বাংলাদেশের পুরাকীর্তির বর্ণনা দিয়ে বিদেশি বন্ধুর পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , কিছু লোক চিঠিকে মনে করতো কেবল লেখালেখি। আবার অন্যরা মনে করে যোগাযোগের মাধ্যম। বাইবেলের বেশ কয়েকটি পরিচ্ছেদ চিঠিতে লেখা।
বাংলাদেশের পুরাকীর্তির বর্ণনা দিয়ে বিদেশি বন্ধুর পত্র
পটিয়া; চট্টগ্রাম
১০ এপ্রিল, ২০০০
প্রিয় বন্ধু ‘ক’,
আমার শুভেচ্ছা নিও। জীবনের প্রয়োজনেই মানুষকে ছুটে যেতে হয় দূর-দূরান্তে। কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন কি ছিন্ন করা যায়? অনেকদিন হয় তুমি কোনো চিঠি লেখ না। কেন এই বিমুখতা বন্ধু। এখনো কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে কিংবা কোথাও ঘুরতে গেলে তোমার কথা মনে পড়ে। আমাদের ছিল যুগল পথ চলা। অথচ তুমি হঠাৎ করেই বিদেশে পাড়ি জমালে। প্রবাসের রঙিন জীবনে আজ তুমি কেমন আছ? দীর্ঘদিন তোমার কোনো সংবাদ জানি না। তুমি যখন দেশে ছিলে আমরা একসঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু আমাদের কখনো বাংলাদেশের পুরাকীর্তির শহর নওগা কিংবা কুমিল্লায় যাওয়া হয় নি।
কয়েকদিন আগে কলেজের শিক্ষাসফরে নওগা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ঘুরে এলাম। অবাক বিস্ময়ে দেখেছি আজ থেকে শত শত বছর ভাগের নির্মাণ করা দালানকোঠার ধ্বংসস্তূপ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যা আজও বেঁচে আছে। শুধু তাই নয় বৌদ্ধ বিহার দেখে আমি এতটাই অভিভূত হয়েছি যে এ বিষয়ে তোমাকে না জানিয়ে পারছি না। বস্তুত বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি প্রাচীন স্থাপত্য ও ইতিহাস প্রসিদ্ধ পুরাকীর্তির কথা জানাতেই তোমাকে এ চিঠি লেখা।
কালের বিচারে বাংলাদেশ একটি সুপ্রাচীন দেশ। প্রাচীনত্বের গরিমায় বাংলাদেশ সারা বিশ্বে পরিচিত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজরাজড়ার পৃষ্ঠপোষকতায় এ-দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দারুণভাবে উন্নতি লাভ করে। বৌদ্ধযুগে নওগা জেলার পাহাড়পুরে প্রভু বুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ সত্যিই দেখার মতো এবং এর থেকে অনেক কিছু জানার মতোও আছে। পাহাড়পুরের বৌদ্ধ আশ্রম, আশ্রমের কিছুদূরে সত্যপিরের ভিটা, তাম্রলিপি ও ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি— এসব পুরাকীর্তির নিদর্শন এখানে রয়েছে। এরকম আরও কয়েকটি স্থানের নাম হল-বগুড়া জেলার ইতিহাস প্রসিদ্ধ করতোয়া নদীর তীরে এবং ঢাকা-দিনাজপুর বিশ্বরোডের পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানগড়।

প্রাচীন বৌদ্ধযুগের বহু ধ্বংসাবশেষ এখানে বিদ্যমান। এছাড়া নওগাঁ, জয়পুরহাট, কুমিল্লা-ময়নামতিতেও রয়েছে প্রভু-বুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ। এগুলো আমাদের দেশের অসামান্য সম্পদ। ঢাকার আহসান মঞ্জিল, ঢাকেশ্বরী মন্দির, কার্জন হল, লালবাগের কেল্লা, হোসনি দালান, সোনার গাঁ লোকশিল্প- জাদুঘর; দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির, নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, নোয়াখালীর বজরা মসজিদ— এ সবই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ও ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। আমাদের দেশ ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সভ্যতায় অনেক সমৃদ্ধ হয়ে আছে। দেশে ফিরে এলে অবশ্যই তুমি এসব স্থান ঘুরে দেখবে বলে আশা করি। আশা করি আবারও শুরু হবে মোদের যুগল পথ চলা। সে অপেক্ষায় রইলাম। আজ আর নয়।
ইতি
তোর বন্ধু
বাংলা চিঠি – পত্র কী ও প্রকারভেদ, পত্রলিখন :
আরও দেখুন: