Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

পৃথিবীতে বাংলা ভাষার অবস্থান | বাংলা ভাষা | ভাষা ও শিক্ষা

পৃথিবীতে বাংলা ভাষার অবস্থান | বাংলা ভাষা | ভাষা ও শিক্ষা ,

 

পৃথিবীতে বাংলা ভাষার অবস্থান | বাংলা ভাষা | ভাষা ও শিক্ষা

 

 

পৃথিবীতে বাংলা ভাষার অবস্থান

সমুদ্রের মধ্যে হাজার হাজার প্রবাল আপন দেহের আবরণ মোচন করতে করতে কখন এক সময়ে দ্বীপ বানিয়ে তোলে, তেমনি বহু সংখ্যক মন আপনার অংশ দিয়ে গড়ে তুলেছে আপনার ভাষা-দ্বীপ। এভাবে এক এক ভৌগোলিক ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত ভাষা থেকে বিভিন্ন ভাষার উদ্ভব। যেমন, জাপান ভূখণ্ডে বসবাস করে যে জনগোষ্ঠী, তাদের ভাষা জাপানি। ফ্রান্সের অধিবাসীদের ভাষা ফরাসি। বাংলাদেশের অধিবাসীদের ভাষা বাংলা।

একটা উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হবে। কারও মুখ থেকে না শুনলেই আমরা বুঝি যে লোকটা কথা বলছে বাংলায়, কেননা  ‘না’ ধ্বনি বাংলা ভাষার শব্দ, লোকটি যদি ‘নো’ বলত তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই ধরা যেত যে কথাটা ইংরেজি, কেননা বাংলায় ‘নো’ বলে কোনো শব্দ নেই। আবার ফরাসি ভাষায় ওই কথাটা বুঝতে চাইলে বলতে হবে ‘ন’। অথচ না, নো, ন—এই তিনটি ধ্বনির মধ্যে পার্থক্য তো খুব বেশি নেই, আর অর্থ তো তিনটিরই এক। তবু বাংলা ভাষীরা বলে বলেই ওই ‘না’ ধ্বনি বা শব্দটা বাংলা ভাষার শব্দ।

আমরা বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলি, স্বপ্ন দেখি, মনের ভাব প্রকাশ করি তার নাম বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষা সম্পর্কে প্রদত্ত সংজ্ঞা হল : ‘মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা সম্পাদিত বা নিষ্পন্ন, বাঙালি সমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টির নাম বাংলা ভাষা’। বাংলা ভাষা বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, আসামে, ত্রিপুরায় এবং আরও কিছু জায়গায়? প্রচলিত আছে। পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে।

ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাকে বিশ্বে চতুর্থ স্থানীয় ভাষা বলে অনুমান করা হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ কেবল ১৪-২৫ বছর বয়স্ক বাংলাভাষীর সংখ্যাই ৩১ কোটি ৬০ লক্ষে দাঁড়াবে বলে পরিসংখ্যানবিদদের অনুমান। ভাষক সংখ্যার বিচারে বাংলা এখন পৃথিবীর সপ্তম ভাষা। এর স্থান কেবল চীনা, ইরেজি, হিন্দি-উর্দু, স্প্যানিশ, আরবি ও পর্তুগিজের পরে। আর বাংলাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র ভাষা, যার প্রতি ভালোবাসা ও মর্যাদাবোধ থেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাঙালি জাতির মাতৃভাষাও বাংলা।

 

 

মাতৃভাষা (Mother Language)

মাতৃভাষা অর্থ মায়ের ভাষা। অন্যভাবে বলা যায়, আমরা মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা শিখি তা-ই হলো আমাদের মাতৃভাষা (Mother Language) মানুষ অন্যের পর সাধারণত প্রথমে তার মায়ের কাছে প্রতিপালিত হয়, তারই কথা শেখে। তাই জন্মলগ্ন থেকে স্বাভাবিকভাবে মানুষ নিজের মায়ের কাছে যে ভাষাটি শিক্ষা পায়, তাকেই তার ‘মাতৃভাষা’ বলে।

এটি একটি ধারণার প্রকাশমাত্র। তাই যে শিশুর মা তার জন্ম মুহূর্তেই মৃত্যুবাণ করে, সেই শিশু যখন বড় হয়, সে পিতা বা অন্য কোনো অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে বড় হলেও তার মুখের সাধারণ ভাষাকে ‘মাতৃভাষা’ই বলে। বাঙালি মায়ের সন্তান জন্মের পর থেকে স্প্যানিশ বা জার্মান-ভাষী মায়ের পরিচর্যায় বড়ো হলে তার প্রথম বা মাতৃভাষা কখনো বাংলা হবে না, হবে স্প্যানিশ বা জার্মান।

তাই বলা হয়, শিশু প্রথম যে ভাষা শেখে তাই তার প্রথম ভাষা (First Language) বা মাতৃভাষা।বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জন্মের পর মায়ের কোলে এবং মায়ের বাংলা বোলে বড় হয়। বাঙালি মায়ের এই বুলি বাংলা। তাই বাঙালি জাতির মাতৃভাষা বাংলা। আবার বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বাস করে। তাদেরও পৃথক মাতৃভাষা আছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড রাজ্য; মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য ইত্যাদি স্থানে বাংলা ভাষার প্রচলন রয়েছে। এসব অঞ্চলে অনেকেরই মাতৃভাষা বাংলা। তা ছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিশ্বের বহু দেশেরই বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। সেসব স্থানেও বাংলা অনেকের মাতৃভাষা।

 

রাষ্ট্রভাষা (State Language)

রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহারের জন্য কোনো দেশের সংবিধানস্বীকৃত ভাষাকে ঐ দেশের রাষ্ট্রভাষা (State Language) বলে। একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্ন ভাষার ব্যবহার থাকতে পারে। যেমন : বাংলাদেশে বাংলা, চাংমা, আচিক, মণিপুরী ভাষা ইত্যাদি; ভারতে বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, পাঞ্জাবি, কানাড়ি ভাষা ইত্যাদি, পাকিস্তানে পাঞ্জাবি, বালুচ সিদি তারা ইত্যাদি। এতে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কাজ কোন ভাষাতে পরিচালিত হবে- এই প্রশ্ন আসে। এ প্রশ্ন সমাধানকল্পে কোনো রাষ্ট্র নির্দিষ্ট এক বা একাধিক ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম ভাগের তৃতীয় অনুচ্ছেদে লিপিবদ্ধ আছে। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।

রাষ্ট্রের সর্বাধিক মানুষের বোধগম্য ভাষা হিসেবে সাধারণত রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃত হয়ে থাকে। এ ভাষায় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড, যেমন শিক্ষাপ্রদান, পাঠ্যগ্রন্থ প্রণয়ন, সাহিত্যরচনা, সংবাদপত্র প্রকাশ, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা, দলিল-দস্তাবেজ লিখন, রাষ্ট্রায় নথিপত্র লিপিবদ্ধকরণ ইত্যাদি সম্পন্ন হয়।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হল উর্দু কিন্তু দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে উর্দুর পাশে ইংরেজিকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভারত প্রজাতন্ত্রের সংবিধানস্বীকৃত কোনো রাষ্ট্রভাষা বা জাতীয় ভাষা না থাকলেও দাপ্তরিক কাজকর্মের ভাষা হিসেবে হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজি স্বীকৃত। ভারতের রাজ্যগুলোতে প্রশাসনিক কর্মে আঞ্চলিক ভাষাসমূহ ব্যবহার হয়। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড রাজ্য এবং আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রশাসনিক ভাষা বাংলা।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

দ্বিতীয় ভাষা (Second Language)

মাতৃভাষা ছাড়া যেকোনো ভাষাকেই দ্বিতীয় ভাষা Second Language) বলে। একে বিদেশি ভাষাও বলা হয়। আমাদের দেশে দ্বিতীয় ভাষা হলো মূলত ইংরেজি। ধর্মীয় কারণে আমরা অনেকে আরবি, সংস্কৃত, পালি ভাষা শিখি। এগুলো দ্বিতীয় ভাষা।।

এখন পর্যন্ত ভাষাবিদদের তালিকাভুক্ত পৃথিবীর ৬০৬০টি ভাষার মধ্যে ৫১টি ভাষা আছে যেগুলোর প্রতিটিতে মাত্র একজন করে লোক কথা বলে। এই ৫১টির মধ্যে শুধু অব্দি লিয়াতেই ২৮টি এরকম ভাষা রয়েছে। এছাড়াও মাত্র ১০০ জন লোক কথা বলে এরকম ভাষা রয়েছে ৫০০টি। ১৫০০ ভাষা আছে যার প্রতিটিতে কথা বলার লোক আছে ১০০০ জনেরও কম। এবং ৫০০০ ভাষা আছে যেগুলোর প্রত্যেকটিতে ১,০০০০০ জনের চেয়ে কম লোক কথা বলে। ১০ এখানে দুটি সারণি প্রদত্ত হল-

 

 

 

 আরও দেখুন:

Exit mobile version