলে তোমার গুমোর ফাঁস হয়ে যাবে।

তুমি নাহলে এ কাজটা করবে কে? আমি তো দ্বিতীয় লোক দেখি না।

ক-অংশের উদাহরণ তিনটিতে ‘না হলে’ অর্থ সষ্টতই ‘না হয়’, অর্থাৎ ‘না হয়’ ও ‘না হলে পরিপূর্ণভাবে সমার্থক, একটির বিকল্পে অন্যটি বলা চলে। এ অংশের তিনটি বাক্যের ‘নাহলে কিন্তু ‘নাহর’ শব্দের সমার্থক নয়। এক্ষেত্রে “নাহলে’ অর্থ অথবা নইলে, অন্যথায়, ব্যতীত।

কেন না / কেননা

তুমি কেন না বললে, আমার তো ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল, কেননা আমি একবারও যাই নি, আর তুমি কমপক্ষে দশবার অন্তত নেমন্তন্ন খেতে গেছ।

ওপরের সুদীর্ঘ বাক্যটিতে একবার আছে ‘কেন না’, আরেকবার ‘কেননা’। প্রথম ক্ষেত্রে ‘কেন’ এবং ‘না- কেউ কাউকে জায়গা ছাড়ছে না, দুটো শব্দ তার নিজ অর্থ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,  ‘কেন? প্রশ্নবোধক, আর “না” নেতিবাচক শব্দ। এর অর্থ- তুমি কেন মানা করলে? এই বাক্যে উদ্ধৃতিচিহ্ন দিয়ে ইচ্ছে করলেই লেখা যেত- ভূমি। কেন ‘না’ বললে,

কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে? “কেননা’ শব্দের ভেতরে কেন কিংবা না- কোনটারই অর্থ ভরে দেওয়া নেই। ‘কেননা’ মানে ‘যেহেতু” বা “কারণ”।

ক্ষণ এবং কাল : “ক্ষণ ” এবং ‘কাল’ শব্দের পূর্ববর্তী বিশেষণ আলাদা না বসে একসঙ্গে বসবে। যেমন একাল, এতকাল, কতকাল, ততকাল, যতকাল, অনেককাল, কিছুকাল, বহুকাল, সেকাল, এক্ষণ, এতক্ষণ, কতক্ষণ ততক্ষণ, যতক্ষণ, অনেকক্ষণ, কিছুক্ষণ, বহুক্ষণ ইত্যাদি।

তবে ব্যতিক্রম- এত দিন, কত দিন, তত দিন যड দিন, অনেক দিন, কয়েক দিন, কিছু দিন, বহু দিন, এত বই, কত নৌকা, কত কষ্ট, কত আনন্দ, অনেক বছর, অনেক সময়, বহু প্রচেষ্টা ইত্যাদি হবে।

আগামী এবং গত : আগামী এবং গত শব্দের পরের শব্দ সর্বদা পৃথক বসবে। যেমন : আগামী কাল, আগামী নিন, আগামী পরশু, আগামী বছর ইত্যাদি।

একসঙ্গে, একসাথে, একযাত্রায় : একসঙ্গে, একসাথে, একযাত্রার শব্দসমূহে ‘এক’ কখনোই পৃথকভাবে বসবে না। কারণ ‘এক’ শব্দটি এ-ক্ষেত্রে সংখ্যা বোঝাচ্ছে না, সহিতত্বের বা সম্মিলনের ধারণা দিচ্ছে।

নানা, / নানান : নানা এবং নানান শব্দ পৃথক বসে। যেমন— নানা অসুবিধে নানান ঝামেলা, নানা জাতের মানুষ, নানান মত ও পথ ইত্যাদি।

পর : পর শব্দের অর্থ যদি হয় পরের পরবর্তী / পরকে নিয়ে কিংবা অন্য বা ভিন্ন, তা হলে এর সঙ্গে সম্পর্কিত পরবর্তী শব্দটি পৃথক না বসে একসঙ্গে বসবে। যেমন- পরকাল, পরদিন, নারী, পরপুর, পরনিন্দা, পরক্ষীরী, পরদেশ ইত্যাদি।

প্রতি : প্রতি শব্দে যদি ব্যাপ্তি বোঝায়, তা হলে এর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী শব্দ পৃথক বসবে না। যেমন । প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত প্রতিবছর, প্রতিবার, প্রতিমাস, প্রতিমুহূত। ছাত্রপ্রতি, জনপ্রতি, প্লেটপ্রতি, লেখাপ্রতি, ইত্যাদি। কিছু “আমাদের প্রতি”, “জনতার প্রতি’ ইত্যাদি। এখানে অর্থ উদ্দেশে লক্ষ করে)।

বহু : বহু শব্দ কখনো একসঙ্গে বসে, আবার কখনো বসে পৃথক। যেমন । বহুকাল, বহুগুণ, বহুদর্শী, বহুনিন, বহুদূর, বহুপ্রকার, বহুভাষী, বহুমুখী, বহুমূল্য, ইতাদি।

বহুল : ‘বহু’র মতোই বহুল’ শব্দ অর্থ-ভারতম্যে কখনো একসঙ্গে আবার কখনো পৃথক বসে। যেমন : ঘটনাবহুল, জনবহুল, বিলাসবহুল, বলুন, সঙ্গীত ইত্যাদি। আবার বহুল কথিত, বসুন পরিচিত, ঝুল পরিমাণে, স্কুল প্রয়োগ ইত্যাদি।

বিনা : বিনা শব্দ পৃথক বসবে। বিনা অর্থ বার্তীত, ব্যতিরেকে ছাড়া। যেমন বিনা যুদ্ধে, বিনা বাক্যব্যয়ে, বিনা পরিশ্রমে ইত্যাদি।

বিশেষ : বিশেষ শব্দে যদি প্রকার বা ভেদ বোঝায় তা হলে পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে একত্র বসবে। যেমন  অবস্থাবিশেষ, ইতরবিশেষ, গ্রন্থবিশেষ, দর্শনবিশেষ, পুষ্পবিশেষ ইত্যাদি।

ভাবে : ভাবে শব্দ একসঙ্গে বসবে ভালোভাবে খারাপভাবে, অদৃশ্যভাবে, ঘনিষ্ঠভাবে ইত্যাদি।

মতো : মতো শব্দে যদি অনুযায়ী / অনুসারে বোঝায়, তা হলে এর পূর্ববর্তী শব্দ পৃথক বসবে না। ইচ্ছেমতো, উপদেশমতো, কথামতো, নিয়মমতো, নির্দেশমতো, পছন্দমতো, পরামর্শমতো মানমতো, সময়মতো, সুবিধেমতো ইত্যাদি।

মহা : মহা শব্দে যদি অত্যধিক প্রচণ্ড ইত্যাদি অর্থ বোঝায় তা হলে এই শব্দটি পৃথক বসবে। যেমন মহা আলসে, মহা কুড়ে, মহা চালাক, মহা জ্ঞানী, মহা পাজি, মহা পাপী, মহা বজ্জাত, মহা ভীতু, মহা সাহসী ইত্যাদি।

মাত্র : মাত্র শব্দে প্রত্যেক / শুধু / পর্যন্ত  তখনই ইত্যাদি অর্থ বোঝালে এর পূর্ববর্তী শব্দ পৃথক বসবে না। যেমন : আসামাত্র, এইমাত্র একমাত্র একটিমাত্র কিছুমাত্র প্রাণিমাত্র, বলামাত্র মনুষ্যমাত্র, ইত্যাদি। লক্ষণীয়, মাত্র দশ টাকা, মাত্র পাঁচ মিনিট, মাত্র একটা কলম ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে মাত্র আলাদাভাবে বসছে।

সব এবং সারা : ‘সব’ এবং ‘সারা’ উভয়ই সমগ্র সমস্ত সর্বত্র ইত্যাদি অর্থ প্রকাশ করে। দুটি শব্দই সাধারণত পৃথক বসে থাকে। যেমন – সব অশান্তি, সব ঘটনা, সব লোক, সব সময়, সব সমস্যা, সারা সারা গ্রাম, সারা দিন, সারা দুনিয়া, সারা বাড়ি ইত্যাদি।

সমেত / সহ : সমেত / সহ পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে একত্র বসবে। যেমন পরিবারসমেত তদ্রলোক গেছেন, সুদসমেত আসল টাকা আমার কালকেই চাই, দলবলসমেত সে এখন ভোট চাইতে বেরিয়েছে ইত্যাদি।

 

বাক্যে পদের ব্যবহার | বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা

 

বাক্য কী, বাংলা বাক্য গঠন – বাংলা ব্যাকরণ:

 

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment